কিছু কথাঃ সোনেলার জন্য সীমান্ত উন্মাদের সিরিয়াস কবিতা সিরিজ আজ থেকে সোনেলার সব সহ ব্লগারদের জন্য। এতোদিন শুধু হাসিয়েছি বাঁ হাসানোর চেষ্টা করেছি, দেখি আজ থেকে কাঁদাতে পারি কিনা??
রাত জাগা পাখির পালক
খসে পড়ে মাটির ধূসর বিছানায়
সেখানে কি জোৎস্না ঝরে, অবিরত ??
আশ্বীনের আকাশের মত-
স্যঁত স্যঁতে তোর মুখের কাফন!
ধূপ-কর্পূরের ঝাঁঝালো গন্ধে
বিভৎস নির্জন এক ঘর,
“আদিম স্বত্তার মত একা”
তবে কেন লাশ হলি বল ??
চোখের ছায়ায় নেচে উঠে;
নোনা জলের জোয়ার,
চোখের আড়ালেই রাখি তারে
যেন কিছুই হয়নি!
অবধারিত ছিল-অস্পৃশ্য নিয়তির হাতে,
ভাটার উল্টো পথে পাড়ি দিয়েছিলি
অনেক পথ, তোর মনে আছে ?
তবে আজ কেন এ হেঁয়ালি!!
আট ঘন্টা কি খুব বেশি সময় ?
সায়াহ্নের নৌকা ভীড়ে, সময়ের বন্দরে-
লাগামহীন সময়ের মাঝে খুব তাড়াহুড়ো তোর!
গোধূলী বেলার আগেই তাই ডাক এসেছে-
আপন কূলায় ফেরার।
বাম পাঁজরের ক্ষত চীহ্ন চেপে
চীৎকার করে এক শোকার্ত জননী
কি নিষ্ঠুর তুই!! ফিরেও দেখলিনা।
এক বিষন্ন পিতার দৃষ্টি জুড়ে
নূড়ি পাথরের খস খসে পথ
দীগন্তের চেয়ে দূরে-
পিতার কাঁধে পুত্রের লাশ
এ ভারি অন্যায়!!
বয়ে যায় রক্তের স্রোত
অলিন্দ নীলয়ে;
চেয়ে থাকি আকাশের দিকে
ক্ষুধার্থ হৃদয়ে।
যদি কোন দিন ভূল করে হলেও
উড়ে আসিস, আমাদের আঙ্গীনায়
অতিথী পাখির মত-
সেই পর্যন্ত ভাল থাকিস।।
উৎসর্গঃ
রবিন যে ছিল আমার খুব কাছের বন্ধু, একান্ত আপন এবং আমার গান, কবিতা, ছড়া, গীটার শিক্ষা, আবৃত্তি, বিতর্ক করতে পারার অনুপ্রেরনার অন্যতম উৎস। যার মৃত্যু হয় এক ভয়ংকর সড়ক দুর্ঘটনায় ২০০৭ সালের এই দিনে। সাথে ছিলাম আমিও, নিয়তির খেলায় বেঁচে যাই আমি কিন্তু হারিয়ে ফেলি চিরতরে আমার বন্ধুকে। আমার এই কবিতাটি তাঁকে উৎসর্গ করেই লিখা।
অচেতন অবস্থায় যখন প্রায় ৩ মাস হাসপাতালের বিছানায় শুয়েছিলাম, যখন ফিরে আসি বাস্তব জীবনে, তখন জানতে পারিনি কি হারিয়েছি। সুস্থ হয়ে ঘরে ফেরার পর নিজেকে যে একা আর ক্ষত-বিক্ষত মনে হয়েছে, যা আজো বয়ে বেড়াচ্ছি, জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে। এখনো মনে পড়ে আজ থেকে ১২ বছর আগে ইন্টারন্যাশনাল গীটার ফ্যাসটিবলে আংশগ্রহন করতে যাবো, কিন্তু কেন জানি নিজের ভীতর ভয় কাজ করছিল, মনে মনে ভাবছিলাম পরদিন প্রতিযোগিতায় আংশগ্রহন করবো না। রবিন তখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আর আমি ঢাকায়।বিকেল ৩ টায় ফোন করল আমাকে (আমি তখন টিএসসিতে আড্ডা মারছিলাম, গীটার প্র্যাকটিস বাদ দিয়ে) ফোন করেই বলল কিরে তুই বাইরে কেন? তোর না কাল কম্পিটিশন আছে, আমি প্রতিউত্তরে বললাম, দোস্ত কেমন জানি লাগছে আমি আংশগ্রহন করবো না। সাথে সাথে ও বলল কি সমস্যা বল আমি বললাম জানিনা। রবিন উত্তরে বললঃ আমিও কিছুই শুনতে চাইনা, তুই প্র্যাকটিস করবি এবং কাল প্রতিযোগিতায় যাবি, বলে ফোনটা রেখে দিল। এদিকে আমি আড্ডা শেষ করে বাসায় ফিরলাম, রাত ১০ টায়। ফ্রেস হয়ে পড়তে বসলাম, ঠিক রাত যখন বারোটা আমাকে আবারো রবিনের ফোন, রিসিভ করতেই বলল দরজা খোল, আমি দরজা খুলে অবাক হয়ে গেলাম ও দাঁড়িয়ে আছে। সেই রাতে, সারাটা রাত আমি প্র্যাকটিস করেছি আর ও একটু পর পর আমার পাশে থেকে আমাকে উৎসাহ দিয়েছে আর চা বানিয়ে খাইয়েছে। এবং বিকেলে আমার সাথে ফ্যাসটিবলে গিয়েছে, হাঁ আমি প্রথম হইনি সেবার হয়েছি দ্বিতীয়, কিন্তু তাও হতে পারতাম না যদি ও না আসত। এমন অনেক মন খারাপের সময় ওকে পেয়েছি আমার পাশে। আজ শাররীক ভাবে ও নেই কিন্তু আমার কাছে চিরদিন আমার স্বত্বার একটা অংশ হয়েই আছে।
হাঁ, রবিন যে ছিল আমার কাছের একান্ত আপন বন্ধু।
১৪টি মন্তব্য
জিসান শা ইকরাম
রবিন এর কথা জেনে মনটা খুবই খারাপ হয়ে গেলো
কাছের এবং হৃদয়ের একজন চলে গেলে অসহায়,একাকীর যন্ত্রনায় পিষ্ট হতে হয় সারাক্ষন।
কিছু মানুষ আসে প্রেরনা হয়ে
ভালোবাসা হয়ে
চলে গেলে বুঝা যায় সে কি ছিলো।
রবিনরা কাছে থাকেনা
রবিনরা ভালো থাকুক।
সীমান্ত উন্মাদ
হাঁ মামা কি এক নিদারুন কষ্ট আমার বুকে প্রতিনিয়ত বিঁধে তা বলে বুঝাতে পারবো না।
এখন শুধু এই দোয়াই করি ও যেনে না ফেরার দেশে ভালো থাকে।
অনেক অনেক শুভকামনা নিরন্তর মামা আপনার জন্য।
খেয়ালী মেয়ে
রবিনরা এমনই হয় মায়া লাগিয়ে খুব তাড়াতাড়ি অন্তরালে চলে যায়, যেন আমরা প্রতি মুহুর্তে তাদের শূন্যতা অনুভব করি….
রবিন যেখানে আছে ভালো থাকুক…
সীমান্ত উন্মাদ
হাঁ যেখানে থাকুক ভালো থাকুক।
শুন্য শুন্যালয়
মনটা খুবই খারাপ হলো। এমন একজন যে কিনা সবচেয়ে কাছের, তাকে হারানোর কস্ট কতোটা তা বুঝতে পারছি। রবীন হারাবেনা, যতদিন তুমি আছ। কবিতাটা খুবই টাচি হয়েছে।
দুর্ঘটনা কখন কার জীবন থেকে সব কেড়ে নেবে কেউ জানিনা আমরা। রবীন ভালো থাকুক, যেখানেই থাকুক।
সীমান্ত উন্মাদ
সেটাই এখন চাওয়া রবিন ভালো থাকুক।
অনেক অনেক শুভকামনা নিরন্তর বন্ধু। তুমিও ভালো থেকো বেলা অবেলার গল্প, কাব্য গানে।
আশা জাগানিয়া
এমন বন্ধু পাওয়া দুস্কর।আপনার বন্ধুর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি।এমন বন্ধুর জন্য হাহাকার থাকবেই।
সীমান্ত উন্মাদ
হাঁ একটা হাহাকার প্রতিমুহূর্তে অন্তরের অন্তস্থলে ধ্বনিত হতেই থাকে। আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
কৃন্তনিকা
আমিও আমার খুব কাছের এক বান্ধবীকে হারিয়েছি। ও ছিল প্রচণ্ড হাসিখুশি(তখন জানতাম না হাসি ছিল ওর নাটক)। রাস্তায় দেখা হলেও জাপ্টে জড়িয়ে ধরত, রাস্তার মানুষজন হা করে তাকিয়ে দেখতো। একসাথে ঘুরতাম রিক্সায়, ফুচকা আইসক্রিম খেতাম। হঠাৎ করে হারিয়ে গেল অজানার দেশে। আমি একটুও কাঁদি নি যখন খবর পেয়েছি। কারণ বিশ্বাস হয় নি যে ও আমাদের থেকে দূরে কোথাও। হয়ত কোন দিন অচেনা কোন রাস্তায় হঠাৎ জড়িয়ে ধরবে, বলবে “দোস্তো, কেমন আছিস?” আমি কখনোই কাঁদি না ওর জন্য(জানি না আমি কি অনুভব করতে পারি না নাকি)। আমার বিশ্বাস হয় না ওর অস্তিত্বের অনুপস্থিতিকে। আপনার লেখা পড়ে ওর কথা মনে হল…
কবিতা নিয়ে কিছু বলার কথাও আসছে না…
সীমান্ত উন্মাদ
আসলে কাছের মানুষগুলো, খুব আপন মানুষগুলো হারিয়ে গেলেও বিশ্বাস হতে চায় না যে তারা নেই।
তবে যখন মনে পড়ে বাস্তবতার কষাঘাতের সময় পরিক্রমায় তখন বুকের ভীতর এক ধরনের সাদা কষ্টের উত্তরন ঘটে ভিজে যায় মন, আর কান্নার অশ্রু ঝরে পড়ে নিজের অজান্তেই।
ওরা ভালো থকুক। আর আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
অরণ্য
আমি দুঃখ ভুলি গান গেয়ে, কষ্টও ওড়াই গান গেয়ে। আপনি মিউজিসিয়ান জানলাম। একটা গান আমার ভিতরে বেঝে উঠল আপনার এ লেখাটি পড়ে।
চলে যদি যাবি দূরে স্বার্থপর…
https://www.youtube.com/watch?v=my3GmgBx4aY&spfreload=10
রবিন ওপারে নিশ্চয়ই ভাল থাকবেন।
সীমান্ত উন্মাদ
এটাই রবিন যাতে মেঘের ওপারের বাড়িতে ভালো থাকে।
আপনার জন্য অনেক অনেক শুভকামনা।
ব্লগার সজীব
মন খারাপ করে দিলেন।ভালো থাকুক আপনার বন্ধু।
সীমান্ত উন্মাদ
শুভকামনা নিরন্তর জানিবেন আপনার জন্য।