জীবনের প্রথম স্কুল থেকে ক্লাস করে বাসায় ফিরল সায়েম ৷ বাসায় ফিরতেই মায়ের প্রশ্ন :
-বাবা আজ স্কুল কেমন লাগলো ?
-অনেক ভালো মা ৷
-সবচেয়ে ভালো কি লাগছে বাবা ?
-ছুটির ঘন্টা ৷
এটাই হয়তোবা বাস্তবতা ৷ হাঁপ ছেড়ে বাচার মাঝেই মানব সন্তান খুঁজে ফিরে তার জীবনের সার্থকতা। আর সময়ের সাথে সাথে খারাপ লাগাগুলোও আস্তে আস্তে কমতে থাকে, হয়তোবা গা সওয়া হয়ে যায় ৷
মেয়েটার নামটাই কেমন যেনো – “বৈশাখী চৌধুরী বৃষ্টি”!
বৃষ্টি আর কালবৈশাখী দুটি একসাথে হলে সায়েমের মামা বাড়ির কথা মনে পড়ে যায় ৷ মনে পড়ে যায় ঝড়-বৃষ্টিতে আম কুঁড়ানোর কথা ৷ নাটক সিনেমায় হলে হয়তোবা এই বয়সেই প্রেমপর্ব শুরু হয়ে যেতো। কিন্তু ক্লাস ফোরের বাচ্চার কাছে বৈশাখ মানেই আম কুঁড়ানোর সরলতা , কিংবা বৃষ্টিতে ভিজে ফুটবল খেলা ।
বৃষ্টি সায়েমের ক্লাসমেট । সায়েমের পোষা খরগোশটার বাসার উল্টাপাশে বৃষ্টির বাসা। সেই খরগোশ থেকে শুরু, একই স্যারের কাছে পড়া সুত্রে বন্ধুত্ব অনেক বেশি গভীর হয় মেয়েটির সাথে ৷
বয়স যখন তের এর কোটায় সায়েম প্রথম লক্ষ্য করে বৃষ্টি দেখতে ঠিক দোকানের সাজিয়ে রাখা পুতুলগুলোর মত , একটু চুপ-চাপ প্রকৃতির ,শো কেসে আগলে রাখার মতো । বয়ঃসন্ধি কালের চিরন্তনতা মেনে এক অজানা টানে কোনো কারণ ছাড়াই সায়েম মেয়েটির পিছু লেগে থাকে ৷ আজ টিফিন খেয়ে ফেলছে তো কাল কলম চুরি করছে পরশু চুল ধরে টান মারছে ৷ বৃষ্টিও কম যায়না কখনো হাতে কামড় বসিয়ে দেয় কিংবা শার্টে কার্টুনের ছবি আকে নয়তোবা বাসায় গিয়ে সায়েমের সাইকেলের হাওয়া ছেড়ে দেয় ৷
এক দিকে সায়েমের দুর্নিবার টান , আর অন্যদিকে বৃষ্টির সরলতা – দেখতে দেখতে সময় কেটে যায়,দুরন্ত শৈশব পেরিয়ে কৈশোরের ভরা যৌবনে পা রাখা দুজনের মাঝে সমাজের বাধা-ধরা নিয়মের জন্য সম্পর্কের ভাটা পরতে শুরু করে । দৈহিক গঢ়ন আর আর্কষন বাড়লেও দুরত্বও বাড়তে থাকে ৷
ক্লাস টেন ! বৃষ্টিদের বাসা একটু দুরে নিয়ে যাওয়া হয় । আগের মতো বেলকনিতে দেখা হয় না বলে বৃষ্টিদের বাসার আশে-পাশে প্রায়ই ঘুরাফেরা করে সায়েম , কেউ দেখে ফেলার আগেই সরে যায় সেখান থেকে । কিন্তু একদিন ধরা পরে যায় বৃষ্টির চোখে ৷
বারান্দায় দাঁড়িয়ে বৃষ্টি ডাকে সায়েমকে- “এই বান্দর এখানে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? বাসায় আস , মা পিঠা বানাইছে ! পিঠা খাবি ৷”
– “এখন যাই,অন্যসময় আসবো ৷”
দৌড়ে পালায় বৃষ্টির বাসার সামনে থেকে,সায়েম খুঁজে পায়না এই পালিয়ে বেড়াবার কারণ ৷ খুঁজে পায়না লুকিয়ে দেখার কি সুখ? কেনইবা এতটা বদলে গেছে সে,বৃষ্টিও কি বদলে গেছে ?
এইচ এস সি পাশ করার পর পরিবার সহ ডিভি পেয়ে আমেরিকারে চলে যায় বৃষ্টিরা ৷ শেষবারের মত করে ” তোকে মিস করব” কথাটি বলা হয়নি সায়েমের লজ্জা কিংবা সংকোচে নয়তোবা কোনো পিছুটানের ভয়ে ৷সেদিন শুধু পথ চেয়ে নোনা জল ফেলেছিল ।
২০ বছর পর ৷ কোনো এক বিকেলে বাসার বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে সায়েম ৷ একটা বাচ্চা ছেলের চিৎকার কানে আসে সায়েমের –
– “এই আমার বাইক ছাড় , না হয় আন্টির কাছে বিচার দিব ৷”
– “বিচার দে যা , বলছিনা আমাকে বাইক দিতে ? আমি চালাব ৷”
বাচ্চাটা বাইক দেয়না,মেয়েটা বাইকের হাওয়া ছেড়ে দিয়ে দৌড়ে পালায় আর ছেলেটা দাড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাঁদছে ৷ এক নিমিষেই সায়েম হারিয়ে যায় সোনালী শৈশবে । সায়েম কাদছে আর বৃষ্টি পালিয়ে যাচ্ছে,হারিয়ে যাচ্ছে সায়েমের জীবন থেকে । চলে যাচ্ছে সুদূর আমেরিকায় । হায়রে দুরন্ত শৈশব !
– “ এই তোমার চা ঠান্ডা হয়ে গেলো তো …. ”
সম্বিত ফিরে পায় সায়েম ।
অপলক তাকিয়ে থাকে । ১০ বছর ধরে এভাবেই দেখতে অভ্যস্হ সে । বৃষ্টিকে চুল খোলা অবস্হায় দারুন দেখাচ্ছে ….
৬টি মন্তব্য
শুন্য শুন্যালয়
বেশ সুন্দর গল্প কিন্তু চিন্তায় পরে গেলাম… এ কি আরেক বৃস্টি, নাকি সায়েমও আমেরিকা ধাওয়া করলো তাকে পিছু পিছু?
হিপনোটক্সিক ইরেকটাস
কিছু অর্পূনতা , কিছু অসম্পূর্নতা থাক না নিজের মতোই । দুটো বৃষ্টিই এক ।
শুন্য শুন্যালয়
আচ্ছা থাক, তবু গুড়িগুড়ি বৃস্টি আর ঝুম বৃস্টি দুটোর আমেজ কিন্তু বেশ অন্যরকম … 🙂
হিপনোটক্সিক ইরেকটাস
নিঝুম সন্ধ্যেতে ঝুমঝুম বৃষ্টিটাই আমার প্রিয়।
জিসান শা ইকরাম
মন প্রায় খারাপ হয়ে গিয়েছিল।
পাঠকের আগ্রহ ধরে রাখতে জানেন আপনি ।
হিপনোটক্সিক ইরেকটাস
লেখকের সার্থকতাই তো পাঠকের হৃদস্পন্দন নিয়ন্ত্রন করতে পারার মাঝে। জানি না কতটুকু পারি, তবে ধন্যবাদ ভালোলাগার কথা জানাবার জন্য!