বই পড়ার জন্য, প্রধান গ্রণ্থাগারিক অফিসার নারায়ন সাহা রায়ের টেবিল দেখিয়ে দিয়েছেন তাপস’দা। =”নিশ্চিন্তে এখানেই বসে বই পড়, অন্য কোথাও বসা লাগবেনা। এখানে হরেক মানুষ আসে। কেউ তোদের ডিস্ট্রাব করবেনা। ননারায়ন সাহা রায়ের পেছনে বেশ বড় একটা জানালা। বই পড়ার মাঝে মাঝেই চোখ চলে যায় জানালা পার হয়ে ওপারের খালে’র দিকে। নৌকা বাঁধা ঘাটে। মাছ ধরছে জিবীকার তাগিদে নৌকার মাঝি।এ কেমন মাছ ধরা? জাল আছে। কিন্তু এ কেমন জাল? বিরাট বড় বাঁশের তিনকোনা করে জাল আটকানো!! বাঁশের সাঁকো’র মতো বানিয়ে তার দাঁড়িয়ে বাঁশে আটকানো জাল পা দিয়ে পানিতে নামিয়ে দিচ্ছে, কিছুক্ষন পর আবার হাতে ধরা রশি ধরে টেনে বাঁশের খাঁচা সহ জাল টেনে তুলছে!!চকচকে রুপালি মাছগুলো কি সুন্দর লম্ফঝম্ফ করছে!!! কখন যেন আপন মনেই চোখে মুখে হাসি ছড়িয়ে পড়ে।নারু কাকু (নারায়ন সাহা রায়) দেখে ফেলে। নারু কাকু= কিরে? কি দেখে এত হাসি? ” না কিছুনা ” সবাই যেন চোখে চোখে রাখে!! এমন ক্যান? মা একদিন পাকড়াও করলেন! বনা, লাভলী হঠাৎ বন্ধ করে দিলো যাওয়া। মা’ও নিষেধ করলেন। ওখানে আর যাওয়া চলবেনা। কিন্তু এখন উপায়? বইএর নেশা পেয়ে বসেছে যে!! কত্তো কত্তো বই ওখানে!! তাপস’দা ভরসা। বই এনে দেবেন, পড়া হয়ে গেলে ফেরত নিয়ে যাবেন। তাপস’দা কি ভালোে! কি ভালো! নিয়মের বাইরে গিয়ে, কতদিন বইপড়া’র নেশা যোগান দিয়ে গিয়েছেন!! একদিন তাও বন্ধ হলো। স্থানান্তর হলো পাঠাগার। এর তার কাছ থেকে শুরু হলো সংগ্রহ। দাদুর বাসার বিশাল আরমারিটা নজরে পড়লো, ব্যাস্। আর পায় কে? মায়ের কত বকুনি!!! কে শোনে কার কথা? গভীর রাতে রুমে আলো জ্বলতে দেখে বাবা’র ধমক “= তুই এখনো ঘুমাসনি? লাইট বন্ধ কর!!” উপায় খুঁজে বের করতে সময় লাগলোনা। সন্ধ্যা নামতেই চুপি চুপি হারিকেন জ্বালিয়ে খাটের নীচে আড়াল করে লুকিয়ে রেখে, লাইট অফ্ করে ডিম ডিমে আলোতে একরাতে ৩/৪টা বই সাবাড় করে ফেলতে ফেলতে মুয়াজ্জিনের ধ্বনি কানে এসে লাগে। আলো ফুটে উঠতেই চোর পায়ে সদর দরজা খুলে, বাইরে থেকে শেকল টেনে বন্ধুদের ডেকে প্রাতঃভ্রমনে বেরিয়ে পরা।সবাই ঘুম থেকে জেগে ওঠার আগেই আবার ঘরে ফেরা।
বইএর নেশায় দিনরাত্রির হিসেব করা হয়না। পাশের বাসায় স্কুলের দিদিমনি ভাড়া এসেছেন। মাঝে মাঝেই যেতে হয় ইংরেজি ট্রান্সলেট নিতে। কখনো বিরক্ত হননা। খুশি হয়ে নিজ হাতে লিখে দেন। একদিন চোখ গেলো দিদিমনি’র উকিল স্বামী’র আইনের মোটা মোটা বইগুলোর পাশাপাশি শরৎ বাবুর রচনাবলী। ঠিক হলো, পরীক্ষাটা শেষ হোক আগে, পরীক্ষা শেষ হতেই ৬ খন্ডের রচনাবলী একসপ্তাহে সাবার!! স্কুলের পাঠাগার থেকে সংগ্রহ শুরু হলো অষ্টম শ্রেনী থেকে। তাও মাত্র কিছুদিনের জন্য। বন্ধ হলো তাও। মা প্রায়ই হুমকি দেন পুড়িয়ে ফেলবেন বই। ভয়ে লুকিয়ে রেখে রেখে চলতো বই পড়া। বাবা কিছু বলেন না। শুধু পরীক্ষা’র আগে আগে ধমকান। রাত জেগে বসে থাকা বাবা প্রেসক্লাব থেকে এসে পড়া ধরবেন।
চলবে……..
১৭টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
বই পড়ার নেশার সাথে অন্য কোনো নেশাই মিল খায়না। ছোট বেলায় টিফিনের টাকা বাঁচিয়ে অক্ষর পাঠক গোষ্ঠির সদস্য হয়েছিলাম। পাঠাগারের বড় ভাই যেদিন জানতে পেলেন টিফিনের টাকা দিয়ে মাষিক চাঁদা পরিশোধ করি, খুব বকেছিলেন সেদিন। তারপর আর কোনোদিন আমাকে কারো পারমিশন নিতে হয়নি পাঠাগার থেকে বই আনা নেয়ার জন্যে। অক্ষর পাঠক গোষ্ঠি এখনো আছে। আজীবন সদস্যের খাতায় প্রথম নামটি সাবিনার নামে আছে। যুগে যুগে এমন বড়ভাই-তাপস দাদা থাকেন বলেই পাঠকের অতৃপ্ততা পূর্ণতা পায়। ভালো থাকুক তারা।
চলুক স্মৃতির গাড়ি, সাথে থাকবো বন্যা। ❤❤
বন্যা লিপি
নিজে কখনো বই কিনে পড়িনি।দাদুর বাসার বিশাল বইএর আলমারি, আব্বার কিছু সংগ্রহের বই।যার কাছে বইএর খোঁজ পেয়েছি, তাঁর কাছ থেকেই এনে পড়েছি। যেখানেই বেড়াতে গেছি, আগে খুঁজেছি বই আছে কিনা? একসাথে ৫/৬টা করে নিয়ে আসতাম। আশেপাশ থেকে ঠিকই যোগাড় হয়ে যেত বই। পর্যায়ক্রমে আরোকিছু স্মৃতী শেয়ার করবো সবার সাথে। শুভ কামনা।
তৌহিদ
তাপস দাদাদের জন্য আজও বই পড়ার সুযোগ ঘটে। আমিতো ক্লাসেও লুকিয়ে লুকিয়ে বই পড়তাম। এমনকি বাথরুমেও।
স্মৃতিচারণ ভালো লাগছে আপু।
বন্যা লিপি
ক্লাশের একটা স্মৃতী আছে বলবো। ভালো লাগছে পাশে পাচ্ছি। শুভ কামনা।
তৌহিদ
পাশে আছি আপু।☺
ছাইরাছ হেলাল
আত্মজীবনী লিখে ফেলুন।
পড়া, পড়াই। এর কোন বিকল্প আনন্দ নেই, হয়-ও না।
অনেক সময় পাঠক, লেখকের চেয়েও শক্তিশালি হয়ে ওঠে।
বন্যা লিপি
স্মৃতীকথায় নিয়ে আসতে চাচ্ছি কিছু ভালোলাগা স্মৃতী।আত্মজীবনী লেখার মতো জীবন নয় আমার। ভালোলাগলে প্রশ্রয় টুকুর সন্মান রাখতে চাই। অনুপ্রেরনায় পাচ্ছি, তাই লিখছি। শুভ কামনা।
ব্লগার সজীব
প্রথম পর্ব সহ এটি পড়লাম আপু। বই পঠন অত্যন্ত জরুরী একজন পরিপূর্ণ মানুষ হয়ে ওঠার জন্য। আপনার নিজের কথা পড়ে ভাল লাগছে খুব।
বন্যা লিপি
পরিপূর্ন মানুষ আর কে ক’হজন হতে পেরেছে বা পারছে? স্মৃতীকথন সবার সাথে শেয়ার করা, যা মনে পড়লে এখনো ভাবি……কেমন ছিলাম তখন? কৃতজ্ঞতা জানবেন।
নীরা সাদীয়া
ছোটবেলায় বই পড়ার জন্য কত যুদ্ধ করেছি! কেউ বই দিতে চাইত না। আমি তাই কারো কাছ থেকে সালামী পেলেই নিয়ে বেরিয়ে পরতাম বই কিনতে। কী যে নেশা ছিলো!
বন্যা লিপি
এ এক আজব নেশা। আমার মেয়ের এক বন্ধু আছে, জিজ্ঞেস। করে “আন্টি , আপনি অমুক বই পড়েছেন? একে একে সব উত্তর যখন “হ্যাঁ ” হয়…. বলে সবই তো পড়ে ফেলেছেন, আপনাকে দেবোটা কি? আমার জন্মদিনে দুটো বই দিলো, তার মধ্যে একটা আগেই পড়া। তবু, পড়া বই যে কতবার পড়েছি /পড়ছি, একেবারে না পেলে সংগ্রহের পড়া বই বার বার পড়ি। শুভ কামনা আপনার জন্য।
জিসান শা ইকরাম
বই পড়ার এত অদম্য নেশা ছিল জেনে ভাল লাগছে খুব।
পড়ার প্রচন্ড নেশা আমারো ছিলো, ধীরে ধীরে ব্যস্ততার কারণে আর পড়ার সুযোগ পাইনা।
স্মৃতির লেখা চলুক।
বন্যা লিপি
দাদু’র বাসার বই ভরা ওই আলমারিটা’র দুইতৃতীয়াংশ বই আমি পড়ে শেষ করেছি। সবচে বেশি পড়েছি, কিরীটী রায়,নিহারঞ্জন গুপ্তের, ভীষণ ভালো লাগতো ডিটেকটিভ কিরীটী রায়ের চরিত্র। অনুপ্রেরিত, শুভ কামনা।
মনির হোসেন মমি
বই হোক মানুষের নিত্য সঙ্গী।ভাল বলেছেন।
বন্যা লিপি
অতটা না হলেও এখনো আমি বই প্রেমি,একথা বলতে একটুও সংকোচ নেই, আগের থেকে কমে আসছে পাগলামী। এই সেদিনো ছোটবোনের বাসায় গিয়ে চোখ পরলো বইএর সারিতে। দুটো উঠিয়ে নিয়ে এসেছি। কৃতজ্ঞতা রইলো।
নীলাঞ্জনা নীলা
ইস রে বই পড়ার জন্য এতো বাধার মুখোমুখি হতে হয়েছে! আমার ভাগ্য ভালো এদিক থেকে। পড়ার সময় ছাড়া গল্পের বই পড়ায় না ছিলো না। মামনির একটা লাইব্রেরী ছিলো, আমার জন্য অবশ্য তালা লাগিয়ে রাখতে হয়েছিলো। তাইতো বই পড়ার নেশায় এখনও আচ্ছন্ন থাকি। যেখানেই যাই চোখ খুঁজে ফিরে বইয়ের ঘর। এ নিয়ে আমারও লিখতে ইচ্ছে করছে।
চলুক, চলুক।
বন্যা লিপি
খুব ভালো লাগছে আপনাকে পেয়ে। আরো বাঁধা সামনে আছে। বাবা তেমন করে কখনো কিছু বলতেননা। তবে অতিরিক্তপনায় ক্ষেপে যেতেন মাঝে মাঝে। আমার যে অন্য আর কোনো কাজ করতেই মন চাইতোনা!!! বাকি পর্ব নিয়ে আসছি শিগ্রীই, শুভ কামনা অফুরান 🌹🌹🌹🌹