আমাদের দেশপ্রেমের তুলনা নেই, আমরা ভালোবাসি মা মাটি মানুষকে। এ এক এমন দেশপ্রেম যাকে নিয়ে ট্রল করতে আমরা মোটেও পিছপা হইনা।
বলা চলে এক স্বর্গীয় অনুভূতির আমেজ পাই আমরা ফেসবুকে দেশপ্রেম কপচিয়ে। দেশপ্রেমকে কপচিয়ে কপচিয়ে সেটা থেকে নিংড়ানো শেষ রক্তবিন্দুটুকুও আমরা ড্রাকুলার মত চুষে চুষে খাই।
আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে মিশে আছে চেতনা নামক এক অভাবনীয় মশাল। যাতে একটা দেয়াশলাইয়ের কাঠির ছোঁয়া লাগলেই ফস্ করে জ্বলে ওঠে।
আমার মনে হয় পৃথিবীতে যত ফেসবুক ব্যবহারকারী আছেন তারমধ্য থেকে বাংলাদেশের নাম সবার উপরে। কেন? কারন কি? কারন আমাদের চেতনাভুতি। ফেসবুকে নিজের দেশপ্রেমের চেতনা সারা পৃথিবীকে জানান দিয়ে বলি- ভালোবাসি বাংলাদেশ।
অথচ যারা এই অনুভুতি নিয়ে নাড়াচাড়া করেন তারা আসলে কেমন? তাদের কি সত্যি দেশপ্রেম এমন যতটা ফেসবুকে দেখায় বা দেখি? তাহলে তার প্রতিবেশী গরীব মানুষটা কেন একটা গরম কাপড়ের অভাবে ঠান্ডায় ঠক্ ঠক্ করে কাঁপে? কেন তার বাসার সামনের ফুটপাতে একজন বৃদ্ধ ভিক্ষুক প্রতিদিন ভিক্ষা করতে আসে? কোনদিনও দেশপ্রেমে উজ্জীবিত মানুষ হিসেবে আপনি আমি তাদের সাহায্য করেছি কি?
আমরা বাড়ান্দায় দাঁড়িয়ে সেই ভিক্ষুককে দেখি আর ফেসবুকে দেশপ্রেম কপচাই। তাদের দশটাকাও নিজে কোনদিনও সাহায্য করিনা। অসহায় মানুষের ছবি তুলে ফেসবুকে দেই, আহা উহু করি আর নিজের চেতনাভুতিকে সুসসুড়ি দেই। এ যেন খুঁজলি হলে চুলকিয়ে যেমন মজা পাওয়া যায় সেইরকম সুখানুভূতি।
অথচ আমি নিজে একবার শীতার্থদের সাহায্য চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম কেউ রেসপন্স করেনি। আমার পোস্ট দেখে চেতনার আঁধার সেসব মানুষ পোস্টে লাইকও দেননি। কেন জানেন? পাছে যদি তাদের কাছে সাহায্য চাই! এই ভয়ে ইগনোর করে গেছেন। কিন্তু আমার কাজেটি আমি ছোটখাটোভাবে হলেও সফল করেছি।
অনেকে আবার আরো একধাপ উপরে। আপনি ফেসবুকে কারো অসয়হায়ত্ব নিয়ে একটা ছবি দিবেনতো সেটা তাদের অনুভুতিকে দোলা দিয়ে যায়, চেতনাভুতি তাদের মনে গান গায়-” ইশারায় শীষ দিয়ে আমাকে ডেকোনা”। সেই ছবিকে নিয়ে ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করে নিজেকে প্রমান করেই ছাড়ে আমি কতবড় চেতনাধারী।
কে কোন দল সাপোর্ট করেন তা নিজের কাছে রাখুননা। ফেসবুকে একে অন্যকে নিয়ে ট্রল করার দরকার আছে কি? আমরা দেশপ্রেমকে কি নিজের কাজে প্রমান করতে পারিনা? নাকি এসব করে অর্গাজমীয় সুখ পান বা পাই আপনি, আমরা?
নিজে দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের জন্য দেশের মানুষের জন্য সত্যিকারভাবে কিছু করুন তাহলেই দেশ সুন্দর হবে। তারজন্য ফেসবুকে নয় নিজের বিবেককে নাড়াচাড়া করুন। ফেসবুকে এসব করে সাময়িক মজা পাবেন আর মন থেকে করলে সারাজীবন স্বর্গীয় অনুভুতি অনুভব করবেন। এ সুখ মিথ্যে চেতনার অর্গাজমীয় সুখ থেকেও অনেক প্রখর।
ভালোবাসি বাংলাদেশ।
২৬টি মন্তব্য
নাজমুল হুদা
অনেক সুন্দর বিবেক নাড়া দেওয়া লেখুনী।
আসলেই সবার এটা ভাবা উচিত যে-
আমি যতটুকু যোগ্য বা যোগ্যতা রাখি ততটুকু জায়গায় নাড়া দিবো । কিছু কিছু ক্ষেত্রে জীবনের সবকিছু শেয়ার করা যায় না , কিছু আড়ালে , কল্যাণে পুষতে হয় ।
তাহলেই আমি সুন্দর ,আপনি সুন্দর , সমাজ সুন্দর বাংলাদেশ সুন্দর।
তৌহিদ
ভালো বলেছেন ভাই, নিজের জায়গা থেকেই আমরা যদি কিঞ্চিত দায়িত্ব পালন করি তাহলেই সব কিছু সুন্দর হবে বলে মনে করি।
শুভকামনা জানবেন। ব্লগিং কেমন লাগছে?
নাজমুল হুদা
ধন্যবাদ ভাইয়া 😍।
আমার কাছে সব কিছুই ভালো লাগে। যতক্ষণ ভালো লাগার ভিতর ভালো লাগা ধরে রাখার ক্ষমতা থাকে ।
চ্যালেঞ্জ আর সমালোচনায় আগ্রহ একটু বেশি ।
তাছাড়া সোনেলার নাতিমালা গুলো সর্বজনীন , যে কেউ সোনেলায় ঢুকলে সোনেলা কে ভালোবাসবে।
আমিও ভালোবেসে ফেলেছি।
তৌহিদ
ধন্যবাদ ভাই
প্রদীপ চক্রবর্তী
সত্যি
অসাধারণ লেখনী।
শুভকামনা আপনার জন্য।
তৌহিদ
আপনার জন্যেও শুভকামনা রইলো। ভালো থাকবেন।
মনির হোসেন মমি
সত্য বলতে কি জোকার মামা ফেইসবুকটারে মুলত একে অন্যের সামাজিকতার বন্ধনের জন্য তৈরী করেছিলেন এটা এখন হয়ে গেছে জীবনের সর্বোত্রে ব্যাবহার।আপনি সত্যিই বলেছেন ফেইসবুকে যে রকম দেশপ্রেম আমরা দেখাই তার কিঞ্চিৎ পরিমান যদি বাস্তবে দেখাতাম তাহলে দেশে আর কোন সমস্যা থাকার কথা নয়।আমি নিজে সুবিদা বঞ্চিত শিশু কিশোরদের দুটো ফেইসবুক পেইজে জড়িত।কমবেশ সহযোগিতা করি কিন্তু অন্যকে বললে বিশ্বাস সহজে বিশ্বাস করতে চায় না তারও কারন আছে অনেকেই এ সবের নামে প্রতারনা করে। তা যাই হোক এর মাঝেই আমাদের এগিয়ে যেতে হবে।
তৌহিদ
অনেকে প্রতারণা করেছেন বলেই আসলে যারা আসল সাহায্যকারী তারা বঞ্চিত হচ্ছেন। ফেসবুকে সবাই বড় বড় কথা বলে, কাজের সময় পাওয়া যায় মুষ্টিমেয় কয়েকজনকেই।
এর মধ্যেই এগিয়ে যেতে হয় আসলে। শুভকামনা জানবেন ভাই।
মনির হোসেন মমি
আগামীতে আরেক বার এমন আয়োজনের উদ্দ্যেগ নিন আমরা আছি,যতটুকু সম্ভব।
তৌহিদ
ঈদের পরে হবে তাহলে।
তৌহিদ
সামনের শীতেও করতে পারি। শীতবস্ত্র দিতে পারি আমরা।
সঞ্জয় মালাকার
সত্যি
আমাদের দেশপ্রেমের তুলনা নেই, আমরা ভালোবাসি মা মাটি মানুষকে ।
পড়ে আনেক ভালো লেগেছে ভাইয়া।
আপনার জন্য শুভ কাম 🌷🌷
তৌহিদ
ভালোবাসি বলেই এমন সব ঘটনা মেনে নিতে কষ্ট হয় ভাই। ভালো থাকবেন।
জিসান শা ইকরাম
আমরা আসলে বেশ আড্ডাবাজ মানুষ। কিছু পারি বা না পারি গাল গল্প ভালোই পারি।
আপনি গ্রামের হাট বাজারে দেখবেন, সন্ধ্যার পরে প্রতিটি রেস্টুরেন্টে ভিড়। বেহুদা গাল গল্প করে আর বিশেষজ্ঞ বনে যায় সবাই।
শিক্ষিত মানুষের গালপল্প করার সুযোগ করে দিয়েছে ফেইসবুক, এখানে সবাই বিশেষজ্ঞ,
নিজে পারেনা কিছুই, অন্যকে বলবে এটা করো ওটা করো।
দেশপ্রেমের চেতনায় আমরা বেহুঁশ হয়ে যাই, আর মুক্তিযোদ্ধার খোঁজ নিতে যাই না।
ভালো লিখেছেন।
শুভ কামনা।
তৌহিদ
চায়ের স্টলগুলিতো বুদ্ধিজীবীদের আড্ডাখানা। এখান থেকেই দেশের রাজনীতি প্রসারিত হচ্ছে☺☺
ফেসবুকে ম্যাক্সিমাম মানুষ জ্ঞান কপচায়, কাজের কাজী আসলেও কেউ নাই। আর মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধা শব্দ দুটিকে উপহাস বানিয়ে ছেড়েছে ফেসবুকে অনেকেই।
শুভকামনা জানবেন।
শবনম মোস্তারী
দারুন একটি বিষয় নিয়ে লিখেছেন। সবাই দেখানোর মনোভাব নিয়েই ফেসবুকে এসব করে। ভালো মানুষ কত জনা আছে?
তৌহিদ
ভালোমানুষের সংখ্যা হাতেগোনা। আমরা আসলে দেখানোতেই ব্যস্ত সবাই। সামাজিকতাটাই এখন এরকম হয়ে উঠছে।
অনেকদিন পরে এলেন। শুভকামনা জানবেন।
মোঃ মজিবর রহমান
অথচ আমি নিজে একবার শীতার্থদের সাহায্য চেয়ে ফেসবুকে পোস্ট দিয়েছিলাম কেউ রেসপন্স করেনি। যেখানে নিজস্ব আন্তরিক লোক বা গুরুপ নাই সেখানে কিছু চাওয়া বা আশা করা উচিত নই। কারণ আমি বন্যার্তদের জন্য কাজ করেছি কিন্তু ফেবু ইউজ করিনি কারণ সেখানে পাবনা। আমি ব্যাক্তি ফ্রেন্ড নিয়ে কাজ করেছিলাম। ার আমার বড় দুর্বলতা কাউকে কনভেইঞ্জ করতে পারিনা। সেবার বন্যার্তদের সাহায্য টাকা তুলতে কি ঝামেলা হই বুঝেছি কিন্তু বেশ কয়েকজনের দয়ায় মান নিয়ে শেষ করেছি। এটা আল্লাহর অশীম রহমত ছিল। অনেকে বলেছিল বাদ দেন কিন্তু চক্ষু লজ্জায় করেই ছেড়েছিলাম।
ার অনলাইনে আমার ছোট কিন্তু বড় কাজ করত নীলকণ্ঠ জয়। আমি তাঁর পিছনে থেকে কাজ করতাল সামনে যাবার ইচ্ছাও কোন দিন ছিল না। বরতমানে বিভিন্ন কারনে জয় নাই তাই আমার এইসব কাজ করা বাদ দিয়েছি।
এখন্দেশ প্রেম, দয়ামায়া, দল বেদল ফেবুতে পাবেন প্রকট আকার ার বাস্তবে জিরো।
তৌহিদ
আসলে ধোঁকা খেতে খেতে আমরা এমন অবস্থায় পরে গিয়েছি ভাই। বিশ্বাস ফিরে আসুক সবার মাঝে।
ধন্যবাদ মজিবর ভাই।
সাবিনা ইয়াসমিন
ফেসবুকের বেশির পোস্ট দেখলেই মনে পৃথিবীতে আমি ছাড়া সবাই ভালো এবং মহান। আর দয়ামায়ার যাবতীয় অভাব শুধু আমার মধ্যেই। একটা সেল্ফি আপলোড করতে যতটুকু দেরি হয় লাইক–কমেন্টের প্লাবন বইতে দেরি হয়না। অথচ একই ব্যাক্তি যখন কোনো হেল্প পোস্ট দেয়, তখন মনে হয় ঐব্যাক্তির কোন ফ্রেন্ড সার্কেল নেই। ফেসবুক সমুদ্রে নিজের ওয়ালে বৈঠা হারানো এক মাঝি সে।
শুভ কামনা তৌহিদ ভাই, ভালো থাকুন 🌹🌹
তৌহিদ
এজন্য ফেসবুকে এসব লেখা আমি এড়িয়ে যাই এখন। কি দরকার নিজে লজ্জিত হবার।
শুভকামনা জানবেন আপু।
ইঞ্জা
জব্বর বলেছেন ভাই, সত্যিই কথাটি অপ্রিয় হলেও কথাটি সবাইকে মানতে হবে, আমাদের সবারই যদি কিঞ্চিৎ দেশ প্রেমও জাগেনা, এই দেশের চেহেরাই বদলে যাবে।
ধন্যবাদ ভাই চমৎকার লেখাটির জন্য।
তৌহিদ
সুন্দর বলেছেন ভাই, ধন্যবাদ জানবেন।
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা ভাই
আরজু মুক্তা
সবাই তার স্থান থেকে ভালো কিছু করি,এই হোক পণ
তৌহিদ
তাই যেন হয় আপু। শুভ কামনা জানবেন।