আমার ব্যবসায়ীক জীবনের শুরু থেকেই বিভিন্ন জনের কাছে ক্যান্টন ফেয়ার এই শব্দটি শুনতাম, কিন্তু কখনো জিজ্ঞাসা করিনি কি সেইটা, খায় নাকি মাথায় দেয়?
চায়নার সাথে ব্যবসা করতে গিয়ে আবার শুনলাম ক্যান্টন ফেয়ারের কথা, ২০১০ সালে ইস্টেফেন, আমাকে এবং আমার কোম্পানি সিইওর জন্য সরাসরি ইনভাইটেশন পাঠিয়ে দিলো, যেতেই হবে এইবার, সিইও রাজী, প্ল্যান হলো প্রথমে ক্যান্টন ফেয়ার এটেন্ড করবো, এরপর যাবো চংকিং, সেইভাবেই এয়ার টিকেট কনফার্ম করা হলো, ইস্টেফেনরা যে হোটেলে থাকবে সেই হোটেলে আমাদের জন্য রুম রিজার্ভেশন করে দিলো ইস্টেফেন।
ক্যান্টন ফেয়ার, এ এক বিশাল যজ্ঞ, সেপ্টেমবরের শেষের দিকে শুরু হয়, শেষ হয় অক্টোবরের মাঝ বরাবর, যদিও বছরের প্রায় প্রতি মাসেই ক্যান্টন ফেয়ার চলে, যা স্বল্প পরিসরে হয়, হয়ত কোন মাসে সিরামিকসের হয় তো অন্য মাসে হয় টয়লেট এসেসরিজের, কিন্তু সেপ্টেম্বর – অক্টোবর মাসে হয় বিশাল পরিসরে, এইসময় চায়নার এমন কোন পন্য নেই যা এই ফেয়ার বা মেলায় শো করতে আসেনা, এই মেলাকে কেন্দ্র করে দেশ বিদেশের প্রচুর ব্যবসায়ীরা আসে, এই ফেয়ার হয় চায়নার গুয়াংজুতে, এই সময় গুয়াংজুর সকল হোটেল, ফ্ল্যাট ভরপুর থাকে, ফলশ্রুতিতে এই সময়েই সকল হোটেল, ফ্ল্যাটের প্রতিদিনের ভাড়া থাকে তিন চার গুণ বেশি।
অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে আমরা দুজন গুয়াংজুতে, মধ্যরাতের ফ্লাইট থাকায় গুয়াংজুর ভোরবেলায় পোঁছালাম আমরা, বিশাল এয়ারপোর্ট দেখে অভিভূত না হয়ে পারলামনা।
সিইও সাহেব লোকাল সিম কিনতে চাইলে আমি বাধা দিলাম, কারণ এয়ারপোর্ট থেকে না নিয়ে বাইরে থেকে বুঝে শুনে নেওয়া যাবে সময় করে।
এয়ারপোর্ট টেক্সি ক্যাব নিলাম আমাদের জন্য নির্ধারিত হোটেলের উদ্দেশ্যে, হোটেলে পোঁছে আমাদের রুম প্রবেশ করে গোসল নিয়ে ফ্রেস হয়ে শেষে নিচে আসলাম ব্রেকফার্স্ট করতে, ফ্রন্ট ডেস্কে জিজ্ঞেস করলাম কোথায় ব্রেকফাস্ট করবো?
যা বললো শুনে ভিরমি খেলাম দুজনে, একি বিল্ডিংয়ের পাশেই আছে কেএফসি, সেখানেই প্রতিদিন ব্রেকফাস্টের ব্যবস্থা আছে যা কম্পলিমেন্টরি, হোটেলের নিজস্ব রেস্টুরেন্ট আছে ৩য় তলায় যাতে শুধু লাঞ্চ ডিনার খাওয়া যাবে যা আবার অথেনটিক চায়নিজ খাবার, শুনে দুজনেরই মন খাট্টা হয়ে গেলো, জিজ্ঞেস করলাম, ডিএফএসকের ইস্টেফেন কি আছে রুমে, চেক করে বললো ওরা ঘন্টা দুয়েক আগে ফেয়ারের উদ্দেশ্যে বেরিয়ে গেছে।
আমরা দুজন বিরসবদনে বেরুলাম, পাশের কেএফসিতে গেলাম ব্রেকফাস্ট করার জন্য, অর্ডার দিতে গেলাম, ইংরেজিতে বললাম ব্রোস্ট চিকেন দাও, কফি দাও, আমার সামনের কেএফসির মেয়েটা বললো, নি-হাউ (শরীলডা ভালা), নো ইংলিশ।
আমি হা হয়ে গেলাম, বলে কি ইংরেজি জানেনা!
আমার সিইও ব্যাটা কয়, তার ভাত হলে ভালোই হয় (ঐ শালা আবার খ্যাত কিনা)।
আমি ছবি দেখতে লাগলাম, চিকেন পেয়ে দুইটা চিকেন, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, কোক, কফি নিলাম, সিইওর জন্য খুঁজে পেতে যা পেলাম, ফ্রাইড রাইস সাথে মাংস, কিসের মাংস প্লিজ জিজ্ঞেস কইরেননা, আমি আজ পর্যন্ত ছুঁয়ে দেখিনি ভয়ে, যদি পর্ক (শুয়োরের মাংস) হয় তো মরছি, উনার জন্যও কফি নিলাম।
সিইও খেতে খেতে মজা মজা বলছে, এক পর্যায় জিজ্ঞেস করলো এই মাংস কিসের?
আমি অভয় দিলাম, কেএফসিতে গরুর বস মুরগীর মাংস ছাড়া আর কি থাকবে? :p
দুজনে খেয়ে উঠলাম নিজ রুমে যেতে, ফ্রন্টডেস্কে জিজ্ঞেস করলাম, আসেপাশে ব্যাংক আছে কিনা, ফ্রন্ট ডেস্কের মেয়েটি ইংরেজি জানেনা বিধায় ডেকে দিলো হোটেলের মহিলা মালিককে, উনি এসে ইংরেজিতে জিজ্ঞেস করলেন কোথা থেকে এসেছি?
বললাম বাংলাদেশ থেকে।
সেই বেটি বলে কিনা, মুঞ্জালা?
মুঞ্জালা কি?
বললো, তোমার দেশ মুঞ্জালা।
আমরা অবাক, বললাম আমাদের দেশের নাম মুঞ্জালা নয়, বাংলাদেশ, বাংলাদেশ।
সে বললো, তোমাদের দেশকে আমরা মুঞ্জালা বলি, বুঝেছো?
হরে বইন বুঝছি, আমরা মুঞ্জালা থেকে এসেছি। ;(
চলবে।
২০টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
হ ভাই, আমরা মুঞ্জালা!!
তবে ওরা ইংরেজি না জেনেও যেখানে পৌছেছে তা সত্যিই বিস্ময়কর।
ইঞ্জা
হ ভাই আমরা মুঞ্জালা :D)
খুবই সত্য বলেছেন ভাইজান, এর জন্য চায়নার রাজনীতিবিদদের শাবাশি পাএয়া উচিত।
জিসান শা ইকরাম
ক্যান্টন ফেয়ারের নাম আমিও শুনেছি অনেক। গত বছর তো ইনভাইটেশন পাঠাবে কিনা এই প্রশ্ন করেছে কমপক্ষে চায়নার ১০ টা কোম্পানী।
যাওয়া হয়নি একবারও, আপনার সাথে একবার এই ফেয়ারে যাবার ইচ্ছে পোষণ করলাম।
যাবেন নাকি ভাই আগামী অক্টোবরের ফেয়ারে?
ভ্রমন কাহিনী আসলেই ভাল হয় আপনার,
মুঞ্জালা বলে কেন আমাদের? ের অর্থ কি?
ইঞ্জা
ভাই আমি যায় আর না যায়, আপনি একবার ঘুরে আসুন সামনের ফেয়ারে, নিজের অভিজ্ঞতার ভান্ডার আরো বাড়ান, কি দরকার আপনার যা ওই ফেয়ারে পাবেননা, সবই পাবেন।
মুঞ্জালা, ওরা কেউ বলতে পারলোনা কেন বাংলাদেশকে মুঞ্জালা ডাকে, কিন্তু আপনি বাংলাদেশ থেকে এসেছেন তা শুনে ওরা দেশটা না চিনলেও মুঞ্জালাকে ওরা ভালো করেই চিনে। :D)
জিসান শা ইকরাম
দেখি আগামী ফেয়ারেই যেতে পারি কিনা।
ইঞ্জা
যান ভাইজান ঘুরে আসুন, এ এমন এক মেলা যা মিস করা উচিত নয়।
জিসান শা ইকরাম
ভাইসাব এটিও ‘ চীন ভ্রমনঃ পর্ব………… / ক্যান্টন ফেয়ার ‘ এভাবে শিরোনাম দিতে পারতেন।
ইঞ্জা
ভাইজান, দিতে চেয়েও দিই নাই, কারণ ক্যস্নটন ফেয়ার সম্পর্কে অনেকেই জানতে চাই।
শুন্য শুন্যালয়
গালি দিয়ে খ্যাত বললেন? আমার একসময়ের প্রিয় সকালের নাস্তা, গরম ভাত আলুভর্তা, ডিম ভাজি। এখন কপালে জোটেনা বলে 🙁
এতো ইংরেজি জেনে হবেটা কি!! চায়নাতেই চলে যাবো, দুরছাই। মুঞ্জালার দেশের মানুশরা কিছুতেই হ্যাপি হয়না 🙁
ইঞ্জা
আপু খ্যাত বলার কারণ আছে, আমার কথা হলো যে দেশ সেই বেশেই থাকা ভালো, আমি অনেককে বলতে শুনেছি বিদেশে গিয়ে ভাত না পেয়ে উপোষ করেছে, কিন্তু তারা চাইলে লোকাল ফুড খেলে আনন্দও পেতো উপোষও করতে হতোনা, এদেরকে খ্যাত না বলে কি বলবো বলুন?
জ্বি আপু চায়নাতেই চলে যান, ওখানে ভাত পাবেন সিউর, আলু ভর্তা পাবেন কিনা সন্দেহ আছে। 😀
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
মুঞ্জালা নামটি কিন্তু শুনতে বেশ!
চালিয়ে যান (y) -{@
ইঞ্জা
উগান্ডা বলেনি এই তো অনেক ভাই। :D)
তৌহিদ ইসলাম
মুঞ্জালা শব্দের মানে কি ভাই? পরের পর্বে আরও বিস্তারিত জানতে পারবো ক্যান্টন ফেয়ার সম্পর্কে আশাকরি।
ইঞ্জা
বাংলাদেশকে ওরা লোকালি মুঞ্জালা নামে ডাকে। :D)
জ্বি আগামী পর্বে আরো অনেক কিছুই ডিটেলস আসবে ভাই।
মায়াবতী
ভাইয়া চায়না ভ্রমণ টা শেষ করে আবার ও চায়না ভ্রমণ শুরু করে দিলেন ! বুঝলাম না তো কিছু ? এই চায়না কোন চায়না ? মুঞ্জালা বইলা যদি বাংলাদেশ রে উনারা ডাকে তাইলে এই চায়না ভ্রমণ রে চুঙালা ভ্রমণ ও কইতে পারি * কি কন ভাই সাব :p
ইঞ্জা
😂 চুঙালা ভ্রমণ :D)
আপু, আল্লাহ্র অশেষ রহমতে অনেক সিটি, অনেক দেশ ঘুরেছি, সব গুলোর আলাদা বিশেষত্ব আছে, এই কারণেই এই ভ্রমণের নাম দিলাম ক্যান্টন ফেয়ার।
নীলাঞ্জনা নীলা
ক্যান্টন ফেয়ার এই প্রথম শুনলাম নামটা।
‘মুঞ্জালা’ বলে আমাদের দেশকে? হ্যান্ডপাম্প ভাইয়া ওদেরকে চ্যাঙদোলা করে নিয়ে আসুন তো আমার কাছে। তারপর ওদের মুঞ্জালা বের করছি।
ইঞ্জা
ক্যান্টন ফেয়ার, বিশ্বের সব চাইতে বড় ফেয়ার, এই ফেয়ারে এমন কোন প্রডাক্ট নেই যা আপনি দেখবেননা, বেড বালিশ থেকে শুরু করে নিত্যব্যবহার্য সকল কিছুই আছে, আবার যত প্রয়োজনিয় জিনিষ আছে বা ব্যক্তি জীবনে যা দরকার সব কিছুই আছে, গাড়ী আছে, নির্মাণ সামগ্রী আছে, জিজ্ঞেস করুন কি নেই, সবই আছে, কিন্তু এক্সপোর্ট আইটেম সব, নিজের জন্য কিনবেন এক পিছ দুই পিছ, হবেনা।
আসলে আপু কয়জনকে আনবো, ওরা সবাই যে বাংলাদেশকে মুঞ্জালা নামেই চিনে।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভাইয়া তাহলে তো ক্যান্টন ফেয়ারে গিয়ে লাভ নেই। তরুণের পকেটই যদি হাল্কা করতে না পারি! 😀
ইঞ্জা
:D)
আপু, ভাইয়ার পকেট হাল্কা করতে চাইলে যাবেন চংকিং, যাবেন গুয়াংজু, যাবেন সাংহাই, তাহলেই না কিছু হবে। :D)