চায়না ভ্রমণের আমার কিছু খন্ড অভিজ্ঞতা আপনাদের জন্য তুলে ধরছি।
২০০৮ সাল, যাবো চংকিং শহরে ব্যবসায়িক কাজে, বাংলাদেশ থেকে ডাইরেক্ট চংকিং ফ্লাইট নেই, তাই কুনমিং হয়ে যেতে হবে, চায়না ইস্টার্ন এয়ারলাইন্সের টিকেট কাটলাম এমন ভাবে যেন কুনমিং নামার দুই ঘন্টা পর চংকিং ফ্লাইট ধরতে পারি।
অপরদিকে আমার সাপ্লাইয়ারকে বলা হয়েছে চংকিংয়ে যেন আমার জন্য হোটেল রিজার্ভেশন করে রাখে।
আমি যথাসময়ে শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে এসে চেকইন করে ভিতরে ফ্লাইটের অপেক্ষায় বসে আছি কিন্তু ফ্লাইটের কোন খবর নেই, এক ঘন্টা ডিলে করার পর ফ্লাইটে চাপলাম আর আল্লাহ্ আল্লাহ্ করছি যেন আমার চংকিংয়ের ফ্লাইট মিস নাহয়, কুনমিং নেমেই দৌড়াতে লাগলাম দ্রুত এম্বারকেশন করতে, ওখানে তেমন সময় লাগলোনা, সেইখান থেকে গেলাম আমার লাগেজ নিতে, লাগেজ নিয়ে আবার দৌড়, এখন যেতে হবে উপরতলায়, লিফট পর্যন্ত গিয়েই আমার দম শেষ, কষ্ট করে লিফটে চড়ে উপড়ে গেলাম হাঁফাতে হাঁফাতে, চংকিং ফ্লাইট চেকইন ডেস্কে এসেই মাথায় বাঁশ পড়লো, ফ্লাইট বোর্ডিং শেষ।
পূর্ব অভিজ্ঞতা থাকায় দিলাম ঝগড়া লাগিয়ে, বললাম তোমাদের ফ্লাইট ডিলের কারণে আমি ফ্লাইট মিস করছি, এখন কি করবে তোমরা করো।
প্রথমে গাঁই গুঁই করে পাঠালো কম্পলেইন ডেস্কে, গেলাম সেইখানে, তারা না না করছে আর আমি আইন দেখাচ্ছি, কারণ এয়ারলাইনের আইন কানুন ভালোই জানা আছে আমার, পরে ওদের উর্দ্ধতন কর্মকর্তা এসে সমাধান দিলো, পরেরদিন দুপুর বারোটায় ফ্লাইট কনফার্ম করে দিলো, সাথে হোটেল এরেঞ্জমেন্ট পেলাম, সব ঘুছিয়ে নিয়ে বাইরে বেরিয়ে এলাম এয়ারপোর্ট ডিপার্টমেন্ট যেখানে বাস দাঁড় করিয়ে রেখেছে, বাইরে প্রচন্ড ঠান্ডায় জমে যাওয়ার মতো অবস্থা, বলে রাখা ভালো কুনমিংয়ে ঠান্ডা পড়ে খুব সল্প সময়ের জন্য,
সুবিধামত খালি দেখে বাসে উঠে পড়লাম, আমার পাশের ভদ্রলোক বাঙ্গালি, বললো উনার সাংহাই ফ্লাইট ক্যান্সেল তাই হোটেল দিয়েছে, পথে দুজনে কথা বলতে বলতে হোটেলে পোঁছালাম।
হোটেলে পোঁছেই দেখলাম এলাহি কান্ড, প্রচুর মানুষ ফ্রন্ট ডেস্কের সামনে ভিড় করে আছে, সবার হাতে পাসপোর্ট, আমরা দুইজন বুদ্ধি করে দুইজনের পাসপোর্ট একসাথে নিয়ে ভিড়ের মধ্যে গিয়ে দাঁড়ালাম, আধা ঘন্টা কুস্তি লড়ে এক সময় দুজনে একটা রুম বরাদ্দ পেলাম, পরবর্তিতে নিজ রুমে লাগেজ রেখে এলাম ডিনার করতে, হোটেলের নিচেই রেস্টুরেন্টে গিয়ে টেবিল দখল করে আরেক বিপদে পড়লাম, ওয়েটাররা কেউ ইংরেজি বলেনা, বুঝেওনা।
হায় হায় এখন কি খায়, কিভাবে বুঝায়, একসময় এক চায়নিজ ভদ্রমহিলা যিনি নিজেও হোটেলের গেস্ট, এগিয়ে এসে বললেন ইংরেজিতে “বুঝতে পারছি তোমরা বিপদে পড়েছো, আমি কি হেল্প করতে পারি”?
উনাকে খুলে বলায় উনি ওয়েটার ডেকে আমাদের জন্য চিকেন, ফ্রাইড নুডলস, ছোট ছোট চিংড়ি ভাজা অর্ডার দিলেন, আমরা উনাকে আন্তরিক ধন্যবাদ জানালাম, কিছুক্ষণ পর খাওয়া এলে দুজনে পেট পুরে খেয়ে নিজ রুমে গেলাম।
একে তো প্রচন্ড শীত উপরে দেখি রুমের হিটার কাজ করছেনা, কম্পলেইন করতে রিসেপসনে কল দিয়ে পড়লাম আবার বিপদে, ইংরেজি জানা কেউ নেই, চ্যাং চুং নো ইংলিশ বলে কেটে দিলো, উপায়ন্তর না পেয়ে যা পড়া ছিলো তাই নিয়ে কম্বলের নিচে ঢুকলাম দুজনে দুই বিছানায়।
রাত গভীর, দরজায় করাঘাতের শব্দে আমার ঘুম ভেঙ্গে গেলে আমি ভড়কে গেলাম, বুক ধুকপুক করছে হটাৎ ঘুম ভাঙ্গায়, আমার রুম পার্টনার দেখি না ডেকে ঘুমাচ্ছে, আমি উঠে গিয়ে দরজার পিপ হোলে দেখলাম এক মহিলা, দরজা খুলতেই মহিলা বললো নিহাউ (হ্যালো) সাংহাই বলে হাতের ইশারায় বুঝালো ফ্লাইট রেডি, গাড়ী এসেছে নিতে, আমি ইশারায় বুঝালাম আমি পাঠাচ্ছি, সে চলে গেলো আর আমি গিয়ে ভদ্রলোককে ডাক দিলাম, সে দ্রুত উঠে ফ্রেস হয়ে কাপড় পড়ে লাগেজ নিয়ে বিদায় নিয়ে বেড়িয়ে গেলো, আমি আবার শুয়ে পড়লাম।
চলবে।
২০টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
ইঞ্জা ভাই, ভ্রমন লেখেন পড়ি। ভাল লাগলো। -{@
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই, অবশ্যই লিখবো। -{@
জিসান শা ইকরাম
ভ্রমন নিয়ে লেখা শুরুই করে দিলেন?
উপিস্থাপনা দারুন হয়েছে।
চায়নায় এই এক সমস্যা, ইংরেজী বোঝার মত খুব কম মানুষ আছে। অনেক বিরম্বনায় আমিও পরেছি।
লেখা চলুক, আমিও আরম্ভ করব ভাবছি।
ইঞ্জা
জ্বি ভাইজান, আপনার বুদ্ধিই নিলাম, ধন্যবাদ।
চায়নার মানুষ খুব কমই ইংরেজি জানে, ফলশ্রুতিতে বড় বড় কর্পোরেট গুলোতে বেশির ভাগ ইংরেজি না জানারাই উচ্চ আসনে আসিন, উল্টো এখন এদেরকে সাহায্য করার জন্য ইংরেজি জানে এমন মানুষকে নিয়োগ দেয় তারা।
মৌনতা রিতু
এমন তাড়াহুড়ায় পড়লে আমি অস্থির হে যাই। তবে যাত্রাপথে এটাতেও আনন্দ। তাড়াহুড়া করে আপনি প্লেন, বাস বা ট্রেন ধরতে যাবেন আর তা মিস্ হলে তো মহা ঝমেলা
কেউ ভাষা না বুঝলে কি বিপদ! যাক ভদ্র মহিলা এসছিলো বলে।
বেশ লাগছে। আমরাও ঘুরছি আপনার সাথে।
ইঞ্জা
আন্তরিক ধন্যবাদ আপু, ভ্রমণ কাহিনী আমার স্বয়ং সম্পূর্ণ না, কারণ আমি বেশির ভাগ ভ্রমণ করেছি ব্যবসায়ীক কারণে, ফলশ্রুতিতে আমার বেড়ানো হয় কম।
রেজওয়ান
শুরুটা অসাধারণ হয়েছে ভাই। পরের পর্বের অপেক্ষায় রইলাম (3
ইঞ্জা
গতরাতে দিয়েছি, ভালো থেকো ভাই।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
চলুক ভ্রমন কাহিনী
দেখি শুয়ে পরার পরের কাহিনী কি ঘটেছিল। -{@
ইঞ্জা
😀 দিয়েছি 😀
ছাইরাছ হেলাল
বিভূঁইয়ে ভাষা একটি সমস্যাই,
বেশি ঠেকে গেলে সাইন ল্যাঙ্গয়েজ বা ছবি এঁকে কাজ চালানোর তরিকাই ভরসা,
চলুক চলুক, এ বিষয়টি আমার খুব পছন্দের।
ইঞ্জা
ভাইজান, চায়নিজরা এতোই বদের বদ সাইন ল্যাঙ্গুয়েজই বুঝার চেষ্টা করেনা আর ছবি এঁকে বুঝানোর সময়ই বা কই পাই?
ধন্যবাদ। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
এই ভাষা সমস্যার জন্য কতো যে ঝামেলায় পড়েছিলাম জাপান, বেলজিয়ামে। ^:^
ভাইয়া যাক এবারে তাহলে চায়না বেড়াতে শুরু করলাম। 😀
ইঞ্জা
জ্বি আপু, একটা সময় একি সমস্যায় পড়তাম ইটালিতে, এখন আর সমস্যা হয়না। 🙂
আপু চায়নাও কিন্তু বেড়ানোর মতো, দেশটা অনেক উন্নতি করেছে, সাথে সাথে তাদের ইতিহাস, কালচার ধরে রেখেছে
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া তরুণ এই দুইবছর ধরে সাংহাই বিশ্ববিদ্যালয়ে একমাসের জন্য আমন্ত্রিত শিক্ষক হিসেবে গিয়ে ক্লাশ নিচ্ছে। কিন্তু আমি যেতে পারিনি। ছেলেটা গ্রীষ্মকালীন ক্লাশে জয়েন করেছে, আর গ্রীষ্মকালীন কাজও শুরু করতে যাচ্ছে। দেখি একদিন হয়তো যাবো।
ইঞ্জা
ঘুরে আসুন আপু সময় করে, চায়নার ইতিহাস ঐতিহ্যগত ভাবে সমৃদ্ধ, আপনার খুব ভালো লাগবে।
তৌহিদ ইসলাম
অনেক ভালো লাগছে পড়তে ভাইয়া, দুই বার পড়লাম।
ইঞ্জা
শত সহস্র ধন্যবাদ প্রিয় ভাই (3
মায়াবতী
ভাইয়া আপনি যে ভ্রমন কাহিনী ব্লগে লেখা শুরু করেছেন আমি তো টের ই পাইনি ! ইয়াহু ! কি মজা… প্লিজ প্লিজ প্লিজ জলদি বাকি পর্ব গুলো লিখেন *
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, খুব খুশি হলাম শুনে। 🙂