জিজ্ঞেস করলাম, তোমরা বাংলাদেশকে কেন মুঞ্জালা বলো?
উত্তরে যা বললো তা হলো, ওদের দেশে বাংলাদেশকে ওরা মুঞ্জালা নামেই চিনে, আমরা ওদের থেকে বিদায় নিয়ে নিজ রুমে এলাম, নির্ঘুম সারা রাত্রির যত ঘুম সব এক হয়ে আসছে আমাদের চোখে, দুজনের জন্য টুইন বেড আছে, যার যার বেডে শুয়ে দুজনে সিগারেট ধরিয়ে কিছুক্ষণ গল্প গুজব করে ঘুমিয়ে পড়লাম, এক ঘুমেই বিকেল হয়ে গেলো।
বিকেলে দুজন বেড়িয়ে এলাম হোটেল ছেড়ে, এদিক সেদিক ঘুরতে লাগলাম দুজনে, ঘুরে ফিরে সন্ধ্যার পরে ফিরে এলাম হোটেল রুমে, ঘণ্টা খানেক পর ইস্টেফেন এলো দেখা করতে, আগামীকাল যাবো আমরা ক্যান্টন ফেয়ার কেন্দ্রে, কিছু ব্যবসায়ীক কথাবার্তা শেষে তিনজনই বেরুলাম খাওয়ার উদ্দেশ্যে, ইস্টেফেন বললো হোটেলের রেস্তোরা পুরা ফিলাপ হয়ে আছে, এর চেয়ে বেটার নিচের কেএফসিতে যাওয়া, এইবার কেএফসিতে ইস্টেফেন আমাদেরকে খাওয়ালো, আমি নিলাম চিকেন বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, পেপসি, সিইও নিলো রাইস, চিকেন মাসরুম, মিনারেল পানি, ইস্টেফেন নিলো পর্কের একটা আইটেম, খাওয়া দাওয়ার পর্বে ইস্টেফেনকে জিজ্ঞেস করলাম ফেয়ারে যাওয়ার পদ্ধতি, ইস্টেফেন আমাদেরকে টেক্সি ক্যাব নিতে বললো যদিও হোটেলের লাগোয়া আন্ডারগ্রাউন্ড ট্রেন আছে কিন্তু কিছু সুবিধার কারণে আগামীকাল টেক্সি ক্যাব নেওয়ায় শ্রেয়।
পরদিন সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে দুজনেই রেডি হয়ে নিচে নামলাম, ব্রেকফাস্ট করে একটা টেক্সি ক্যাব নিয়ে ক্যান্টন ফেয়ার প্রাঙ্গণে এলাম, টেক্সি ছেড়ে দুজনে প্রবেশ করলাম মেইন প্রবেশ দ্বারে, কয়েকজন ফেয়ার কর্মকর্তা আমাদের পথ দেখাতে লাগলো, প্রথমে আমাদের ছবি তুলতে হলো অটোমেটেড ক্যামেরায়, ছবি তোলার এক মিনিটের মধ্য ছবি দিয়ে আমাদের আরেকটা পথে এগুতে বললো, আমরা নির্দেশিত পথে এগুলাম, এক বড় হল রুমে উপস্থিত হয়ে অবাক হলাম সারি সারি টেবেল দেখে, যেখানে প্রচুর ফেয়ার কর্মকর্তা আগত অতিথিদের হেল্প করছে, আমরা দুজন দুই টেবিলে গেলাম যেখানে আমাদের থেকে ছবি, পাসপোর্ট নিয়ে দ্রুত কম্পিউটারে সব ডিটেইলস নিয়ে আমাদেরকে আইডি কার্ড দিলো, আইডি কার্ড দিতে পাঁচ মিনিটও লাগলোনা ওদের, কোন ধাক্কাধাক্কি হলোনা, অথচ হলরুমে আগত অতিথি ঐ মুহুর্তে হাজারের উপরে হবে, আমরা এগিয়ে গেলাম মেলার কেন্দ্রের উদ্দেশ্যে, যেখানেই দরকার কার্ড দেখেই পথ দেখিয়ে দিচ্ছে ওরা।
আমরা খেয়াল করলাম ফেয়ার বা মেলার মেইন বিল্ডিংয়ে নিচের গেইট দিয়ে কম প্রবেশ করছে আগতরা, বেশির ভাগ সামনের সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে যাচ্ছে, আমরাও সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠে গেলাম, উপর তলায় সেকি মহাযজ্ঞ, বিভিন্ন ধরণের আইটেম দিয়ে সাজানো, বিভিন্ন ধরণের টেক্সটাইল মেসিন, বড় বঅঅড় আইস্ক্রিম মেসিন, প্রিন্টিং মেসিন, খাবার (ফুড) প্রসেসিং মেসিন, বাথরুম ফিটিংস, শাওয়ার মেসিন, সিরামকস আইটেমস ও কাটলারিজ, বিভিন্ন ধরণের মোটর বা পানির পাম্পযন্ত্র ইত্যাদি।
আমরা হেটে হেটে বিভিন্ন আইটেম ঘুরে ঘুরে দেখছি, এক পর্যায় দ্বিতীয় বিল্ডিং এসে পড়লাম, দ্বিতীয় বিল্ডিংয়ের এপাশ থেকে ওপাশ যাওয়ার জন্য ব্যাটারিচালিত গাড়ী আছে যা প্পেসেঞ্জার তুলে এগুচ্ছে লাইন ধরে অপর পাশে নামিয়ে দিয়ে আবার ঘুরে ফিরে আসছে, অপর বিল্ডিংয়ে এসে দেখি বিভিন্ন ধরণের বিয়ারিং, পার্টসের শো হচ্ছে, আমরা সব স্টলে কিছুক্ষণ থামছি, দেখছি ক্যাটালগ নিচ্ছি, আমাদের ভিজিটিং কার্ড দিচ্ছি, এই করতে করতে আমরা ধরলাম নিচে যাওয়ার পথ, নিচেও প্রচুর আইটেমের স্টল দেখলাম, ক্যান্ডি, চকলেট ইত্যাদির মেশিনারি দেখলাম, দেখলাম।ক্ষুদ্র শিল্পের মেশিনারি, গার্মেন্টস এবং ঘরে ইউজের সেলাই মেসিন, ইলেক্ট্রনিকস আইটেম, মোবাইল ফোন সহ ইত্যাদির স্টল গুলো ঘুরে ঘুরে দেখলাম, আমরা যা দেখেছি তা হলো পুরা মেলার ১০% মাত্র, তাহলে বুঝুন কত বড় এই মেলা প্রাঙ্গণ, এই মেলায় এমন কিছুই নেই যা নেই, এইখানে ক্ষুদ্র শিল্প থেকে শুরু করে বৃহত শিল্পের সব মেসিনারিজ আছে, আছে আপনার জীবনে প্রতিদিনের দরকারি সকল জিনিষ আপনি নিজে দেখে দেখে অর্ডার করতে পারবেন, এরপর ইম্পোর্ট করে নিয়ে যআআন নিজ দেশে, চাইলে এজেন্সিও নিতে পারেন এইখানেই বসে।
চলবে।
২১টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
মেলায় যেতেই হবে একবার। নতুন কিছু একটা করব আমি, কি করব জানিনা, সুধু জানি আমার জন্য এপ্রোপিয়েট মেশিনারীটা দেখলেই আমি চিনে ফেলব।
ভাল লিখছেন ভাইজান
শুভ কামনা -{@
মোঃ মজিবর রহমান
ভাইজান, অল্প টাকায় কি করা যায় জানাবেন কি??? চাকরী জিবনে কোটার মত সীমিত।
ইঞ্জা
মজিবর ভাই, ছোট খাটো ব্যবসা করতে চান তাহলে আগে ক্যাপিটাল কি তা রেডি করুন, এরপর বলুন আমি পথ দেখিয়ে দেবো, যা সিউর শর্ট হবে। 🙂
ইঞ্জা
ভাইজান যা করবেন দ্রুত করেন, ইনভাইটেশন নিয়ে আনান, এখন ভিসা সেন্টারে প্রচন্ড ভীড় থাকবে ফেয়ার উপলক্ষে, যান ঘুরে আসুন, আপনি একবার ঘুরে আসলেই আপনার চোখ খুলে যাবে, ভাবতে পারবেন ভবিষ্যত কর্মপন্থা। 🙂
ছাইরাছ হেলাল
বিশালত্ব কল্পনাকে হার মানাচ্ছে,
এত দেখে বলছেন দশ ভাগ ও না!!
ভাবতে পারছি না।
ইঞ্জা
জ্বি ভাই, এর বিশালতা এতো বেশি কমছে কম পনেরো দিন ঘুরতে হবে এর সব কিছুই দেখার।
উপরে জিসান ভাইজানের প্রশ্নের উত্তর দেখুন তাহলে বুঝবেন এইখানে কি করা যাবে। 🙂
মৌনতা রিতু
ওরা কেনো আমাদের দেশকে এই নামে চিনে? আমি প্রথম জানলাম এটা। যে কোনো দেশের সিস্টেম এরকম হওয়া উচিৎ। সময় একটা বড় ব্যাপার। সময়কে কাজে লাগাতে না পারলে কখনোই উন্নতি সম্বব নয়। আমাদের দেশে এক ট্রেনের টিকিট কাটতেই দিনের অর্ধেকটা সময় চলে যায়।
মেশিন জিনিসটা আমার কাছে সব সময়ই বিস্ময় মনে হয়।
ভালো লাগছে পড়ে।
ইঞ্জা
আন্তরিক ধন্যবাদ আপু, চায়না হলো বিস্ময়ের দেশ, এই দেশে না ঘুরলে বুঝবেননা এরা কতো দ্রুত চিন্তাভাবনা করে এবং দ্রুত সব কিছুই করে।
মোঃ মজিবর রহমান
পড়ে জানলাম। মুঞ্জালা বলে কেন আমাদের দেশকে?? কি বিশাল চিন্তা যে ১০% দেখলেন মেলার।
পরের পরবের অপেক্ষার রইলাম।
ইঞ্জা
মুঞ্জালা মানে আগামী পর্বে পাবেন ভাই।
এর বিশালতা দেখে আমিই তব্ধা খেয়ে গেছি, এই ফেয়ার সম্পূর্ণ দেখতে হলে আমার মতে পনেরো দিনের জন্য প্রোগ্রাম করা উচিত।
তৌহিদ ইসলাম
জীবনে একবার হলেও চায়না যাব ইনশাআল্লাহ। লেখা পড়ে ভালো লাগছে দাদা। আমারো নিজে কিছু কিরার ইচ্ছে আছে। কিন্তু ক্যাপিটাল কম। দেখি আপনার সাথে পরামর্শ করবো ইনশাআল্লাহ।
ইঞ্জা
ভাই ব্যবসার জন্য চিন্তা করবেন, স্বাভাবিক ভাবে মাথায় আসবে চায়নার কথা, ২০০৮ এ যখন আমরা প্রথম চায়নার ডংফেং আনি তখন ক্যাপিটাল ছিলো মাত্র পঁয়ত্রিশ লক্ষ যা এখন প্রায় বিশ কোটির উপরে হয়েছে, যে কোন হেল্প লাগলে বলবেন প্লিজ।
তৌহিদ ইসলাম
আমার ব্যবসা করার ইচ্ছে নেই তবে সমাজের জন্য কিছু করার ইচ্ছে আছে,পরিকল্পনাও আছে। আপনাকে সব বলবো ইনশাআল্লাহ।
মায়াবতী
ভাইয়া অনেক কিছু জানলাম, আপনি একজন অভিজ্ঞতার ভান্ডারি মাশাল্লাহ, আরো লিখুন আরো জানতে চাই , কিন্ত জানতে জানতে মানুষ নাকি এক সময় জানোয়ার হয়ে যায় ! সত্যি নাকি কথা টা ??? -{@
ইঞ্জা
আপু অভিজ্ঞতার ভান্ডার অবশ্যই নই আমি, আমি প্রতিবারই শিখি, জীবনে চলার পথে শিখার কি কোন শেষ আছে?
জানোয়ার হয় কে বলেছে, আমি কখনো শুনিনি 😮
নীলাঞ্জনা নীলা
নাহ চায়না যেতেই হবে। মেলার সময় যাওয়া হবে কিনা জানিনা। তবে যাবো তো অবশ্যই।
হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া আবার কবে যাবেন মেলায়? 😀
ইঞ্জা
আপু কখনো চায়না যেতে চাইলে আপনি কি কি দেখতে চান তা আগে যেনে নিন, নির্দিষ্ট প্রদেশ কোনটা জেনেই তারপর যান, কারণ এই দেশ কিন্তু বিশাল একটি দেশ।
আপু এই মেলায় আমি প্রায় পাঁচবার গিয়েছি, ফলশ্রুতিতে আর যাওয়ার দরকার পড়বে বলে মনে হয়না, কিন্তু চায়না মনে হয় এই বছর যাবো। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া হুম জানি। আমি গেলে সাংহাইতেই যাবো। তরুণ ওখানেই যায় গত দু’বছর ধরে পাঁচ সপ্তাহের জন্য আমন্ত্রিত শিক্ষক হয়ে।
শুন্য শুন্যালয়
কেএফসিতে আগে রাইস পাওয়া যেতো নাকি 😮 নাকি এটা দেশ ভেদে আলাদা?
দারুন লাগে ভ্রমণের গল্প পড়তে। কিপিটাপ। 🙂
ইঞ্জা
কি বলেন আপু, রখন তো দেশেও পাওয়া যাচ্ছে, আমি তো চায়না, ভারত সহ বেশ কয়েকটি দেশে পেয়েছি।
ধন্যবাদ আপু।
শুন্য শুন্যালয়
হু এটা চাহিদা ভেদে তবে আলাদাই, কারন অস্ট্রেলিয়াতে রাইসের কোন আইটেম নেই কেএফসিতে। চায়না, ভারত, বাংলাদেশ ভেতো যে 🙂