ভালো লাগছে না কিছু, একটু বকবক করি। নিজ দায়িত্বে পড়ুন 🙂
✿এটা আমার ইন্টারনি সময়ের কথা। মাত্র ক্লাস টেন এ পড়া এক মেয়ে, ইন্টারে পড়া এক ছেলেকে বিয়ে করে বসলো। বাবা মা তো মানেই নি, শ্বশুর শ্বাশুরিও ঠিক ভাবে মেনে নেয়নি।এতো ছোট মেয়েটি ছেলেটির উপর কি এক অভিমান করে ২ পাতা গারডিনাল ট্যাবলেট খেয়ে বসেছিলো। আমি দুদিন ধরে তার কাছে ছিলাম, ছেলেটি খুব অসহায় ভাবে আমাকে অনেক কিছু শেয়ার করলো বড় বোনের মতো। খুব ক্রিটিক্যাল অবস্থায় তাকে আমরা ঢাকা ট্রান্সফার করেছিলাম। জানিনা সে বেঁচে আছে কিনা। এতো ইনোসেন্ট দেখতে ছিলো মেয়েটি, সেই অভিমানি মেয়েটি 🙁
✿শিশুবিভাগে যখন ডিউটি, দূর থেকে একদিন দেখলাম গ্রামের এক মহিলার কোলে অসম্ভব সুন্দর একটি ফর্শা ছেলে, আমার দিকে বড় বড় চোখে তাকিয়ে আছে, জানলাম তারই বাচ্চা। মনে মনে বললাম, কেমন যেনো বেমানান লাগছে। অপেক্ষা করতে হয়নি বেশি, ফাইল হাতে নিয়েই উত্তর পেলাম, বাচ্চাটি লিউকেমিয়াতে ভুগছে।এনেমিয়ার জন্যই তাকে এমন ফর্শা লাগছে।এসেছে ব্লাড দেবে বলে। তোর ঐ তাকিয়ে থাকা এখনো ভুলিনি আমি। জন্মই হয়েছিলো তোর মরে যাবার জন্য।তবুও পৃথিবীটা অনেক সুন্দর।।
✿বছরের পর বছর ধরে একটি বাচ্চার জন্য অপেক্ষা করা এক অসহায় গ্রামের মহিলা। মুরুব্বি আত্মীয়স্বজন নিয়ে, ডেলিভারির সব আয়োজন করে এসেছিলো আল্ট্রাসনোগ্রাফি করাতে। আল্ট্রাসনোগ্রাম করে দেখলাম সে আসলে প্রেগন্যান্ট নয়। সিউডোসায়েসিস (pseudocyesis ) এ ভুগছে, যেখানে একজন পেশেন্টে পিরিয়ড বন্ধ থেকে শুরু করে প্রেগন্যান্সির সব ধরনের সাইন সিমটোম দেখা যাবে।৯ টি মাস ধরে স্বপ্নের জগতে থাকা এক মানুষ কে যখন আমি জানালাম সে আসলে মা হতে পারছেনা, সে কি চিৎকার করে কান্না তার। কত পেশেন্ট দেখেছি রোজ, কত কান্না হাসি। তবু কিছু শব্দ, কান্নার সে শব্দ ভোলার নয়।
শুধু মন খারাপের গল্প? 🙂 এবার একটা আনন্দের গল্প বলি…
✿ক্যারিয়ার নিয়ে যখন বেশ একটু চিন্তিত, আল্ট্রাসনোগ্রাফির উপর একটা কোর্স করার সুযোগ চলে এলো(সনোলোজিস্ট আমি আগেই বলেছি), আমি চুম্বকের মতো এখানেই আটকে গেলাম। একটা শিশু বীজ থেকে শুরু করে কিভাবে বেড়ে ওঠে, এ দেখা এক স্বর্গের অনুভুতি। তার প্রথম হার্টবীট শোনা, প্রথম একটু একটু নড়াচড়া, প্রথম প্লাসেন্টা তৈরি হওয়া, সব আমি দেখতে পাই, আমি প্রথম কাওকে বলি, তুমি এখন থেকে মা। নিজেকে ভাগ্যবতী মানলে দোষ হবে কি? এক মৃতপ্রায় সদ্যজন্ম নেয়া শিশুর রক্তমাখা ঠোঁটে আমি ঠোঁট লাগিয়ে আমার শ্বাস দিয়েছি, আমি অনেকের চাইতে অনেক সুখী 🙂
২১টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
ডাক্তার ! সব কিছুই আপনার পেশায় অবলকন করতে পারেন। অনেক দুঃখ বেদনা, সুখ আপনার সাম্নেই ঘটে।
এটায় নিয়তির খেলা। অনেক কিছুই জানলাম।
ধন্যবাদ।
শুন্য শুন্যালয়
ধন্যবাদ ভাইয়া পড়ার জন্য..হ্যাঁ অনেক আনন্দ কস্টের স্বাক্ষী ..
বনলতা সেন
আপনি সত্যি সত্যি ভাগ্যবান এ কথা বলতেই পারি ।
শুন্য শুন্যালয়
হয়তো বনলতা দি… -{@
মা মাটি দেশ
আপনিতো সত্যিই সূখী কি না জানিনা তবে আপনি ভাগ্যবতী এটা নিশ্চিত।কয় জনের ভাগ্যো হয় এমন পেশার সেবক হতে…সে এক অন্য জগত,জীবনের মেকানিক্স।ভাল লাগল পোষ্টটি তবে “ডাক্তার ঘরের টুকি টাকি” নামটি দেখে ভেবেছিলাম ডাক্তারী কিছু শিখতে পারব।তাই এ বিষয়ে ধারাবাহিক পোষ্টের আশা নিয়ে শুভেচ্ছা বিদায় (y)
শুন্য শুন্যালয়
লেখার শিরোনাম নিয়ে সবসময়ই সমস্যায় পরি ভাইয়া .. 🙁
পোস্ট দেবার ইচ্ছে আছে, অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া.
জিসান শা ইকরাম
এই সব আনন্দ বেদনার মহাকাব্য হচ্ছে আমাদের এই জীবন ।
খুব সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করেছেন , বিভিন্ন স্মৃতি ।
শুভ কামনা আপনার জন্য —
শুন্য শুন্যালয়
আপনাকেও শুভকামনা ভাইয়া .. -{@
নীলকন্ঠ জয়
ডাক্তার আপা, আমায় একটু দেখে দিবেন? পালস ঠিকঠাক মতো চলছে কিনা :D)
সনোলজিষ্ট রেডিওলজি নিয়ে লেখাপড়া করুক। আমাদের আল্ট্রাসনোগ্রাফীর চিন্তা নাইক্যা। \|/
সনোলজির মিউজিক গুলো একটু শিখিয়ে দিবেন ম্যাডাম?
শুন্য নাকি লিখতে পারে না? এত্তো সুন্দর গুছিয়ে কে লিখলো তবে? ভালো লেগেছে অনেক আনন্দ-বেদনার গল্প। আরো লিখতে হবে কিন্তু?
শুভেচ্ছা -{@
শুন্য শুন্যালয়
এপোয়েন্টমেন্ট আর ভিজিট রেডি করুন 🙂
লীলাবতী
এককথায় অসাধারণ হয়েছে । খুব সাবলিল ভাবে অনুভূতিগুলো প্রকাশ করেছেন আপু। টুকরো টুকরো ঘটনা , যেন জীবন্ত সব কিছু । আপনার সুখি হবার ঘটনা পরে আমিও সুখি 🙂
শুন্য শুন্যালয়
ধন্যবাদ লীলাবতী দি…ভালো থাকুন সবসময় ..
ছাইরাছ হেলাল
নিজ দায়িত্বেই পড়লাম , ‘বকবক’ যদি এই-ই হয় তবে তা শুনতে
বোধ করি আমার মত অনেকেরই আপত্তি থাকবে না ।
ডাক্তারদের অনুভুতি আছে ছুরি- চাকুর মধ্যেও !
লেখা কিন্তু সুন্দর হয়েছে ।
শুন্য শুন্যালয়
অনুভূতি কম থাকা কিন্তু ভালো, নইলে সমস্যা বাড়ে… 🙂
খসড়া
আপনার এই ওনুভূতি গুলি আমাদের কাছে শেয়ার করার জন্য ধন্যবাদ। আসলে আমরাতো এই খবরগুলি সেভাবে পাই না।
শুন্য শুন্যালয়
পড়েছেন খুব খুশি হয়েছি ভাইয়া ..ভালো থাকুন.
হতভাগ্য কবি
গল্পের পেছনের গল্প গুলো অতি কঠিন হয়
শুন্য শুন্যালয়
হ্যা অনেক কঠিন হয়, যার সবটুকু আমাদের আর জানা হয়না…
আফ্রি আয়েশা
চমৎকার একটা পোস্ট । একটানে পড়ে শেষ করলাম 🙂
শুন্য শুন্যালয়
তুমি অনেক দিন পর পর কোথা থেকে আসো ?
নিয়মিত লেখো না কেনো?
এখন থেকে আসবে…
মশাই
৩য় লিখাটি মনকে খারাপ করে দিতে যথেষ্ট আমারও খারাপ লেগেছে।