আমার শৈশবের পুরোটা সময় কেটেছে চট্রগ্রামের লালখান বাজারে । চারিদিকেই ছিলো পাহাড় । রাস্তার বিপরীতে নানুর বাসা । ক্লাস ওয়ান এ পড়ার সময় শীতকালে বাধ্যতামূলক জগিং এ বাটালি হিলে যেতে হতো নানার সাথে , সঙ্গী ছিলো একক্লাস বড় ছোট মামা ।
ছোট মামা অদ্ভুৎ এক আবেগী মানুষ । শুক্রুবার ভোরে দুজনে চলে যেতাম মেহেদিবাগের ভেতরে A K KHAN এর প্রপার্টির পেছনের পাহাড়ে । ওই খানে অনেক গুলো বট বৃক্ষের সাথে পাঁচ ফিট উচ্চতার ভেতরে ফাঁপা একটা গাছের গুড়ি ছিলো । প্রতিবার আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু ছিলো এর ভিতর দিয়ে নেমে গেলে হয়তো আমরা অন্য এক দেশে গিয়ে উপস্থিত হবো…হাজারো জল্পনা-কল্পনা সেই গাছ নিয়ে…..ওখান থেকে ঘুরে এসে মুকুল খালার বাসায় নাস্তা করাটাই ছিলো সবচাইতে লোভনীয় অংশ….নসিলা দিয়ে ব্রেড আর ঠান্ডা দুধে মেশানো কনফ্লেক্স আমাকে টানতো বেশী ।
দুপুর বেলার রুটিন ছিলো পুলিশ লাইনের গেটের মুখের ফকির হোটেল থেকে দুটি রসগোল্লা আর তিনটা পরটা নিয়ে পুলিশ লাইনের পাহাড়ের উচুঁ সমতল জায়গায় বসে খাওয়া । পরোটা তিনটা ছিলো কারন মামা খেতো দুটা আর আমি একটা । মিষ্টির দাম ছিলো ৩ টাকা আর পরোটা ১ টাকা । আমি দুটাকার বেশী কখনোই দিতে পারতাম না, এমন ও হতো পুরো টাকাটা প্রায় মামাই দিতো । আর নীচ দিয়ে চলে যাওয়া বড় বাস গুলোকে ছোট ছোট আকারে দেখা…মাথার উপর দিয়ে ভেসে যাওয়া মেঘ দেখে ভাবতাম- আহা যদি ওই ভেলায় ভেসে যাওয়া যেতো ।
একবার মামা, আমি আর সুমেল পাহাড় বাইতে বাইতে পুলিশ লাইন থেকে ঝাউতলা চলে আসি । আশে পাশে কোন মানুষজন পাইনা যাকে জিজ্ঞাসা করতে পারি আমরা এখন কোন জায়গায় । যাও এক যুবক কে পেলাম উনি উওর দিলো উনি নিজেই জানেনা উনি কোথায় । ওই মূহুর্ত্বে সুমেলের বাঁধ ভাঙ্গা কান্নার শব্দ এখনো আমার কানে বাজে । হয়তো আমরা পিচ্চি ছিলাম দেখে আমাদের সাথে এই নিষ্ঠুর রসিকতা । আরো খানিক দূর হেঁটে এসে বসতি দেখে জানে পানি পেলাম । টাইগার পাসের ভেতর দিয়ে রিক্সায় চড়ে আমাদের বাসায় ফিরে আসা ।
বিকেলের প্রোগ্রাম থাকতো রেলওয়ে পাহাড়ের উপর থেকে নেমে আসা ড্রেন গুলো স্লিপারি বানিয়ে এক পলকে উপর থেকে নীচে নেমে আসা । মন্জু মিয়ার পাহাড়ের উপরে অবস্থিত মাজার নিয়ে ভীতি ছিলো সবচাইতে বেশী । দলে ছয়জনের কম হলে ওই পথ মাড়াতামই না । ধীরে ধীরে বড় হতে থাকলাম । প্রিয় জায়গাটা ছেড়ে চলে এলাম হালিশহর ।
বাসার পাশেই সমুদ্র । হুমায়ুন আহমেদের বই পড়ার সুবাদে পরিচিত হলাম চাঁদের অপর রুপ জোছনার সাথে । সমুদ্র আর জোছনা ফ্যান্টাসিতে রুপ নিলো । আমি জীবিকার তাগিদে সমুদ্রে । সমুদ্রের উথাল-পাথাল ঢেউয়ের মাঝে অবিরত নেচে যাওয়া জোছনা দেখি আর পুরনো দিনের স্মৃতি রোমন্থন করি ।
১৫টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
সোনেলায় স্বাগতম -{@
জানলাম বোহেমিয়ান এর ছোট শৈশবের দুরন্ত পনার কথা ।
পাঁচ ফিট উচ্চতার ভেতরে ফাঁপা একটা গাছের গুড়ির ভিতর দিয়ে অন্য দেশে যাবার আকাংখাই আপনাকে
বোহেমিয়ান করেছে , বড় হয়ে , এখন তা বুঝতে পারছি।
লিখুন এখানে নিজের ব্লগ মনে করে ।
দেশ বিদেশের বিভিন্ন স্থানের ভ্রমণ এর অভিজ্ঞতা শেয়ার করুন ।
দেশের অচেনা স্থানকে পরিচিত করুন ।
শুভকামনা সব সময়ের জন্য।
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
ধন্যবাদ জিসান ভাই…আপনার হাত ধরেই আমার পথচলা শুরু ব্লগ পরিবারে… 🙂
মর্তুজা হাসান সৈকত
নস্টালজিক! 🙂
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
ধন্যবাদ সৈকত ভাই…
ছাইরাছ হেলাল
এখানে প্রথম লেখার জন্য অভিনন্দন ।
স্মৃতি রোমন্থন সুন্দর হয়েছি ।
লিখুন সানন্দে যা আপনার মনে আসে ।
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
ধন্যবাদ হেলাল ভাই
অনুশঙ্কর গঙ্গোম্যাক্সিম
-{@ আমারও একটি প্রিয় স্থান রেলওয়ের সিআরবি পাহাড়। যখনি ছুটি পায় ছুটে যেতে মন চায়। ধন্যবাদ
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
ধন্যবাদ
খসড়া
খুব ভাল লাগলো দুরন্ত কৈশোর। সব কৈশোর ই বোধ হয় এমন নস্টালজিক।
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
🙂
নীলকন্ঠ জয়
স্বাগতম সোনেলায়। লিখুন ,সোনেলার সাথেই থাকুন।
কৈশরের স্মৃতিমন্থন ভালো লেগেছে। -{@
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
ধন্যবাদ :p
শুন্য শুন্যালয়
বোহেমিয়ান ;? চেনা চেনা লাগে… 😀 স্বাগতম সোনেলায় -{@ -{@
বোহেমিয়ান ভবঘুরে
:p \|/
নওশিন মিশু
ছোট্ট বেলাটা সব সময় এমন চমৎকার হয়, তাই না 🙂 ?
স্বাগতম সোনেলায়….. -{@