কোথাও কেউ নেই,শুধু আমি আর- হরর

মেহেরী তাজ ১৬ অক্টোবর ২০১৫, শুক্রবার, ১১:১৪:৩২অপরাহ্ন গল্প ৬৪ মন্তব্য


বাড়ি থেকে হোস্টেলে এসেছি বেশ কিছুদিন হলো! আমার রুমমেট দের ও আসার কথা ছিলো আমার সাথে একই দিনে। কিন্তু কি যেনো কারনে কেউই আসে নাই আজ প্রায় নয় দিন হলো।শীত ও পড়েছে বেশ। বেশি মানুষের উপস্থিতি উষ্ণতাকে বাড়িয়ে দেয় কয়েক গুন। শীতের জন্য আমাদের ফ্ল্যাটের মেয়ে সংখ্যা বাড়ছে না বরং কমছে। সন্ধা নামার পর থেকেই কানে ইয়ার ফোন লাগিয়ে গান শোনা আর হাতে হুমায়ন আহম্মদ বা হেনরী রাইডার আবার কখন ও স্টাডি বুক নিয়ে শিমুল তুলার লেপের নিচে আশ্রয় নেই।রুমের চারটা বাল্বই জ্বালিয়ে দেই রুম গরম করার জন্য। কিন্তু আজ সামান্য ব্যতিক্রম হয়েছে। একটা জানালা সামান্য খুলে রেখেছি। যার ফলে ঠান্ডা বাতাস এর সাথে সাথে রুমে অনেক পোকাও ঢুকেছে।

একটা গল্পের বই আমার হাতে। সেটা পড়তে পড়তে কখন যে ১১:৩০ মিনিট পার হয়ে গেছে সে খেয়ালই করি নাই। ভাবলাম অনেক রাত হয়েছে এবার বরং জানালাটা লাগিয়ে ঘুমিয়ে যাই। কিন্তু দেখতে পেলাম দরজার ছিটকানি লাগাতে ভুলে গেছি । দরজার ছিটকানি টা তুলে দিতেই পেছনে কি যেনো কাঁচের একটা জিনিস পড়ে ভেঙ্গে টুকরা টুকরা হয়ে যাওয়ার শব্দ পেলাম। কিন্তু আমার জানা মতে কাঁচের কোন জিনিস আমাদের রুমে নাই শুধু জানালার কাঁচ ছাড়া। পেছনে তাকানোর সাহস হারিয়ে ফেললাম।ভয়টা কাটিয়ে ওঠার জন্য নিজেকে কয়েক মিনিট সময় দিলাম।এর মাঝেই ছিটকানিটাও তুলে দিলাম।আস্তে আস্তে ঘুরে পেছনে তাকালাম। মেঝেতে পড়ে থাকা ভাঙ্গা বাল্বের সেড এর টুকরা গুলো দেখে বুকের মাঝে চেপে রাখা নিশ্বাস টা হুস করে ছেড়ে দিলাম।কাঁচ থেকে পা বাঁচিয়ে এবার জানালার পাল্লাটা লাগালাম। এবার কাঁচের দিকে ঘুরেই একটা ধাক্কা মত লাগলো।টলতে টলতে নিজের বিছানাই এসে ধপ্ করে বসে পড়লাম। আশ্চর্য এখানে রক্ত এলো কি ভাবে?? আর বাল্ব টাই বা অক্ষত কেনো???

এসব ভাবতে ভাবতেই সব গুলো বাল্ব নিভিয়ে লেপের নিচে ঢুকলাম। আর নিজেই নিজেকে চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিলাম। ” আজ শুক্রবার, তুমি পারবে ভুত এফ এম শুনতে? ” ভয় আমি পাই না সেটা প্রমান করতেই ভূত এফ এম শোনা শুরু করলাম। একটা গল্প শুনলাম সেটার মূল কাহিনী হলো” রাতের বেলা কে যেনো খুব ভারি আর ধারালো চাকু নিয়ে পা টেনে টেনে ছাদে হাটে”। এটাতে ভয় পাওয়ার বিশেষ কিছু নাই। কিন্তু স্টোরির সাথে সাথে তারা যে সাউন্ড টা এড করে তা মোটামুটি সাইকো মুভির অট্ট হাসি হয়ে থাকে যা শুনে রক্ত জল হয়ে যাবার উপক্রম হয়। এবার পরের গল্পটা শুরু হওয়ার আগেই আর জে কয়েক বার করে বলে দিলো এটা আগের টার চেয়ে কয়েক’শ গুন বেশি ভয়ংকর। অতএব আমার মন, প্রাণ,অন্তর আত্মা, দেহ এবং চোখ সবায় বলছে” তাজ এটা ঘুমের সময়, দেখ তোর খুব ঘুম পাইছে। ঘুমের চেয়ে বড় এই দুনিয়াই কিচ্ছু নাই”। আমি সবাই কে উপেক্ষা করে তো আর ভূতগপ্প শুনতে পারি না। তাই ভাবলাম এই গল্প টা আমি রেকর্ড করে পরে শুনতে পারি। তাই রেকর্ডার চালু করে কান থেকে হেডফোন খুলে পাশে রেখে দিলাম। চোখ বন্ধ করে ঘুমানোর চেষ্টা করতে লাগলাম কিন্তু বেশ কয়েক মিনিট পার হয়ে গেলেও ঘুম আসছে না।কি যেনো একটা অস্বস্তি অনুভব করছি। কিন্তু সেটা ধরতে পারছি না। এপাশ ওপাশ করতে করতে যখন বুঝে ফেলেছি তখন আমার মনে হচ্ছিলো একটা ঠান্ডা কি যেনো আমার শিরদাঁড়া বেয়ে নিচে নেমে গিয়ে পায়ে আশ্রয় নিচ্ছে। কারন আমি পা নাড়াতে পারছি না। আমার রুমের কোথাও যেনো শক্ত হাড় চিবানোর শব্দ পাচ্ছি। মন থেকে সব ভয় দূর করে ( ডাহা মিথ্যা কথা,ভয়ে আমার মরে যেতে ইচ্ছে করছিলো) উঠে বিছানা থেকে পা নামিয়ে বসলাম। এবার আস্তে আস্তে অন্য একটা বিছানার পাশে গিয়ে দাঁড়ালাম। রাত ১ টা বাজে। এই সময় ফ্ল্যাটের সব্বাই কে ডেকে একটা কেলেঙ্কারী করতে চাই না। এমনিতেই এখানে সবাই ভূতের ভয়ে রাতে টয়লেট যায় না। কি হচ্ছে সেটা নিজেই দেখতে চাই। ভয়ে ভয়ে একটা আলো জ্বালালাম নিমিষেই সব বন্ধ হয়ে গেলো। আবার আলো নিভালাম কয়েক সেকেন্ড বাদের আবার সেই শব্দ। এভাবে বেশ কবার দেখার পর আমার নিজের বিছানাই ফিরে এসে লম্বা হয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।

পরদিন সকালে ঘুম ভাঙলে যেটা আমার সবার আগে মনে হয়েছে সেটা হলো ফোনের রেকর্ড টার কথা। সেটা শুনতে গিয়ে শো শো শব্দ ছাড়া অন্য কিছুই পেলাম না।

# একটা আমার সাথে গতবছর শীতে ঘটে যাওয়া সত্যি ঘটনা। একবছর পর তা গুছিয়ে লেখার ধৈর্য, সাহস এবং সময় পেলাম।

উত্তর :
১। কারেক্ট এর ভোল্টেজ হঠাৎ বেশি আসার জন্য এবং বাল্বটা অনেকক্ষণ ধরে জ্বলছে বলে সেটা সেড সহ হোল্ডার থেকে ছিটকে এসে প্রথমে টেবিলের উপর পড়েছে তারপর লাল কালার নেইলপালিশটা কে নিয়ে নিচে পড়েছে। নেইলপালিশ টা টেবিলের পাশেই আটকে গেছে। সেড এর কাজ বাল্ব কে রক্ষা করা,শেষ পর্যন্ত সেড তার কাজ করেছে।

২। আমি আগেই বলেছি রুমে অনেক পোকা ঢুকেছে এবং আমাদের জানালাটা কাঁচের । জানাল বন্ধ করে বাল্ব অফ করাতে পোকা গুলো জানালা দিয়ে আলো আসছে দেখে পালানোর চেষ্টা করেছে শেষ পর্যন্ত যার ফলে কাঁচে বারি খেয়েছে। এবং ফল হাড় চাবানোর শব্দ পেয়েছি।

৩। কান থেকে ইয়ার ফোন খুলে রাখলে ফ্রিকুয়েন্সি ঠিক থাকে না। তার ফল শো শো শব্দ।

১৭৮৩জন ১৭৮২জন
0 Shares

৬৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ