সেলফোনের এলার্ম সেট ছিলো আগের রাতে, তারই চিৎকারে ঘুম ভেঙ্গে গেলো সকাল সাতটায়, উঠে ফ্রেস হয়ে গোসল দিলাম, এইটা আমার নিত্য অভ্যাস, কি শীত আর কি গরম, গোসল সেরে দ্রুত রেডি হয়ে নিজ লাগেজ নিয়ে নিচে রিসেপশনে এসে কমপ্লিমেন্টারি
ব্রেকফাস্ট কার্ড নিয়ে লাগেজ জমা রাখলাম, এরপর এগিয়ে গেলাম রাতের রেস্টুরেন্টে, একটা টেবিলে গিয়ে বসলাম, হাতে গোনা কয়েকজন গেস্ট আছে রেস্টুরেন্টে, দশ মিনিট পর ওয়েটার এসে সবার সামনে এক বাটি নুডলস এবং এক গ্লাস দুধ দিয়ে গেল, আমি হাতের ইসারায় বুঝালাম ডিম, ব্রেড কই, সে ইশারায় নুডলস, দুধ দেখিয়ে বললো এগুলোই ব্রেকফাস্ট, ক্যাবলা কান্তের মতো তাকালাম নুডলসের বাটির দিকে, সাধা নুডলস যেন ময়লা পানির মধ্যে চুবানো আছে, খাওয়ার রুচি পর্যন্ত বিদায় নিলো এই নুডলস দেখে, হাত বাড়িয়ে দুধের ঠান্ডা গ্লাস তুলে চুমুক দিতেই আমার চেহেরা বাংলা ৫ এর মতো হয়ে গেলো, নিজের মনকে জিজ্ঞেস করলাম “একিরে বাবা, দুধের স্বাদ এমন কেন”?
পরে জেনেছিলাম ও দুধ ঠিকই কিন্তু গাভীর নয় সয়া দুধ, মেজাজ নিয়ে রিসেপশনে ইংরেজি জানা রিসেপশনিস্টের খোঁজ করে পেলাম, তাকে বললাম “এই গুলো কি, তোমরা ফরেনারদের এইসব কি খাওয়াচ্ছো, তোমাদের কি ফরেনারদের জন্য ভালো কোন ব্রেকফাস্ট নেই”?
সে যা বললো তার মর্ম হলো, যা দিয়েছে তাই বেস্ট।
বুঝলাম লাভ নেই কিছু বলে, এরমধ্যে দেখলাম এয়ারপোর্ট নিয়ে যাওয়ার জন্য গাড়ী এসে বসে আছে, রুম আগেই ছেড়ে দিয়েছি তাই গিয়ে গাড়ীতে উঠে বসলাম।
ঢাকা থেকে কুনমিং শহরে আসতে লাগে দুই ঘন্টা এবং চায়নার কমদামী এয়ারলাইন্স হলো চায়না ইস্টার্ন, ২০০৮ সালে আমি যখন কুনমিং যায় তখন ছিলো পুরাতন এয়ারপোর্ট, কয়েক বছর আগে বৃহৎ পরিসরে নতুন এয়ারপোর্ট হয়েছে এই শহরে।
পনেরো বিশ মিনিটের মধ্যে এয়ারপোর্টে পোঁছে গেলাম আমি, ভিতরে প্রবেশ করে ইতিউতি তাকালাম যদি কোন খাবারের দোকান পাই, একটি ছোট রেস্টুরেন্টের মতো পেলাম ভিতরেই, একটা সেন্ডউইচ আর কফি নিয়ে ব্রেকফাস্ট করে এগিয়ে গেলাম চেকইন করতে।
দুপুর বারোটার সময় ফ্লাইট উড়াল দিলো, আগেরদিন আমার সাপ্লাইয়ারকে ফোন দিয়ে বলেছিলাম আমার ফ্লাইট ক্যানসেল এবং আজকের ফ্লাইটের ইনফরমেশন দিয়ে, চংকিং এয়ারপোর্টে পোঁছানোর পর লাগেজ নিয়ে বেরুলাম এরাইভাল হল থেকে, দেখলাম আমার সাপ্লাইয়ের কোম্পানির ম্যানেজার ইস্টাফেন (চায়নিজরা নিজেদের চায়নিজ নামের সাথে একটা ইংরেজি নাম রাখে) হাত নাড়ছে, এগিয়ে গিয়ে হ্যান্ডসেইক করার পর সে বললো একটু অপেক্ষা করো, গাড়ী দূরের পার্কিং থেকে আসবে।
আমি এই সুযোগে সিগারেটের প্যাকেট বের করে ওকে সাধলাম, ও খায়না বলে নিলোনা, আমি সিগারেট ধরিয়ে মনের সুখে টানতে লাগলাম।
গাড়ী এলে উঠে পড়লাম দুজনে, উঠেই জিজ্ঞাস করলাম কোথায় যাবো?
সে বললো হোটেলে, আবার জিজ্ঞেস করলাম কেমন হোটেল?
সে বললো মোটামুটি আছে, ভাড়া তিরিশ ডলারের মতো, আমি না সিটকালাম, বললাম তুমি এতো ফালতু হোটেল ঠিক করেছো কেন, ভালো হোটেল কি নেই?
সে অবাক হলো এবং বললো, আগে যত বাঙ্গালি এসেছে সবাই সস্তা হোটেলে উঠেছে বলেই আমার জন্য তেমনি হোটেল চয়েজ করেছে।
আমি বললাম, অন্যদের চাইতে আমি আলাদা, ফাইভ স্টার হোটেল কোনটা আছে সেইখানে নিয়ে যাও।
সে ফোন করে আগের হোটেল ক্যানসেল করে নিয়ে চললো আমাকে ফাইভ স্টার মানের হোটেলে।
লিফান হোটেলে পোঁছেই দেখলাম হোটেলটি ফাইভ স্টার হোটেল, সেইখানে রুম নিয়ে ড্রেস চেইঞ্জ করলাম, কম্পলিট স্যুট পড়ে বেরুলাম ওদের অফিসে যাওয়ার জন্য ইস্টাফেনকে নিয়ে বেরুলাম, যেহেতু ফ্লাইটেই লাঞ্চ দেওয়া হয়েছিলো তাই ইস্টেফেনের অনুরোধ শর্তেও লাঞ্চ এভোয়েড করলাম।
আম যখন ডংফেং কোম্পানিতে পোঁছালাম তখন প্রায় বিকেল চারটা, ইস্টেফেন আমাকে নিয়ে কনফারেন্স রুমে গেলো, আমার জন্য কফির ব্যবস্থা করে বেরিয়ে গেলো, দশ মিনিট পর একজন ডাইরেক্ট নিয়ে ফিরে এসে মিটিংয়ে বসলো, আমরা দুই ঘন্টার মতো মিটিং করলাম, তারা আমাদের ভিউ এন্ড আইডিয়া শুনলো, সাথে ওদের আইডিয়া শেয়ার করলো, এরপর আজকের জন্য মিটিং মুলতবি করে ইস্টেফেন আমাকে নিয়ে চললো ডিনার করতে।
আধা ঘন্টা পর রেস্টুরেন্ট থেকে পায়ে হাঁটা পথে আমরা এগুলাম, ইস্টেফেন আমাকে জিজ্ঞেস করলো আমি স্টেইক পছন্দ কিনা, আমি হাঁ বললাম।
সে একটা কল দিয়ে চুং চ্যাং কথা বলে কল কেটে বললো, তুমি কি কিছু মনে করবে যদি আমার গার্লফ্রেন্ড আমাদেরকে জয়েন করে?
আমি বললাম, কোন অসুবিধা নেই, she is welcome.
……… চলবে।
১৮টি মন্তব্য
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া শুনেছি ওই ময়লা টাইপ নুডলস নাকি খুব মজার। আমি নিজে অবশ্য খাইনি।
এ তো দেখি বিশাল কান্ড! তিরিশ ডলারের হোটেল ছেড়ে ফাইভ স্টারে!!! 😮
পরের পর্ব তাড়াতাড়ি চাই।
ইঞ্জা
আপু পরে অন্যসময় ওই ময়লা পানির নুডলস আমি খেয়েছি, আসলে যাকে ময়লা পানি বলছি তা চিকেন স্টক, এরা সিদ্ধ পানিতে নুডলস চুবিয়ে নিয়ে চিকেন স্টকে দিয়ে দেয়, খেতে বিস্বাদ না হলেও আমার পছন্দ হয়নি।
আপু, হোটেলের ব্যাপারে আমি বেশ চুজি আর চংকিংয়ে হোটেল ভাড়া অনেক কম, আমার ফাইভ স্টার হোটেলটির ভাড়া এই মুহূর্তে ৭৫+ ডলার। 😀
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া পরের পর্ব দিচ্ছেন না কেন?
ইঞ্জা
দিয়েছি আপু
ছাইরাছ হেলাল
নুডলস কিসে চুবানো এটা কিন্তু ক্লিয়ার হোল না!!
চলুক, আছি সাথেই।
ইঞ্জা
এই একি নুডলস আমি পরে খেয়েছি ভাই, চিকেন স্টকে সিদ্ধ নুডলস দিয়ে দেয় এরা, খেতে বিস্বাদ না হলেও আমার ভালো লাগেনি ভাই।
জিসান শা ইকরাম
এই ন্যুডুলস দেখে আমারও প্রথম অভক্তি এসেছিল। পুরে চোখ মুখ বাকা করে মুখে দিতেই সব শংকা চলে গেলো। খেতে দারুন মজা।
হুম বাংগালিরা সস্তা হোটেলেই ওঠে।
ভাই একটা কথা বলি, আপনার ভ্রমন লেখা সত্যি ভাল হচ্ছে, কোন কিছু চিন্তা না করে নিজের কথা লিখছেন তাই।
লেখা চলুক।
ইঞ্জা
চায়নাতে নাম না জানা প্রচুর নুডলস খেয়েছি ভাইজান, এইটাই সবচাইতে বেশি অপছন্দ।
না ভাইজান সবাই নয়, শুধু মাত্র যারা আমার আগে এই ডংফেং কোম্পানিতে গিয়েছিলো তারাই কমদামী হোটেলে উঠেছিলো, আর বলে রাখি আমি আমার সাপ্লাইয়াদের কাছে ইম্প্রেশন বজায় রাখার জন্য ফাইভ স্টার হোটেলেই উঠি, এ আমার বিজনেস পলিসি। :D)
ধন্যবাদ ভাইজান, আপনার মানুষিক সহায়তা না থাকলে লিখা হয়ত আমার হতোইনা।
(3
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
বিদেশেও দুনম্বরী গাভীর দুধ নয়!
চলুক -{@
ইঞ্জা
আসলে চায়নাতে সয়ার দুধের প্রচুর প্রচলন, আর এই দুধ শরীরের জন্য বেশ উপকারী।
তৌহিদ ইসলাম
সুন্দর সাবলীল ভাবে আপনার ভ্রমন কাহিনী লেখাগুলো দারুন উপভোগ করছি ভাইয়া। আরো লেখা চাই।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, খুব শীগ্রই পাবেন, পাশে থাকবেন, ব্লগে লেখা দেবেন। 🙂
মৌনতা রিতু
সকালের নাস্তাটা এমন তেমন হলে মেজাজ বিগড়ে যায়। বাইরে কোথাও গেলে আমার শুধু খিদে পায়।
থাকার জন্য অনেকেই সস্তা হোটেল খোঁজে, টা ঠিক। আসলে টাকা আয় করা তো একটু ভালোমতো থাকা খাওয়া, তাইলে সস্তা খোঁজা কেনো! আপনি ঠিক কজা করেছেন ভাইজু।
চিংচং করে ও নিজের গার্লফ্রেন্ড আনতে চাইলো!
আচ্ছা আসুক দেখি!!!
সুন্দর উপস্থাপন।
ইঞ্জা
আপু, আসলেই আমার মেজাজ বিগড়ে যায় উল্টা পাল্টা ব্রেকফাস্ট দেখলে, বলে রাখি আমি বিদেশে গেলে ব্রেকফাস্টে প্রচুর খাই।
আপু, বেশিরভাগ মানুষ আছে যারা টাকা কামিয়েও কম দামি হোটেলে থাকে যা আমার পোষাই না, আমি ফাইভ স্টার হোটেলে থাকার কারণে আমার সাপ্লাইয়ারদের কাছে আমার ইম্প্রেশন বজায় থাকে।
ধন্যবাদ অফুরান।
রেজওয়ান
নুডুলসটা মেবি “ওয়ান্ততান মি” এটার ফ্রাইড বা “ওয়ান্ততান মি উইথ চিকেন কারি” টা আমার ভালই লাগে \|/
ইঞ্জা
নামটা জানিনা, চিকেন কারিও দেওয়া হয়না, দেওয়া হয় চিকেন স্টক, যা খেতে বিস্বাদ না হলেও আমার পছন্দ হয়নি।
মায়াবতী
মালয়শিয়াতে মাডাম কং ( নামটার সঠিক উচ্চারণ এই মুহুর্তে ম্নে নেই ) নামের একটা রেস্টুরেন্ট এ এই টাইপ কিছু নুডুলস পাওয়া যায় যা খেতে খুব সুস্বাদু লাগে আমার কাছে আর স্বাস্থ্যকর ও এই সব স্যুপ । \|/ \|/ \|/
ইঞ্জা
আপু সুস্বাদু কিনা জানিনা, স্বাস্থ্যকর অবশ্যই, চায়নিজরা প্রচন্ড স্বাস্থ্য সচেতন।