১৯৭১
পিছনে কেউ তার নাম ধরে ডাকছে, পরী থমকে দাঁড়ায়। জাহিদ। পরীর চাচাতো ভাই।
জাহিদ- পরী, কাল রাতের বাসে চট্টগ্রাম চলে যাবো।
পরী- যাবেন, তো আমার কি ! সে বিরক্তি প্রকাশ করে ।
জাহিদ- কাল রাতের আগে জবাব দিস । যদি জবাব না দিস, আমি আর ফিরে আসবো না। জাহিদ ভাঁজ করা একটা কাগজ পরীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে হন হন করে হাঁটতে থাকে। পরী বিরক্তি নিয়ে চিঠি পড়ে-
পরী,
তোকে ভালোবাসি। তুই যদি জবাব না দিস, তাহলে কোন দিন জানতে পারবিনা কি গভীর ভালোবাসা নিয়ে তোকে সাজাতে চাই।
-জাহিদ
পরী খুব বিরক্ত বোধ করে। সামনে তার মেট্রিক পরীক্ষা। সে এখন এসব নিয়ে ভাবতে চায় না। তার উপর দেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়েছে, পরীক্ষার বিষয়টা অনিশ্চিত হয়ে গেছে। চট্টগ্রামের পাহাড়তলীতে তাদের বাসা। যুদ্ধের কারনে বাবা তাদের সবাইকে গ্রামে নিয়ে এসেছেন। চারদিকে রাজাকার, পাকিস্থানের দোসর, পাঞ্জাবীরা খুন হত্যা লুটপাট শুরু করছে । তাদের বাসা সম্পূর্ণ খালি, তাই জাহিদ ভাইকে বাসা পাহারা দেবার জন্যে পাঠানো হচ্ছে। হটাত বাসার সামনের কামেনী গাছটার জন্যে তার মন কেমন কেমন করতে লাগলো। জাহিদ ভাইকে বলতে হবে, গাছটায় যেন নিয়ম করে পানি দেয়।
১৯৭৫
পরী অসুস্থ। খুব বেশী অসুস্থ । পরী কামেনী গাছটার কাছে বসে আছে ।
জাহিদ – বলিনি? তোর প্রিয় গাছের কিছু হতে দিবো না, দেখেছিস কি সুন্দর হয়েছে গাছটা। সেদিন তোর ওভাবে ছুটে আসা দেখে খুব ভালো লাগছিলো, আমি ভেবেছি তুই চিঠির জবাব দিবি। তুই যদি সেদিন চিঠির জবাব দিতি, তাহলে রাজাকাররা আমাকে নিয়ে যেত না, আমি ফিরে আসতাম। কিন্তু তুই এসে বললি কামেনী গাছের যত্ন নিতে হাহাহাহাহাহা…
পরী দু’হাতে কান চেপে চিৎকার করতে থাকে- আপনি হাসবেন না, হাসবেন না … আমার কোন দোষ নেই … ওই রাজাকাররা … ওদের বিচার হবে… সেদিন আর আপনি আমাকে দোষ দিতে পারবেন না …
জাহিদ – বিচার ? কে করবে? বঙ্গবন্ধুকেই হত্যা করা হয়েছে সপরিবারে… আর তুই বলছিস রাজাকারদের বিচার হবে…হাহাহাহাহা…
পরী জ্ঞান হারায়। পরীর মা ছুটে আসেন, মেয়ের অবস্থা দেখে পাশের বাসার হোসেনকে ডেকে আনেন। দুজনে মিলে পরীকে ঘরে এনে বিছানায় শুইয়ে দেয়।
হোসেন পরীর মাথার কাছে বিছানায় বসে আছে। পরীর জ্ঞান না ফেরা পর্যন্ত বসে থাকবে। পরীর এই সমস্যার কথা সে জানে, সে পরীকে ভালোবাসে, পরীর সব সমস্যা সহই ভালোবাসে। পরী মিথ্যা অপরাধ বোধে ভোগে, জাহিদের মৃত্যুর জন্যে পরী নিজেকে দায়ী মনে করে। হোসেন পরীর নিস্পাপ মিষ্টি মুখের দিকে তাকিয়ে ভাবে, সে তার সমস্ত ভালোবাসা দিয়ে এই নিস্পাপ চেহারার মেয়েটাকে সুস্থ করে তুলবে …
২০১৩
বাবা আমার মাকে প্রচণ্ড ভালবাসতেন । তিনি তার ভালোবাসা দিয়ে মাকে সুস্থ করে তুলেছিলেন। ২০০১ সালে মা মারা যান। কিন্তু মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তাঁর সেই ভুল অপরাধ বোধ এর যন্ত্রনা রয়ে গেছিলো। তিনি প্রতিনিয়ত প্রত্যাশা করে গেছেন যুদ্ধ অপরাধীদের বিচার হবে । প্রমান হবে তাঁর কোন অপরাধ ছিলো না।
আমি তাঁর সন্তান, আমি আমার মায়ের সেই প্রত্যাশাকে ধারন করে আছি … প্রমান হোক আমার মা নিরপরাধী ছিলেন …
২৪টি মন্তব্য
আদিব আদ্নান
অনেক সুন্দর করে চাওয়ার আকাঙ্খা প্রকাশ করেছেন ।
বোধকরি প্রথম লিখলেন এখানে এবং সুন্দর করেই ।
বিচার আমরা চাই ই ……কিন্তু কীভাবে এবং কেমন করে কে যে তা করবে বুঝছি না ।
আফ্রি আয়েশা
হাঁ প্রথম লিখলাম । আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্যে ধন্যবাদ । শুভকামনা 🙂
জিসান শা ইকরাম
সবাগতম সোনেলায় ।
১৯৭১ কে চেতনায় ধারন করে আছেন দেখে ভালো লাগলো খুব । ৭১ কে দেখেছি নিজের চোখে , তাই বুঝি ৭১ এর রাজাকারদের বিচার হওয়াটা কত জরুরী ।
আপনাদের মত নতুন প্রজন্ম যখন এসব বলেন , অবিভুত হয়ে পরি ।
ভালো লিখেছেন । শুভ কামনা ।
আফ্রি আয়েশা
৭১ এর চেতনা আত্মার সাথে মিশে আছে … ধন্যবাদ 🙂 আপনার জন্যেও শুভ কামনা নিরন্তর ।
শিশির কনা
বিচার হলে আমরাও পেতাম অপার শান্তি । প্রথম লেখাতেই জানান দিলেন , আপনি ভালো লিখেন -{@
আফ্রি আয়েশা
ধন্যবাদ আপু । আপনাদের সব সময় পাশে চাই । শুভকামনা।
ব্লগার সজীব
পরীর ছেলের প্রত্যাশা যেন পুরন হয় ।
গল্পের বিষয় এবং ধারাবাহিকতা সুন্দর ।
আফ্রি আয়েশা
পরীর সন্তানের প্রত্যাশা পুরন হবেই… ধন্যবাদ 🙂 শুভ কামনা জানবেন ।
simanto
valolaga onek onek….
আফ্রি আয়েশা
ধন্যবাদ 🙂 ভালো থাকবেন
ছাইরাছ হেলাল
সোনেলা আপনাকে স্বাগত জানাচ্ছে ।
আপনার সাথে আমরাও প্রমাণের প্রত্যাশায় আছি ।
আফ্রি আয়েশা
ধন্যবাদ । শুভকামনা জানবেন।
জিসান শা ইকরাম
গল্পটা কেন জানি আবার একবার পড়লাম
পরীর জন্য কেমন একটা মায়া অনুভুত হচ্ছে , শ্রদ্ধা তাঁর জন্য।
আফ্রি আয়েশা
কি বলে আপনার মন্তব্যের জবাব দিবো বুঝতে পারছি না … আবেগ খারাপ জিনিস …
মিসু
ভালো লেগেছে গল্পটি । পরীর সন্তানের প্রত্যাশা পুরন হোক । সব যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হোক।
আফ্রি আয়েশা
নিশ্চয় হবে … ধন্যবাদ । শুভকামনা জানবেন
যাযাবর
আপনি অনেক ভালো গল্প লিখেন বুঝতে পারছি । লেখা লেখির অভ্যাস আছে নিশ্চয়ই। ভালো লেগেছে গল্প লেখার স্টাইল (y)
আফ্রি আয়েশা
ধন্যবাদ 🙂 লেখালেখি একটু করি , বেশী না 🙂
লীলাবতী
অসাধারন এক গল্প পড়লাম । এখানে স্বাগতম -{@ শুভ ব্লগিং 🙂
আফ্রি আয়েশা
ধন্যবাদ 🙂
স্বপন দাস
ভীষণ ভালো লাগলো ।।অন্তর ছুঁয়ে গেছে। ।আরো লিখবেন ।।
আফ্রি আয়েশা
ধন্যবাদ 🙂 । জি লিখবো , শুভকামনা জানবেন
খসড়া
বিচার হচ্ছে। এবার রায় কার্যকর দেখার অপেক্ষায়।
আমি আশাবাদী প্রচন্ড আশাবাদী।
আফ্রি আয়েশা
হাঁ আশায় আছি …