“সাতটি দিনে সাতটি ফুলে মালা গেঁথে এক সপ্তাহ হয়
দুই পক্ষের তিরিশ দিনে বারো মাসে এক বছর ফুরায়…
Monday সোমবার সপ্তাহ শুরু, Tuesday মঙ্গলবার কাজেতে পুরু
Wednesday বুধবার, Thursday বৃহস্পতিবার
সপ্তাহ চলে যায় ছড়া বলা ছন্দ
সময় তো থামবার নয়, সময় তো থামবার নয়।।
Friday শুক্র পরিপূত সাজ, Saturday শনিবার আধাবেলা কাজ
Sunday রোববার ইস্কুল বন্ধ, সপ্তাহ চলে যায় ছড়া বলা ছন্দ
সময় তো থামবার নয়, সময় তো থামবার নয়।”
আজ গানটি খুব বেশী মনে পড়ছে। মামনি আমাকে এ গান গেয়ে গেয়ে দিন-মাস-সপ্তাহ-পক্ষ-বছর শিখিয়েছিলো। আজ যখন প্রতিদিনকার মতো ফোন দিলাম মামনিকে, মামনি বললো, “৩০ সেপ্টেম্বর মহালয়া শুনতে পারবি? টিভিতেও দেখাবে। কিন্তু তুই তো দেখতে পারবি না।” মামনিকে বললাম মহালয়া শোনার দিন অনেক বছর হয়ে গেলো আমার জীবন থেকে চলে গেছে। মহালয়া মানেই হাল্কা হাল্কা ঠান্ডা, শরতের মধ্যে শীতের জানান দেয়া, যে সে হেমন্ত পার করেই আসছে। তার মধ্যেই বাপির বুকের ভেতর গুটিসুটি মেরে কম্বল গায়ে দিয়ে ঢুলুঢুলু চোখে রেডিওতে বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের গুরুগম্ভীর উচ্চারণে মায়ের আবাহনের মন্ত্র শোনা। শঙ্খধ্বনি দিয়ে শুরু হবার পর চন্ডীমন্ত্র, তারপরেই বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের অমোঘ উচ্চারণ —
“আশ্বিনের শারদপ্রাতে বেজে উঠেছে আলোকমঞ্জী, ধরনীর বহিরাকাশে অন্তরিত মেঘমালা, প্রকৃতির অন্তারাকাশে জাগরিত জ্যোতির্ময়ী জগন্মাতার আগমনীবার্তা, আনন্দময়ী মহামায়ার পদধ্বনি অসীম ছন্দে বেজে উঠে রূপলোক ও রসলোকে আনে নবভাবমাধুরির সঞ্জীবন, সেই আনন্দিকা, শ্যামলীমাতৃকা চিন্ময়ীকে মৃণ্ময়ীতে আবাহন।”
তারপরে দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের “জাগো, তুমি জাগো”, শিপ্রা বসুর “ওগো আমার আগমনী আলো”, সুপ্রীতি দেবীর “বাজলো তোমার আলোর বেণু…” এসব গান শুনে বুকের ভেতর কেমন জানি করে ওঠে, এই এখনও! এইতো কলেজে যখন পড়ি তখনও এভাবেই বাপির বুকে আমি, ছোট বোন মৌ ও মামনি পাশে বসে শুনতো। দেখা যেতো আমি ঘুমিয়েই পড়েছি, আর বাপিও ঢুলছে। অসাধারণ সব গান। মানবেন্দ্রর “তব অচিন্ত্য রূপচরিত মহিমা” মহালয়া শেষ হলেই স্নান। স্নানের পর জামা-কাপড় পড়ে রেডি হয়েই দৌঁড়। কোথায় গেলো সেই দিন! কতো বছর হয়ে গেলো একই আকাশের নীচে থেকেও আটটি বছর বাপি-মামনির সাথে পূজো দেখা হয়না। আর বাপি তো পূজোতে যেতেই পারেনা। বাপিকে একা রেখে মামনিও মা দুর্গার মুখ দেখতে যেতে পারেনা। আমি এখানে আনন্দ করি, ঘুরে বেড়াই, কিন্তু মনের ভেতর থেকে যায় যদি পারতাম বাপি-মামনিকে আমার কাছে নিয়ে আসতে। একসাথে আবার মহালয়া শোনা, তারপর পূজার আনন্দে মেতে ওঠা।
ইস আবার যদি এমন হতো, অষ্টমীর রাতে মামনির হাতের খিচুড়ী-আলু ভাঁজি, নবমী-দশমীতে মাছের বিভিন্ন রকম পদ রান্না, আর পাশে বসে বাপি মামনির রান্না দেখছে। লবণ টেষ্টের জন্য মাছের পিসও পেয়ে যাওয়া। বাপির চিৎকার করে ডাকা, “কই রে নীলা, আয় আয় দেখি যা তোর মামনি মাছ রান্ধছে।” কোথায় সেই দিন!?
সবাইকে অগ্রীম শুভ মহালয়ার শুভেচ্ছা। শারদীয়া দেবীর আগমন সকলের জীবনে শান্তি ও সৌহার্দ্য বয়ে নিয়ে আসুক।
আজ সোনেলার জন্মদিন। আজকের এই দিনে আমার মনের ভেতরে যা চলছে, সেটাই দিলাম। ভালো থেকো সোনেলা। আমাদের সবাইকে তোমার নীড়ে আজীবন রেখো।
হ্যামিল্টন, কানাডা
২১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬ ইং।
২২টি মন্তব্য
অনিকেত নন্দিনী
ফেলে আসা দিনগুলি মহাকালের গর্তে ডুবে যায় তবুও তার ছিটেফোঁটা আলো কোথায় যেন রয়ে যায়। 🙁
দিদি, আপনার ইচ্ছেগুলি পূরণ হয়ে যাক। সবাইকে নিয়ে আবার পূজোয় মেতে উঠুন। মহালয়ার অগ্রিম শুভেচ্ছা। 🙂
নীলাঞ্জনা নীলা
নন্দিনীদি বহুবছর আমি মহালয়া শুনিনা। শুনলেই বুকের ভেতর মোঁচড় দিয়ে ওঠে।
হুম দিদি প্রার্থনা করুন যেনো মানুষ দুজনকে আমার কাছে নিয়ে আসতে পারি।
মহালয়ার শুভেচ্ছা আপনাকেও। ভালো থাকুন। সুস্থ হয়ে উঠুন। -{@
আবু খায়ের আনিছ
সময় চলে যায়, রেখে যায় কিছু স্বৃতি। আর সেই স্বৃতি মন্থন করেই আমাদের সুখ।
নীলাঞ্জনা নীলা
আনিছ ভাইয়া সুখ শব্দটার সাথে আমার আজও পরিচয় হয়নি। তবে স্বস্তির সাথে গভীর বন্ধুত্ত্ব।
মহালয়ার শুভেচ্ছা।
ছাইরাছ হেলাল
মহালয়া না যেন মহাখায়া, খালি খাই খাই,
সোনেলার জন্য ভোগের ব্যবস্থা করবেন, সব আনন্দ একা একা করা ঠিক না,
নীলাঞ্জনা নীলা
কুবিরাজ ভাই খাই খাই নই আমি। তবে জানেন ওই দৃশ্যটা আজীবন চোখে লেগে থাকবে। ছুটির দিনে মামনি রান্না করে আর বাপি জলচৌকিতে বসে মামনির সাথে গল্প করছে। মামনি আবার বাটিতে দিচ্ছে ঢেলে লবণের স্বাদ ঠিক আছে কিনা। আসলে স্বাদ নেয়ার জন্য না, বাপি ওই চাখাটা খুব পছন্দ করে। আর মাছ আমি পছন্দ করি, বাপি চিৎকার করে ডাকতো।
বাপি-মামনির এই যে প্রেম খুব মিস করি।
সোনেলার সবাইকেই একদিন খাওয়াবো রেঁধে খুব ইচ্ছে করে। কিন্তু কিভাবে সম্ভব সেটাই জানা নেই।
মহালয়ার শুভেচ্ছা।
লীলাবতী
মহালয়ার গানগুলো অন্যরকম আবেশ এনে দিত ছোটবেলায় নীলাদি। আপনাকেও শুভ মহালয়ার শুভেচ্ছা -{@
সোনেলা আমাদের একসাথে বেঁধে রেখেছে হৃদয়ের সুতোয় (3
নীলাঞ্জনা নীলা
লীলাবতীদি ওই গানগুলোর তুলনা নেই। আর কি রাশভারী কন্ঠ বীরেন্দ্র কৃষ্ণ ভদ্রের। উফ উনার কন্ঠের আমি কি যে ভক্ত।
সোনেলা না থাকলে আজ এই যে পুরোনো স্মৃতিকে মনে করে মন খারাপ কার কাছে শেয়ার করতাম!
সোনেলার সোনারা আমার কষ্টকে আগলে নিয়েছে। 🙂
মহালয়ার শুভেচ্ছা আপনাকেও।
শুন্য শুন্যালয়
পুরনো দিন মনে করে কষ্ট কেন কবিতার নূপূর? ভাবোতো সময়ের সাথে সাথে যদি আমাদের মেমোরিও চলে যেতো, আছেতো সেই সুন্দর স্মৃতিগুলো আজো। এইযে আজকের তোমার মহালয়ার দিন কালকে তো তা নিয়েও আক্ষেপ করবে, বন্ধুদের ঘিরে থাকা, আনন্দ উল্লাস। মহালয়া কতকাল দেখিনা, ইশ সেই ঘুরে ঘুরে মন্ডপ দেখা আর দশমীর দিন নৌকা করে নদীর এ মাথা থেকে ও মাথা। সন্তোস স্যারের বাড়িতে লুচি আলুর দম, নারকেলের নাড়ু। আহা সেই দিন!!
শুভেচ্ছা মহালয়ায় অফুরন্ত নীলাপু। ভালো থেকো, আনন্দে থেকো, সবাইকে আনন্দে রেখো। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
তিলোত্তমা কি করবো বলো, মহালয়া এলেই বাপির বুকে ঝাঁপিয়ে পড়তে ইচ্ছে করে। জানো আমার ছেলে হলো, তখন বাপি তো একমাত্র নাতিকে কোলে নিয়ে কি যে করতো! আমি সরিয়ে দিয়ে বলতাম বাপি এটা আমার জায়গা, তোমার ওই নাতির না। আবার জানো তীর্থ জন্মের পর আমি তীর্থকে আদর করে ডাকলাম ও রে আমার বাপিসোনাটা। বাপি শুনে নিয়ে বললো, “আমার জায়গাটা ওরে দিয়া দিলি?” সেই থেকে আমি তীর্থকে বাপি ডাকিনা। যদিও বাপি মজা করেই বলেছিলো, কিন্তু আমি আর পারিনি ডাকতে। বাপি-মামনির প্রেম সত্যি অন্যরকম আপু। যদি দেখতে বিশ্বাস করো এমন প্রেম আমি কোথাও দেখিনি। কারো মধ্যেই না।
লুচি আমি ভালো বেলতে পারিনা, তবে আলুর দম দারুণ পারি। আমার লুচি পৃথিবীর কোনো দেশের মানচিত্রই হয়না। মহাকাশে চলে যায়, বুঝেছো? 😀 বাহ ভালো মনে করিয়ে দিয়েছো। দেখবো এখানে কোড়ানো নারকেল পাওয়া যায় কিনা! নাড়ু বানাবো তাহলে। 😀 \|/ আর তোমায় দেখিয়ে দেখিয়ে খাবো, কি মজা! \|/
মহালয়ায় অফুরান ভালোবাসা তোমাকে তিলোত্তমা। ভালো থেকে ভালো রেখো। -{@
শুন্য শুন্যালয়
আমার রু্টি, লুচি বেশ গোল হয়, পুরা পূর্নচাঁদের মতো 🙂 তোমার মহাকাশ আলো করে দেবে এক রুটিই হি হি। বজ্জাত মাইয়া, নাড়ু খাবানা, খাবানা বলে দিলাম। পুরা ডাইরেক্ট হয়ে যাবে দেইখো 🙁
তোমার বাপি মামনির কথা শুনে আমার ঈর্ষা হয়, চারিদিকে এতো অপ্রেম দেখেছি, দেখছি। সত্যিকারের প্রেম যেন প্লাটিনামের হরিণ। তোমার বাপি-মামনিকে আমার শ্রদ্ধা জানিও নীলাপু। -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
আমি বাপু আজও শিখতে পারলাম না। আমার ছোট বোন যখন লুচি বেলে, কি সুন্দর ঘুরতে থাকে। আমি জানো হাঁড়িতে ভাত রাঁধতে পারিনা? যতোবার চেষ্টা করেছি এমনই ফেল করেছি যে কি আর বলবো!
নাড়ু খাবো। যদি নারকেল না পাই, তাহলে ক্ষীর দিয়ে নাড়ু বানাবো। আর সোনেলায় পোষ্ট করবো। :p \|/
তিলোত্তমা আসলেই এমন প্রেম আজ কোথাও নেই। আমাদের বাগানের সবাই জানে, এমনকি শমশেরনগর বাজারেও। আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব সবাই জানে বাপি-মামনির প্রেম। এতো চমৎকার রসায়ন আমি কারো মধ্যে দেখিনি। আরে আমার তরুণটা নামেই রোমান্টিক, এমনিতে পাক্কা হিসাবী। ব্যাটারে মাইরাও বদলাইতে পারি নাই :p। একলা একলা ঝগড়া করা যায়, কও? ^:^
মোঃ মজিবর রহমান
মহলয়ার খায়ন্টা কবে দিদি।
আপনার আবেগী লেখা পড়ে খুব ভাল লাগে , খুব মনে পড়ে সুন্দর দিন গুলো কিভাবে বয়ে যায় নিরবে নিশব্দে।
শুভেচ্ছা মহালয়ার।
নীলাঞ্জনা নীলা
বুঝিনি মজিবর ভাই। আপনি কি তারিখ জানতে চেয়েছেন? মহালয়া বাংলাদেশের ভোর রাতে সেপ্টেম্বরের ৩০ তারিখে।
শুভ মহালয়া আপনার জীবনে শুভ বারতা বয়ে নিয়ে আসুক।
মোঃ মজিবর রহমান
ধন্যবাদ দিদি।
নীলাঞ্জনা নীলা
ভালো থাকুন মজিবর ভাই।
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
অতীত কত সুন্দর তাই না মনে হয় ফিরে যাই সেই অতীতে যখন দল বেধে চলে যেতাম কোন পুজো উৎসবে।এখনো যাই তবে মজাটা সেই আগের মতো পাই না।শুভেচ্া পুজোর -{@
নীলাঞ্জনা নীলা
মনির ভাই মজার দিন তো সেই কৈশোর-তারুণ্যেই থেকে গেছে। এখন তো শুধুই সেসব স্মৃতির রেশ নিয়ে চলা।
শুভ মহালয়া। ভালো থাকুন।
ইলিয়াস মাসুদ
প্রতাপের মা,দুধের স্বর জমিয়ে খীর করে রাখত,রাতে যেতাম প্রতাপের সাথে,নিজ হাতে খাওয়াতেন মাসীমা……………
খুব খুব মনে পড়ছে
নীলাঞ্জনা নীলা
ক্ষীরের সন্দেশ আমার খুব পছন্দের ছিলো। আমাদের বাগানে সন্টু কাকুর স্ত্রী কাকীমনি আমার জন্য সবসময় ক্ষীরের সন্দেশ বানাতেন। কতো দূরে ছিলো বাসা, অথচ বানিয়েই নিয়ে আসতেন। তখন ফ্রীজ ছিলোনা, মুড়ির ভেতর রাখতে হতো। হায় দিন কোথায় যে যায়! 🙁
শুভ মহালয়ার শুভেচ্ছা মাসুদ ভাই।
মৌনতা রিতু
সবার শেষে মন্তব্য করতিছি ! মাইর টাইর দিও না। মোর কিন্তু মন খারাপ আছিল।
ও গুরু ! এমন ছন্দ শিখাও না 🙂 ঘি পাঠামু নিজের হাতে বানানো। ঘুষ ঘুষ।
নীলাপু পূজোয় কি কিনেছো ? আমাকে কি দিবা :p মুই কিন্তু নেলচিয়া। \|/
বেশী না একখান তাতের শাড়ি হলেই হবে।সাথে মাটির গয়না। \|/
আর না। মুই ভাগি।
নীলাঞ্জনা নীলা
আমার হাতের ঘি খেলে নিজের হাতের ঘিয়ের স্বাদ ভুলে যাবে। এতোটাই ভালো বানাই আমি। 😀
মাইরের কথা আসছে কেন? আমারে কি মাইরকুট্টা লাগে? :@ কত্তো শান্ত-শিষ্ট-মেজাজ গরম নিষ্ঠ মেয়েটারে এইভাবে পঁচাও?
আর ওই ছন্দ আমি লিখছি নাকি? শিল্পীর নামই মনে নাই। মামনির কন্ঠে শোনা গান ওইটা। বুজছো মাইয়া?
মোটে একখান তাঁতের শাড়ী? আর মাটির গয়না? ক্যান পায়ের নূপুর, তারপর বাটার স্যানডাক এইসব লাগবে না? 😀 :D)
এতো কম জিনিস চাওয়ার জন্য কিচ্ছু দিমুনা। ভাগো। :p 😀