ছয়.
আমাদের হাতে একদম সময় নেই। যা করার অতি দ্রুত করতে হবে। লিটুকে অনেক কষ্টে বুঝিয়ে সুঝিয়ে আমরা নেমে পড়লাম কাজে। বগা ভাই আমাদের প্লান বুঝিয়ে দিলেন। সবারই মন মতে হলো প্লানটা। গভীর রাত । আখরাতে আলো জ্বলছে। আমরা চারমূর্তি এগুচ্ছি আমাদের গন্তব্যের দিকে।
ডাকতরা নেশায় বুধ হয়ে মরার মত ঘুমুচ্ছে। কেউ কেউ নাক ষারের মত গো গো করে নাক ডাকছে। লিটু নার্ভাস থাকায় হঠাৎ একটা গুন্ডার গায়ে তার পা লেগে হোচট খেল সে। ভাগ্যিস গুন্ডাটা জেগে যায়নি। সামনে অগ্রসর হচ্ছি আমরা। এমন সময় শুনতে পেলাম কো-কো-কো- একটা কোকানোর আওয়াজ। সামনে তাকিয়ে দেখি হাত-পা বাধা অবস্থায় উপর হয়ে একজন লোক পড়ে আছে।
তার কোকানুর আওয়াজই আমরা শুনছি। লোকটাকে সোজা করে দিয়ে ধাক্কার মত খেলাম আমরা। আরে এযে, আমাদের চেয়ারম্যান সাহেব আজমত উল্লাহ! চোখদুটি বাঁধা । মুখে কাগজ গুজা থাকায় কো কো করছেন।
চোখ খুলতে যাবো এমন সময় ফিস ফিসিয়ে পল্টু বলল, এই বেটাকি সাহায্যকরা ঠিক হবে। বড় জ্বালিয়েছে আমাদের।বিষন বদ।
তা ঠিক তবে, বিপদ এর সময় এসব ধরতে হয় না। শত হলেও ওনি আমাদের গ্রামের গুরুজন। যারে বলে মাথা। ওনার বিপদ মানে আমাদের বিপদ । আমাদের গ্রামের বিপদ।
হাকদিল বগা ভাই-
নো ফুসুর
নো ফাসুর
আপ হারি
তারি তারি
ষ্টপ ভেন ভেন
দেরি করছিস কেন?
সামনে একটা পুরোনা বাড়ি দেখা যায়। আগের জমিদারদের বাগান বাড়ী হবে হয়তো। চাদের আলোয় দালানের ভিতর পর্যন্ত দেখা যায়। বগা ভাইযের হাক খেয়ে আমি গুটি গুটি পায়ে দালানের ভিতর ঢুকে পড়লাম। ফকফকে জোন্নায় ভিতরে সব স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। একটি চৌকি। তাতে শুয়ে আছে কিছু মহিলা। নর্তকী হবে হয়তো। এতক্ষন এড়াই তবে নাচছিল। সবাই ঘুমে গাদা।
হঠাৎ আমার হাতের ছোয়া লেগে ঝন ঝন করে পাসের টেবিলে রাখা থালা বাসনের পতন হলো। চটজলদি আমি খাটের তলায় আশ্রয় নিলাম।কে কে বলে ? একজন মৃদু শব্দ করলো। তারপর আবার নিস্তব্দ সব। আমি খাটের তলা থেকে বের হতে যাব ঠিক তখনই নজর পরল একটি জিনিরে উপর। গোল চাকতির মত। খাটের নিচে দেয়ালে সাথে সেটে আছে। কৌতুহলি হয়ে চাকতিটি ঘুরাতেই দেয়ালটি হঠাৎ খুলে একটি সুরঙ্গ বেড় হল। ভিতরে অন্ধকার। দেখা যায় না কিছুই। অন্ধকারের ভিতরই ঢুকে পড়লাম গুহায়।
তখনই একটি কান্ড ঘটল। ম্যাজিকের মতো আলোকি হয়ে গেল চারপাস। ভ্যাবচ্যাকা খেয়ে গেলাম আমি। কি হলো এটা!
আসলে গুহার ভিতরে বিদ্যুত ব্যবস্থা ছিল। অন্ধকারে গুহায় ঢুকতে যেয়ে সইচে চাপ পরে গিয়েছিল। নিজেকে সামলে নিয়ে গুহা ধরে এগুতে লাগলাম। কিছুদুর যেতেই যা দেখলাম তা দেখে আলী বাবা চল্লিশ চোরের গুহায় ঢুকে যেমন বিস্মিত হয়ে ছিল তেমন বা তার চেয়ে বেশী হতভম্ব হয়ে গেলাম। যা দেখলাম চোখ ছানাবড়া। নোটকে নোট টাকা আর টাকা। গয়না গটিতে ভরপুর চারপাস।
হঠাৎ পিছন থেকে একজন বলল হ্যন্ডস আপ! একটু নরলে গুলি করে দিব।
ঘটনার আকর্ষিকতায় ভড়কে গেলাম। ভয় করতে লাগলো। আবার পস্রাবের বেগ পেয়ে গেল । কি যে করি এখন। তখন শুনতে পেলাম বগা ভাইয়ের কন্ঠ।– আরে করেন কি করেন কি? ওসি সাহেব! ও আমাদের বন্ধু ! ডাকাত ফাকাত নয়।
ও তাই নাকি! সরি ! সরি ইয়াং ম্যান।
দেহে প্রান ফিরে পেলাম। কিন্তু মনে নানা প্রশ্ন কিভাবে কী হলো?
সাত.
গুহা থেকে বের হলাম আমরা। চারপাশ পুলিশ ঘিরে রেখেছে। ডাকতরা সব বাধা অবস্থায়। শাড়ি দিয়ে প্রত্যেকটাকে বাধা হয়েছে।
আমি বল্লাম এত্তো শাড়ি পাইলা কই?
ঐ খানে ট্রাংক আছে। নর্তকীদের কাপর চোপর। বলল লিটু।
তা পুলিশ আসল কিভাবে? কে খবর দিলো?
সে অনেক কথা। বলতে লাগলেন বগা ভাই। আমরাতো গেলাম নিমন্ত্রন খেতে। কুকুর দেখে ভয় পাচ্ছিলাম মনে আছে? সে সময় কিন্তু কুকুর দুইটার শিকল এর লক খোলা হালকা লাগানো ছিল। এই ডাকতগুলা এটা করেছে। যাতে কুকুর গুলো চলে গেলে ভিতরে যেতে পারে।আমাদের দেখে কুকুর দুইটা এমন লাম্ফঝম্ফ আর চিল্লাফাল্লা করল হালকা শিকল খুইলা গেল। এরপরের ঘটনা অনুমান করে নে।
কিন্তু পুলিশ এজাগাতে আসল কিভাবে?
ও এই কথা আমি বলছি। নর্তকীদের একজন বলতে লাগলো।
আর বাহ ! এযে পুলিশ। এতক্ষন শাড়ী পড়া ছিল এখন কি সুন্দর ইউনিফর্ম।
পুলিশ অনেকদিন হলো এই টক্কন গ্রুপটাকে ধরার চেষ্টা করছিল। কিন্তু পারছিলনা। আমি সাব ইন্সপেক্টর সাবরিনা চৌধুরী। অনেকদিন হল ছদ্মবেশে ওদের সাথে মিশে ওদের কে নজরে নজরে রেখেছি।ওদেরকে অনেক আগেই ধরা যেত। কিন্তু আমার উদ্দেশ্য গুপ্ত মালামাল সহ ওদের ধরা। তোমরা সেই কাজটা সহজ করে দিয়েছো। থ্যাংকস এ লট এভরিবডি।
তোমাদের অনেক ধন্যবাদ বাবারা। চেয়ারম্যন সাহেবের কন্ঠ শোনা গেল। তোমরা আমার প্রান বাচইছো। এই ভয়ানক ডাকাতদলটারে ধরাইয়া দিছ। তোমারা আমার এলাকার গর্ব।
ওরা এখন আর শুধু আপনার এলকার নয় দেশের গর্ব -বললেন ওসি সাহেব। এই ডাকাত দল টাকে ধরিয়ে দিতে পুরষ্কার ঘোষনা হয়েছিল। ওরা সরকার থেকে সেই পুরষ্কার পাবে।
সরকার কি দিব জানিনা তবে আমি ওদের প্রত্যেককে একটা করে সোনার মেডেল দিব।
খুশিতে বগা ভাই গান গাইলেন ছন্দে ছন্দে-
আগডুম বাগডুম হিপ হিপ হুররে
ডাকাত ধইরা, হইলাম হিরোরে
খুশি খুশি মহা খুশি
পুরষ্কার পাব রাশি রাশি
চেয়ারমেন সাহেবের মেডেল নেব
সরকার থেকেও সম্মান পাব্
হাট্টিমাটিম টিম
মোরা গোয়েন্দা টিম
আহা! আমরা এখন কিং
আমরা ডিটেকটিভ টিম।
শার্লক হোমস ফেলুদা
আমাদের কাছে নস্যি
আমরা সবার মধ্য মনি
নম্বর ছাড়া দস্যি।
১৪টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
হা হা হা। কি মজা লাগলো। কিশোরদের এমন গল্প আরো লিখুন। ধন্যবাদ ভাইয়া। সাবধানে থাকুন সুস্থ থাকুন। ঈশ্বর সহায় হোন
আতা স্বপন
ধন্যবাদ। শেষ পর্যন্ত সাথে থাকার জন্য। আল্লাহ ভাল রাখুন সুস্থ রাখুন।
সুরাইয়া পারভীন
একদম কিশোর রহস্য গল্প
দারুণ লেগেছে গল্পটি
বগা ভাইয়ের শেষ গানটা দারুণ ছিলো
হা হা হা হা হা হা হা
আতা স্বপন
ধন্যবাদ। শেষ পর্যন্ত সাথে থাকার জন্য। আল্লাহ ভাল রাখুন সুস্থ রাখুন।
ফয়জুল মহী
মনোমুগ্ধকর লিখনশৈলি ।
আতা স্বপন
ধন্যবাদ। শেষ পর্যন্ত সাথে থাকার জন্য। আল্লাহ ভাল রাখুন সুস্থ রাখুন।
সাবিনা ইয়াসমিন
আগের পর্ব গুলো সহ পড়লাম। মনে হচ্ছে পুরো একটি বই পড়ে উঠেছি। গল্পের ফাঁকে ফাঁকে ছবি সংযোজন লেখাটির আকর্ষণ বাড়িয়ে দিয়েছে, যা এই গল্পের সাথে মানানসই।
আরও লিখুন স্বপন ভাই,
শুভ কামনা 🌹🌹
আতা স্বপন
ধন্যবাদ। শেষ পর্যন্ত সাথে থাকার জন্য। আল্লাহ ভাল রাখুন সুস্থ রাখুন।
ইঞ্জা
বেশ মজায় লাগলো, ছবির সাথে গল্প এ যে সোনায় সোহাগা।
👉
আতা স্বপন
ধন্যবাদ। শেষ পর্যন্ত সাথে থাকার জন্য। আল্লাহ ভাল রাখুন সুস্থ রাখুন।
হালিম নজরুল
মজা পাইলাম
আতা স্বপন
ধন্যবাদ। শেষ পর্যন্ত সাথে থাকার জন্য। আল্লাহ ভাল রাখুন সুস্থ রাখুন।
জাকিয়া জেসমিন যূথী
কিশোরদের জন্য নিয়মিত লিখুন ভাইয়া। খুব পছন্দ হয়েছে।
আতা স্বপন
ধন্যবাদ। শেষ পর্যন্ত সাথে থাকার জন্য। আল্লাহ ভাল রাখুন সুস্থ রাখুন।