জলতরঙ্গ (২)

ইঞ্জা ১৬ জুলাই ২০১৭, রবিবার, ০৯:৫৭:১৪অপরাহ্ন গল্প ১৭ মন্তব্য

 

 

 

রফিক শেখকে বিদায় দিয়ে আবীর নিজ রুমের দিকে পা বাড়ালো, পিছন থেকে হারাধন বললো, স্যার আফনেরে কিছু দিতাইম নি?
কি দেবে বলো, আবীর বললো।
স্যার, ঘরত কফি আর ছা আছে।
হুম, ওকে এক কাপ কফি দাও, বলেই অবীর নিজ রুমে গিয়ে নিজের লাগেজ নিয়ে খুললো, ভাজ করা কাপড় গুলো নিয়ে সামনে রাখা আলমিরাতে রাখা শুরু করলো, সব গুছিয়ে রাখতে রাখতেই হারাধন কফি আর কিছু বিস্কুট দিয়ে গেল, তাই নিয়ে পান করা শুরু করলো, বিস্কুট একটা পুরাই মুখে চালান করে দিয়ে কফি নিয়ে রুম থেকে বেরুলো সে, প্রতিটি রুম, ডাইনিং, বসার ঘর, সব ঘুরে ঘুরে দেখলো কফিতে চুমুক দিতে দিতে, প্রতিটি রুম বেশ পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন আর গুছানো, বুঝা যায় আগের ম্যানেজার হারাধনকে ভালোই ট্রেনিং দিয়েছে।
আবীর কফি শেষ করে ড্রেস খুলে কোমরে টাওয়েল জড়িয়ে বাথরুমে প্রবেশ করলো, গোসল করলো সে সময় নিয়ে, গোসল শেষে গা মুছে নিয়ে বেরিয়ে এলো, মাথাটা ব্রাশ করে নিয়ে পাজামা আর টি শার্ট পড়ে সটান শুয়ে পড়লো বিছানায়।
ঘুম ভাঙলো যখন রুমের লাইট চোখে পড়াই, সন্ধ্যা হয়ে গেছে কখন খেয়াল করেনি, হারাধন বাতি জ্বালিয়ে দেওয়ায় ঘুম ভেঙ্গে গেল।
আবীর দ্রুত বিছানা ছেড়ে বাথরুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিয়ে বেরিয়ে এলো, মুখ মুছে রুম থেকে বেরিয়ে সামনের বারান্দায় এসে সোফায় বসে পড়লো, এইখানেও বেতের সোফা রাখা, শুধু টি টেবিলের উপর কোন ফ্লাওয়ার ভার্স নেই।

হারাধন, আবীর ডাক দিলো।
জি স্যার।
ঘরে কি কোন ফ্লাওয়ার ভার্স নেই?
আছে স্যার।
তাহলে মালিকে বলো, প্রতিদিন যেন সেইটাতে কিছু তাজা ফুল দিয়ে এইখানে রাখে।
জি স্যার।
তুমি কি করছো?
রান্না হররাম স্যার।
এই তুমি শুদ্ধ ভাষায় কথা বলতে পারোনা?
হ স্যার, কিছু কিছু ফাররাম।
তাহলে শুদ্ধ ভাষা ব্যবহার করো, তোমার ভাষা আমি কম বুঝি।
ঠিক আছে স্যার।
কি রান্না করছো?
রুই মাছ, মুড়িঘন্ট, সবজি আর মুরগি।
এতো কে খাবে?
স্যার!
সব কি রান্না হয়ে গেছে?
না স্যার, ফ্রিজত রাখা আছুইন, শুধু মাছ বাইর করছি।
ঠিক আছে, মাছ আর সবজি রান্না করো, এতেই আমাদের হয়ে যাবে, আর একটা এস্ট্রে দিয়ে যাও।
ঠিক আছে স্যার, বলে হারাধন চলে গেলে আবীর সিগারেট ধরিয়ে একটা টান দিয়ে এদিক ওদিক তাকালো, বারান্দার বাতির আলো দেখে প্রচুর ছোট ছোট পোকা ভীর করেছে, দূরের বাগানে জোনাকিরা আলো ছড়িয়ে ইতিউতি ঘুরে বেরুচ্ছে, ঝিঝিরা ক্রিকিট করে শব্দ করছে, পরিবেশটা আবীরের কাছে স্বর্গীয় মনে হলো।

খুব ভোরে ঘুম ভাঙ্গলো আবীরের, হাত বাড়িয়ে হাত ঘড়িটা নিয়ে দেখলো ভোর পাঁচটার কিছু বেশিই হয়েছে, উঠে গেল সে, বাথরুমে প্রবেশ করে ফ্রেস হয়ে বেরিয়ে এসে ট্রাক স্যুট পরে নিয়ে পায়ে কেডস গলিয়ে রুম থেকে বেড়িয়ে দেখে হারাধন ঝাড়ু দিচ্ছে, ওকে কিছু না বলে আবীর বেরিয়ে গেল বাংলো থেকে জগিং করার জন্য।
বাগানের শ্রমিকরা অলরেডি কাজে যাচ্ছে, অচেনা আবীরকে একবার মাথা ঘুরিয়ে দেখে আবার নিজ পথে এগুলো সবাই, আবীর দৌড়ানোর মাত্রা বাড়ালো, এ তার প্রতিদিনের অভ্যাস, দৌড় একসময় কমে আসলো যখন সে ঘুরে তার বাংলোর কাছাকাছি এলো, দৌড় থামিয়ে ও হাল্কা জগিং করে এগুতে লাগলো বাংলোর উদ্দেশ্যে।

হঠাৎ ও খেয়াল করলো মেয়ে একটা শিউলি গাছের নিচে ফুল কুড়াচ্ছে, আবীর থমকে দাঁড়িয়ে গেল।
মেয়েটি উঠে দাঁড়িয়ে ফুল গাছ ধরে কিছুক্ষণ ঝাকা দিলো, গাছ থেকে প্রচুর ফুল ঝরে পড়তে লাগলো মেয়েটির উপর, মেয়েটির লম্বা চুলে বেশ কিছু ফুল রয়ে গেছে।
আবীর আসতে আসতে মেয়েটির পিছনে গিয়ে দাঁড়িয়ে খুক করে খাশি দিতেই মেয়েটি চমকে দিলো এক লাফ, এরপর বুকে থুথু থুথু করে রেগে গেল।
এই আপনি আমাকে ভয় পাইয়ে দিলেন কেন?
ওমা, আমি কখন ভয় পাইয়ে দিলাম, আবীর গম্ভীর হওয়ার চেষ্টা করলো, আবার বললো, কে তুমি আর আমার ফুল তুমি চুরি করছো কেন?
মেয়েটি থমকে গেল, আমতা আমতা করে বললো, আমি কই ফুল চুরি করছিলাম, এগুলো ঝরে গেছে তাই নিচ্ছিলাম।
তুমি কি রফিক শেখ সাহেবের মেয়ে?
হাঁ।
কি নাম তোমার?
রিতা।
হারাধন, আবীর ডাক দিলো, হারাধন।
জি স্যার বলে তাড়াহুড়ো করে ঘর থেকে বেড়িয়ে এলো হারাধন।
মেম সাহেবের ঝুড়িতে সব ফুল তুলে দাও, আর তুমি নিশ্চয় ব্রেকফাস্ট করনি, আমার সাথে ব্রেকফাস্ট করো।
না আমি যাবো।
হুম ঠিক আছে বলে আবীর বাংলোর ভিতর চলে গেল।
রুমে এসে আবীর এক গ্লাস পানি পান করে বাথরুমে গেল গোসল করতে, গোসল শেষ করে দ্রুত ড্রেস পড়ে ডাইনিংয়ে গেল, হারাধন এসে লাল রুটি, পরোটা, সবজি ভাজি, ডিম পোষ্ট দিয়ে গেল, একটু পর চা দিয়ে গেল।
আবীরের খাওয়া শেষ হতে হতেই গাড়ীর শব্দ শুনা গেলো।

মিতসুবিসি হুড খোলা জীপটি দেখে গাড়ীটির প্রেমে পড়ে গেল আবীর, ড্রাইবার সালাম দিলে আবীর গাড়ীর চাবিটা চেয়ে নিলো নিজে ড্রাইভিং করবে বলে, নিজেই ড্রাইভ করে এগুলো ড্রাইভারের দেখানো পথে, দশ মিনিটের মধ্যে পোঁছে গেল অফিসের সামনে, দোতলা অফিস ঘরের পিছনেই ফ্যাক্টরি যেখানে চা উৎপাদিত হয়, অফিসের সামনের দরজায় রফিক শেখ দাঁড়িয়ে আছেন, অফিসের উল্টো পাশে জনা দশেক মানুষ বসে ছিল, আবীরের গাড়ী দেখে দুই হাত এক করে নমস্কার ভঙ্গিতে দাঁড়িয়ে গেল।
আবীর গাড়ী থেকে নেমে রফিক শেখকে সালাম দিয়ে জিজ্ঞেস করলো, ওরা কারা?
ওরা শ্রমিকদের সর্দার স্যার।
স্যার?
অফিসের ডেকোরাম বাবা।
হুম, তা উনারা কেন এসেছেন, আবীর জিজ্ঞেস করলো।
আপনি এসেছেন শুনে এসেছে, দেখা করতে চাই।
ঠিক আছে, উনাদের ভিতরে আসতে বলুন, আমি দেখা করবো, বলেই আবীর ভিতরের দিকে এগুলো, অফিসের সবাই দাঁড়িয়ে সালাম দিলো দেখে আবীর ওয়া আলআলাইকুম আসসালাম বলে তাদের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে, সবাই এগিয়ে এসে যার যার পরিচয় দিলো, আবীর সবার সাথে হাত মিলালো, সবার খবরা খবর জানলো।
রফিক শেখ এসে বললেন, স্যার আপনার অফিস রুম উপরে, সর্দারদের উপরে কনফারেন্স রুমে পাঠিয়েছি।
ওকে চলুন, নিচের অফিসারদের উদ্দেশ্যে বললো, আমি আপনাদের মতই একজন, আশা করি আমরা কাঁদে কাঁদ মিলিয়ে এক সাথে কাজ করবো, পরে কথা হবে, আসছি।

উপরে এসে রফিক শেখক, আবীর বললো, চলুন আগে কনফারেন্স রুমে যায়, দুজনে কনফারেন্স রুমে আসলে বাকিরা দাঁড়িয়ে গেল, সবাইকে বসতে বলে আবীর বসলো।
বলুন কেমন আছেন আপনারা?
স্যার আমরা ভালো নেই, সবাই এক যোগে বলে উঠলো।
সমস্যা কি খুলে বলুন।
স্যার, আমরা দীর্ঘ দিন মাত্র সাড়ে তিন হাজার টাকা বেতনে চাকরি করছি, যা গত দশ বছরেও আর বাড়েনি, আপনার কাছে এসেছি এর একটা বিহিত করুন, আর আমাদেরর এইখানে কোন ডাক্তার নেই, নেই পর্যাপ্ত দাওয়াই, আমাদের কয়েকজন এ পর্যন্ত সাপের কামড়ে মারা গেছে চিকিৎসার অভাবে, আর কতো মরলে কোম্পানি খুশি হবে?
হুম বুঝতে পারছি, আমি চেষ্টা করবো এইসব সমস্যার সমাধান করতে, মাত্র তো জয়েন করলাম, অনেক কিছুই জানিনা, আমি হেড অফিসে কথা বলে দেখবো।
তাহলে আমরা আসি স্যার?
না বসুন, চা খান, রফিক আনকেল পিয়নকে বলুন উনাদের চা আর বিস্কুট দেওয়ার জন্য, বলেই আবীর উঠে গেল পাশের রুমে, দরজায় ম্যানেজার লেখা।

…………. চলবে।
ছবিঃ Google.

৫৯৫জন ৫৯৫জন
0 Shares

১৭টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ