ইদানিং একটি কথা বারবার বলার রোগে পেয়েছে মনে হয়। আমার এই ভবনটির কথা ইনিয়ে বিনিয়ে কতবার যে বলেছি তা আমি নিজেই জানিনা। তেমন কিছু নেই আমার, তাই এটিকেই হয়ত অমূল্য হিসেবে জাহির করছি, অথবা সত্যিই হয়ত এটি বলার মত কিছু একটা, তাই বলছি। ব্যাঙের কাছে ছোট পুকুরকেই তার সমুদ্র মনে হতে পারে, বা আমরা বরিশালের ভাষায় বলি ‘ আইচার মধ্যে তুফান।’
যেটাই হোক এই ভবনটি আমার জীবন যাত্রাকে পালটে দিয়েছে অনেকটাই। বিভিন্ন কারণে আমার বেশ কিছু ব্যবসায় প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিয়েছি। এসব বন্ধ করায় আজকাল বেশ সময় পাচ্ছি আমি। সময় পেলেই শহুরে কোলাহল জটিলতা থেকে নিজস্ব এই ভুবনে চলে যাই। ছায়া সুনিবিড় শান্তির নীড় মনে হয় একে আমার। দুই কক্ষ বিশিষ্ট এই বিশ্রামাগারে বসে জানালায় তাকিয়ে বাইরে কি দেখি তা দেখাবো আপনাদেরও। জানালার গ্লাস বন্ধ করেই ছবিগুলো তুলেছি, তাই কিছুটা ঘোলাটে দেখাবে হয়ত। এমনই দেখতে হবে আপনাদের, কারণ আমিও তো এমনই দেখছি।
দক্ষিনে জানালা দুটো। দক্ষিন পুবের জানালা ঘেঁষে আছে কাঠাল, পেয়ারা গাছ। দূরে সীমানায় আছে মেহেগনী, গাছের সারি। দক্ষিন পশ্চিমের জানালা ঘেঁষে আছে ডালিম গাছ। দূরে আছে ফলজ গাছের একটি বাগান। আম, আমড়া, কামরাঙ্গা, নারকেল, বিভিন্ন জাতের লেবু, জামরুল ইত্যাদি গাছ।
উত্তরের একটি জানালা কক্ষ যতটা চওড়া ততটাই। জানালা ঘেঁষে বেশ কিছু গাছ। বড় একটি জামরুল গাছ। দেখা যাবে ছোট একটি বাগান, গোলাপ সহ কিছু ফুল গাছ আছে তাতে। আর দূরে দেখা যাবে বিভিন্ন গাছের সারি।
উত্তরের জানালা সংলগ্ন বারান্দায় দাঁড়িয়ে দেখি, বড় দুটো পাহাড়ি ঝাউ গাছ, কাঠ বাদাম, কাঁঠাল এবং আম গাছের ডাল বারান্দার মধ্যেই এসে গিয়েছে। ছবেদা ফল, শিউলী ফুল, পেয়ারা গাছ।
পূবের জানালার সাথে মিশে আছে পেঁপে, আম, পেয়ারা গাছ। জানালা খুলতে কিছু কষ্টই হয় এদের পাতা, ডালের কারণে। তারপরেও এসব ডালপালা না কাঁটারই সিদ্ধান্ত নিয়েছি। দূরে সীমানায় লাগানো বিভিন্ন গাছের সারি।
পশ্চিমের জানালায় দেখা যাবে বড় কয়েকটি রেইন্ট্রি, কড়াই গাছ। কয়েকটি আম গাছও আছে। আছে দুটো সেগুন গাছ। আর দেখা যাবে আমার ভুমির লাগোয়া শান্ত স্নিগ্ধ এক নদী। নদীর একদম তীরেই লাগিয়েছিলাম এক বট গাছ, পথিকদের জন্য, পাখিদের জন্য।
শান্ত স্নিগ্ধ নদীর ছবি।
এইসব গাছগুলো আমারই লাগানো। সবুজ ভালোবাসি আমি। সারাদিন ইচ্ছে করে সবুজের মাঝে থাকি। যতটা সম্ভব থাকার চেষ্টা করি। খুব ঘন এক বন সৃষ্টির ইচ্ছে থেকেই এসব করা আসলে।
মাঝে মাঝে কান পেতে থাকি গাছের কথা শোনার জন্য। গাছের বাকলে হাত বুলাই গভীর মমতায়৷ শক্ত বাকল কেমন নরম তুলতুলে লাগে, মনে হয় প্রখর অনুভুতি সম্পন্ন কোন মানুষের গায়ে হাত বুলাচ্ছি, হাতে গাছের শরীরের কম্পন অনুভব করি৷ গাছের পাতার গুচ্ছে হাত বুলাই, যেন গাছের চুলে গুজি নিজের মুখ৷ নিজে গাছ হলে ভালোই হত, সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বিশুদ্ধ অক্সিজেন দেয়া যেত মানুষকে।
২৮টি মন্তব্য
মাছুম হাবিবী
ভবনের মন্তব্যটা দারুন দিলেন। সাবলিল সুশীল একটি লেখা পড়লাম। অনেক ধন্যবাদ
জিসান শা ইকরাম
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই,
নতুন লেখা পড়তে চাই আপনার৷
শুভ কামনা৷
শামীম চৌধুরী
পুরাটাই প্রকৃতির সাথে মিশানো। এমন পরিবেশ যে কারো মনকে ভালো করে দিতে পারে। আমাদের সাবারই উচিত নিজের আঙ্গিনায় এমন পরিবেশ গড়ে তোলার। আর কিছু না হউক অন্তত বিশুদ্ধ অক্সিজেনটা পাওয়া যাবে। খুব সুন্দর গুছানো একটি লেখা। ভালো লাগলো ভাই।
জিসান শা ইকরাম
চেস্টা করেছি যতটা সম্ভব প্রকৃতির সাথে মিশে যেতে,
এখানে গেলে ভালো থাকি আমি,
নিজেকে ফিরে পাই।
আপনিও প্রকৃতি প্রেমী, বুঝতে পারি আমি।
শুভ কামনা ভাই।
সঞ্জয় মালাকার
দারুণ লিখনী ভাইয়া পড়ে আনন্দ পেলাম
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ সঞ্জয়
শুভ কামনা।
সঞ্জয় মালাকার
সন্ধ্যা কালীন শুভেচ্ছা রইলো ভাইয়া।
জিসান শা ইকরাম
আপনাকেও শুভেচ্ছা সঞ্জয়।
তৌহিদ
আমার খুব ইচ্ছে এরকম একটি বাড়ির, প্রকৃতির ছোঁয়ায় মিলে মিশে একাকার হয়ে থাকবো। খুব পছন্দ হয়েছে আপনার বাড়ির সৌন্দর্য।
বাসার গেটে একটা আলমান্ডা গাছ লাগাতে পারেন। সারাবছর ফুল দেবে। সবুজের মধ্যে হলুদ।
দাওয়াত দেবেন কবে?
জিসান শা ইকরাম
হ্যা গেটে সারাবছর ফুল দেয় এমন গাছ লাগাতে হবে।
চলে আসুন যে কোনো দিন, এখানে ভাল লাগবে আপনার।
তৌহিদ
আসবো একদিন সব ছেড়েছুড়ে দেখবেন। সেদিন যেন গেট বন্ধ করে দিয়েননা বদ্দা।
জিসান শা ইকরাম
আপনার জন্য গেট সব সময়ই খোলা থাকবে ভাই।
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই।
শাহরিন
অনেক সুন্দর একটি জায়গা। মন ভালো করে দেয়ার মত।
জিসান শা ইকরাম
দিনের অধিকাংশ সময় এখানেই কাটাই এখন।
সবাইকে নিয়ে এসো একবার।
ছাইরাছ হেলাল
মানব মনের গাছ ভাবনা মন্দ না এটি চালু ছিল/আছেও।
তবে আপনার শিকড় গজিয়ে যায়নি দেখে ভাল লাগল।
নিজ অক্সিজেন ভাবনায় মন দিন, বনের মোষ আর না।
তাও ভাল কোবতে লিখতে বসে যান-নি!!
জিসান শা ইকরাম
নিজ অক্সিজেন নিজেই নেয়ার অভ্যাস রপ্ত করতে হবে,
যদিও কঠিন এটি আমার জন্য।
কোবতে তো বুঝিই না, লেখুম কেম্নে?
আরজু মুক্তা
প্রকৃতি ই মা!!উনি অক্সিজেন দিয়ে আমাদের বাঁচিয়ে রাখেন।।প্রাণ জুড়িয়ে গেলো সবুজের সমারোহ দেখে।।
জিসান শা ইকরাম
প্রকৃতি ই মা!!
সত্যি বলেছেন। ধন্যবাদ আপনাকে।
শুভ কামনা।
রেহানা বীথি
লেখা পড়ে আর ছবিগুলো দেখে মন ভরে গেলো। এমন সবুজঘেরা বাড়ি ভালোলাগে খুব।
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ আপনাকে উৎসাহ দেয়ার জন্য।
শুভ কামনা।
সাবিনা ইয়াসমিন
নীল আকাশ, সবুজ বণানী, মাটি রঙা পায়ে হাটা ধুসর পথ, আর টলটলে সচ্ছ শান্ত নদী। শ্রান্ত দুপুর বা ক্লান্ত বিকেল অথবা পরন্ত সন্ধ্যায় এমন জানালার পাশে বসে থাকা যায় অনন্ত সময়।
বৃক্ষপ্রেম জারি রাখা ভালো। প্রকৃতি থেকে পাওয়া কোন কিছুই ফেলনা নয়।
শুভ কামনা।
জিসান শা ইকরাম
” নীল আকাশ, সবুজ বণানী, মাটি রঙা পায়ে হাটা ধুসর পথ, আর টলটলে সচ্ছ শান্ত নদী। ” – এমন বর্ননা পোস্টে দিতে পারলে পোস্ট কত সুন্দর হতো!
বৃক্ষ প্রেম আমার অনেক দিনের পুরানো। এখানেই কাটাই অনেক সময়।
শুভ কামনা।
রাফি আরাফাত
অনেকদিন পর সাবলীল ভালো লাগার মতো একটা লিখা পরলাম। অবশ্য আপনার কাছে এমন লিখাই আশা করি ভাই। আচ্ছা যেই ছবি গুলো দিছেন এগুলো কি আপনার বাসার ওখানে ভাই?
জিসান শা ইকরাম
ধন্যবাদ রাফি।
আমার বিশ্রামাগারের রুমের মধ্যে থেকে তোলা ছবি।
প্রদীপ চক্রবর্তী
দারুণ লেখনী দাদা।
মনির হোসেন মমি
ভ্রমণ,ছবি তোলা,পাখিপোষা,এবার জানলাম সবুজ জিসান ভাইজানকে।শুভ কামনা।আপনিতো ফল বেচেই বেশ লাভ করতে পারেন।
জিসান শা ইকরাম
হা হা হা ভালোই বলেছেন,
ফল মানুষকে খাওয়াই, নিজেরা খাই। এতেই আনন্দ পাই প্রচুর।