ছেঁড়া ডাইরির পাতা হতে…… ১
আমি মা হতে চাই না!
এক
জাহিদ মাল্টি ন্যাশনাল একটি কোম্পানিতে ভাল একটা পদে চাকরি করে। মোটা অঙ্কের স্যালারিও পায় ও। এক বছর আগে পারিবারিক পছন্দে বিয়ে করে ইভাকে।
ওর বউ ইভা বেশ সুন্দরী। আকর্ষণীয় দেহ-বল্লব, টাঙা চোখ, নধর ঠোঁট ……… সব মিলিয়ে মাথা ঘুরিয়ে দেবার জন্য যথেষ্ট।ইভা ডাক্তার। বেসরকারি এক হাসপাতালে প্রাকটিস করে।
দুজনের সংসারে বেশ কাটছিল ওঁদের। যেন এক জোড়া মুক্ত পাখির মত আকাশে বিচরণ করছে ওরা। সুখী দম্পতী বলতে যা বোঝায় ওরা তাই। কি আবেগ, ভালবাসা আর ভাল লাগায় একটি বছর কেটে গেল টেরই পায়নি ওরা ।
বেশ কেটে যাচ্ছিল ওঁদের সময়। ঝামেলা শুরু বাসাতে মা বেড়াতে এসে। এসেই মা দিনে অন্তত ৪-৫ বার ইভার কাছে একটা নাত/ নাতনি চান। মার ঐ এক কথা বউমা এক বছর হল এবার আমার একটা নাতি চাই।
জাহিদের কানেও মা তুলেছে ব্যাপারটা। একদিন বিরক্ত নেত্রে ইভা ওকে বলল তোমার মা কি শুরু করেছে বল তো। জপের মত তার এক কথা একটা নাত/ নাতনি চাই।
ওহ ! বাবা কি যে অবস্থা।
জাহিদ নিজেও চায় একটা ছেলে বা মেয়ে আসুক ওঁদের এবার। কিন্তু সুযোগ ও পরিস্থিতি হয়ে উঠেনি বলে ইভাকেও বলা হয় নি আজ পর্যন্ত।
আজ যেন ইভায় সুযোগ টা তৈরি করে দিল ওকে।
ও খুব মৃদু কণ্ঠে বলল ……… ভাল তো ! এবার একটা সন্তান নিই আমরা। আমিও ব্যাপারটা অনুভব করছি বেশ কিছুদিন হতে।
ইভাকে এমন ফুঁসে উঠতে দেখেনি ও কোনদিন। ওর রিয়েক্ট দেখে ও হতভম্ব।
ইভা ফুঁসে উঠে যা বলল।
তার সারমর্ম হল: মেয়েরা কি বিয়ে করে সন্তান উৎপাদনের জন্য।ওরা কি শুধু সন্তান উৎপাদনের যন্ত্র। ওঁদের কি কোন নিজস্ব স্বাদ আহ্লাদ , নিজস্ব চাওয়া পাওয়া নেই।তোমরা চাইলেই কি সন্তান নিতে হবে মেয়েদের। আমার যখন ইচ্ছে হবে আমি তখন সন্তান নিব। তোমাদের কোন কথা আমি শুনব না । আমি এখন মা হতে প্রস্তুত নই। জীবনটা উপভোগ করতে চাই আমি। পৃথিবীর রূপ রস গন্ধ তারিয়ে তারিয়ে উপভোগ করতে চাই আমি।বাবু নিলে আর তা সম্ভব না।
এর পর ক্ষিপ্ত হয়ে বিছানা হতে উঠে বাথরুমে ঢুকে গেল। আর ওর নগ্ন পিঠ আর ঢেও খেলানো নিতম্বের দিকে হতভম্ব হয়ে চেয়ে রইল জাহিদ।
এর আগে মনে করতো জীবনটা এত সুন্দর কেন। এখন এই মহুরতে মনে হচ্ছে জীবনটা এত কুৎসিত কেন।কেন জীবনে মুখমুখি হতে হয় খারাপ সময়ের।
দুই
ঐ রাতের ঘটনার পর হতে এ ভাবেই চলছিল ওদের। মা চলে জাওয়ার পর ওরা দুজনেই যেন স্বস্তি পেল।
ওদের মাঝে যেন একটা অদৃশ্য দেয়াল গজিয়ে উঠেছে। কেমন যেন ……………………… ঠিক বুঝাতে পারবেনা জাহিদ। কেমন একটা অস্বস্তি কাজ করে।
চরম মহুরতে মনে হয় “ এত বীজ বুনে আর নাঙল টেনে লাভ কি? ফসল তো আর উৎপন্ন হবে না।”
মাঝে মাঝে অফিসে যাবার পথে ইউনিফরম পরা বাচ্চাদের দেখলে কেমন বুকটা মুচড়ে উঠে। হতাশায় ভরে উঠে বুকটা। হাহাকার করে উঠে একটা বাচ্চার জন্য। কল্পনায় ভাবতে ভাল লাগে ওর বাচ্চার সঙ্গে ও খেলছে। ও হয়েছে ঘোড়া আর ওর বাবু হয়েছে সওয়ারি।
দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বাস্তবে ফিরে আসে জাহিদ।
অফিস বাড়ি , এই করে রোবটের মত কেটে যাচ্ছে সময়। যেন চাবি দেওয়া ঘড়ি ও। সময় মত সব কাজ করছে । এভাবেই নিরানন্দ ভাবে কাটছে সময়।
তিন
এত দিনের জমানো ক্ষোভ , রাগ , অভিমান একরাতে শোবার ঘরে ইভার উপর ঝেড়ে দিল জাহিদ। উত্তেজিত আক্রোশ আর ঘৃণা মিশ্রিত কণ্ঠে উগরে দিল মনে জমানো সব রাগ।
মা, মা শব্দের অর্থ , দায়িত্ব, গরিমা, আনন্দ, মান, সম্মান তুমি বোঝ?
বোঝ না।
নারীর সম্মান মা হওয়াতে। নারীর সারথকতা মা ডাক শোনার মধ্যে।
আর তুমি মা হতে চাওনা। কেন চাওনা ?
শুধু নিজের স্বার্থপরতা কে মূল্যায়ন করতে।
তুমি কারও মা নও, নও কারও স্ত্রী। তুমি ডাক্তার ইভা।
তোমার আছে একটা প্রফেশন। আছে নিজস্ব জীবন, নিজস্ব উপার্জন।
নিজেকে নিয়ে গড়েছ আলাদা একটা জগত। সেই একান্ত জগত নিয়েই তোমার চিন্তা চেতনা, ভাব ভালবাসা। এই স্বার্থপরতা তোমাকে বানিয়েছে মেয়ে হিসেবে, নারী হিসেবে নয়।
তুমি তোমার জগত কে আমার চেয়ে ভাল বেসেছ। তুমি শুধু আমাকে তোমার শারীরিক চাহিদা মিটানোর যন্ত্র হিসেবে ব্যবহার করেতে বিয়ে নামের এক চুক্তি করেছ। বিয়ের মর্যাদা, লক্ষ্য সব তোমার শারীরিক তৃপ্তি নিয়ে।
তুমি বোঝ না বা বুঝতেও চাওনা অন্যের আখাঙ্খাকে । প্রধান্য দাও শুধু তোমার চাওয়াকে। তোমার ভাল লাগাকে।
তাই মনে করি আজ এই মহুরত হতে তোমার আর আমার পথ সরল রেখার দু দিকে।
কথা গুলি বলে জাহিদ হন হন করে রুম হতে বের হয়ে ছাদে উঠে গেল। ছাদে কোনার দোলনাতে গা আলিয়ে দিয়ে ফিকে হয়ে আসা চাঁদের দিকে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জীবনের হিসেব নিকেশ করতে করতে কখন যে ঘুমিয়ে পড়েছে ও নিজেও বলতে পারবেনা।
সূর্যের প্রথম রশ্মির আলোতে ঘুম ভেঙ্গে প্রথমে বুজতে পারলনা ও কোথায়। তার পর সব মনে পড়ল ওর। তিক্ততায় ভরে উঠল মন।
ভোরের প্রথম আলোয় পবিত্রতায় মনে মনে বলে উঠল………………… ‘’ জীবনটা বড় সুন্দর’’।
১০টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
দুজনের সম্মতিতেই সন্তান নেয়া উচিৎ
আমাদের সামাজিক দৃষ্টি ভঙ্গি কিন্তু ইভার বলা কথা গুলোর সাথে মিলে যায়।
ইভা কিন্তু বলেনি যে সে মা হবেনা
শুধু সময় চেয়েছে , তার মানসিক প্রস্তুতি জন্য , জীবনকে একটু উপভোগ করার জন্য।
জি.মাওলা
কথা সত্য,
নীহারিকা
অনেক পরিবারে সত্যি এমনটাই ঘটে 🙁
জি.মাওলা
কথা সত্য, তবে জাহিদের বলা কথা গুলি একটু ভেবে দেখতে বলছি
আফ্রি আয়েশা
ইভা তো বলেনি সে মা হতে চায় না, সে সময় নিতে চেয়েছে , সেটা তো দোষের না । বুঝতে পারলাম না গল্পের নায়ক জাহিদ এতো খেপলো কেনো !
জি.মাওলা
কথা সত্য, তবে জাহিদের বলা কথা গুলি একটু ভেবে দেখতে বলছি
একটা পুরুষ কি শুধু নারিকে বিয়ে করে যৌন আখাংকা পুরনের জন্য। বিয়ের ১-২ বছর পর তাই সে চায় একটা সন্তান। তার বংশধর। আর ছেলে পুলে পেলে সে অনেক সংসারি হয়। এছাড়া পরিবারের ও একটা চাপ থাকে। এই আর কি?
জি.মাওলা
বিঙ্গানিরা প্রমাণ করেছে সন্তান নেবার সবচেয়ে ভাল সময় ২৫-৩০ বছর বয়সে। এ সময়ে সন্তান নিলে এই সন্তান গুলি সব থেকে ভাল হয়। এদের শারীরিক মানসিক ও এদের ব্রেন ভাল হয়। বেশি বয়সে সন্তান ধারণ মেয়েদের জন্য ঝুঁকি পূর্ণ। এখন কার দম্পতিরা বাচ্চা নেই একটু বেশি বয়সে। আর এ জন্য এই সব বাচ্চা গুলি বিভিন্ন সমস্যায় পতিত হয়। অনেকে জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করতে করতে এদের সন্তান ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পায়। অনেকে আর মা হতে পারে না। এগুলি আমার কথা নয়…।
আমারা পাশ করতে করতে ২৫-২৭ বছর। এর পর চাকরি পাওয়া আরও ২-৩ বছর। আর পর গুছিয়ে নিতেই আরও ২-৩ বছর। এর পর বিয়ে। মোটা মুটি চিত্র এটি। এখন ভেবে দেখার বিষয়…।। কোনটি আপনার জন্য ঠিক।
আদিব আদ্নান
সমস্যার জটিল আবর্ত , সহজে বেড়িয়ে যাওয়া বোধ হয় সহজ নয়।
খসড়া
খুব পরিচিত জীবন, সুন্দর লিখনি ও উপস্থাপন এর মধ্য দিয়ে হয়ে উঠেছে অসাধারন। বেশ উপলদ্ধি করার বিষয় শিক্ষনিয় বটে। জীবন হবে সুন্দর সুখময়।
সিহাব
অতিতের কোন ক্ষুদ্র ক্ষোভ , ভবিসষ্যতে বড় কিছু অঘটনের মাধ্যমেই বেরিয়ে আসে।
এই গল্পে জাহিদ যখন তার মা-র সাথে একমত হয়ে ইভার কাছে সন্তানের প্রসঙ্গে খুব মৃদু কণ্ঠে বলল ……… “ভাল তো ! এবার একটা সন্তান নিই আমরা। আমিও ব্যাপারটা অনুভব করছি বেশ কিছুদিন হতে। “- এতে ইভার ফুঁসে উঠার কোন কারন আমি দেখি না। বরং ইভার উচিত ছিল ঠান্ডা মাথায় জাহিদের সাথে আলোচনা করা। যার ফলে তাদের মাঝে ভবিষ্যতে ঝগড়া না হয়ে বরং তাদের মাঝে একটা সুন্দর পরিনতি দেখিয়ে গল্পটা শেষ করা যেত।
আমাদের সবার বড় সমস্যা হচ্ছে আমরা আমাদের কথাগুলো যেভাবে বলতে চাই সেভাবে উপস্থাপন করতে পারি না। আর পারলেও সেই ইভার মতোই হঠাৎ ফুঁসে উঠে। আর যার ফলটা হয় পুরো বিপরীত …।
… সুন্দর ভাবে উপস্থাপন হয়েছে সমস্যাগুলো এই গল্পে……লেখকের আরো গল্প চাই (y)