বাঙ্গালী জাতির কিছু অংশ যে অকৃতজ্ঞ ইতিহাস তা প্রমাণ করে । যে কোন আন্দোলন সংগ্রাম যুদ্ধে এর প্রমাণ আছে । যেখানে প্রতিটি বাঙ্গালীর উচিৎ ছিল মুক্তিযোদ্ধাদের আরো কিভাবে সুযোগ বৃদ্ধি করা যায় , কিভাবে তাঁদের জীবনযাপনের মান আরো উন্নত করা যায় তা ভাবা । উল্টো তারা আন্দোলন শুরু করে দিল মুক্তিযোদ্ধাদের প্রাপ্ত অধিকার বাতিলের ।
যে বৈষম্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে দেশটিকে স্বাধীন করলেন আমাদের জাতীয় বীরেরা , তাঁদের দেয়া সুযোগ হরন করার যুদ্ধে নেমেছে আজ কিছু অকৃতজ্ঞ , বেইমান মানুষ ।
এখানে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পূর্বে পাকিস্তানের দুই অংশের সরকারী চাকুরীর ভাগ দেখানো হয়েছে । বেসামরিক চাকুরিতে বাঙ্গালীদের অবস্থান ছিল ১৬% । বিসিএস দিয়ে আন্দোলনকারীরা ” বেসামরিক চাকুরীতেই নিয়োগ পেতে চাচ্ছেন ।
এই বৈষম্যের বিরুদ্ধে জীবনের মায়া ত্যাগ করে যুদ্ধ করেছেন কারা ? মুক্তিযোদ্ধারা । তাঁদেরকে কেউ বাধ্য করেনি – দেশের জন্য যুদ্ধ করতে । নিজের ইচ্ছেয় দেশকে মুক্ত করার জন্য বাড়ী ছেড়েছেন । বাবা মা ভাই বোন স্ত্রী সন্তান স্বামীর মায়া বাঁধনকে অগ্রাহ্য করে দেশের মায়াকে প্রাধান্য দিয়েছন । মাসের পর মাস হেটে বেড়িয়েছেন দেশ ময় । বৃষ্টিতে ভিজে কাঁদা পানিতে ডুবে আক্রমন করেছেন পাকি ঘাটিতে । মা জাহানারা ইমামের ৭১ এর দিনগুলো পড়লেই বুঝা যাবে রণাঙ্গনে কিভাবে কেটেছে তাঁদের দিন । নিশ্চিত মৃত্যুর মুখে এসেও তাঁরা হার মানেননি – পাকিদের কাছে । ধরা পরা মুক্তিযোদ্ধাদের বদ্ধভূমিতে ব্রাস ফায়ার করার মুহূর্তেও তাঁদের মুখে উচ্চারিত হয়েছে ‘ জয় বাংলা ‘ ।
আর বর্তমান আন্দোলনকারীদের পিতারা তখন কি করেছেন ? কেউ পাক সেনাদের সহায়তা করেছে , রাজাকার , আলবদর , আলশামস হয়েছে ।
আর অধিকাংশই অনিশ্চিত জীবনের দিকে না হেটে প্রজাতন্ত্রের বাধ্য কর্মচারীর মত চাকুরি করেছেন । কেউ ব্যবসা বানিজ্য করেছেন । কেউ পশ্চিম পাকিস্তানে ইচ্ছের বিরুদ্ধে আটকে থেকেছেন । অধিকাংশ গ্রামের মানুষ এবং শহুরে কিছু মানুষ মুক্তিযোদ্ধাদের আশ্রয় দিয়েছেন। আন্দোলনকারীদের পিতা , পিতামহকে কেউ কি নিষেধ করেছিল যে মুক্তি যুদ্ধে যেতে পারবে না ? কেন তাঁরা অংশ নেননি ? বাধা ছিল কোন ? মধ্যবিত্ত মানসিকতায় সুখি সংসার ফেলে কি বেড় হয়ে মুক্তিযুদ্ধ করতে সাহসে কুলোয়নি ?
সব যুক্তিতর্ক বাদ – ১৬ % এর পরিবর্তে ৭০ % পাচ্ছেন এখন । ১৬% এর চেয়ে ৭০% নিশ্চয়ই বেশী । যে ৩০% তাঁদের জন্য সংরক্ষিত কৃতজ্ঞ জাতি এটা তাঁদেরকে দিয়েছেন। এজন্য তাঁরা কোন আন্দোলন করেননি ।
এখন যেটা উচিৎ তা হচ্ছে – রাজাকারদের সন্তানদের চাকুরিচ্যুত করা । এই বাংলাদেশ ওরা চায়নি । ওরা চেয়েছিল একীভূত পাকিস্তান । যে পাকিস্তানের জন্য এখনো ওদের হাহাকার। মনে প্রাণে ওরা পাকিস্তানি , বাঙ্গালী বা বাংলাদেশী না ।
১২টি মন্তব্য
ব্লগার সজীব
এই অকৃতজ্ঞতা জাতি হিসেবে আমাদের পিছিয়ে নিয়ে গিয়েছে ।
জিসান শা ইকরাম
যেখানে সবাই মুক্তিযোদ্ধাদের পাশে দাঁড়াবে , সেখানে আজ তাঁদের বিরুদ্ধে শ্লোগান হচ্ছে ।
কৃন্তনিকা
দেশটা রসাতলে যাচ্ছে। এছাড়া আর বলার কিছুই নেই…
জিসান শা ইকরাম
এরা ক্ষমতায় গেলে মুক্তিযোদ্ধাদের বিচার করবে – এ জাতির কপালে দুঃখ আছে আরো ।
ছাইরাছ হেলাল
এমন অকৃতজ্ঞতা কিন্তু এই প্রথম বার আমরা দেখছি না ।
জিসান শা ইকরাম
এই অকৃতজ্ঞতা শুরু ১৯৭৫ থেকে
এখন তার চুড়ান্ত প্রকাশ দেখছি ।
"বাইরনিক শুভ্র"
আমি সরাসরি কোঁটা বিরোধী , কারণ এতে আমার স্বার্থহানী হচ্ছে । যে আমলা তন্ত্রের উপর নির্ভর করে দেশ চলে সেখানে অপেক্ষাকৃত কম মেধাবীরা ঢুকে যাচ্ছে । কিন্তু এর মানে এই না যে আমি মুক্তিযোদ্ধা কোঁটা বিরোধী । অবশ্যই মুক্তিযোদ্ধা কোঁটা থাকুক , কিন্তু এটা কি একটু কমিয়ে আনা যায় না ?? আমার মনে হয় একটু কমানো যায় । আর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা পাচ্ছে পাক, কিন্তু নাতী এবং পুতিদের কোঁটা দেয়ার সরাসরি বিরোধী আমি । এবং এটা সরকারের একটা যুক্তিহীন কাজ বলে আমি মনে করি । বর্তমানে চাকরি পাওয়া কতটা কঠিন তা যে কোন বেকার মাত্রই জানে ।
জিসান শা ইকরাম
এটা শুভ্র ব্যক্তিগত ভাবে অপছন্দ করতেই পারে
কিন্তু এটি শুধু সরকারী চাকুরীর বেলায় । বেসরকারী চাকরীর বেলায় কিন্তু এই নীতি নেই । ইসলামী ব্যংক এবং তাদের সহযোগী অনেক প্রতিষ্ঠানে কিন্তু সবাই চাকুরী পায়না । কঠিন ভাবে বাছ বিচার করা হয় নিয়োগের ক্ষেত্রে । আমার এক আত্মীয়া বিএনপি শাসনামলে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকুরীর আবেদন করেছিল – এই মুক্তিযোদ্ধা সন্তান ই ছিল তার একমাত্র অযোগ্যতা । এই ৩০% কোটা কিন্তু লীগ এবার ক্ষমতায় আসার পরে দিয়েছে । এর আগে তো কম ছিল । আর এই বর্তমান সরকারের আমলে যত এই কোটায় নিয়োগ হয়েছে – এর পূর্বে কিন্তু তা হয়নি । পূর্বের চেয়ে দেশ কিন্তু এই পাঁচ বছরে অনেক ভালো এগিয়েছে 🙂
আদিব আদ্নান
এটি নিয়ে চিন্তা করার সময় এসেছে । কোটা খালি থেকে যাচ্ছে , প্রার্থী পাওয়া যাচ্ছে না ।
আমরা মেধাবীদের হারাচ্ছি । আর শুধু চাকুরী দিয়েই সব দায়িত্ব শেষ হয়ে যাচ্ছে না ।
অনেক কাজই যেখানে সময় মেনে করা হচ্ছে না ।
জিসান শা ইকরাম
মেধাবী লোকজন দুর্নীতি করে বেশী ।
মেধাবী + দেশপ্রেম / কম মেধাবী + দেশ প্রেম যাদের আছে তারা দুর্নীতি কম করে ।
নিজের অভিজ্ঞতা থেকে এটা বলছি ।
বনলতা সেন
সতর্ক সিদ্ধান্ত নেয়ার সময় হয়েছে ।
জিসান শা ইকরাম
সিদ্ধান্ত নেয়া উচিৎ , রাজাকারদের সন্তানদের চাকুরিতে আযোগ্য ঘোষণার ।