দিদিমণির গানের ক্লাশ শেষ করেই একে একে বের হলো অর্পা, অনিন্দিতা, তূর্য, সিদ্ধু।
দিদিমণিঃ সবাই সাবধানে যেয়ো আর ঠিকঠাক থেকো, পথে যেন কোন দেরী না হয়।
অর্পাঃ ঠিক আছে দিদি! (এত্তো কড়া কেনো উনি, গানই তো শিখি কিন্তু যেনো সাক্ষাৎ জন্মদাত্রী মা!!)
একসাথে হেঁটে সদর রাস্তায় উঠেই-
তূর্যঃ এই সিদ্ধু চল যাই, অর্পা-অনি গেলামরে…
সিদ্ধুঃ হ্যাঁরে চল, ঐ তোরা ঠিকঠাক যেতে পারবি তো? সন্ধ্যে হয়ে এলো কিন্তু!
অনি/অনিন্দিতাঃ আহা! আমরা যেনো চিনি না, দিদিমণি সাজতে এসেছেন…হুঁহ।
অর্পাঃ আমি আর অনি যাচ্ছি একসাথে, চিন্তা করিস না। ভালো থাকিসরে…
সিদ্ধু আর তূর্য চলে গেলো…।
অনিঃ হ্যাঁ রে অর্পা, চল ঐ মোড় পর্যন্ত হেঁটে যাই। এরপর না হয় বাসে চড়ে ফিরি, কি বলিস?
অর্পাঃ হ্যাঁ চল… হাঁটতে হাঁটতে গল্পও হল আবার সময়টাও কাটলো…
অনিঃ এই চল না একটা খেলা খেলি!
অর্পাঃ কি আবার!?
অনিঃ এক কাজ কর, তুই এখানে বসে থাক ঐ দিকে ঘাসের উপর আর একা একা হেঁটে যাই দম গুনে গুনে। দেখি কতো দমে যাই। এরপরে তুই, যার দম কম হবে সেই জিতবে
অর্পাঃ মাথা খারাপ না কি তোর!! আঁধার হয়ে এলো, এদিকে কেউই নেই এখন আর তুই একা হেঁটে যাবি!!? যদি কিছু হয়ে যায় তখন??
অনিঃ ধ্যুৎ! তুই না কিইই :/ কি হবে আবার? মজাই হবে। তুই বোস, আমি যাচ্ছি
অর্পা বসে পড়লো আর অনি মানে অনিন্দিতা দম গুনে গুনে হাঁটা দিলো…
খুচড়ো কিছু পথচারীর মতোই দু’টো ছেলে হাসতে হাসতে এগিয়ে গেলো অনি’র পিছু পিছু, ঠিক যেনো তারাও খেলার ছলে পথ হাঁটছে অনির মতো…
অনিঃ উফফ! দম গুনে হাঁটা এতো কষ্ট… আর কখনোই খেলবো না। (মনে মনে ভাবছে ফিরে যাই)
পিছন হতে ছেলে দু’টোর একজন হঠাৎ হাঁটার গতি বাড়িয়ে দিলো আর অনির পাশে যেতেই দিলো তার কাঁধের ঝুল ব্যাগ ধরে টান… আরেকজন এসে অনিকে ধরেই চেঁচড়ে নিয়ে গেলো পথের অন্য পাশে যেখানে শুধু একটা চিকন গলি, আর পিছন ফিরে তাকালো কেউ দেখেছে কি না!
অর্পা ঠিক ঐ মূহুর্তেই অনির দিকে চেয়েছিল আর ছেলে দু’টোর দিকে তাকিয়েই বুঝতে পারলো কিছু একটা করতে চলেছে…
অর্পাঃ অনিইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইইই! দৌড় দে… (চিৎকার দিয়েই অর্পা দৌড়াতে শুরু করলো অনি’র দিকে)
কাট্…………
হাততালিতে ফেটে পড়ছে প্রোডাকশন বয় থেকে শুরু করে ক্যামেরাম্যান, ডিরেক্টর থেকে শুরু করে লাইটম্যান সহ সবাই…
ডিরেক্টরঃ (অর্পা রূপী) বুশরা কি করলে তুমি! তোমার ঐ চোখ তুলে তাকানো থেকে চিৎকার… অসাধারণ। ওয়াও। এই নিকিতা (অনি তথা অনিন্দিতা রূপী), দারুণ দারুণ এবং দারুণ… সত্যিই কি অতো অমনোযোগী ছিলে না কি যখন ওরা তোমায় টান দিচ্ছিলো??…
এই বুশরা, বুশরা… (হঠাৎ করেই শুটিং স্পটে হাজির বুশরার একমাত্র বন্ধু সাদমান)
তাড়াতাড়ি চল, সর্বনাশ হয়ে গেছে!
বুশরা চকিতেই ঘুরে তাকায় সাদমানের দিকে আর বলেঃ কি’রে তুই এখানে?? কি হয়েছে!!
সাদমানঃ সর্বনাশ হয়েছে রে, নিশাতকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না!
বুশরাঃ মানে কি??? খুলে বল।
সাদমানঃ সাথে যেতে যেতে বলছি, চল তাড়াতাড়ি…
বুশরা আর সাদমান বিদায় নিলো নাটকের শুটিং স্পট থেকে।
পথে-
বুশরাঃ সাদমান, কি হয়েছে নিকিতার…! কিছুইতো বুঝছিনা??
সাদমানঃ নিশাত আর অর্পা ফিরছিলো তাদের ক্লাশ শেষ করে, ওখানেই কিছু একটা ঘটেছে… সন্ধ্যার পরেও যখন অর্পা ফিরেনি তখন ওর মা নিশাতের বাসায় ফোন করেছিলো… তখনি বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে কারন অর্পাও ফিরেনি! পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারে অর্পা হাসপাতালে আছে, কেউ একজন ওকে নিয়ে আসে…
বুশরাঃ !! ক্কিহ্… অর্পা কেমন আছে? নিশাতের ব্যাপারে কিছু বলেছে??
সাদমানঃ অর্পাকে হাসপাতালে নিয়ে আসে তখন তার মাথা থেকে রক্ত বেরুচ্ছিলো, বেশ কয়েক যায়গায় সেলাই করেছে…আর জ্ঞান হারাচ্ছিল বারেবারে!
বুশরাঃ বুঝতে পারছি না অর্পা আর নিশাতের কি হয়েছে, অর্পা কথা বলতে পেরেছে?
সাদমানঃ নাহ্ কিন্তু বিড়িবিড় করে নিশাতের নাম নিচ্ছে শুধু। নিশাতের বাবা পুলিশকে খবর দিয়েছে
হাসপাতালে অর্পার কেবিনে যেতেই-
বুশরাঃ আন্টি!
অর্পার মাঃ মামণি! কি হল বুঝতে পারছি না, অর্পা এদিকে এ অবস্থায় ঐ দিকে নিশাতের খোঁজ নেই…!
বুশরাঃ অর্পা কথা বলেছে আন্টি?
কান্না করতে করতে অর্পার মাঃ তেমন কিছু বলতে পারেনি, ঘুমিয়ে পড়েছে ডাক্তারের দেয়া মেডিসিনে তবে ঘুমানোর আগে বলেছে- সে আর নিশাত ক্লাশ থেকে বেরিয়েই বাস স্টপেজের দিকে আসছিলো, অর্পা একটু পিছিয়ে ছিল আর ঠিক ঐ সময়ে দেখলো নিশাতকে কারা যেনো টেনে নিয়ে যাচ্ছে। সে দৌড়ে ওখানে যেতেই ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় আর অর্পা পড়ে যায় রাস্তার পাশে খাদের দিকে… হাসপাতাল থেকে জানালো এক লোক ওকে নিয়ে এসেছে। পুলিশ তাকে এখন জিজ্ঞাসাবাদ করছে…
দৌড়াতে দৌড়াতে সাদমান আবারো এলো-
সাদমানঃ আন্টি, বুশরা! পুলিশ নাকি একজনকে আইডেন্টিফাই করেছে আর বলছে সেই সব কিছু ঘটিয়েছে! চলুন সেখানে…
বুশরা গেলো অর্পার কেবিনে অর্পার পাশে আর অর্পার মা সাদমানকে নিয়ে পুলিশের কাছে যেখানে পুলিশ অর্পাকে নিয়ে আসা লোকটিকে আটকে রেখেছিলো।
অর্পার মাঃ আপনি আমার মেয়ের জীবন বাঁচিয়েছেন!
উদ্ধারকারী স্মিত হেসে বলেঃ আমি শুরু থেকেই বলেছি আমি নই.
১৪টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
নামের তোড়ে আমি সব তালগোল পাকিয়ে ফেলেছি। একি গল্পের ভেতর গল্প নাকি, সত্যির রূপ নিয়ে গল্প? শেষের লাইনে বেশ রহস্য রেখে দিয়েছেন। উদ্ধারে আপনাকেই করতে হবে।
নীতেশ বড়ুয়া
নাম দিতে চেয়েছিলাম ‘স্বপ্নের মাঝে স্বপ্ন গল্প’/’স্বপ্ন গল্প’ 😛 শেষ লাইনের পরে আর দেখা হয়নি এখনো তাই উদ্ধারে নেমে কিছুই মিলছে না… 😛 🙁
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
সুন্দরের ভিতর সুন্দর -{@
নীতেশ বড়ুয়া
ধন্যবাদ মনির ভাইয়া 🙂
মেহেরী তাজ
তিন বার পড়ে বুঝতে হয়েছে ভাইয়া 🙂 বুঝতে পেরে ভালো লাগছে -{@
নীতেশ বড়ুয়া
হাহাহাহা… তিনবার পড়েছেন! বাপরে!!! আমি নিজে লিখে একবারও পড়িনি… অনেক অনেক ধন্যবাদ… (3 -{@ \|/ :T
হৃদয়ের স্পন্দন
বেশ কয়েকবার পড়লাম তবু বুঝলাম না ;(
নীতেশ বড়ুয়া
হিহিহিহ… একতার সাথে আরেকটা রিলেটেড… প্রথম টি নাটকের গল্প, ‘কাট’ বলার সাথেই সাথেই সেই গল্পের সাথে বাস্তবের ঘটনার মিল এবং কিভাবে বা কি করে ফিরে এলো তা সেই শুরু দিকের গল্পের হারিয়ে যাওয়ার মাঝেই যোগসূত্র আছে… অনেকটা ঘটতে যাওয়া ঘটনার চিত্রায়ণ হয়েছে শুরুতে নাটক হিসেবে… 😛
স্বপ্ন নীলা
গল্পের শেষের দিকে বেশ রহস্য রয়ে গেল—-
নীতেশ বড়ুয়া
অদ্ভূতুরে রহস্য… শেষ কি হয়েছে নাকি হবে!
সাইদ মিলটন
বাঃ দারুন নীতেশ 🙂
নীতেশ বড়ুয়া
ধন্যবাদ 🙂
জিসান শা ইকরাম
ভালো হৈসে 🙂
নীতেশ বড়ুয়া
^_^ থ্যাঙ্কিয়ু ^_^