লাগে ঝালমুড়ি চা–না–চু—র!!সাথে ডুগডুগির বাজনা।।
ছেলেমেয়ে আওয়াজ শুনেই দৌড়!!আগেরদিনে ছেঁড়া স্যান্ডেল ,কাচের বোতল বা একটা ছেঁড়া বই বা খাতা থাকলেই হলো।।পাওয়া যেতো মজার স্বাদের এই খাবার।লোভনীয় এই খাবার বানাতে লাগে ভেজা ছোলাবুট,চানাচুর, মুগডাল ভাজা,বাদাম ভাজা,সরিষার তেল,কাঁচা পেঁয়াজ আর মরিচ!!সাথে একটু তেঁতুলের টক!!জিভে জল এলো মনে হয় সবার!!
তাদের বেশভুষাও ছিলো আকর্ষণীয়!ঢোলা পায়জামা,বিভিন্ন জোড়া দেয়া রঙ্গিন কাপড়ের পান্জাবি।।আর বেঢপ টুপি!!
যার কথা বলছি,নাম তার কালাম! একদিন উনি না আসলেই,মনে হতো কতোদিন নাই!!
আমার বোনের বিয়ে উপলক্ষ্যে একবর পাশের উপজেলায় গিয়েছিলাম বেড়াতে। আপুর বড় ভাবি গ্রাম ঘুরিয়ে দেখাচ্ছিলেন। উনি হাঁটতে হাঁটতে বললেন,জানো পাশের গ্রামে;ঐ যে বাঁশঝাড় দেখা যায়! ওর পাশেই আমার বাড়ি।।কাল নিয়ে যাবো।।
আমরা পরদিন মহাখুশি।।আগে আগে রেডি।নতুন গ্রাম দেখবো বলে! ভাবীর বাড়ি গিয়ে তো আমরা অবাক! কি ছিমছাম সাজানো বাড়ি।ওনার বাবাকে দেখে কেমন জানি চেনা মনে হলো।
কোথায়জানি দেখেছি।।বারবার চোখের সামনে ভাসছে!!ওনারা তিন ভাইবোন ,সবাই শিক্ষিত। উনি বড়।।মেজো দশম শ্রেণি,ছোট ৫ম শ্রেণি!!কথা শুনে মনে হলো না, গ্রামে থাকেন।ওনার বাবা বেশিক্ষণ কথা বললোনা ।কাজে গেলেন।
কিন্তু আমার খটকা কাটলো না।।খাওয়া দাওয়া শেষে বাড়ি ফিরছি।ভাবিকে নানা প্রশ্নও করছি।।যা জানতে চাচ্ছি ,মিলছেনা।।
আমরা শহরে চলে এলাম!!
বিকেলে আবারও সেই ডুগডুগির আওয়াজ!
চা–না–চু—র ভাজা।গরম গরম!!
কি এক অজানা আকর্ষণে ছুটে গেলাম।এবার আর চিনতে কষ্ট হলোনা ! ভাবির বাবাই এই লোক।
দিনে যারা প্রচণ্ড পরিশ্রম করে,মানুষকে মজা দিয়ে ,ঘাম ঝরিয়ে ছেলেমেয়েদের বুঝতেই দেননা ;কি কষ্ট করে উপার্জন করে পরিবারকে ভালো রাখেন। প্রতিটি ছেলেমেয়েই তার শিক্ষিত।।তিনি বড়াই করেননা!কিন্তু গর্ববোধ করেন।দিনশেষে পরিবারের হাসিমুখ দেখে ভুলে যান সবকিছু।
মুখোশের আড়ালেই থেকে যায় না বলা ইতিহাস! !
২১টি মন্তব্য
মাহবুবুল আলম
ঝালমুড়ি বেচতে বেচতে সুদূর শৈশবে নিয়ে গেলেন। জিভে থেকে কিছুটা বেয়াড়া জল গড়িয়ে পড়লো।
ভাল লাগলো পড়ে।
শুভ কামনা।
আরজু মুক্তা
ভাগ্যিস আচারের কথা বলা হয়নি
মাসুদ চয়ন
সেই স্কুল জীবনের আবহে ফিরে গিয়েছিলাম।সুন্দর বহিঃপ্রকাশ”
আরজু মুক্তা
স্কুল জীবন ভোলা যায়না!
তৌহিদ
বাবারা এরকমই হয়। সন্তানের জন্য তারা কত কিছু করে। অথচ কিছু সন্তান বাবা মায়ের পরিচয় দিতে লজ্জা পায়!!
গ্রাম ঘোরার সাথে বর্ণনার সাথে একটি সুন্দর বিষয় নিয়ে লিখেছেন আপু। ধন্যবাদ আপনার প্রাপ্য।
আরজু মুক্তা
আচ্ছা এই সন্তানরা কি অমানুষ হয়।না প্রকৃতি তাকে একই শিক্ষা দেয়
তৌহিদ
তারা অমানুষই বটে।
নাজমুল হুদা
দারুণ , একটি শিক্ষণীয় গল্পের শৈশবের স্মৃতি আঁকড়ে আছে। মানুষের এমন হওয়ায় উচিত। আজকাল হিংসার দাবালন মনুষ্যত্ব পুড়িয়ে দিচ্ছে সবার।
ভালো লাগলো আপু গল্পটি । শুভ কামনা ।
আরজু মুক্তা
হিংসা নয় অহিংসা হোক পরম ধর্ম
জিসান শা ইকরাম
ঝালমুড়ির কথায় ছোট বেলায় চলে গেলাম। এখনো খুব পছন্দ করি আমি এটি। ভ্রমন পথে এদের দেখলে কিনে খাবোই।
সমাপ্তিটা দারুন হয়েছে। অনেক বাবা আছেন এমন, পরিশ্রম করে পরিবারের মুখে হাসি ফোটান, পরিবারকে বুঝতে দেননা।
মুখোশের আড়ালে আসলেই চাপা থাকে অনেক ইতিহাস।
আরজু মুক্তা
শুভকামনা!
ঝালমুড়ি দেখলে আমিও থমকে দাঁড়াই
ছাইরাছ হেলাল
বাবারা বাবাই থেকে যান দিন শেষে।
আরজু মুক্তা
এর জবাব নেই।।বাবা,,, বাবাই
রেহানা বীথি
ইশ্, ঝালমুড়ি! কত যে স্মৃতি মনে পড়ে গেলো!
এমন কষ্ট করে এগিয়ে চলা মানুষদের শ্রদ্ধা জানাই।
ভীষণ সুন্দর লিখিছেন।
আরজু মুক্তা
শ্রমজীবী মানুষের প্রতি থাকলো শ্রদ্ধা।।
শুভকামনা আপনার জন্য
সাবিনা ইয়াসমিন
প্রকৃতি বাবাদের কাছে সন্তানের ভালো থাকা আর সুন্দর সঠিক মানুষ হিসেবে গড়ে তোলাই মূখ্য। নিজের কষ্টকে তারা হাসিমুখে বরণ করে নেন সন্তানের জন্যে।সুন্দর গল্প।
শুভ কামনা 🌹🌹
আরজু মুক্তা
বাবারা কষ্টই করেন তাদের জন্য
সঞ্জয় মালাকার
চমৎকার একটি লেখা…
মনে করিয়ে দলেন শৈশব স্মৃতি
বাবার হাত ধরে স্কুলে যাবার কথা!
ভালো থাকো বাবা,
ধন্যবাদ আপু।
আরজু মুক্তা
শুভকামনা!!!
শৈশব ভোলা যায়না
প্রদীপ চক্রবর্তী
বাহ্!
হারিয়েছি আজ শৈশবের বর্ণিল স্মৃতি।
এই স্মৃতি ভুলে যাওয়ার নয়।
বেশ ভালো লেখনী দিদি।
আর বাবা মানেই অফুরন্ত ভালোবাসার ব্যাংক।
আরজু মুক্তা
শৈশব বরাবরই মধুর