বেলা যে গেল বয়ে তবুও ফুলীঁর কোন সাড়া শব্দ নেই।রাতের অন্ধকারে বিষাক্ত সাপের ছোবলেঁ ফুলীঁ শুয়ে আছে সাহেবের রুমের মেঝেতে।সাহেবের বিধবা বোন আর সাহেবের ছেলে তাকে খুজেঁ হয়রান।কোথাও নেই।সাহেবের বিধবা বোন উপরে সাহেবের রুমে তাকিয়ে অবাক হন,দরজাটি মৃদু খোলা ছিল সেই খোলা স্হান দিয়েই সাহেবের বোনের চোখে পড়ে ফুলীঁর অসাড় দেহখানী।কেমন যেন চোলগুলো এলোমেলো,ফ্রকের ডানার অংশে ছিড়ে যাওয়া নরপশুদের ক্ষতের চিহৃ ।সাহেবের বোন রুমের ভিতরে ঢুকে ফুলীঁকে এক বার দুই বার তিন বার ডাক দিলে সে ধীরে ধীরে চোখ খুলে সাহেবের বোনকে দেখে জড়িয়ে ধরে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে।
-ফুপি..গো এখন আমি কি করব?ওরা আমাকে মরার আগেই মেরে ফেলেছে।
ফুপি ফুলীকে জড়িয়ে ধরে।চোখে অশ্রু এসে যায় ফুপির।সেও কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন।ফুলীঁকে সাওয়ার শেষে নাস্তা করান ফুপীঁ।তারপর ফুলীঁকে নিয়ে ফুপি চলে যায় নিকস্হ থানায়।থানার বড় কর্তা আজ সকাল সকাল অফিসে এসেছেন।সে ফুলীঁ আর ফুপিকে বসতে বলে তাদের সমস্ত অভিযোগ শুনেন মন দিয়ে কেইস লিখতে গিয়ে ফুপির কাছে আসামীর নাম শুনে থমকে যান।
-বিশিষ্ট ব্যাবসায়ী,সমাজ সেবক জি,রহমান এবং কাইউম চৌধুরীর !
থেমে যায় থানা অফিসারের কলম দু,আঙ্গুলের মাঝে কলমটিকে নাড়াচ্ছেন।ফুপি অবাক হন।
-কি ব্যাপার অফিসার আপনি লিখছেন না কেনো?
-ও..হ্যা তারপর, কোন প্রমান আছে যে ওনারাই রেফ করেছেন?
-প্রমানতো আপনার সামনেই বসে আছে…..নিরীহ এই কাজের মেয়েটির জীবনকে ধ্বংস করেছে ঐ নরপশুরা আর কি প্রমান লাগবে?
-দেখুন,আমরা প্রমানের উপর নির্ভরশীল,প্রমান ছাড়া আমরা কিছুই করতে পারি না আমি কেইসটা লিখছি আর মেয়েটিকে ডাক্তারী পরিক্ষা করাতে হবে তবেই আমরা কেইসটি আমলে নিতে পারব।
-কেনো?ডাক্তারী পরিক্ষা কেনো?একটি মেয়ে কখন..কখন তার সতীত্ত্ব হারিয়েছে বলবে? যখন তার সব শেষ হয়ে যায়,এটাকে কি আপনি মিথ্যে বলছেন? নিজের সতীত্ত্ব হারানোর কথা নিজেই বলছে তাপরও আবার কিসের প্রমান লাগবে।সোজা কথা বলুন আপনি কেইসটি নিবেন কি না নতুবা আমি অন্য ব্যাবস্হা নিব।
-রাগ করেন কেনো ম্যাডাম কেইসটি নেবনা আমি বলিনিতো,,,আসলে ব্যাপারটা আপনি বুঝতে পাছেন না।
-আমার মাথার চুল,চোখের আলো এমনিই কমেনি আমি বুঝি সব বুঝি….আপনাদের মত খচ্চেররা একদিকে ফুলীঁদের মত অসহায়দের জীবন ধ্বংস করবেন আর আপনার মত অফিসার আরো একবার ফুলীঁদের প্রকাশ্যে মেডিক্যাল রিপোর্টের নামে উলঙ্গ করে দুনিয়াকে লাইভ দেখাবেন….ছি! আপনাদের বিচার ব্যাবস্হা।চল ফুলীঁ চল এই সব নোংরা সমাজে তোরা আর বাচতে পারবিনা।বলে ফুপি ফুলীঁকে নিয়ে বাসায় চলে আসে।ফুপী বাসায় ঢুকে একটি ফোন রিসিভ করেন।ফোনটা করেছিল সাহেব তার ভাই।
-হেলো….কে?
-আমি….শোন আমি বাসায় আসতে পারছি না জরুরী কাজে আমাকে এখনই থাইল্যান্ড যেতে হচ্ছে।
ফোনটা রেখে ফুপি পাশের চেয়ারে বসে পড়ে।মেয়েটিকে নিয়ে এখন সে খুব চিন্তায় আছেন।সারাদিন মূখ মলিন করে জড়োসরো হয়ে বসে থাকে খাবার দাবারের প্রতিও তেমন কোন রুচি নেই।
ফুলীঁর চোখের কোণে সর্বক্ষন জমে থাকে সভ্য সমাজের অসভ্য মানুষ নামক পশুদের ঘৃণা ভরা জল কণা অসহায়ের মত চেয়ে থাকে নতুন কাউকে দেখলেই।আর পুরুষ মানুষের প্রতি দৃষ্টি পড়তেই পাগলের মত ছুটে পালিয়ে বেড়ায় সে এখন এক প্রকার পাগল উম্মাদ প্রায়।ফুলীঁকে আজ খুব যত্ন করে ফুপী রাতের খাবারটি খায়িয়ে বিছানায় শুয়িয়ে দেন।ফুলীঁ ঘুমে বিভোর রাতের আকাশেঁ তারাগুলো মিট মিট জ্বলছে।রাত বাড়ার সাথে সাথে ঘুমিয়ে পড়ছে মানব জাতি।কঠিন পাথুড়ে শহরে গভীর রাতে মাঝে মাঝে রিক্সার টুং টাং বেইলের শব্দ।ফুলীঁর ডানে বায়ে উপরে নীচে এবং ঘরের বাহিরে অসংখ্য অচেনা মানুষাকৃতি অজানা জীব ক্ষুধার্থের তৃঞ্চা মেটাবার জন্য ফুলীঁর দিকে ক্রমশতঃ এগিয়ে আসছে।ফুলীঁ ছটফট করছে কি যেন বলার চেষ্টা করেও কেবল বোবা ধরার মত হাউ মাউ করছে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে ঘুম ভেঙ্গে যায়।কিছুক্ষন নীরবতা এর পর এক পা দু’পা করে ঘর হতে বাহির হওয়া,দূরে এক মসজিদ থেকে ভেসে আসছে ফযরের আযানের ধ্বনি…সকাল হয়ে গেছে মুমিনগণ মসজিদের দিকে এসো.. মোয়াজ্জিনের এ আহবান যেন ফুলীঁর কানেই যাচ্ছে না সে আনমনে হাটছে।মাঝে মাঝে চলন্ত গাড়ীর হর্ণকে উপেক্ষা চলছে হঠাৎ এক প্রাইভেট কারে হালকা ধাক্কা লেগে ছিটকে পড়ে রাস্তার পাশে।
প্রাইভেট কারের ভিতরে ছিল তিনজন ইয়াং মেয়ে।বেশ সাজগোজ ছিল, তাদের সর্বাংঙ্গে ছিল অলংকারের বাহার ঠোটে ছিল রঙ্গীন লিপষ্টিক,চোখে রঙ্গীন চশমা।মেয়েগুলো গাড়ী থামিয়ে ফুলীঁকে ধরাধরি করে প্রাইভেট কারে তুলে একটি হাসপাতালে ভর্তি করায়।হাসপাতালে ফুলীঁকে তিন দিন থাকতে হয়েছিল।হাসপাতালের সমস্হ ব্যায় বহন করে মেয়েগুলো।জ্ঞান ফেরার পর হাসপাতালেই মেয়েটির পরিচয় জানতে চাইলে মেয়েটি তার গ্রামের পরিচয় জানতে পেরে মেয়েগুলোর মাঝে একজনের গ্রামের বাড়ীর পাশের গ্রামের ফুলীঁ।মেয়েটির নাম জরিনা।সেও এই ঢাকা শহরে প্রথমে বাসা বাড়ীর কাজে এসে ভাগ্যের চক্রাকারে জীবনের দামে সে এখন ঢাকা শহরের কয়েকটি ফ্লাটের মালিক এবং আছে বিভিন্ন উচুতলার ব্যাবসা।ফুলীঁর প্রতি তার মায়া এসে যায়।ফুলীঁর জীবনের নিঃসঙ্গতার বর্বরতার ঘটনা তার মনে আচ লেগে যায় তখন সে মহিলা শাষিত সমাজের পুরুষ নামক কাপুরুষদের ঘৃণা ভৎসনা করে….ছি!পুরুষ নামের হায়নার দল।
-কোথায় যাবি?
-কোথায় আর যাব আফা,দেশে যাবো কি মূখ নিয়ে।
-বুঝেছি….চল তুই এখন থেকে আমাদের সাথে থাকবি।
ফুলীঁকে নিয়ে জরিনা তার ফ্লাটে উঠে।যাবার সময় জরিনার জন্যে কিছু কাপড় চোপড় আর কিছু ঘরের সরঞ্জাম কিনে নিয়ে যায়।ফুলীঁকে রুম দেখিয়ে দেয় জরিনা।
-এই রুমে তুই থাকবি।রুম ভাড়া আর খাবার দাবার নিয়ে তোকে আর চিন্তা করতে হবে না।সব আমিই করব।ঠিক আছে তুই তোর রুম গুছিয়ে নে আমি তোর জন্য খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।
জরিনা চলে যায়।ফুলীঁ একটি দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুম গোছাচ্ছে।মনে মনে জরিনার প্রসংশা করছে…দুনিয়াতে এখনও ভাল মানুষ আছে বলেই দুনিয়া টিকে আছে।ঘর গোছাতে গোছাতে জানালার পর্দা লাগাতে জানালার সামনে গিয়ে ফুলীঁ থ”খেয়ে যায়।জানালা দিয়ে ফুলীঁ পাশাপাশি রুমের প্রত্যাকটি জানালায় স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছে ছেলে মেয়ের কিছু অনৈতিক কাজ যা ফুলীঁকে ফুলীঁর জীবনটাকে উলোট পালট করেছে সেই একই কাজ এখানের প্রায় প্রতিটি রুমেই ঘটছে তবে তা স্বাভাবিক কোন বিশৃংখলা নেই।ফুলীঁ ঘর হতে দু পা বাহিরে দিয়ে একটু এগিয়ে চোখের দৃষ্টি পড়ে একটি ঘটনায়।
দু’ধারে এক তলা বিশিষ্ট সারিবদ্ধ ভাবে বিল্ডিংয়ের কারনে মাঝখানে একটি সরু রাস্তা তৈরী হয়।সরু রাস্তার দু পাশের বিল্ডিংয়ের দরজা গুলোর দরজা পাশাপাশি।বিল্ডিংয়ের দু পাশের দু দেয়াল ঘেষে খদ্দেরের আশায় সাড়িবদ্ধ ভাবে দাড়িয়ে আছে কিছু সমাজ দ্বারা কলংকিত কিছু মেয়ে দেহ ব্যাবসায়ী।এক খদ্দেরের সাথে এক মেয়ের বিভিন্ন রঙ্গ রসে দর কসাকসী চলছে।কয়েক জন খদ্দেরের সাথে ছয় ফুট তিন ইঞ্চি লম্বা একজন মাস্তান টাইপের ছেলে সরু পথটি দিয়ে ভিতরে যাবার পথে একটি মেয়ে রসিকতার ছলে মাস্তানটির বুক উদোম করা শার্টের কলার ধরে টান দেয় ছেলেটি চলন্ত পথে হঠাৎ থেমে যায় সাথে ওর বন্ধুরাও।
-কি লো তুই এত দিন কোথায় ছলি?
মাস্তান ছেলেটি অবাক যদিও সে এখানে এই পল্লীতে আসে মাঝে মাঝে কিন্তু মেয়েটির কথা শুনে ভেবাচেকা খেয়ে যায় আর সেই অবস্হায় সেখানে যত বড় শক্তিশালী পুরুষই হউক যেন মেয়েদের কাছে কলা পাতার মতন।ছেলেটিও মেয়েটিকে এক জারি মেরে হাটা দেয়।ছেলেটির বন্ধুরা যে যার কাজে ঘরে ঘরে ঢুকে পড়ে শুধু মাস্তান ছেলেটি রুমের বাহিরে সরু পথের এক পাশে মোড়াতে বসে আছে ফুলীঁ তা লক্ষ্য করে।ফুলীর আশ্রয়দাতা ফুলীঁকে একটি পেপসির বোতল হাতে দিয়ে হুকুম করে ঐ ছেলেটিকে দিতে।ফুলীঁ প্রথমে ইতস্তঃ করলেও অবশেষে ছেলেটির সামনে পেপসির বোতল নিয়ে ছেলেটিকে পান করতে বলে।ছেলেটি ফুলীঁর দিকে তাকায় ফুলীঁ মাথা নত করে দাড়িয়ে থাকে।
-তোমার নাম কি?
-জী…ফুলীঁ।
-তুমি এখানে নতুন?
-জি..জি না আমি বাহিরে কাজ করি এখানে জরিনা আপু আমাকে থাকতে দিয়েছে।
ছেলেটি মুচকি হাসে যেন ফুলীঁকে জানিয়ে দেয় এক সময় এটাই হবে তোমার আসল ঠিকানা।বন্ধুরা সবাই যার কাজ সেরে চলে আসে।ছেলেটি বন্ধুদের নিয়ে চলে যাবার সময় জরিনার সাথে কি যে বলে ফুলীঁ তা আচ করতে পারল না কিন্তু ফুলীঁ কেনো এমন পরিবেশ ভাল লাগে না।সে জরিনাকে প্রশ্ন করে।
-আফা..ঐ ছেলেটি কে?
-ও…. হচ্ছে আমাদের এই পল্লীর রক্ষনাবেক্ষক।নাম তার ছোটন রাজা।তাকে যতটা ঠান্ডা মনে হয় সে ততটা ঠান্ডা নয়।তবে ও মানুষ ভাল।
এই ছোটন সেই ছোটন আমারি লেখা সোনেলায় প্রকাশিত “অপরাধ জগৎ”সেই ছেলেটি” গল্পের মেইন চরিত্র।নীচে সেই গল্পের লিংগুলো দিলাম আপনাদের জন্য।
ফুলীঁ খুব চিন্তায় পড়ে যায় তার এ নিশিদ্ধ পল্লীতে তার কাজটা কি হবে।সে তো এ পরিবেশে নিজেকে খাপ খায়িয়ে নিতে পারবেনা।তাহলে সে কি করবে?
চলবে…
৪টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যাঁ ভাই, এ রকম অনেক অনেক বাস্তব কাহিনী বা জইবন চরিত্র যাই বলিনা কেন সত্য সত্য সত্য।
নাম তাঁর আমার মনে নেই, আনুমানিক ১৯৯৮ বা ১৯৯৯ সালে ঢাকা এসে আমাদের মহান সংসদ ভবনে ঘুরতে গিয়ে এরকম একটি মেয়ের চরিত্র পেয়েছি। সত্য।
তখন সংসদ ভবনের উপরে ঘুরা জেত। দক্ষিন প্লাজায় জনসাধারন সারাদিনের করমব্যাস্ত সময় পার করে একটু কলংগহিন বায়ু পাওয়ার জন্য আশা মনটা স্বাভাবিক করার জন্য।
ধন্যবাদ এরকম একটি সামাজিক ব্যাধি তুলে ধরার জন্য।
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ মজিবর ভাই -{@ -{@ বাসন্তী শুভেচ্ছা (y)
শুন্য শুন্যালয়
ফুলীদের জীবনটা যে এমনই ভাইয়া…
অনেক অনেক ধন্যবাদ এই পোস্টের জন্য…
মা মাটি দেশ
ধন্যবাদ আপু -{@