লকডাউনের শুরুর দিকে ঘরে বসে আমার দিনগুলো খুব বোরিং কাটছিলো। পরে খেয়াল করলাম এইভাবে সারাদিন ঘরে বসে না থেকে বাসার কাছে সাগর পাড়ে গিয়েও তো নীরবে বসে থাকা যায়। করোনার কারণে ওখানে মানুষজন খুব একটা আসে না। আসলেও কেউই কখনো পাশাপাশি বসে না। সাগরের কলতান সাথে ঠান্ডা-শীতল বাতাস সবাইকে কেমন বোবা করে দেয়। নীরবে বসে থাকতেই সাবই পছন্দ করে। এমন অনেক দেখেছি যে লোকে দলবেঁধে সাগর পাড়ে গিয়েও সবাই চুপচাপ বসে আছে। কেউই কারো সাথে কথা বলছে না। সবাই বসে বসে প্রকৃতির বৈচিত্রময় রুপে মোহিত হচ্ছে কিংবা প্রকৃতি তার বৈচিত্রময় রুপে সবাইকে মোহিত করে রেখেছে।
এরপর থেকে আমি প্রতিদিন বিকেলে সাগর পাড়ে গিয়ে সময় কাটাতে শুরু করলাম। কিন্তু, আমি সাগর পাড়ে প্রতিদিন যে জায়গায় গিয়ে বসে থাকি তার চারপাশ আজ একটু অন্যরকম ছিল। মেঘলা বিকেল হওয়ায় মানুষজন ছিল খুবই কম। খেয়াল করে দেখলাম এমন গভীর নীরবতার মধ্যেও একটা প্রেমিক যুগল চুপচাপ বসে আছে। ওরা হয়তো আজ জীবনের অন্যতম সুন্দর মুহূর্ত কাটাচ্ছে। দেখে মনের মধ্যে কেমন যেন এক ধরনের সুখ অনুভব করলাম। মনেহলো সুখের জন্য খুব অল্প কিছুর প্রয়োজন।
আমার বসার জায়গার সামনে অনেকদূর পর্যন্ত লম্বা ধান গাছের মতো গুচ্ছ গুচ্ছ ঘাস, এরপর কাঁদামাটি। তারপর যতদূর চোখ যায় টেউ আর টেউ। কিন্তু আজ ভরা জোয়ার থাকায় ঘাসগুলো পানির নিচে আর সাগরের টেউগুলো এসে লাগছে আমার পায়ের তালুতে। একপাশে বেঁধে রাখা নানা রঙের নৌকাগুলো বাতাস ও টেউয়ের তালে তাল মিলিয়ে দোল খাচ্ছে। কোন এক সিনেমায় দেখেছিলাম একদল কাশ্মীরি শিশু রঙবেরঙের পোশাক পড়ে নানা ভঙ্গিমায় গাছের নিচে নাচছে। নৌকাগুলোর দিকে তাকানোর পর সিনেমার ওই দৃশ্য চোখের সামনে ভেসে উঠলো।
কিছুক্ষণ পর পর মাছ ধরা নৌকাগুলো কেমন ছন্দে ছন্দে লাফিয়ে চলে যাচ্ছে। কোন ভাবনার ভেতর যাওয়ার আগেই নৌকাগুলো অদৃশ্য হয়ে যায়। দূরে অনেক দূরে বড় বড় জাহাজগুলো সাড়িবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে আছে। মাঝেমধ্যে হুট করে চোখের সামনে দিয়ে দুই একটা কাক নীরবে উড়ে যাচ্ছে। এসব দেখতে দেখতে আমার বেশখানিকটা সময় কেটে গেলো। ততক্ষণে সাগরে ভাটার টান চলে আসছে। পানি পায়ের তালু থেকে ক্রমশ দূরে সরে যাচ্ছে। ডুবে থাকা ঘাসগুলো ধীরে ধীরে মাথা তুলছে। অল্পকিছু পাখি ডানা ঝাপটিয়ে উড়ে গেছে। প্রেমিক যুগল বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়েছে। জাহাজগুলোতে অনেকটা উজ্জ্বল তারার মত বাতি জ্বলে উঠছে। আমাকে অন্ধকারে রেখে দিনের আলো বিশ্রামে চলে গেছে। দূরের কোন এক মসজিদ থেকে ভেসে আসছে হাইয়্যা আলাস্সালাহ্, হাইয়্যা আলাস্সালাহ, হাইয়্যা আলাল্ ফালাহ, হাইয়্যা আলাল্ ফালাহ।
২৭-০৬-২০২০
১৭টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
দারুন লিখেছেন একান্ত অনুভূতি। মনে হচ্ছিল পুরো ঘটনাটা আমার চোখের সামনে ঘটলো। ভালো থাকুন সবসময় শুভ কামনা রইলো
আকবর হোসেন রবিন
ধন্যবাদ আপু।
আরজু মুক্তা
আপনি প্রকৃতিতে হারিয়ে গেছেন। নতুন করে খুঁজে পাওয়া এক বিশাল প্রাপ্তি।
শুভকামনা
আকবর হোসেন রবিন
হ্যাঁ। এখন থেকে সোনেলায় নিয়মিত থাকবো। ধন্যবাদ আপু।
ফয়জুল মহী
অনন্যসাধারণ লেখা I
আকবর হোসেন রবিন
অনন্য হতে বা অনন্য কিছু করতে ভয় লাগে। স্রোতে গা ভাসানো লোকদের সবাই পছন্দ করে, অন্তত বাংলাদেশের কালচার এমন।
ধন্যবাদ, ফয়জুল মহী ভাই।
আলমগীর সরকার লিটন
চমৎকার অনুভুতির দাদা
আকবর হোসেন রবিন
আলমগীর সরকার লিটন ভাই, ভালোবাসা নিবেন।
ইঞ্জা
চট্টগ্রামের ছেলে বলেই আপনার অনুভূতিতে আমি মিলিয়ে গেলাম, খুব ভালো লাগলো।
আকবর হোসেন রবিন
বাহ্! ভাইয়ার বাড়ি চট্টগ্রামের কোন জায়গায়?
ইঞ্জা
শহরেই, পূর্ব নাসিরাবাদ।
মনির হোসেন মমি
এমন সুন্দর পরিবেশে যার বসবাস তার আবার লেখা লিখতে ভাবনা কী।লেখা আপনাআপনিই চলে আসবে। দারুণ লিখেছেন যেন একটি চমৎকার সন্ধ্যা কাটালাম।
আকবর হোসেন রবিন
হ্যাঁ ভাই, এখন থেকে সোনেলায় নিয়মিত লিখব।
ভালোবাসা নিবেন, মমি ভাই।
মনির হোসেন মমি
ধন্যবাদ।শুভ কামনা।
নিতাই বাবু
মনে করিয়ে দিলেন সেই ১৯৭৬ সালের কথা। যখন মহেশখালী কাজ করতে গিয়েছিলাম। আজ আপনার লেখা পড়ে আমি যেন ঠিক সেই সময়ে ফিরে গিয়েছি। বসে রয়েছি সাগর পাড়ে।
খুব ভালো লাগলো আপনার লেখা। তো জানতে পারি কি, আপনার এই সাগর পাড়টা কোথায়?
আকবর হোসেন রবিন
আমি চেয়েছি লেখাটা অন্তত একজন হলেও মনোযোগ দিয়ে পড়ুক। পড়ে জায়গাটা কোথায় তা জিঙ্গেস করুক। আপনার মন্তব্য দেখে ভালো লেগেছে। দাদা, ভালোবাসা নিবেন।
জায়গাটা হচ্ছে চট্টগ্রামের দক্ষিণ কাট্টলী। এই জায়গায় অনেক রোড দিয়ে যাওয়া যায়। তবে মানুষ সবচেয়ে বেশি যে রাস্তাটা ব্যবহার করে তা হচ্ছে, রানী রাসমনি ঘাট।
নিতাই বাবু
মন্তব্যের প্রত্যুত্তরে জানানোর জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ জানাচ্ছি। এই জায়গাটায় যাওয়া হয়নি কখনো। আমি মনে করেছিলাম, হয়তো কক্সবাজারের সাইটে কোনওএক জায়গা।