পরদিন সকাল সাতটায় চলে এলাম ব্রেকফাস্ট করতে, কম্পলিমেন্টারি কুপন জমা দিয়ে নিজের জন্য একটা টেবিল দখলে নিয়ে প্রথমে গেলাম যে কাউন্টারে কুক নিজেই ডিম ভেজে দিচ্ছে, সকাল সকাল গেস্ট কম থাকায় অল্প কিছু গেস্ট আছে বিভিন্ন টেবিলে, কুক জিজ্ঞেস করলো কেমন ডিম পছন্দ, আমি বললাম শুধু পেয়াজ মরিচ সহযোগে দুই ডিমের অমলেট চাই।
কুক বাটার দিয়ে দ্রুত অমলেট করে দিলে সেইটা নিয়ে এগিয়ে গেলাম ব্রেড যেখানে সাজিয়ে রাখা হয়েছে, সেইখান থেকে দুইটা ব্রেড উঠিয়ে নিলাম প্লেইটে, পাশের ডিশে দেখলাম চায়নিজ স্টিম বান, এই বান মুভিতে দেখেছি চায়নিজরা বেশ মজা নিয়ে খেতে, আমিও শখ করে দুইটা বান নিয়ে নিলাম প্লেটে, আমার প্লেইট টেবিলে রেখে এসে গেলাম ফ্রুট কাউন্টারে, প্রচুর ফ্রুট রাখা আছে, পছন্দ করে করে এক প্লেইট বিভিন্ন ধরণের ফ্রুট নিলাম, তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ড্রাগন ফ্রুট, কিউয়ি, পিচ, আনারস, সাথে নিলাম অরেঞ্জ জুস।
হয়ত সবাই ভাববেন এই ব্যাটা নিশ্চয় পেটুক সদ্ভাবের, তা নয় আমি বিদেশের মাঠিতে প্রচুর পরিমাণে ব্রেকফাস্ট করি আর ওরেঞ্জ জুস খাই চার পাঁচ গ্লাস, কারণ প্রায় দেখা যায় দুপুরের খাওয়া ব্যস্ততার কারণে হয়না।
ব্রেকফাস্ট শেষে নিলাম ব্ল্যাক কফি, কফি শেষ করে দেখলাম ঘড়িতে প্রায় আটটা বাজে, উঠে নিজ রুমে গিয়ে ল্যাপটপ খুলে সিগারেট ফুকতে ফুকতে নিজের কিছু কাজ শেষ করলাম, পৌনে নয়টার সময় ল্যাপটপ এবং অফিস ব্যাগ নিয়ে নিচে পোঁছালাম, নিচে নেমেই অবাক হলাম ইস্টেফেনকে অপেক্ষারত অবস্থায় দেখে, জিজ্ঞেস করলাম, কি ব্যাপার তুমি কখন এলে, জবাবে সে বললো সাড়ে আটটায় এসেছে, নয়টার কথা ছিলো বলে অপেক্ষা করছিলো সময় হওয়ার।
দুজনে বেরুলাম অফিসের উদ্দেশ্যে, অফিসে পোঁছেই ব্যস্ত হয়ে গেলাম।
দুপুর বারোটায় এক ডাইরেক্টর সহ ইস্টেফেন নিয়ে গেলো লাঞ্চে, অনিচ্ছা সত্বেও গেলাম কিন্তু আগেই বলে দিলাম আমি খুব অল্প খাবো।
লাঞ্চের পর আমাদের সাথে মিটিংয়ে যোগ দিলেন কোম্পানির সেকেন্ড ম্যান, উনাদের সবাইকে আমাদের প্ল্যান প্রোগ্রাম বুঝাতেই আমার সারা বিকেল গেলো, এরপর হলো এক্সক্লুসিভ এগ্রিমেন্ট, ওরাও খুশি আমিও খুশি, এরপর সেকেন্ড বস উনার সেক্রেটারিকে বললেন আমাকে ডিনারে নিয়ে যাওয়ার জন্য।
সন্ধ্যা ছয়টায় ইস্টেফেন, কোম্পানি সেক্রেটারি মি. ডেবিড আমাকে নিয়ে চললেন ডিনারে, আধা ঘন্টা ড্রাইভিংয়ের পর আমরা এলাম অথেনটিক কোরিয়ান রেস্তোরাঁয়, রেস্তোরাঁটি ছোট একটা পাহাড়ের উপরে, গাড়ী পার্কিং এড়িয়ার ওখানে এস্কেলেটর লিফটে আমরা উপরে উঠে এলাম, আমরা যে টেবিল নিয়ে বসলাম তা অনেকটা গোল ধরণের, আমাদের টেবিলের সাথে লাগানো আছে ইলেক্ট্রিক অপারেটেড ধাতব চুলা, যেখানে কোরিয়ান কুক নানা অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে রান্না করবেন, রান্না তো নয় যেন কারাতে যুদ্ধ।
মি. ডেবিড ভিতরে গেলেন অর্ডার দিতে, যাকে বলে প্রি অর্ডার, সেই অর্ডারের বিপরীতে আসবে কাঁচা খাবার, সেই খাবার আমাদের সামনেই ভাজাভুজা করে দেওয়া হবে।
কিছু সময় পর ওয়েটার এসে আমাদের জন্য কাঁচা স্যামন মাছ যা স্কয়ার করে কেটে পরিবেশন করেছে, সাথে প্রতেকের জন্য আলাদা ছোট বাটিতে ওয়েস্টার সস, আরেক বাটিতে শুকনা মরিচ গুড়া (পিষা নয়), আরো দিয়ে গেলো রেড ওয়াইন, বিভিন্ন টেবিল থেকে আওয়াজ আসছিলো ইয়াহু, হুক, হাক এবং উল্লাস ধ্বনি।
কাঁচা স্যামন দেখেই আমার কলজে লাফ দিয়ে উঠলো, বললাম সরি আমি কাঁচা খাবোনা।
ইস্টেফেন এবং ডেবিড খুব করে অনুরোধ করে বললো, একটা খেয়ে দেখো, যদি ভালোনা লাগে আর খেয়োনা।
অনুরোধে ঢেঁকি গিললাম, ওদের দেখাদেখি স্টিক দিয়ে একটা মাছের টুকরো নিলাম, টুকরোটাকে ওয়েস্টার সসে ভালো করে দুই পাশ ভিজালাম, এরপরে শুকনো মরিচ গুড়ো লাগালাম, একটা ঢোক গিলাম কুঁত করে, এরপরে টপাক করে মুখে দিয়ে আসতে আসতে চাবালাম, এরপরে গলার ভিতর চালান করে দিলাম।
নিজেই আশ্চর্য হলাম এই খাঁচা মাছ খেতে চমৎকার, যাকে বলে টেস্টি, এক চুমুক ওয়াইন সবার সাথে টোস্ট করে খেলাম, এরপরে আরেকটা তুলে নিয়ে একি পদ্ধতিতে খেলাম, ইস্টেফেন বললো, নাভী এখন আমরা টোস্ট করবো আমাদের এই বন্ধুত্বের সুন্দর ভবিষ্যত কামনা করে ফুল টোস্ট, চিয়ারস।
সবাই আমরা দাঁড়িয়ে চিয়ারস করে পুরা গ্লাসটা খালি করে পান করলাম।
চলবে।
১৯টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
এমন করে বুড় মানুষদের সামনে খাওনের গল্প করা ঠিক না।
ভ্রমণ করতে না পারলেও ভ্রমণ কাহিনী আমার প্রিয় বিষয়।
বিরতিহীন ভাবে চালু থাকুক।
ইঞ্জা
ভাই সমস্যা হলো আমি খাওয়া দাওয়ার ব্যাপারে প্রচন্ড চুজি, খাই খুব অল্প, কিন্তু যখন বিদেশে যায় তখন খিদে বেশি লাগে, পাইও ভালো ভালো খাবার, বুঝতেই পারছেন। :p
তৌহিদ ইসলাম
ভ্রমন কাহিনী গুলো পড়ে খুব ভালো লাগছে ভাই। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, নেক্সট খুব দ্রুতই পাবেন।
মৌনতা রিতু
ভাইজু, আমারও তাই হয়। বাইরে বের হলে প্রচুর খাই। তিনি তো বিরক্ত হয়ে যেতেন, যান। আমরা তিন মা ছেলে এখনো, বাইরে গেলে দুপুর বা রাত হলে পুরোপুরি তরকারি দিয়ে ভাত খাব। যে কোনো জার্নিতেও।
না না! পেটুক ভাববো কেনো। রিয়ানের মামু না আপনি😂 রিয়ানকেই দেখতে পাচ্ছি ।
কয়েকদিন কোরিয়ান এক মেয়ের খাওয়া দেখছি ইউটিউবে। দেখে সত্যি আমাে খাওয়ার রুচি বেড়ে গেছে। গরম গরম রান্না করে আর খায়। কি যেনো নাম! soo কি যেনো। সেদিন দেখি অক্টোপাস খাচ্ছে। আমার মনে হলো মজা হবে খেতে।
কোৎ করে গিলে ফেলাটা মজা লেগেছে। আমি বাবুদের বলতাম ছোটোবেলায় যখন খেতে চেতো না। ‘কোৎ করে গিলে ফেলো।’ মেমন রিয়ান দুজনেই হাসতো ঐ শব্দটা শুনে।
ভ্রমণ কাহিনী ভালো লাগছে পড়ে। চলুক ভাইজু।
ইঞ্জা
অনেক ধন্যবাদ প্রিয় আপু, খুব ভালো লাগলো যখন শুনলাম পোটলা মামু আমার মতো হয়েছে। :D)
আপু, জাপানিজ, চায়নিজ, কোরিয়ান, ভিয়েতনাম সহ বেশ কিছু দেশ কাঁচা খাবার যাকে বলে সুসি টাইপের খাওয়া খায়, এগুলো সুস্বাদুও বটে, আপনার অক্টোপাস আগামী পর্বে আসতেছে, রেডি থাকুন। :D)
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া সকালের জলখাবার এত্তো!!! ভয় পেয়েছি। আপনি তো দেখি আরেক তীর্থ।
আমি কিন্তু আজ অব্দি সুশি, সাসামি খাইনি। তরুণ এভাবে র’ ফিশ খায়। জাপানীজ এবং চায়নিজদের খাবারের মধ্যে বেশ মিল। জাপানে আমি International Cuisin-এ কাজ করেছি। খাবারের দিক থেকে চিন, জাপান, কোরিয়া, থাইল্যান্ড, ফিলিপিন, কোরিয়া মোটামুটি প্রায় একইরকম। তবে কোরিয়ান রেস্টুরেন্টে কিন্তু কুকুরের মাংস পরিবেশিত হয়। 😀
সামনের বছর দেখি চায়না যাবো। তরুণ প্রতিবছর পাঁচ সপ্তাহের জন্য চায়না যায় ভিজিটিং প্রফেসর হিসেবে। সামনের বছরে ছাড়াছাড়ি নেই। ঝুলে পড়বো। \|/
তাড়াতাড়ি পরের পর্ব চাই।
নীলাঞ্জনা নীলা
**সাসিমি**
ইঞ্জা
বললে বিশ্বাস করবেন কিনা জানিনা, দেশে আমি খুব অল্পই খাই, আপনি দেখলেই অবাক হবেন, আর বিদেশে গেলে যেন আমার রুচি ফিরে পাই, খাইও প্রচুর, আরেকটি বিষয় বলি আপু, দেশে অকেশনালি আমি ড্রিংকস করি, কিন্তু বিদেশে আমাকে দেখলে মনে করবেন এই ব্যাটা পাড় মাতাল।
আসলে আপু বিদেশীদের সাথে খায়, আবার নিজে যখন একা থাকি তখন দুই তিন পেগ ভদকা আমার লাগেই, নাহলে আমার ঘুম হয়না ভূতের ভয়ে। ;(
সুসি আর সাসিমি কতো যে সুস্বাদু না খেলে বুঝবেননা, কয়েকবার টেস্ট করলে মজাটা বুঝে যাবেন আপু।
তীর্থের জন্য অনেক ভালোবাসা রইলো। (3
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া ওই সুসি আর সাসিমি জাপানে থাকাকালীন পাঁচ বছরে থেকেও খেতে পারিনি। এখন তো আর প্রশ্নই আসেনা।
নাহ আমি এখন বলতে গেলে ড্রিঙ্ক করিইনা। পার্টিতেও কম যাই। তাই ভদকা পান করা হয়ে ওঠেনা। 😀
ইঞ্জা
হুম আসলে সময় অনেক কিছুই বদলে দেয় আপু।
জিসান শা ইকরাম
ভ্রমন কাহিনী ভালই লিখছেন ভাই,
হোটেলে সকালের ফ্রেকফাস্ট আমিও খুব করে খাই, আপনার আর আমার খাবার রুচি এবং আইটেম তো এক হয়ে গেলো ভাই 🙂
আচ্ছা টোষ্ট মোষ্ট ভালই চলছে দেখছি, একবার আপনার সাথে চায়না যেতে হবে ভাইজান,
চলুক কাহিনী
ইঞ্জা
স্বাদে কি আর ভাইজান ডাকি, স্বাভাবিক ভাবেই আপনার আমার রুচি এক হবেই, মনে আছে থাইল্যান্ডের ব্রেকফাস্টের ছবি দিয়েছিলেন, তখনই বলেছিলাম আপনার সাথে আমার মিল আছে, শুধু রাইস ছাড়া, বিদেশে গেলে আমি আবার রাইস খাইনা।
ভাইজান আপনি নিয়ে গেলে চায়না কেন, যে কোন জায়গায় যেতে পারি। 😀
গালিবা ইয়াসমিন
ভ্রমণ কাহিনী ভালো লাগলো কিন্তু এভাবে খাবারের কথা গুলো লিখে ভালো করলেন না 🙁
এখন খাবার গুলো টেস্ট করার ইচ্ছে জাগছে :p
ইঞ্জা
আপু, আমার ভ্রমণ কাহিনীতে আপনি দেশের ইতিহাস পাবেননা, কারণ আমি ইতিহাসে লবডঙ্কা, বিদেশে আমি যায় শুধু মাত্র ব্যবসায়ীক কারণে, ফলশ্রুতিতে আমার খুব কমই বেড়ানো হয়, আবার আমি ভোজনরসিক হওয়ায় খাবার দাবারের হিসাব পাবেন প্রচুর। :D)
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর সুন্দর খাবার খেতে ইচ্ছে করে।
ইঞ্জা
আমারো একি কথা, আমি বিদেশে গেলে সেই দেশের নিভিন্ন খাবার ট্রাই করে দেখি ভাই। :D)
মোঃ মজিবর রহমান
হুম! খান আর থান থান থেকে যান।
ভাল থাকুন ভাই।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই