সেবারে একদম হঠাৎ করেই গ্রামের বাড়ীতে বেড়াতে গেলাম,হর হামেশা যদিও যাওয়া হয় না।এই এমন সময় , চৈত্রের শেষাশেষি ,কপালপোড়া গরম শুরু হয়নি তখনো । একদিন হুট করে এসে নাছরিন বলল ” চল না তোদের বাড়ী যাই “।যতই নাচুনে বুড়ি হইনা কেন ‘ওঠ ছেরি তোর বিয়া’এমন তো তৈরি ছিলাম না।তবুও যা হওয়ার তাই-ই হয়। বাসে করে বাড়ীতে গিয়ে পৌঁছলাম।বাসে যেতে যেতে একটি একাঙ্কিকা হয়ে গেল , কাব্যে নয় নিখাদ গদ্যে।দাঁড়ান দাঁড়ান,আগে সেটা বলে নেই বেশ জমিয়ে।না থাক ওটা জমা থাক।পরে হবে-ক্ষণ।
কাছে এসে বস,বসেছ? চুপটি করে মন দিয়ে শোন,শুনছ তো?শুরু করি তাহলে।
এক দেশে ছিল এক মায়াবতী মেয়ে ,নাম তার বনলতা। আর ছিল তার প্রাণের বন্ধু ,ভীষন দস্যি মেয়ে ,তার নাম নাছরিন।ওরা ছিল যেমন ডানপিটে তেমনি দুষ্টু,দুষ্টদের শিরোমণি,বদের হাড্ডি।একবার হয়েছে কী জান — ক্ষেতের মধ্যে পথের ধারে ভর সন্ধ্যায় এই দু’টোয় মিলে কাকতাড়ুয়া সেজে মানুষদের ভয় দেখিয়ে সে এক মহা কেলেঙ্কারি …………
ছি ছি সব্বাইকে শিশু ভেবে ঠাকুরমার ঝুলি খুলে বসার চেষ্টা!হাত উঁচু,মাফ করে দিন,যেমন করেন আপনারা সব সময়।এই পেছন ফিরে হাঁটছি,এমনটি কস্মিনকালেও আর হবে না।
বেশ বেলা করেই ঘুম থেকে উঠে নাস্তা সেরে পেছন-দিককার পুকুর ঘাটে গিয়ে বসলাম।এদিকটায় বিশেষ প্রয়োজন না হলে কেউ আসে না।বেশ নিরিবিলি।একথা সেকথায় এক সময় ও জানতে চাইল এখানকার বৈঁচি-ফলের বাগানটা দেখছে না কেন । আমি একটু দূরে দেখিয়ে দিয়ে বললাম এখন অনেক কমে গেলেও কিছু অবশিষ্ট আছে।এরপর একটু কাছের মাঝারি আকৃতির একটি নারকেল গাছের ডাব দেখে বললাম ‘ ডাব খেতে পারতে মন্দ হত না।কিন্তু পেড়ে দিতে পারবে এমন তো কেউ নেই । থাক পরে দেখা যাবে ।’ একটু পরে নাছরিন বলে উঠল ‘আমি পেড়ে দেই ‘।নিজের কানকে বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হল না।আমি আবার জিজ্ঞেস করলাম’কী বললি?’ উত্তরে জানাল সে ডাব পেড়ে দিতে পারে।বলে কী?এই ধাড়ী নারকেল গাছে উঠবে?ও মড়বে আমাদেরও মারবে।রেগে গিয়ে বললাম ‘এমন চড় মারব সব দাঁত নড়ে উঠবে’।চুপ মেরে থেকে বৈঁচি বাগানের দিকে গেল বৈঁচি তুলবে বলে।
ছোট্ট পাখির মিষ্টি ডাক শুনে মনে মনে নয় চোখ দিয়েই খুঁজতে শুরু করলাম,খুঁজতে খুঁজতে মগডালে পাতার ফাঁকে নাম না জানা সুন্দর ছোট্ট পাখিটি দেখতে পেলাম।এক মনে সুর করে ডাকছে।কাকে ডাকছে কেনই বা ডাকছে আনন্দে না বেদনায় ডাকছে নাকি গান করছে কিছুই জানা হল না,তন্ময় হয়ে শুনছি আর শুনছি আর ভাবছি পাখির ভাষা বুঝলে এখন কত আনন্দ হত।
হঠাৎ ছড় ছড় শব্দে সম্বিৎ ফিরে এলে শব্দের উৎসে চোখ গেল।এ আমি কী দেখছি,আমার চোখকে আমার বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করছে না।আমার আত্মা হিম হয়ে এলো,ভয়ে কাঁপতে শুরু করছে সারা শরীর,মুহূর্তেই ঘামতে শুরু করেছি কুল কুল করে।বোবা হয়ে গেছি নিজের অজান্তেই।প্রায় হেঁটে হেঁটে অর্ধেক গাছে উঠে আবার তেমন করেই নেমে এলো কোন সময় ই নিল না যেন।গাছের গোড়ার কাছ থেকে আধ-শুকো আস্ত কলাপাতা দিয়ে বানানো গোলকরা দড়িটি দু’পায়ে গলিয়ে দু’হাতে গাছ জড়িয়ে ধরে তর তর করে বেয়ে গাছের মাথায় উঠে বসেছে। ভাবছি এই ধাড়ি ঢেমনি যদি আল্লাহ্ না করুণ কোন কারণে গাছ থেকে পিছ্লে নীচে পড়ে যায় তখন কী হবে? আমি ভাবতে পারছি না,মাথা ঘুড়ে উঠেছে,বমি বমি লাগছে।যদি ধরেও নিলাম পড়ে যেন যাবে না গাছ থেকে কিন্তু এই গ্রামের কেউ যদি দেখে ফেলে ঐটা নারকেল গাছে চড়েছে,মান-ইজ্জত এ বাড়ীর থাকবে?আমার কান্না পেল। আমি কেঁদে কেঁদে হাত জোড় করলাম,হাত-পা ধরে যত রকম অনুরোধ উপরোধ করা সম্ভব তা সবই করলাম।গাছ থেকে সাবধানে নেমে আসতে বললাম আল্লার ওয়াস্তে ,কিন্তু কিসের কী?
এই যে বন লক্ষ্মী,লতা সোনা আমার,আগে মনে ছিল না?আমাকে যখন দাঁত নড়াতে চেয়েছিলে? চুপ,একদম চুপ।আবার ফোঁপায়?একটু শব্দ বেরোলে মাথা ফাটিয়ে ফেলব নারকেল ছুড়ে।এই,চুপ।কোন ফোঁস ফোঁস করাও চলবে না,এই মারলাম নারকেল।ইস এ কী করলাম?ছোট ডাবটি তো ওর পায়ে দিয়ে পড়ল হাত ফসকে।ব্যথা পেয়েছে নিশ্চয়ই।মন খারাপ লাগছে,কয়েকটা ডাব নীচে ফেলে দিয়ে দ্রুত নেমে পড়ি।ওর পায়ের অবস্থা কী করেছি কে জানে।
বাড়ির ভেতর থেকে কে যেন ডেকে বলল ‘বনলতা কিসের শব্দ পেলাম?তোরা কোথায়?’আমি বলে দিলাম,’ও কিছু না আমরা এখানেই আছি।’
নাছরিন গাছে থেকে নেমে অনেক যত্নে চোখের জল মুছিয়ে পা টেনেটুনে দেখল পরম মমতায় আর কানের কাছে মুখ নিয়ে আস্তে আস্তে বলল ” তুই চাইলে এক ফুঁৎকারে দোজখের আগুন নিভিয়ে দিতে পারি “।
১৬টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
কি মন্তব্য করবো এমন লেখায় বুঝতে পারছিনা ।
সম্পর্ক বন্ধন অনুভুতি কোন পর্যায়ে গেলে এমন লেখা সৃষ্টি হয় তাও অজ্ঞাত আমার কাছে ।
নিজের মাঝে বাস করে এমন সৃষ্টিকে ফুলেল শুভেচ্ছা ।
বনলতা সেন
এটি আসলে আমার নিরীক্ষা ধর্মী লেখা । নাছরিন এখানে জাতিস্মর ।
কতটা লিখতে পারছি নিজেই বুঝছি না ।
নিয়মিত পড়ছেন দেখে আনন্দিত ।
জিসান শা ইকরাম
নুতন এক বনলতা সেনকে দেখছি। যিনি লেখায় আমার চিন্তাকে অতিক্রম করে গিয়েছেন।
আদিব আদ্নান
কী লেখা কেমন লেখা আমি সে দিকে যাচ্ছি না ।
জাতিস্মরটি একটু বলে দিলে ভাল হয় ।
বনলতা সেন
জাতিস্মর হল এমন এক জন যে তার পূর্বজন্মের কথা সব জানে ।
বনলতা এখন জাতিস্মর , যে আগের জন্মে নাছরিন ছিল । বনলতা এখানে দ্বৈত সত্তা ।
আমার জন্যও লেখাটি কঠিন ।
ভাল থাকবেন ।
লীলাবতী
পুর্বের লেখায় নাছরিনকে মেরে ফেললেন। এখন আবার ফিরিয়ে আনলেন। কেনো মেরে ফেলেন? 🙁
গাছের উপরে নাছরিন – মজা পেয়েছি। লেখার শেষ অংশ মনে দাগ কেটেছে ।
বনলতা সেন
এখন বেশ কিছু দিন আমরা নাছরিনের সাথে থাকব এবং নাছরিনও আমাদের সাথে
থাকবে বলে কথা দিয়েছে । অনেক আনন্দ বেদনার কথা হবে ।
ভাল থাকবেন , নূতন লেখা দিন ।
শুন্য শুন্যালয়
কিছুটা অবাক, প্রশ্নবিদ্ধ… এমন বন্ধুত্ত্ব কে অনেক শ্রদ্ধা…
আপনার লেখার হাতটি আমাকে দিয়ে দিন…
বনলতা সেন
আমিও অবাক , এরকম বন্ধুত্বের কথা তুলে ধরত পেরেছি বলে ।
আমার একটুও আপত্তি নেই এই হাতটি আপনাকে দিয়ে দিতে তবে বিনিময়ে যে হাতটি দিয়ে আপনি আপনার
শেষ লেখাটি লিখছেন । এখন বলছি – আপনার শেষ লেখাটি পড়ার পর আমি আপনার সব লেখা আবার পড়েছি ।
হঠাৎ করে শেষ লেখাটি আপনি কী করে লিখলেন আমি বুঝতে পারছি না । আপনি কী জানেন আপনি কি
লিখছেন ?আমি বলব আপনার লেখা আপনি আবার পড়ে দেখবেন । এবং আমি আশা করছি পরের লেখা এর থেকেও যেন ভাল হয় , এর যদি ভাল নাই-ই হয় এর নীচে কিন্তু মেনে নেব না । এখন বলুন – হাত বদল করবেন ?
আমি আপনার লেখার অপেক্ষায় থাকব ।
আমার পরের লেখাটি কিন্তু আপনাকে উৎসর্গ করছি আগাম ঘোষনা দিলাম ।
এমন লেখা যে লিখতে পারে সে একটি লেখা অবশ্যই পেতে পারে ।
অনেক অনেক শুভ কামনা আপনার জন্য ।
প্রহেলিকা
jatisshor porbo suru korechen dekhe onek valo laglo shuvo kamona sroddheya. likha somporke alochona pore hobe. Tobe suru korechen ta dekhe shuvo kamona janiye gelam agei. Valo thakun sotot.
বনলতা সেন
আলোচনা আমার নিজের জন্যই দরকার ছিল ।
জাতিস্মর নিয়ে তালে তালে লিখতে শুরু করে দিলাম কোন প্রস্তুতি ছাড়াই ।
আমি তুলে ধরতে চেষ্টা করছি কিন্তু পেরেছি কিনা সেটি বুঝতে পারছি না ।
এই সময়ে আপনার আবার কীসব হ্যান ত্যান , এর সময় পেলেন না ।
নাছরিনের কানাকড়ির যোগ্যতাও আপনার দেখি না ।
তবে ছেড়ে দেয়ার মানুষ আমি না । লিখব আবারও । নূতন ভাবে পরের লেখাটিতে পরীক্ষা করব ।
তবুও ভাল আপনার এই নোনা সমুদ্রে থেকেও পড়ছেন দেখে অল্প আনন্দিত । ভাল হয়ে তাড়াতাড়ি আমাদের
লেখার মিনি রাজ্যে ফিরে আসুন ।
প্রহেলিকা
ফিরে এসব মানে কি? আমিতো সবসময় এখানেই আছি পড়ছি শুধু নিজের অনুভুতি জানাতে পারছি না এই যা। আশা করি খুব শীগ্রই জানাতে পারব। দোয়া করবেন একটু আর হা লিখতে থাকুন শেষ পর্ব ছাড়া।
ছাইরাছ হেলাল
একে জাতিস্মর তারপর লেখার মধ্যে লেখা , তা আবার শিশুতোষ , আমার ভাবতেই
কেমন যেন বোধ হচ্ছে । এ সমন্বয় আমার কাছে বেশ জটিল লাগছে । উপস্থাপনায় আপনার পান্ডিত্য
প্রশংসাতীত । শেষ লাইনটি অসাধারণ বললে কম বলা হবে ।
লিখতে থাকুন , আমাদের হা করা মুখের কথা না ভেবে ।
অপেক্ষা করতে কোন সমস্যা নেই ।
বনলতা সেন
আপনাকে ফাঁকি দেয়ার জো নেই দেখছি । একটু পরীক্ষা করলাম তাও ধরে ফেললেন ।
পাণ্ডিত্যের কী দেখলেন এখানে ? আপনারা একটু বাড়িয়েই বলেন সব সময় ।
মোটেই হা করতে হবে না । আরও লিখতে শুরু করেছি , মন্দ হলেও পড়তে হবে ।
কোন পরামর্শ তো দিলেন না । ভুল ত্রুটির কথাও বলেন না ।
যাক , তাও এ সব লেখা পড়েন তাই শুকুর ।
হতভাগ্য কবি
কি লিখবো ভাবছি ………… অদ্ভুত মায়া মায়া লিখা
বনলতা সেন
আপনিও একটু না হয় মায়া দেখিয়েই লিখতেন ।
আমার লেখা নিয়মিত পড়তে মনে থাকে যেন ।