জীবন যুদ্ধ শেষ পর্ব

রেজওয়ান ২ জানুয়ারি ২০১৮, মঙ্গলবার, ০৭:১৯:৪১অপরাহ্ন গল্প ৫ মন্তব্য


নাবিল ক্যাম্পাসে পৌছাতেই দেখে গায়াত্রী বাস থেকে নামলো।
– হাই নাবিল! কেমন আছো?
– এইতো ভাল। তুমি?
– আমি সব সময় ই ভাল থাকি। চল কোথাও বসি।
– পার্কের দিকে যাবে নাকি কফিশপে?
– চল পার্কের দিকেই যাই।
দু’জনে পার্কে গিয়ে বসলো লেকের পাশে। অনেক্ষন বসে আছেদু’জনে কেউ কোনো কথা বলে না। নাবিল ই মুখ খুললো।
– গায়া তোমার পছন্দের চকলেট এই নাও।
– এই সব তোমাকে কে আনতে বলেছে হুম?(আদর মাখা রাগান্বিত সুর)
– না কেউ বলেনি এমনি আনলাম। একটা ভাল খবর আছে তাই।
– কি ভাল খবর! বলো তাড়াতাড়ি…
– যে ক্লাবে পার্টটাইম জব করতাম সেখানে পার্মানেন্ট জব হয়েছে অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার (নাইট শিফট)
– ওয়াও!! এতো খুব ভাল খবর! আগে জানাওনি কেন?
– গত কালকেই জানলাম। মজার একটা কাহিনী ঘটেছে শুনবা?
– হুম বলো
– গত রাতে নিউজ টা শুনার পরেই বারে এসে দু’পেগ একটা গ্লাসে ঢালি সাথে আইস আর কোক মিসাই তারপর গ্লাসে চুমুক দিয়ে ফোনটা বের করি তোমাকে জানাবো বলে আর তখন ই তুমি কল দাও। আমি একটু অবাক হই তাই প্রথমবার কলটা রিসিভ করিনি।
– হুম্ম এটাই মনের মিল। সেকেন্ড কল টা করতে চাচ্ছিলাম না মনে করছিলাম তুমি হয়তো ব্যস্ত তারপরেও কি মনে করে যেন সেকেন্ড টাইম কল করলাম আর তুমি দেখা করতে বললে।
– হুম চলো উঠে কোনো কফি শপে বসি।
– এখন কফি খাবে? তোমাকে না বলেছি বেশি ক্যাফেইন না নিতে? তারপরেও নিচ্ছো? সিগারেটও ছারছো না নাবিল!
– একটু কফি ই তো খাই। রেগুলার ড্রিঙ্কসতো করি না তাইনা? আচ্ছা কথা দিলাম সিগারেটের অলটারনেটিভ পেলেই ছেড়ে দিবো।
– হুম কফি খাও তাও সুগার ছাড়া ব্ল্যাক কফি! এতে শরীরের অনেক ক্ষতি হয় জানো?
– আচ্ছা বাদ দাও, বিবাদে জ্বরাতে চাচ্ছি না। চলো এখান থেকে উঠা যাক।
– আচ্ছা চলো একটু শপিঙে যাবো চিন্তা করছিলাম চলো যাই।
আচ্ছা বলেই গায়া-নাবিল ক্যাম্পাসের অপরদিকে গেল, পাশেই শপিংমল।
হালকা কেনা কাটা শেষে নাবিল বললো…
– চলো ডিনারে যাবো কাছেই একটা সি-ফুড রেস্টুরেন্ট আছে।
– ওয়াও ম্যানেজার সাহেব ডিনারে নিতে চাচ্ছে ব্যাপার কি?
– কোনো ব্যাপার না চলো তো বেশি কথা বল কেন? ( হাসির সুরে)
দু’জনে রেস্টুরেন্টে গিয়ে মাঝখানের একটা টেবিল নিলো। এখানকার ম্যানেজার চাইনিজ ম্যান। বয়স ৫০ এর কাছা কাছি হলেও বেশ বন্ধুশুলভ। নাবিলকে দেখেই এগিয়ে এলো

– Hello young boy how are you?
– Hi buddy! Yap I.am good. How about you?
– I am fine too dear. Girlfriend hmm!!
– No no.. not like that we are just friend.
– Opps I am sorry beautiful girl.
Gaya- It’s okay sir. No problem.
– Thank you. Enjoy your dinner with a great time বলেই একজন ওয়েটারকে ডেকে অন্যদিকে চলে গেলে গায়া নাবিলকে জিজ্ঞাসা করলো আর কতদিন একা থাকবে এবার তো একটা গার্লফ্রেন্ড ম্যানেজ করো। নাবিল কিছু না বলে স্কুইড ডিপ ফ্রাই ১ সেট, ফিস ফিঙ্গার ২ সেট, মিক্সড ভেজিটেবল ও একটা স্টিম ফিস অর্ডার করলো। সাথে একটা অরেঞ্জ ও আপেল জুস। গায়াত্রী তখন থেকেই দেখে যাচ্ছে সব তার পছন্দের খাবার অর্ডার করা নাবিলের পছন্দের কিছুই অর্ডার করেনি।
– কি ব্যাপার তোমার ফিস কাটলেট অর্ডার করলে না কেন?
– এমনি ইচ্ছা করছে না। তাই ফিস ফিঙ্গার নিলাম।
– আচ্ছা একটু আগে একটা কথা বললাম এড়িয়ে গেলে কেন?
– কোন কথা? (না বুঝার ভান)
– গার্লফ্রেন্ডের কথা ! এমন ভাব ধর যে সুনোই নাই মনে হয়!!
– ও আচ্ছা। এমনি। সময় হলে এমনেই হবে। আমি না আমাকে যে ভালবাসবে তাকেই বিয়ে করবো। লোকদেখানো গার্লফ্রেন্ড নিয়ে ঘুরার ইচ্ছা ছিলোনা কোনোসময় এখন ও নেই।
– এটা ভাল তাড়াতাড়ি খুজে নাও অনেকদিন কোনো ওয়েডিংয়ে যাওয়া হয় না।
– হুম সময় হলে সব হবে বলে একটা সিগারেট বের করলো নাবিল। হাত থেকে সিগারেট কেড়ে নিয়ে ধমকের সুরে গায়াত্রী বললো খাওয়ার ৩০ মিনিট আগে ও খাবারের ১ ঘন্টা পরে কোনো সিগারেট জ্বালাবে না বলে দিলাম। নাবিল ও ঘাড় কাত করে হ্যা সূচক সম্মতি জানালো।
একটু পরে খাবার এলে নাবিল-গায়াত্রী খাওয়ার যুদ্ধে নেমে পরলো। ফর্মালিটি মেইন্টেনের কোনো বালাই ই নাই এই দুই জন যখন এক সাথে থাকে।
ডিনার শেষে ওয়েটার বিল নিয়ে এলে ব্যাংক কার্ড দিয়ে দিলো। বিল পেমেন্ট শেষে ওয়েটার কার্ড নিয়ে এলে ১০ ডলার তাকে দিয়ে গায়াত্রীকে নিয়ে বেরিয়ে এলো নাবিল।
গায়াত্রীকে বাসায় পৌছে দিয়ে নিজ বাসায় এসে জুরিসপোটেন্স বইটা নিয়ে বসলো। সামনের মাসেই ডিপ্লোমার ফাইনাল এক্সাম। পরের মাসেই আমার অনার্সের! নাবিল ভাবছে কেন যে দু’টো কোর্স একসাথে শুরু করছে এখন যে কত পরিশ্রম করতে হয় নাবিলের তা শুধু সে ই বুঝে। দিন এভাবেই যাচ্ছে। পড়াশুনা ও জব নিয়েই ব্যস্ত এখন অন্য কোনো দিকে মনযোগ নেই নাবিলের। আজ প্রথম ব্যাসিক স্যালারি পেয়েছে নাবিল বেশ খুশি খুশি লাগছে। ভাল মত পরীক্ষাও শেষ হয়েছে ডিপ্লোমার। এ মাসেই অনার্সের ৬ষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষা গায়াত্রী অনেক এসাইমেন্ট করে দিয়েছে ওকে কল দিয়ে থ্যাঙ্কস জানানো উচিৎ একবার। ২০ তারিখ থেকে এক্সাম তার পর মেজর সাবজেক্টের সেমিস্টার তারপরে ফাইনাল এক্সাম। পেছন ফিরে তাকালে মনে হয় এইতো সেদিন এলাম এত্ত তাড়াতাড়ি পড়াশুনা শেষ হয়ে যাচ্ছে! ভাবতে ভাবতে নাবিল ফোনটা হাতে নেয় কল করে গায়াত্রীকে কয়েকটা রিং হতেই
– হ্যালো ম্যানেজার! কেমন আছ?
– আলহামদুলিল্লহ্‌ ভাল আছি। তোমাকে থ্যাঙ্কস দেবার জন্য কল করেছি ২টা এসাইনমেন্ট করে দিয়েছ অনেক অনেক থ্যাঙ্কস।
– এইগুলা কি নাবিল? তুমি ও তো কত যায়গায় গিয়ে ইনফো কালেক্ট করেছো, ইভেন আমারও অনেক এসাইনমেন্ট করেদিয়েছ আমি তো থ্যাঙ্কস জানাইনি! জানাতে হবে?
– না না এই সব কিছু না আসলে আজ প্রথম স্যালারি পেলাম তাই জানালাম। মা ও বুবাইকে কল জানিয়েছি।
– হুম অনেক খুশি হয়েছি। আজতো ১২ তারিখ প্রতি মাসের ১২ তারিখেই স্যালারি হবে নাকি শুধু এই মাসেই?
– বললো তো শুধু এই মাসেই। এর পর থেকে প্রতি মাসের শেষ সোমবার স্যালারি হবে।
– ভেরি গুড। কাল তো ছুটি দেখা করতে পারবা সকালের দিকে?
– হুম করা যায় ১১ টার দিকে ক্যাম্পাসে এসো দেখা হবে।
– আচ্ছা তাহলে ভাল থেকো। আল্লাহ্‌ হাফেয।
– আল্লাহ্‌ হাফেজ বলে নাবিল কল কেটে চিন্তা করতে লাগলো গায়াত্রী তো কখনো আল্লাহ্‌ হাফেয বলে না তাবে আজ কেন? যাই হোক কাজে মন দেই দেখা যাক কি হয়।
ভোর ৪ টায় নাবিল বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে ১০.৪০এ.ম অ্যালার্ম দিয়ে ঘুম দিলো।
ঘুম ভাংলো গায়াত্রীর ফোন পেয়ে।
– হ্যালো!
– এখন ঘুমাচ্ছো?
– হুম!! কোথায় তুমি?
– তোমাদের বিল্ডিংয়ের নিচে। তাড়াতাড়ি আসো।
– আচ্ছা ফ্রেশ হয়ে আসছি।
১০ মিনিটে গোসল কোরে রেডি হয়ে নাবিল নিচে গিয়ে দেখলো কেউ নেই। ফোন বের করে নাবিল কল দিতেই গায়াত্রী হা হা কোরে হেসে উঠে বললো আমি এখনো বাসে কিন্তু দেখো সিকিউরিটি অফিসের সামনে একটা বাইক রাখা সেখানে এসে দাড়াও আমি ২ মিনিটে আসছি। নাবিল বাইকের সামনে আসতেই গায়াত্রী চিৎকার কোরে ডাক দিলো নাবিল I am here.
– এত আগে ঘুম থেকে উঠানোর মানে হয়?
– এমনি ফান করলাম রাগ করছো?
– না চলো কোথাও যাই খুধা লাগছে।
– কিভাবে যাবে?
– চলো একটা কার ভাড়া নিয়ে লং ড্রাইভে যাই। গতমাসে বাইক ও কারের লাইসেন্স তো এক সাথেই করলাম।
– থাক কার নিতে হবে না। বাইকে ঘুরবো আজ সারাদিন বলেই রয়েল ইনফিল্ডের একটা চাবি হাতে ধরিয়ে দিলো। বাইক টা পাশেই ছিলো।
– কার বাইক এইটা তুমি কোথা থেকে চাবি পেলে?
– এত্ত প্রশ্ন করছো কেন? এইটা তোমার বাইক আজকেই কিনেছি। নতুন কেনার টাকা নাই আমার কাছে। কিন্তু কন্ডিশন ভাল এটার পরিচিত এক আংকেলের কাছ থেকে নিয়েছি।আংকেল ই বাইক সহ আমাকে এখানে রেখে গেছে।
– এত্ত খরচ করার কোনো মানেই হয় না গায়াত্রী। তোমার পাক্কা ৩ মাসের খরচ এটা।
– এত চিন্তা করো না। আমি এই সেমিস্টারে স্টেফেন পেয়েছি। নেক্সট ১ বছর টিউশন ফি দিতে হবে না। তাই দেরি না করে তোমার পছন্দের বাইক টা নিয়ে নিলাম।
– হেলমেট টা গায়াত্রীর মাথায় দিয়ে নাবিল বাইক স্টার্ট দিলো।
– কি ব্যাপার তুমি হেলমেট না পড়ে আমাকে দিলে কেন?
– কি করলবো বলো আনছো তো একটা হেলমেট। আমার চেয়ে তোমার সেফটি জরুরী। এখন ই আরেকটা হেলমেট নিবো চিন্তা করো না। চলো যাই।
একটা ব্ল্যাক কালারের হেলমেট নিয়ে নাবিল গায়াত্রী কে বললো এটা তোমার। আর ওইটা আমাকে দাও। গায়াত্রীর অনিচ্ছা সত্যেও নাবিল নিয়ে নিজে পড়ে নিলো পুরনো হেলমেটটা।
লাঞ্চ শেষে তাঁরা বেরিয়ে এসে বাইকের সাথে কিছু সেলফি নিলো। প্রথম ইচ্ছা পূরণ হলো নাবিলের। গায়াত্রী বললো চলো নাবিল লাইব্রেরীতে যেতে হবে একটু ২০ তারিখ থেকে এক্সাম মনে আছে তো?
– হুম আছে চলো। আমারো কিছু বই নেয়া লাগবে।
নাবিল বাইক চালাচ্ছে পেছন থেকে গায়াত্রী হঠাৎ করে বললো নাবিল আমি যদি মুসলমান হই তুমি আমাকে বিয়ে করবে?
১২০/কি.মি. স্পিড নিমিষেই ০ করে নাবিল বাইক থেকে নামলো। নেমেই প্রথমে মা ও পরে বুবাইকে কল করে জিজ্ঞাসা করলো
– মা একটা মেয়ে যদি আমাকে ভালবেসে নিজের ধর্মকে ঠেলে আমার ধর্মকে নিজের মনে কোরে আমাকে বিয়ে করে তাহলে মা তুমি কি মেনে নিবে?
– যে মেয়ে তোকে ভালবেসে ধর্মের মত স্পর্শকাতর একটা বিষয় সেক্রিফাইজ করতে পারে তাকে কোনো দ্বিধা ছাড়াই পুত্রবধূ হিসেবে মেনে নেয়া যায় বাবা। তুই কি গায়াত্রীকে নিয়ে কিছু ভাবছিস বাবা?
– হ্যা মা অইরকম ই। আচ্ছা মা দোয়া কইরো আমাদের জন্য। পরে কথা হবে। বুবাইয়েরও অনুমতি নিতে হবে।
– আচ্ছা বাবা ভাল থাকিস। তোর বাবাকে জানাবো, অনেক খুশি হবে তোর বাবা দেখিস।
– আচ্ছা মা আল্লাহ্‌ হাফেয বলে রেখে দিয়ে বুবাইকে কল দিলো নাবিল। বুবাই ও অনেক খুশি হয়ে হ্যা সূচক উত্তর দিলো।
কি নাবিল আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে মাঝ রাস্তায় দার করিয়ে কার সাথে কথা বলছিলে এতক্ষণ?
– একটু বুবাই ও মা’য়ের সাথে কথা বললাম।
– আমার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে কি কথা বললে?
– এইতো মা ও বুবাইকে জানিয়ে দিলাম আজ আমার ২টা স্বপ্ন একসাথে পূরণ হয়েছে।
ভালবাসি ভালবাসি অনেক ভালবাসি তোমায় বলতে পারিনী কখনো অজানা এক ভয়ে। আজ সেই ভয় কাটিয়ে দিয়েছ তুমি।
– আমিও তমাকে অনেক ভালবাসি নাবিল। হারানোর ভয়ে বলতে পারিনী কিন্তু আজ না বললে হয়তো হারিয়েই ফেলতাম তাই বলে দিলাম।
– বোকা মেয়ে হারেবে কেন? আমিতো তোমার ই। সামনেই একটা বাংলাদেশি চায়ের দোকান আছে প্রায় ৩০ প্রকার চা বিক্রি হয়। চলো চা খাবো।
– আচ্ছা চলো যাই।
চায়ের দোকানে এসে নাবিল গায়াত্রীর কপালে একটা চুমু দিলো। আর বললো আমি তোমাকে আর কখনোই থ্যাঙ্কস দিবো না বুঝে নিও এটাই আমার থ্যাঙ্কস।
মামা একটা মিল্ক চা আর একটা কড়া লিকারের ব্ল্যাক চা দাও। চুমু আর চা কড়া না হইলে সুবাস ছড়ায় না।

গল্পের সকল স্থান, নাম ও চরিত্র কাল্পনিক কিন্তু গ্রাম-বাংলার পরিপ্রেক্ষিতে অতি সাধারণ ঘটনা, কারো সাথে মিলে গেলে নিজ গুণে ক্ষমা করবেন”

৭১৫জন ৭১৪জন
0 Shares

৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ