ছোট্ট নয়না প্রচণ্ড ক্লান্তি নিয়ে ঘরে প্রবেশ করে ঘুমিয়ে গেলো । সারারাত জেগে বর নামক মানুষটার সাথে গল্প করার ধৈর্য্য বা বয়স কিছুই ছিলো না নয়নার।
দেখতে দেখতে ছয়দিন কেটে গেলো। সাত দিনের দিন নয়নার এস এস সি রেজাল্ট বের হলো। নয়না তার স্কুল থেকে প্রথম হলো। নয়নার এমন দুর্দান্ত রেজাল্টের খবর পেয়ে নয়নার শ্বশুর ভীষণ খুশি। ছেলের বউ এর এতো ভালো পাশের কথা শুনে
কয়েক কেজি মিষ্টি কিনে সারা পাড়ার মানুষদের খাওয়ালেন।
এ দিকে নয়নার মা, ভাইয়েরা তাদের মেয়ে, বোনের এমন রেজাল্ট পেয়ে একেবারে ভেঙ্গে পড়লো। ওরা সবাই হা হুতাশ করতে শুরু করলো। এটা তারা কি করলো? কেনো মেয়েটাকে বিয়ে দিলো? নয়নার বড় ভাইয়ার আক্ষেপ আর অপরাধবোধ দুইয়েরই সীমা ছিলো না। বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া ভাই তার ছোট্ট বোনটার জন্য কিছুই করতে পারলো না। বাবাকে বাধা দিতে পারেনি।
স্কুলের শিক্ষকরা যখন নয়নার বাবাকে প্রচণ্ড বকাঝকা করলেন তখন তিনিও নিজের ভুল বুঝতে পারলেন। হুট করে মেয়েকে বিয়ে দিয়ে একদম ঠিক করেনি। একমাত্র মেয়েটার সুন্দর উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ নষ্ট করে দিয়েছে নিজের হাতে। আফসোস করা ছাড়া এখন আর করার কিছুই নেই। তবুও একবার মেয়ের শ্বশুরকে বলবেন যেনো মেয়েটাকে পড়ার সুযোগ দেন।
একদিন নয়নার শ্বশুর নয়নাকে ডেকে বললেন তুমি কী পড়তে চাও? কথাটা মুখ থেকে বের হবার আগেই নয়না বললো সে পড়তে চায়। নয়নার শ্বশুর জানতে চাইলো কী নিয়ে পড়তে চাও। নয়না জানালো সে সাইন্স নিয়ে পড়তে চায়। এই একটা মানুষ ছিলেন যিনি নয়নাকে সাপোর্ট করতেন।
একটু একটু করে যতো দিন যায় ততোই একা হয়ে নয়না। সারাদিন একা একা কেটে যায় নয়নার। নয়নার বর সকালে বাসা থেকে বের হয় আসে মাঝরাতে। নয়নার শ্বাশুড়ি তার নিজের ঘরে নিজের মতো থাকতেন।
নয়না কখনোই একা থাকেনি বিয়ের আগে। নয়নাদের বাড়িতে সব সময় মানুষের আনাগোনা ছিল। কিন্তু এ বাড়িতে একটা মানুষও আসে না। নয়না অনেক আগে থেকেই ডায়রী লিখতো। নয়নার একাকীত্বে ঐ ডায়রী হলো একমাত্র সঙ্গী। প্রতিটি মুহূর্তে ঘটে যাওয়া ঘটনা ডায়রীতে লিখে রাখে নয়না। দিনের পর দিন এভাবেই চলতে থাকলো। বড্ড একা নয়না গুমরে গুমরে কাঁদে। নয়নার বরের শুধু রাতটুকু ছাড়া তার আর নয়নাকে মনে থাকতো না।
নয়নাকে কলেজে ভর্তি করে দিয়ে তার শ্বশুর বললেন ভালো রেজাল্ট করতে। যেনো তার মুখ রাখে নয়না। সেই কথা নয়না মস্তিষ্কে গেঁথে নিলো।
এবার নয়নার একাকীত্ব কিছুটা কমলো। নয়নার শ্বশুর বাড়ির পাড়া থেকে নয়নাসহ ছয়জন মেয়ে ভর্তি হয়েছে একই কলেজে। নয়নার ওদের সাথে বেশ বন্ধুত্ব হয়েছে। কলেজ ,পড়ালেখা নিয়ে দারুণ সময় কাটতে শুরু করলো নয়নার। এবার নয়নাও আর তার বরকে নিয়ে চিন্তিত নয়। নয়নার লক্ষ্য হয়ে উঠলো ভালো রেজাল্ট। বেশ ভালো সময় কাটছিলো। পড়ালেখায় বেশি গুরুত্ব দিয়ে গিয়ে সংসারের সব কাজ করতো না নয়না। সকালে ঝাড়পোছ ও হাঁড়িপাতিল-থালাবাসন পরিষ্কার। কলেজ থেকে ফিরে আবার ঝাড়পোছ ও রান্না করতো নয়না। এটুকুতে তৃপ্ত না নয়নার শাশুড়ি।
নয়নার শাশুড়ি মানতে পারছিলেন না অন্যের মেয়ে এসে তার বাড়িতে থেকে পড়ুক। একেই নয়না অপছন্দের। তার উপর সংসার থেকে পড়াশোনাতেই মন বেশি নয়নার। নয়না বিষ হয়ে উঠলো শাশুড়ির চোখে। তিনি সরাসরি নয়নাকে কিছু বলতেন না ইভেন ঠিক করে কথায় বলতেন না নয়নার সাথে। ছেলে আর স্বামীর মন বিষিয়ে তুলতে শুরু করলো নয়নার শাশুড়ি। শুরু হলো নয়নার জীবনে নতুন দুর্যোগ……
১৮টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
শাশুড়ির বিষবাষ্প ছড়াতে শুরু করলো। এগিয়ে যান আপু। ধন্যবাদ ভালো থাকবেন। শুভ কামনা রইলো
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দিদি
ভালো থাকবেন সবসময়
ইসিয়াক
গল্প এগিয়ে যাক, ভালো লাগছে।
শুভকামনা।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সবসময়
ফয়জুল মহী
মোহিত হলাম চয়নে।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সবসময়
সুপায়ন বড়ুয়া
এভাবে কত নয়না
ঝড়ে যায় অবেলায়
আপনার সাবলীল
লেখার মুগ্ধতায়।
শুভ কামনা।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদা
ভালো থাকবেন সবসময়
এস.জেড বাবু
শাশুড়িদের তৃপ্তি কখনও হয়না মনে হয়।
বৌ থাকতে যতটা সহনশীল হয় নারী, শাশুড়ি হওয়ার পর ততটা কঠিন রূপে পরিবর্তিত হয় সমানুপাতিক হারে।
পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় ……
সুরাইয়া পারভীন
হয়তো তাই
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন ভাইয়া
ভালো থাকবেন সবসময়
আরজু মুক্তা
চলুক গল্প
সুরাইয়া পারভীন
ধন্যবাদ অশেষ আপু
ভালো থাকবেন সবসময়
সঞ্জয় মালাকার
নয়না বিষ হয়ে উঠলো শাশুড়ির চোখে।
পরের পর্বের জন্য অপেক্ষায় ……দিদিভাই।
সুরাইয়া পারভীন
আন্তরিক ধন্যবাদ জানবেন দাদা
ভালো থাকবেন সবসময়
সঞ্জয় মালাকার
ধন্যবাদ দিদি সকালবেলার শুভেচ্ছা রইলো
ছাইরাছ হেলাল
শাশুড়িদের কুটিল রূপ কতটা ফুটিয়ে তুলতে পারেন
তা দেখার অপেক্ষা করছি।
সুরাইয়া পারভীন
এই গল্পের একটা বর্ণও মিথ্যে নয়। শাশুড়িদের কুটিল রূপ ফুটিয়ে তোলার ইচ্ছে মোটেও নয়। আমার মা ও কিন্তু শাশুড়ি।
কামাল উদ্দিন
কয়েক দিন বেড়াতে গিয়েছিলাম বলে নয়নার সাথে দেকা করতে পারিনি। আগেই বলেছিলাম আপু, বাচ্চা মেয়েটাকে বেশী বিপদে ফেলবেন না যেন।