দুষ্টু করোনা

রোকসানা খন্দকার রুকু ২৫ মার্চ ২০২১, বৃহস্পতিবার, ০১:২৫:২৭অপরাহ্ন রম্য ১৫ মন্তব্য

হিসাব নিকাশ বহুদিন আগে থেকেই ছিল। ভাবছিলাম বাগে পাইলেই দেখাবো দুহাত। সুযোগও পেয়ে গেলাম কাল।

চরম প্রতিশোধ নেবার পর শরীর-মনে একরকম অবসাদ আসে, ক্লান্ত হয়, তখন ভীষন ঘুম পায়। কিন্তু আমার পাচ্ছে না। কেন যেন মনে হচ্ছে কাজটা ঠিক হয়নি। বেচারারা কি ভয়টাই না পেয়েছে। একা একা হেসে খুন হচ্ছি তাই ভাবলাম লিখেই ফেলি। অনেকদিন রম্যও লেখা হয় না।

এ এক নতুন প্রতিশোধ আর তার হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করলাম ‘করোনা বেগম’ কে। নাম দিলাম ‘ করোনা হাতিয়ার’ যেটি দারুন কাজে দিয়েছে।

এল,জি শো রুমে কিস্তির টাকা মেলাদিন থেকে বাকি। ছোট ছোট কিছু জিনিস কিনে বাকিটা ইচ্ছে করে ফেলে রেখেছি। এ মাসেই সময় শেষ হবে তাই বারবার শো রুম থেকে ফোন দিয়েই যাচ্ছে। মাস খানেক আগে ম্যানেজার ফোন দিয়েছে, তাকে বললাম মা অসুস্থ তাই আমি তেমন বের হচ্ছি না। কি হয়েছে জানতে চাইলে বললাম ‘ করোনা’। এ সময় যাব না বেতন পেয়েই চলে আসব।

আবার ফোন অন্যজনের সে বোধহয় জানে না। এভাবে একমাসে চারবার ফোন এল। আমি চরম বিরক্ত। অবশেষে ভাবলাম যাই কিছু টাকা দিয়ে আসি।

কাল দরজা দিয়ে ঢুকেই দেখি কারও মুখে মাস্ক নেই। সবাই ইস্ত্রি করা প্যান্ট-শার্ট পরে সুন্দর করে চেয়ারে বসা। কতরকম লোকজন আসছে যাচ্ছে। সবচেয়ে বেশি সচেতন এদেরই থাকার কথা। অথচ তারা এসিতে মাস্ক ছাড়া আরামে বসা।

সুন্দরী মেয়েটি লিপস্টিক মেখে নায়িকা সেজে বসে আছে। আমাকে দেখে মহাখুশি। শুধু  ম্যানেজার বুঝতে পেরে একটু কাজ আছে বলে চেয়ার ছেড়ে খুব দ্রুত পালালো। ঠিক তখনি আমার মাথায় দুষ্টুবুদ্ধিটা চাপলো। আজ একটু মজা করতেই হবে!

মেয়েটি কাছে এসে বলল, “ ম্যাডাম মুখটা খোলেন দেখি, কতদিন পর এলেন”।

আমি যার পর নাই দুখখিত হয়ে বললাম, “মাস্ক তো খোলা যাবে না, দেখলে না ম্যানেজার পালালো”।

সে অবাক, “কেন কি হইছে, উনি বোধহয় ওয়াশরুমে গেছেন”।

ও  তুমি জানো না। উনি তো জানেন, বাড়িতে করোনা চলছিল, সেজন্যই তো আসিনি।

মেয়ের গলায় কাঁপুনি শুরু হয়ে গেল। আমার কাছে ঝুঁকে গল্প করছিল মুহূর্তে সে নিজেকে সরিয়ে নিল কয়েকহাত। মুখে মাস্ক ছিল না তাও লাগিয়ে নিল। আর কথা না বলে শুধু হু হ্যা করে, একটু পর আসছি বলে সেও উধাও।

আমি বসেই আছি। আজ মফিজের কেরামতি দেখানো শেষ করেই যাবো। একটু পর দিপ্তী এল। সেও কিস্তির টাকা দেবে। এবার তাদের আর বের না হয়ে উপায় নেই। সহকারী ছেলেটা বেরিয়ে অনেক দুরে দুরে হাঁটছে। অগত্যা ম্যানেজার কতক্ষন পরে বেরিয়ে এলেন। মুখে বেশ পুরোনো মাস্ক লাগিয়ে, যার গন্ধে করোনা বেগমের এমনিই মৃত্যু হবে।

আমার টাকাটা অনেকক্ষন টেবিলে রাখা কেউ গুণেও নিচ্ছে না। বলছে, থাক পরে উঠাবে। আমিও নাছোর বান্দা রিসিট ছাড়া উঠবই না। এদিকে ম্যানেজার ব্যাটার টেনশানে হাত কাঁপছে, তার উপর সার্ভারও কাজ করছে না।

-পরে নিলে হয় না ম্যাডাম।

– না, না পরে আর আসব না।

সময় কাটাতে এবার ব্লেনডার দেখা শুরু করলাম। বেশ নেরে-চেরে দেখছিলাম।

মেয়েটি বলছে,’ আপু আজই নেবেন’?

হ্যাঁ অবশ্যই,একটু চালিয়ে দেখাও?

আমি যেটা ছুঁয়েছি,সে কিছুতেই সেটাতে হাত দেবে না। একদম ইনটেক একটা বের করে এনে দেখালো। আমি কাছে গিয়ে দেখা শুরু করতেই সে ভো দৌড়! আপু আপনি দেখেন আমি আসছি। সেই যে তারা গেল আর বেরও হচ্ছে না। তিনটে বাজে দুপুরের খাবারের সময় শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবুও কারও দেখা পাওয়া যাচ্ছে না। ভাবলাম আর কষ্ট না দেই।

এরপর আমরা দুবোন গলাধরাধরি বের হয়ে গেলাম আইসক্রিম খেতে। বাকি টাকার জন্য বোধহয় আর অনেকদিন ফোন দিবে না! একটু শান্তিতে থাকা যাবে। “তুঝে মিরচি লাগি তো মেয়ে কেয়া কারুউ,,,,,”

বিগিনিং———-********

পূর্নিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি”- খাবারের অভাব এখন আর আমাদের নেই। রুটির বদলে আমাদের চাহিদা অন্য রুটিতে বদলেছে। জীবন যাত্রার মানউন্নয়ন চলছে তুমুল।

মানুষ হিসেবে আমিও তার ব্যতিক্রম নই। যেমন- সুন্দর ডুপ্লেক্স বাড়ি দেখলে আমি কিছুক্ষন দাডিয়ে দেখি। কি ভাবি? হয়ত ভাবি ঈশ্! আমার যদি থাকত? কিংবা ভেতরটা বোধহয় অনেক সুন্দর। অথচ মুখে ঠিকই বলি, আমি খুব কম চাহিদাসম্পন্ন মানুষ। বাডি- গাড়ি কিছুই আমার চাই না।

অগ্রণী ব্যাংকের পাশেই এল,জির শো রুম। ব্যাংকে যাই পাশাপাশিএল, জিতেও প্রায়ই যাওয়া হয় বিশেষ কারন অবশ্য আছে। অনেক দিনের শখ একটা ডাবল ডোর ফ্রিজ কিনব। তাই মাঝে মাঝেই খোঁজ নিতে যাই, সেটা পকেটে  টাকা না থাকলেও।

সেদিনও গিয়েছি শো রুমে। জানতে চাইলাম, ডাবল ডোর ফ্রিজের এখন দাম কত?

দাম শোনার পর বললাম, “একটা নিয়ে এলে দেখতাম। এত দাম দিয়ে কিনব একটু দেখে-টেখে নেব না”

ম্যানেজার নতুন এসেছেন। এ ক’ মাসে আমাকে দেখতে দেখতে তিনি বিরক্ত।

আজ উত্তর দিয়েই দিলেন, “ কুড়িগ্রাম এর লোক তো মহা মফিজ এসব বোঝেই না। তার উপর অসম্ভব কৃপন। ছোট্ট একটা ফ্রিজ নিতে দলবলে তিনদিন আসে। আর এই ফ্রিজ নেবার লোক আছে? অযথা এনে নষ্ট করব কেন? এই যেমন আপনি কতদিন ধরে খুঁজছেন! ভালো হয় আপনি ক্যাটালগ দেখেন, অর্ডার করেন, এনে দেব। আর আপনি যে নিতে এসেছেন, একা কেন? আপনার গার্জিয়ান কই? এই ফ্রিজ নিতে দুজন সলিড গ্যারান্টর লাগবে!”

দীর্ঘ লেকচার শুনে মাথা আগুন হয়ে গেল। ব্যাটা বলে কি? টাকা নেই বলে,এত অপমান কি সহ্য করা যায়? এর প্রতিশোধ নিতেই হবে। প্রথম প্রতিশোধ হিসেবে সেদিনই ফ্রিজের অর্ডার করলাম। অবশ্য প্রথম পেমেন্টের টাকাটা বোনের কাছ থেকে ধার নিয়েছিলাম। আর দ্বিতীয় প্রতিশোধ অন্য সময় নেব এই আশায় রইলাম। যেটা আজ পূর্ণ হল!

একটা জিনিস প্রমাণিত হল, লোকজন করোনা নেই বললেও ভয় ঠিকই পায়। ভালো লাগলো এটা ভেবে এবং দেখে। এই ভয়টা থাকা খুবই জরুরী। কারন আমরা যে মহা সঙ্কটে আছি তার থেকে পরিত্রানের একমাত্র উপায় আল্লাহ এবং আমাদের সাবধানতা। আসুন আমরা সবাই সাবধানে চলি। সবাই ভালো থাকি!!

ছবি- নেট থেকে।

১২২৮জন ১০৮০জন
0 Shares

১৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ