চায়না ভ্রমণ (২য় পর্ব)

ইঞ্জা ২৭ জুন ২০১৮, বুধবার, ১০:০৬:০৪অপরাহ্ন ভ্রমণ ১৮ মন্তব্য

 

 

 

সেলফোনের এলার্ম সেট ছিলো আগের রাতে, তারই চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেলো সকাল সাতটায়, উঠে ফ্রেস হয়ে গোসল দিলাম, এইটা আমার নিত্য অভ্যাস, কি শীত আর কি গরম, গোসল সেরে দ্রুত রেডি হয়ে নিজ লাগেজ নিয়ে নিচে রিসেপশনে এসে কমপ্লিমেন্টারি
ব্রেকফাস্ট কার্ড নিয়ে লাগেজ জমা রাখলাম, এরপর এগিয়ে গেলাম রাতের রেস্টুরেন্টে, একটা টেবিলে গিয়ে বসলাম, হাতে গোনা কয়েকজন গেস্ট আছে রেস্টুরেন্টে, দশ মিনিট পর ওয়েটার এসে সবার সামনে এক বাটি নুডলস এবং এক গ্লাস দুধ দিয়ে গেল, আমি হাতের ইসারায় বুঝালাম ডিম, ব্রেড কই, সে ইশারায় নুডলস, দুধ দেখিয়ে বললো এগুলোই ব্রেকফাস্ট, ক্যাবলা কান্তের মতো তাকালাম নুডলসের বাটির দিকে, সাধা নুডলস যেন ময়লা পানির মধ্যে চুবানো আছে, খাওয়ার রুচি পর্যন্ত বিদায় নিলো এই নুডলস দেখে, হাত বাড়িয়ে দুধের ঠান্ডা গ্লাস তুলে চুমুক দিতেই আমার চেহেরা বাংলা ৫ এর মতো হয়ে গেলো, নিজের মনকে জিজ্ঞেস করলাম “একিরে বাবা, দুধের স্বাদ এমন কেন”?
পরে জেনেছিলাম ও দুধ ঠিকই কিন্তু গাভীর নয় সয়া দুধ, মেজাজ নিয়ে রিসেপশনে ইংরেজি জানা রিসেপশনিস্টের খোঁজ করে পেলাম, তাকে বললাম “এই গুলো কি, তোমরা ফরেনারদের এইসব কি খাওয়াচ্ছো, তোমাদের কি ফরেনারদের জন্য ভালো কোন ব্রেকফাস্ট নেই”?
সে যা বললো তার মর্ম হলো, যা দিয়েছে তাই বেস্ট।
বুঝলাম লাভ নেই কিছু বলে, এরমধ্যে দেখলাম এয়ারপোর্ট নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ী এসে বসে আছে, রুম আগেই ছেড়ে দিয়েছি তাই গিয়ে গাড়ীতে উঠে বসলাম।

ঢাকা থেকে কুনমিং শহরে আসতে লাগে দুই ঘন্টা এবং চায়নার কমদামী এয়ারলাইন্স হলো চায়না ইস্টার্ন, ২০০৮ সালে আমি যখন কুনমিং যায় তখন ছিলো পুরাতন এয়ারপোর্ট, কয়েক বছর আগে বৃহৎ পরিসরে নতুন এয়ারপোর্ট হয়েছে এই শহরে।
পনেরো বিশ মিনিটের মধ্যে এয়ারপোর্টে পোঁছে গেলাম আমি, ভিতরে প্রবেশ করে ইতিউতি তাকালাম যদি কোন খাবারের দোকান পাই, একটি ছোট রেস্টুরেন্টের মতো পেলাম ভিতরেই, একটা সেন্ডউইচ আর কফি নিয়ে ব্রেকফাস্ট করে এগিয়ে গেলাম চেকইন করতে।
দুপুর বারোটার সময় ফ্লাইট উড়াল দিলো, আগেরদিন আমার সাপ্লাইয়ারকে ফোন দিয়ে বলেছিলাম আমার ফ্লাইট ক্যানসেল এবং আজকের ফ্লাইটের ইনফরমেশন দিয়ে, চংকিং এয়ারপোর্টে পোঁছানোর পর লাগেজ নিয়ে বেরুলাম এরাইভাল হল থেকে, দেখলাম আমার সাপ্লাইয়ের কোম্পানির ম্যানেজার ইস্টাফেন (চায়নিজরা নিজেদের চায়নিজ নামের সাথে একটা ইংরেজি নাম রাখে) হাত নাড়ছে, এগিয়ে গিয়ে হ্যান্ডসেইক করার পর সে বললো একটু অপেক্ষা করো, গাড়ী দূরের পার্কিং থেকে আসবে।
আমি এই সুযোগে সিগারেটের প্যাকেট বের করে ওকে সাধলাম, ও খায়না বলে নিলোনা, আমি সিগারেট ধরিয়ে মনের সুখে টানতে লাগলাম।

গাড়ী এলে উঠে পড়লাম দুজনে, উঠেই জিজ্ঞাস করলাম কোথায় যাবো?
সে বললো হোটেলে, আবার জিজ্ঞেস করলাম কেমন হোটেল?
সে বললো মোটামুটি আছে, ভাড়া তিরিশ ডলারের মতো, আমি না সিটকালাম, বললাম তুমি এতো ফালতু হোটেল ঠিক করেছো কেন, ভালো হোটেল কি নেই?
সে অবাক হলো এবং বললো, আগে যত বাঙ্গালি এসেছে সবাই সস্তা হোটেলে উঠেছে বলেই আমার জন্য তেমনি হোটেল চয়েজ করেছে।
আমি বললাম, অন্যদের চাইতে আমি আলাদা, ফাইভ স্টার হোটেল কোনটা আছে সেইখানে নিয়ে যাও।
সে ফোন করে আগের হোটেল ক্যানসেল করে নিয়ে চললো আমাকে ফাইভ স্টার মানের হোটেলে।
লিফান হোটেলে পোঁছেই দেখলাম হোটেলটি ফাইভ স্টার হোটেল, সেইখানে রুম নিয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করলাম, কম্পলিট স্যুট পড়ে বেরুলাম ওদের অফিসে যাওয়ার জন্য ইস্টাফেনকে নিয়ে বেরুলাম, যেহেতু ফ্লাইটেই লাঞ্চ দেওয়া হয়েছিলো তাই ইস্টেফেনের অনুরোধ শর্তেও লাঞ্চ এভোয়েড করলাম।

আম যখন ডংফেং কোম্পানিতে পোঁছালাম তখন প্রায় বিকেল চারটা, ইস্টেফেন আমাকে নিয়ে কনফারেন্স রুমে গেলো, আমার জন্য কফির ব্যবস্থা করে বেরিয়ে গেলো, দশ মিনিট পর একজন ডাইরেক্ট নিয়ে ফিরে এসে মিটিংয়ে বসলো, আমরা দুই ঘন্টার মতো মিটিং করলাম, তারা আমাদের ভিউ এন্ড আইডিয়া শুনলো, সাথে ওদের আইডিয়া শেয়ার করলো, এরপর আজকের জন্য মিটিং মুলতবি করে ইস্টেফেন আমাকে নিয়ে চললো ডিনার করতে।
আধা ঘন্টা পর রেস্টুরেন্ট থেকে পায়ে হাঁটা পথে আমরা এগুলাম, ইস্টেফেন আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি স্টেইক পছন্দ কিনা, আমি হাঁ বললাম।
সে একটা কল দিয়ে চুং চ্যাং কথা বলে কল কেটে বললো, তুমি কি কিছু মনে করবে যদি আমার গার্লফ্রেন্ড আমাদেরকে জয়েন করে?
আমি বললাম, কোন অসুবিধা নেই, she is welcome.

……… চলবে।

৬৪৬জন ৬৪৫জন
0 Shares

১৮টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ