আমি মফঃস্বলের বাসিন্দা । শহরের নাম গোপালগঞ্জ । খুবই ছোট গ্রামের মত একটা শহর । যেহেতু বাইরে বাইরে ঘোরার বদঅভ্যাস সেহেতু ছোটশহরে প্রায় সব কিছুই আমার চোখে পড়ে। এবার জন্মাষ্টমী উপলক্ষে স্থানীয় ইসকনমন্দির এক বিশাল সোভাযাত্রা বের করেছিল । ৫০/৬০ টি মটরসাইকেল,পিকাপ, ৪/৫পেয়ার সাউন্ড , একটা বড়সড় হাতি, বেশ কয়েকটি মাইক্র বাস ওপ্রাইভেটকার,শ-খানেক রিকশা ও কমপক্ষে হাজার খানেক মানুষ নিয়ে শহরেরগুরুত্বপূর্ণ সড়ক মিছিলটি প্রদক্ষিন করে । প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ারমাধ্যমে জানতে পেরেছি প্রায় সব কয়টি জেলায়ই এরকম বড় শোভাযাত্রা হয়েছে । তারমানে দেশে এখনো বেশ হিন্দু আছে এবং তারা টাকা পয়সা জোগাড় করে যাগযমক পূর্ণভাবে শোভাযাত্রা বের করতে পারে ।
কিন্তু আমি এখনো দেখি নি বাশুনি নি কোন হিন্দু ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কোনদিন সংখ্যা লঘু নির্যাতনেরপ্রতিবাদ করেছে । তারা যে টাকা ও শ্রম ব্যয় করে কৃষ্ণের জন্মদিন পালন করেসে টাকা ও শ্রম ব্যয় করে যদি খ্রিস্টানদের মত শান্তি পূর্ণ প্রতিবাদ জানাততাহলে আমার মনে হয় সংখ্যালঘু নির্যাতন শতকরা ৭০ ভাগ কমে যেত ।
এই শহরেরই আরেকটা ছোট ঘটনা শেয়ার করতে চাই । গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগ সভাপতির মাদকাসক্ত পুত্ররা এক গরিব ও অসহায় খ্রিস্টান বিধবা মহিলার জমি দখল করে ফেলে । এবং ফলাফলে প্রথমে জেলার মধ্যে অবস্থিত সকল চার্চ রাস্তায় নেমে আসে । তারা শান্তিপূর্ণভাবে মানব বন্ধন করে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে স্বারকলিপি জমা দেয় । তাতে কাজ না হলে ২ দিনের মধ্যে সারা দেশে এক জোগে মানব বন্ধন কর্মসূচীর আয়োজন করে । ফলাফলে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বিধাবা মহিলাটি তার ৫ শতাংশ জমি বুঝে পায় । এখানে দেখার বিসয় খ্রিস্টানসম্প্রদায় সংখ্যায় হিন্দুদের তুলনায় কম হলেও তারা নিজেদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পেরেছে শুধুমাত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান গুলোর সজাগ দৃষ্টির কারণে ।
কিন্তু হিন্দুদের সব কিছু থাকার পরও তারা কিছুই করতে পারে না । যেহেতু হিন্দুদের কোন ধর্মীয় রাজনৈতিক দল নেই এবং রাজনৈতিক দলগুলো যেহেতু হিন্দুদের শুধু ব্যাবহারই করে সেহেতু হিন্দুদের নির্যাতন রোধে ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই কার্যকারী ভুমিকা রাখতে পারে । এক্ষেত্রে ইসকণ বা রাম কৃষ্ণ মিশনের মত আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠানগুলো সবচেয়ে বেশি ভুমিকা রাখতে পারে । কিন্তু এই প্রতিষ্ঠানগুলো কোনদিনই নির্যাতিত হিন্দুদের নিয়ে কথা বলতে চায় না । দিন তারিখ মনে না থাকলেও আমার একটা ঘটনা পরিষ্কার মনে আছে , বাশখালিতে একটি হিন্দু পরিবারকে পুড়িয়ে মারার ৬ দিন পর তৎকালিন রামকৃষ্ণ মিশনের অধ্যক্ষ স্বামি অক্ষরানন্দ প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া কে শুভেচ্ছা জানাতে গিয়েছিলেন । এবং সেই ছবি ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনের অভ্যার্থনা কক্ষে আমি ২০০৬/০৭ সালে টানিয়ে রাখতেও দেখেছি । আর্থিক ও সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত এই ইসকণ ও রাম কৃষ্ণ মিশন চাইলে সংখ্যালঘু নির্যাতন রোধে জোরদার আন্দোলন গড়ে তুলতে পারে । কিন্তু তারা ক্ষমতাবান ও পাথুরে মূর্তির পদ সেবা ছাড়া আর কিছুই করতে চায় না । এইসব প্রতিষ্ঠানগুলোর সাধুরা ধর্মের নামে সব কিছু বিসর্জন দেয়ার সাথে সাথে নিজেদের মানবিকতা বোধও বিসর্জন দিয়ে দয়েছে বলে আমার মনে হয় । হয়ত কেউ কেউ প্রশ্ন রাখবে কেন ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান রাস্তায় নামবে ??? তাদের বলতে চাই , হিন্দুদের মনের জোর দেশভাগের সাথে সাথেই নষ্ট হয়ে গেছে । এরা চাপ সহ্য করে, না পারলে ভারতে চলে যায় । কিন্তু প্রতিরোধ করার কথা কোনদিনও ভাবে না । কিন্তু ধর্মীও প্রতিষ্ঠানের ডাকে হিন্দুরা ঠিকই একজায়গায় জড় হয় । বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানই তার প্রমাণ । তাই শান্তিপূর্ণ প্রতিবাদ ও প্রতিরোধ শুধুমাত্র ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানগুলোই চেষ্টা করলে সাধারণ হিন্দুদের নিয়ে করতে পারবে ।
(নাস্তিকতাবাদ নিয়ে কম হিন্দুর গালি খাইনি, কিন্তু সংখ্যালঘু নির্যাতন হলে এই নাস্তিকরাই প্রথমে সরব হয়)
নোটঃ ব্লগে অনেক ভালো ভালো ও নতুন লেখক এসেছেন । আমি অনিয়মিত হয়ে পড়ায় অনেক ভালো লেখা পড়া থেকে বঞ্চিত হয়েছি । আশাকরি এখন নিয়মিত হব ।
২০টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
” হিন্দুদের মনের জোর দেশভাগের সাথে সাথেই নষ্ট হয়ে গেছে । এরা চাপ সহ্য করে, না পারলে ভারতে চলে যায় । ” —- এটিই আসল কারন প্রতিবাদ না করার ।
যুক্তিপূর্ণ লেখায় অনেক ভালো লাগা ।
জি , আপনি বেশ অনিয়মিত হয়ে গিয়েছেন 🙂
"বাইরনিক শুভ্র"
এখন নিয়মিত হব আশা রাখি ।
শুন্য শুন্যালয়
অনেক ভালো লিখেছো ভাইয়া …এরকম করে সবাই কেনো ভাবিনা…ভাবলেও কেনো কিছু করতে পারছিনা …আশা হারাই…শুভ কামনা তোমার ভাবনার জন্যে …লিখে যাও…এটাই সব পজিটিভ কিছুর শুরু …
"বাইরনিক শুভ্র"
ভাবে না তা কিন্তু না অনেকেই ভাবে । কিন্তু যারা ভাবলে কাজ হবে তারা নিজের আখের গোছাতে ব্যাস্ত ।
লীলাবতী
গুড পোস্ট । আপনার দেখার দৃষ্টি চমৎকার ।
"বাইরনিক শুভ্র"
ধন্যবাদ । 🙂
খসড়া
চমতকার পর্যবেক্ষন। খুব খারাপ লাগে এই সব দেখলে। দেশ তো আমাদের সবার। এই দেশ নিজের দেশ। দেশ থেকে উচ্ছেদ যারা করে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে তারা আসলেই চারপেয় প্রাণী সম। সাম্প্রদায়িক মনভাব সৃষ্ট সেই সম্রাট আলমগীর এর আমল থেকে। তারই ধারাবাহিতা চলছেই। কবে এর শেষ হবে সৃষ্টি কর্তাই জানে।
"বাইরনিক শুভ্র"
শেষ হবে সেইদিন যেদিন আমি আপনি , মোল্লা-পুরুত সবাই সচেতন হবে । কিন্তু আমি হতাশ ।
ফাহিমা কানিজ লাভা
নিজেদের সংখ্যালঘু ভাবা চলবে না। দেশটা স্বাধীন করার সময় সব ধর্মের মানুষেরই সমান অবদান ছিল। তাই হিন্দু বা খ্রিষ্টানই হোক, অধিকার কারো কম না। আমরা জাতি হিসেবে আজকাল খুব স্বার্থপর হয়ে যাচ্ছি দিন দিন, সবাই মিলে সব অয়ায়ের প্রতিবাদ করলে এমন অবস্থা থাকবে নে কিন্তু এই সুমতিটাই হচ্ছে না বাঙ্গালীর।
"বাইরনিক শুভ্র"
এটাই দুঃখের বিসয় । আমরা সব কিছু বুঝি । এবং বুঝে হাত গুটিয়ে নেই ।
আদিব আদ্নান
আপনার উপলব্ধির জায়গাটি সঠিক ।
আবার সংখ্যালঘু নির্যাতন প্রক্রিয়া পৃথিবীব্যাপী সমান কার্যকর ।
অনিয়মিত হওয়া মেনে নিচ্ছি না ।
"বাইরনিক শুভ্র"
কিছুটা উপসম খুব সহজেই পাওয়া যেত । যদি দুই পক্ষই সজাগ থাকত ।
শিশির কনা
ভালো লিখেছেন শুভ্র (y) (y)
"বাইরনিক শুভ্র"
ধন্যবাদ ।
ছাইরাছ হেলাল
অনেক নাটকের নাটকিয়তা আছে সংখ্যালঘুদের নিয়ে ।
ভালোলাগল আপনার সচেতনতা ।
নিয়মিত হওয়ার লক্ষণ দেখছি না এখনও ।
"বাইরনিক শুভ্র"
ভাই পরীক্ষা চলে এসেছে ঢিল ছোড়া দুরত্বে । আবার নিয়মিত হব ।
সীমান্ত উন্মাদ
চমৎকার পোস্ট।
"বাইরনিক শুভ্র"
ধন্যবাদ
প্রিন্স মাহমুদ
আপনার দেখার দৃষ্টি চমৎকার
"বাইরনিক শুভ্র"
ধন্যবাদ ভাই ।