জীবনের গল্প_৬

সুরাইয়া পারভীন ৭ ফেব্রুয়ারি ২০২০, শুক্রবার, ১০:৩৫:১৭অপরাহ্ন গল্প ১৪ মন্তব্য

নয়নার দেবরের বিয়ে ঠিক হলো। শুক্রবারে বিয়ের দিন ঠিক হলো। কথা হলো মেয়ে কাউকে নিয়ে যাবে না বিয়েতে। তাই নয়নার শাশুড়ি বললো তুমি বাপের বাড়ি যাও। ওখানে থেকে বিয়েতে চলে এসো। নয়না বৃহস্পতিবার বাপের বাড়িতে চলে গেলো। ছোট্ট নয়না সাংসারিক জটিলতা, সাংসারিক রাজনীতি বুঝতে ব্যর্থ। নয়না ধারণাও করতে পারেনি তাকে এই ভাবে সবার সামনে ছোট করা হবে। নয়না কে ভিলেন প্রমাণ করতে খুব সহজ হলো নয়নার শাশুড়ির। পুরো পাড়া জুড়ে ছড়িয়ে পড়লো কাল দেবরের বিয়ে আর আজ সে বাপের বাড়িতে গেছে বিয়েতে যাবে না। অপমানে অপমানে জর্জরিত হলো নয়না। কেঁদে কেটে অনিচ্ছা সত্ত্বেও গেলো বিয়ে বাড়িতে। যা হোক বিয়ে হয়ে গেলো।

নয়নার জা কে বাড়ি নিয়ে এলো সাথে অনেক উপঢৌকনসহ। নয়নার শাশুড়ি প্রকাশ্যে বলতে শুরু করলো তার বড় ছেলের কপাল এতোই খারাপ যে একটা কিছুও পেলো না। অথচ নয়নার বিয়ের সময় যখন দেনা পাওনা নিয়ে কথা বললো তখন নয়নার শ্বশুর বললো যৌতুকের কথা বললে বিয়ে হবে না। সবার কাছে ফেরেস্তা বনে গেলো।  তাই টাকা পয়সা নিয়ে কোনো কথা আর হয়নি। যেহেতু নয়না পড়া লেখা করছে তাই নয়নার বাবা মা চেয়েছেন‌। পরীক্ষার পরেই বিদায় করে দেবেন। সেই মোতাবেক বাড়ির গাছ কেটে মেয়ের জন্য আসবার পত্র বানাতে দিলেন। বাড়িতে মিস্ত্রী লাগিয়ে দিয়ে নিজের পছন্দ মতো জিনিস বানাতে দিয়েছেন।
এটা জেনেও কী করে এমন কথা বলতে পারে নয়নার শাশুড়ি? প্রচণ্ড কষ্ট পেয়েছিলেন নয়নার বাবা-মা।

ছোট ভাইয়ের সুন্দরী বউ দেখে নয়নার বরেরও মনে হতে লাগলো যে সে নয়না কে বিয়ে করে ভুল করেছে। সেও সুন্দর বউ পেতো। নয়নার বর বাড়ি থাকলে নয়নার ঘরে নয় তার ছোট ভাইয়ের বউয়ের ঘরেই থাকে। ওরা সবাই নতুন বউকে নিয়ে ব্যস্ত। নয়নার সাথে কেউ কথা বলতো না‌।

বেচারা বর! তারই আর কী দোষ বলুন। মা যখন সবসময় কানের কাছে বলতে থাকে বড় বউ ভালো না, ভালো না, তখন সেও তো সুন্দরী বউ প্রত্যাশা করতেই পারে।এবার টোটালি নয়নার বর কথা বলা বন্ধ করে দিলো নয়নার সাথে। দিনের পর দিন এভাবেই চলতে শুরু করলো।

নয়নার বর তার প্রাক্তন প্রেমিকার সাথে আবার কথা বলতে শুরু করে দিয়েছে। ঘনিষ্ঠতা বেড়ে গেলো পুরোনো প্রেমিকার সাথে। নয়না ব্যাপারটা বুঝতে পেরে তার বরের ফোন নিয়ে মেয়েটির নাম্বার নিলো। মেয়েটির সাথে কথা বললো। জানতে পারলো নয়না অযোগ্যতায় তার বর মেয়েটির কাছে ফিরে গেছে। নয়না ব্যর্থ, সে তার বরকে ধরে রাখতে পারেনি। এবং এতো এতো বদনাম করেছে নয়নার বিরুদ্ধে যে সে বাধ্য হয়েছে তার জীবনে ফিরে আসতে। নয়না দিশেহারা হয়ে পড়লো। কী করবে নয়না? ছোট্ট নয়না যে মানুষটার হাত ধরে এলো এই সংসারে সেই মানুষটা আর কথাই বলে না নয়নার সাথে।

এইচএসসি পরীক্ষার সময় হয়ে গেলো নয়নার। নয়না প্রবেশ পত্র নিয়ে এসেছে। কয়দিন পর পরীক্ষা। এই রকম মানসিক নির্যাতনের স্বীকার নয়না কী করে পরীক্ষা দেবে বুঝতে পারলো না। সে যা হোক নয়না ম্যানে করে  পরীক্ষা দেবে।

এবার নির্যাতনের মাত্রা কয়েকশ গুণ বেড়ে গেছে। নয়না কে ওরা আর পরীক্ষা দিতেই দেবে না। নয়না এবার নিরুপায় হয়ে বাড়িতে সবটা  জানানো। নয়নার বাবা মা এলো মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে। নয়নার বাবা মাকে অনেক অপমান করলো। নয়নার বাবা মা নয়না কে বাড়িতে নিয়ে আসতে চাইলো কিন্তু নিয়ে যেতে দিলো না। অপমানিত হয়ে ফিরে এলো নয়নার বাবা মা। ব্যাপারটা আর সহনীয় পর্যায়ে ছিলো না।

এতো দিনে নয়নার বাবা মায়েরও টনক নড়েছে। তাদের আদরের মেয়ের সাথে এমন অত্যাচার তারা মেনে নিতে পারে না। বিয়ের সময় যারা যারা ছিলো  নয়নার বাবা তাদের কে বললো । তারাও গেলো নয়নার শ্বশুর শাশুড়ির সাথে কথা বলতে। কথা বলে কোনো মতে নয়নার পরীক্ষার ব্যবস্থা করে দেওয়া হলো আর কথা হলো নয়না বাপের বাড়ি থেকে পরীক্ষা দেবে। সেই মতো নয়না কে নিয়ে যাওয়া হলো বাড়ি…..

৫৩৬জন ৪১০জন
0 Shares

১৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ