ছেঁড়া ডাইরির পাতা হতে…… ১ আমি মা হতে চাই না!

জি.মাওলা ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৩, বুধবার, ০৪:৫৬:৪৬অপরাহ্ন গল্প ১০ মন্তব্য

ছেঁড়া ডাইরির পাতা হতে…… ১

আমি মা হতে চাই না!
এক
জাহিদ মাল্টি ন্যাশনাল একটি কোম্পানিতে ভাল একটা পদে চাকরি করে। মোটা অঙ্কের স্যালারিও পায় ও। এক বছর আগে পারিবারিক পছন্দে বিয়ে করে ইভাকে।
ওর বউ ইভা বেশ সুন্দরী। আকর্ষণীয় দেহ-বল্লব, টাঙা চোখ, নধর ঠোঁট ……… সব মিলিয়ে মাথা ঘুরিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট।ইভা ডাক্তার। বেসরকারি এক হাসপাতালে প্রাকটিস করে।
দুজনের সংসারে বেশ কাটছিল ওঁদের। যেন এক জোড়া মুক্ত পাখির মত আকাশে বিচরণ করছে ওরা। সুখী দম্পতী বলতে যা বোঝায় ওরা তাই। কি আবেগ, ভালবাসা আর ভাল লাগায় একটি বছর কেটে গেল টেরই পায়নি ওরা ।
বেশ কেটে যাচ্ছিল ওঁদের সময়। ঝামেলা শুরু বাসাতে মা বেড়াতে এসে। এসেই মা দিনে অন্তত ৪-৫ বার ইভার কাছে একটা নাত/ নাতনি চান। মার ঐ এক কথা বউমা এক বছর হল এবার আমার একটা নাতি চাই।
জাহিদের কানেও মা তুলেছে ব্যাপারটা। একদিন বিরক্ত নেত্রে ইভা ওকে বলল তোমার মা কি শুরু করেছে বল তো। জপের মত তার এক কথা একটা নাত/ নাতনি চাই।
ওহ ! বাবা কি যে অবস্থা।
জাহিদ নিজেও চায় একটা ছেলে বা মেয়ে আসুক ওঁদের এবার। কিন্তু সুযোগ ও পরিস্থিতি হয়ে উঠেনি বলে ইভাকেও বলা হয় নি আজ পর্যন্ত।
আজ যেন ইভায় সুযোগ টা তৈরি করে দিল ওকে।
ও খুব মৃদু কণ্ঠে বলল ……… ভাল তো ! এবার একটা সন্তান নিই আমরা। আমিও ব্যাপারটা অনুভব করছি বেশ কিছুদিন হতে।
ইভাকে এমন ফুঁসে উঠতে দেখেনি ও কোনদিন। ওর রিয়েক্ট দেখে ও হতভম্ব।
ইভা ফুঁসে উঠে যা বলল।
তার সারমর্ম হল: মেয়েরা কি বিয়ে করে সন্তান উৎপাদনের জন্য।ওরা কি শুধু সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র। ওঁদের কি কোন নিজস্ব স্বাদ আহ্লাদ , নিজস্ব চাওয়া পাওয়া নেই।তোমরা চাইলেই কি সন্তান নিতে হবে মেয়েদের। আমার যখন ইচ্ছে হবে আমি তখন সন্তান নিব। তোমাদের কোন কথা আমি শুনব না । আমি এখন মা হতে প্রস্তুত নই। জীবনটা উপভোগ করতে চাই আমি। পৃথিবীর রূপ রস গন্ধ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে চাই আমি।বাবু নিলে আর তা সম্ভব না।
এর পর ক্ষিপ্ত হয়ে বিছানা হতে উঠে বাথরুমে ঢুকে গেল। আর ওর নগ্ন পিঠ আর ঢেও খেলানো নিতম্বের দিকে হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল জাহিদ।
এর আগে মনে করতো জীবনটা এত সুন্দর কেন। এখন এই মহুরতে মনে হচ্ছে জীবনটা এত কুৎসিত কেন।কেন জীবনে মুখমুখি হতে হয় খারাপ সময়ের।

                                     দুই

ঐ রাতের ঘটনার পর হতে এ ভাবেই চলছিল ওদের। মা চলে জাওয়ার পর ওরা দুজনেই যেন স্বস্তি পেল।

 ওদের মাঝে যেন একটা অদৃশ্য দেয়াল গজিয়ে উঠেছে। কেমন যেন ……………………… ঠিক বুঝাতে পারবনা জাহিদ। কেমন একটা  অস্বস্তি কাজ করে।

চরম  মহুরতে মনে হয় “ এত বীজ বুনে আর নাঙল টেনে লাভ কি? ফসল তো আর উৎপন্ন হবে না।”

মাঝে মাঝে  অফিসে যাবার পথে ইউনিফরম পরা বাচ্চাদের দেখলে কেমন বুকটা মুচড়ে উঠে। হতাশায় ভরে উঠে বুকটা। হাহাকার করে উঠে একটা বাচ্চার জন্য। কল্পনায় ভাবতে ভাল লাগে ওর বাচ্চার সঙ্গে ও খেলছে। ও হয়েছে ঘোড়া আর ওর বাবু হয়েছে সওয়ারি।

দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাস্তবে ফিরে আসে জাহিদ।

অফিস বাড়ি , এই করে রোবটের মত কেটে যাচ্ছে সময়। যেন চাবি দেওয়া ঘড়ি ও। সময় মত সব কাজ করছে । এভাবেই নিরানন্দ ভাবে কাটছে সময়।

 

 

                      তিন

এত দিনের জমানো ক্ষোভ , রাগ , অভিমান একরাতে শোবার ঘরে ইভার উপর ঝেড়ে দিল জাহিদ। উত্তেজিত আক্রোশ আর ঘৃণা মিশ্রিত কণ্ঠে উগরে দিল মনে জমানো  সব রাগ।

মা, মা শব্দের অর্থ , দায়িত্ব, গরিমা, আনন্দ,  মান, সম্মান তুমি বোঝ?

বোঝ না।

নারীর সম্মান  মা হওয়াতে। নারীর সারথকতা মা ডাক শোনার মধ্যে।

আর তুমি মা হতে চাওনা। কেন চাওনা ?

শুধু নিজের স্বার্থপরতা কে মূল্যায়ন করতে।

 

তুমি কারও মা নও, নও কারও স্ত্রী। তুমি ডাক্তার ইভা।

তোমার আছে একটা প্রফেশন। আছে নিজস্ব জীবন, নিজস্ব উপার্জন।

নিজেকে নিয়ে গড়েছ আলাদা একটা জগত। সেই একান্ত জগত নিয়েই তোমার চিন্তা চেতনা, ভাব ভালবাসা। এই স্বার্থপরতা তোমাকে বানিয়েছে মেয়ে হিসেবে, নারী হিসেবে নয়।

তুমি তোমার জগত কে আমার চেয়ে ভাল বেসেছ। তুমি শুধু আমাকে তোমার শারীরিক চাহিদা মিটানোর যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেতে বিয়ে নামের এক চুক্তি করেছ। বিয়ের মর্যাদা, লক্ষ্য সব তোমার শারীরিক তৃপ্তি নিয়ে।

তুমি বোঝ না বা বুঝতেও চাওনা অন্যের আখাঙ্খাকে । প্রধান্য দাও শুধু তোমার চাওয়াকে। তোমার ভাল লাগাকে।

তাই মনে করি আজ এই মহুরত হতে তোমার আর আমার পথ সরল রেখার দু দিকে।

 

 

কথা গুলি বলে জাহিদ হন হন করে রুম হতে বের হয়ে ছাদে উঠে গেল। ছাদে কোনার দোলনাতে গা আলিয়ে দিয়ে ফিকে হয়ে আসা চাঁদের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জীবনের হিসেব নিকেশ করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে ও নিজেও বলতে পারবেনা।

সূর্যের প্রথম রশ্মির আলোতে ঘুম ভেঙ্গে প্রথমে বুজতে পারলনা ও কোথায়। তার পর সব মনে পড়ল ওর। তিক্ততায় ভরে উঠল মন।

 ভোরের প্রথম আলোয় পবিত্রতায় মনে মনে বলে উঠল………………… ‘’ জীবনটা বড় সুন্দর’’।  

 

৮৫২জন ৮৫২জন
0 Shares

১০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ