জীবন যুদ্ধ ৪র্থ পর্ব

রেজওয়ান ২০ সেপ্টেম্বর ২০১৭, বুধবার, ১২:৫৪:৪৮অপরাহ্ন গল্প ৫ মন্তব্য


সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে বিকেল সাড়ে পাঁচটার দিকে তিন জন স্কুল থেকে বেরিয়ে সোজা মসজিদের দিকে গেল আসরের নামাজের জন্য। নামাজ শেষে নাবিলের বাসায় সেখান থেকে নাবিলের ব্যাগ গুছিয়ে অয়ন আর তাজ নিচে নেমে এলো নাবিল নিচেই ছিলো বাইকে বসা। অয়ন ব্যাগটা নাবিলের বাইকের পেছনে বেধে বললো চল যাই ইফতারের সময় হয়ে আসছে যদিও বাইকে করে বাসায় যেতে পনের মিনিটের বেশি লাগবে না তার পরেও দেরি করে লাভ নেই। তাজ অয়নের সাথে কোলাকুলি করে বললো বাসার চাবি তোদের দুইজনের কাছেই আছে খেয়াল রাখিস বাসা আর স্কুলের বলেই নাবিল বাইক স্টার্ট দিয়েই সান গ্লাস চোখে দিলো। ইদানিং খুব তাড়াতাড়ি নাবিলের চোখ ধুসর হয়ে যায় আর মনে মনে লজ্জিত হয় কারণ এই দুইটা ছেলেকে ছেড়েই নাবিল হীরাকে প্রাধান্য দিয়েছিলো সব চায়া বেশি।
এসব ভাবতে ভাবতেই আল্লাহ্‌ হাফেজ বলে নাবিল বাড়ির দিকে রওনা দিলো। প্রায় পনের মিনিট পরে নাবিল তাদের বাসার সামনে এসে ফোনটা হাতে নিলো। মা কে কল দিলো মা মনে হয় ফোন হাতে নিয়েই বসে ছিলেন এক রিং হতেই জিজ্ঞেস করলো
বাবা কই তুমি?
এইতো মা বাসার নিচে। বাবা কোথায় ?
সবাই ই বাসায় তাড়াতাড়ি আসো বলেই মা বারান্দায় দাড়ালো নাবিল দেখেই ফোন কেটে হাত নারলো। মা ইশারায় বললো দো’তলায় আসার জন্য। নাবিল বাইক পার্ক করে বাসায় যেতেই মা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে কাঁদতে বললো এত দেরি কলা ক্যান কখন থেকে তোমার বাবা আমি অপেক্ষা করছি। যাও ফ্রেশ হয়ে টেবিলে আসো ইফতারের সময় হয়েছে। এমন সময় বাবা সামনে এলো কিন্তু কিছু বললো না, নাবিল ই গিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো কেমন আছ বাবা? বলেই কেঁদে দিলো। বাবার ও চোখ ধুসর হয়ে আসছে তাই না ঘুরেই বললো ভাল আছি! ফ্রেশ হয়ে আয়, ইফতার-নামাজের পরে কথা হবে।

নামাজ পড়ে নাবিল ড্রইং রুমে গিয়ে দেখলো অনেক মেহমান বসে নিজেদের মধ্যে কথা বলছে এবং অনেক বাচ্চা-কাচ্চা খেলা করছে। বেশিরভাগ বড়দের চিনলেও বাচ্চাদেরকাউকেই চিনছে না। নামাজের পরে মা-বাবাও এলেন। মা সবার সাথে কথা বলিয়ে দিল নাবিলকে। সবাই সৌজন্য সাক্ষাতের পড়ে একে একে সবাই কথা বলতে শুরু করলো নাবিলের সাথে। পড়াশুনা,কাজ, জীবন-যাপন নিয়ে। নাবিলের মোটেও ইচ্ছা করছে না এইগুলা নিয়ে কথা বলতে। হালকা কথা বলে নাবিন সাদে গিয়ে সিগারেট জ্বালালো কিছুক্ষন একা থাকতে চায় সে।মনে অনেক কিছু ঘুরপাক খাচ্ছে। কি করবে, কিভাবে থাকবে এই সব নিয়ে…
বেশ কিছুক্ষন পরে নিচে নেমে এলে নাবিল দেখলো সবাই বিদায় নিয়েছে দু’জন কাজিন ছাড়া।তারা বলেছে আজ নাবিল দাদার সাথে থাকতে চায়।নাবিল এটা আশা করেনি, অনেক দিন ভাল ঘুমায় নই নাবিল।আগামিকাল ২৭ রমজান সারারাত নামাজ পড়তে চায় তাই আজ রাত টা ঘুমাতে চেয়েছিলো কিন্তু আর হলো কোথায়।
রাত বারোটার দিকে নাবিল তার ছোট ভাইয়ে রুমে ঢুকলো, অনেক বড় হয়ে গিয়েছে সে। ক্লাস ৭ এ পড়ে। নাবিল যখন বাড়ি ছেড়ে ছিলো অর্কের বয়স ছিলো মাত্র ২ বছর।
রুমে ঢুকতে দেখে অর্ক বই বন্ধ করে বললো…
-দাদা আসো ভিতরে।এই প্রথম দুজনের মধ্যে কথা হলো।
-নাবিল বলে উঠলো অনেক বড় হয়ে গিয়েছিসরে তুই।
-তারপর কেমন চলতেছে পড়াশুনা?
– এইতো ভালই। তোমার?
নাবিল চুপ হয়ে গেল। প্রায় ৬ বছর হতে চললো নাবিল পড়াশুনা বাদ দিয়েছে। SSC এর পরে কলেজে ভর্তি হয়েছিলো ঠিক ই কিন্তু পড়াশুনা করেনি।
অর্ক আলতো করে ধাক্কা দিয়ে জিজ্ঞাসা করলো কি হয়েছে দাদা কোথায় হারিয়ে গেছো বলেই হেসে দিলো।
-না এইতো আছি বলে বিড়বিড় করে বললো পড়াশুনা শুরু করা দরকার… আচ্ছা থাক, আমি রুমে যাই একটু রেস্ট নেই বলে উত্তরের অপেক্ষা না করে নাবিল নিজ রুমে চলে গেলো। শরীরটা ভাল লাগছে না গাঁজা নেয়া হয়নিতো! নাবিল বাসায় ডুকার সময় প্রতিজ্ঞা করেছে গাঁজা ছেড়ে দিবে যত কষ্টই হোক। ঘুমানোর চেষ্টা করছে এমন সময় দুই কাজিন সহ নাবিলের মা রুমে ঢুকলো। লাইট জ্বালিয়ে দেখে নাবিল শুয়ে আছে। মা’কে দেখে নাবিল উঠে বসলো।
-মা আসো, বসো আমার পাশে।
-কেমন আছিস তুই ? কত্ত রোগা হয়ে গেসিস।
– হা হা হা মা তুমি আমাকে লাস্ট দেখেছ প্রায় ৬ বছর আগে তখন আমি ১৬ বছরের ছিলাম আর এখন ২১।
– ৬ বছর না ৫ বছর ৯ মাস ১৭ দিন গত কাল পর্যন্ত।
– নাবিল মায়ের কোলে মাথা রেখে বললো সরি মা অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোমাদের।
– মা কথা ঘুরিয়ে বললো এরা তর মেজো কাকার ছেলে মনে আছে ওদের কথা? নাবিল চুপ করে রইলো। কারণ কাঞ্চনকে সে হীরার সাথে দেখেছে।
মা বললো তোর চেয়ে মেজো ছেলে ১.৫ বছরের ছোট হৃদয় আর বড় জন কাঞ্চন প্রায় ২ বছরের বড় হবে। আজ তোর সাথে থাকতে চাচ্ছে। থাকুক কি বলিস?
– আচ্ছা মা সমস্যা নাই। থাকুক এখানেই।
– আচ্ছা তা হলে আমি যাই ৩টার দিকে উঠে সেহেরীর জন্য রান্না করতে হবে, একটু ঘুমাই। তোরাও ঘুমিয়ে পর বেশি রাত জাগিস না ঠিক আছে?
– আচ্ছা মা চিন্তা করো না তুমি রেস্ট নাও গিয়ে।
আয় তোরা বোস এখানে দারিয়ে আছিস কেন? তুই করে বলাতে মনে হলো কাঞ্চন একটু মন খারাপ করেছে নাবিল পাত্তা দিলো না। জিজ্ঞাসা করলো কেমন চলতেছে দিনকাল? কি করিস তোরা?
হৃদয়- এইতো ডিসেম্বরে HSC দিবো, এখনো প্রায় ৮ মাস বাকি। আপনি কিসে পড়েন ভাইয়া?
নাবিল- আমিও তোর সাথে পরীক্ষা দিবোরে। ৬ বছর গ্যাপ আছে আমার, বলেই হা হা করে হেসে উঠলো।
-তো কাঞ্চন তোর কি অবস্থা?
– এক্সকিউজমি আমি তোমার চেয়ে বড় এবং মাস্টার্সে ভর্তি হয়েছি সো একটু সম্মান দিয়ে কথা বললে খুশি হতাম।
– একথা শুনেই নাবিল হা হা করে উচ্চস্বরে হেসে উঠলো। শোন কাঞ্চন আমি নাবিল নাম টা একবার বাহিরে গিয়ে বলিস তাহলেই বুঝবি কে কাকে সম্মান দিবে, কে কাকে ভয় পেয়ে কথা বলবে। যাই হোক বাসায় এসেছি তাই বিবাদ করতে চাই না। আমি আপনি করে বলতে পাড়বো না যদি কথা বলতে মনে চায় বলিস না মনে চাইলে এড়িয়ে চলিস।
কাঞ্চন হৃদয়ের দিকে ঘুরে রাগের স্বরে বললো চল হৃদয় আগেইবলেছিমা এখানে থাকার দরকার নেই, আমি জানতাম এমন টা হবে।
হৃদয়- আমিও জানতাম তুমি একটা ঝামেলা করার চেষ্টা করবে তাই আগেই বলেছিলাম যদি এমন কোনো চিন্তা থাকে তাহলে তোমার থাকার দরকার নাই কিন্তু তুমি ই থেকে গেলে। আর এ খন চলে যেতে চাচ্ছো রাত প্রায় ১২ টা মানুষ কি বলবে? কাকা কাকি কি মনে করবে?যদি এ রুমে থাকতে না মনে চায় ড্রইং রুমে থাকো আমি দাদার সাথে এ থাকবো।
– মা’র চেয়ে মাসির দরদ বেশি। আচ্ছা সমস্যা নাই দেখবো এত তেজ কত দিন থাকে? সব ব্যাবস্থা হয়েছে দেখে নিস বলেই কাঞ্চন চলে গেল রুম থেকে।
নাবিল- কি বলে গেলো ও? কিসের ব্যাবস্থা?
হৃদয়- আমি জানি না কিন্তু তোমার গ্রুপের এক ছেলে ছিলো না হীরা? কাঞ্চন ওদের সাথেই থাকে আমি বেশ কয়েকবার দেখেছি। হীরা পার্সোনালি কাঞ্চনের সাথে বেশ কয়েকবা দেখা করেছে।
– তাই কি বলিস? হীরা তো ভাল ছেলে না। মানা করেদিস ওদের সাথে থাকতে, ওরা সব নেশার জগতের ছেলে। পুরা গ্যাংটা ই ড্রাগ নিয়ে কাজ করতেছে।
– হুম দাদা আমি জানি একটু একটু। কাঞ্চন ও খায় কি কি যেন। জিজ্ঞাসা করলে বলে কাশের সিরাপ। কাশি হয়েছেতো তাই। কিন্তু আমি জানি এটা কাশের সিরাপ না। কারণ এক বোতোল একেবারে ই খেয়ে ফেলে। প্রতিদিন ই খায় জান দাদা?
– বলিস কি? সর্বনাশ হয়ে যাবে এগুলা খেলে। কাকা-কাকি জানে না? কিছু বলে না?
– সবাই জানে, আম্মা বা আব্বা কিছু বললে চিল্লা-চিল্লি করে। টাকা না দেয়ায় একদিন তো বটি নিয়ে মা কে মারতে গেছিলো আমি আর আব্বা মিলে থামাইছিলাম। না থামালে কি যে হতো আল্লাহ্‌ ই জনেন! বাসায় চুরি করে এটা ওটা বেচে দেয়। এ নিয়ে অনেক অশান্তিতে আছি দাদা। বাহির থেকে বুঝা যায় না কিন্তু আমরা কেউ ভাল নাই দাদা।
– তুই তো কিছুর সাথে জড়িয়ে পরিস নি?
– না দাদা আমি খারাপ কিছুর সাথে জরাইনি কিন্তু তোমার স্কুলে অনেকবার খাবার নিয়ে গেছিলাম বন্ধুরা মিলে।আমার এক বন্ধু তার জন্মদিন পালন করতে চাচ্ছে আগামী মাসে। বাচ্চাদের একবেলা খাওয়াতে চায়। চিন্তা করছি অনুমতি নিতে যাবো ঈদের পরে।
– ভাল করছিস, যাস ঈদের পরে, বেচে থাকলে আমিও থাকবোনে তোদের পার্টিতে হা হা।
– এইগুলা কি বলো দাদা মরবা কেন? এইগুলা বলেতে হয় না।
-আচ্ছা আচ্ছা ঘুমিয়ে পর কাল ২৭ রমজানের রাত নামাজ পড়বো সারা রাত, একটু ঘুমিয়ে নেই আমিও। বলে লাইট অফ করে শুয়ে পরলো।
“গল্পের সকল স্থান, নাম ও চরিত্র কাল্পনিক কিন্তু গ্রাম-বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে অতি সাধারণ ঘটনা, কারো সাথে মিলে গেলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন”
To be continued

৫৯১জন ৫৯১জন
0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ