নব্বই দশকে জাতীয় অধ্যাপক আবদুর রাজ্জাককে নিয়ে একটা বই লিখেছিলেন আহমদ ছফা । বইটা খুবই পপুলার—’যদ্যপি আমার গুরু’। ওই বই পড়তে গিয়ে অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের ব্যাপারে জানতে পারি। বইয়ে তার প্রশংসা দেখতে পাই। আবদুর রাজ্জাক ছফার অগোছালো গবেষণার হাল দেখে আনিসুজ্জামানের কথা উল্লেখ করেন। বলেন, ছেলেটার কাজকর্ম গুছানো। যাই করে নোট নিয়ে রাখে। তারও অনেক পর অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের আত্মজীবনী ‘বিপুলা পৃথিবী’ আমার হস্তগত হয়।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, মুক্তিযুদ্ধ, শিক্ষা কমিশন, বঙ্গবন্ধুসহ অনেক কিছুই আছে সেই বইয়ে। আমি এখন পর্যন্ত অধ্যাপক আনিসুজ্জামানের গদ্যের ফ্যান দেখিনি। কিন্তু ওই প্রাচীন গদ্য আমার ভালই লেগেছিল। কাঠখোট্টা, কিন্তু প্রচুর বর্ণনায় ভর্তি। বর্ণনা দিতে কোনো ক্লান্তি ছিল না তার। শিক্ষকতা যে তার পেশা ঠিক বোঝা যেত।
নানা কারণে তাকে আমার ইন্টারেস্টিং লাগে। এক, ভারত সরকার তাকে তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ দিয়েছে। দুই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে অসম্ভব সম্মান করতেন। হাঁটার জন্য প্রধানমন্ত্রী শিক্ষককে লাল গালিচা ছেড়ে দিয়েছেন—এমন ঘটনাও ঘটেছে। আর তিন নম্বর কারণ হল, তিনি প্রচুর বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন।
সেরকমই একটা বই ‘দেয়াল’। হুমায়ূন আহমেদের লেখা শেষ উপন্যাস। এই উপন্যাসের সবচেয়ে দুর্বল জিনিস হল এর ভূমিকা। লেখকের তাড়াহুড়া, গল্পের ফাঁকি, এপিগ্রাম—সব অধ্যাপক আনিসুজ্জামান ভূমিকায় লিখে দিয়েছেন। তো, শুরুতেই স্পয়লার দেয়াতে উপন্যাসটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যদ্দুর মনে পড়ে, এরকম আরেকটা ক্ষতিকর ভূমিকা পেয়েছিলাম আবুল হাসানের কবিতাসমগ্রে। সেই ভূমিকা লিখেছিলেন আমার খুব পছন্দের একজন কবি। শামসুর রাহমান। অনুরোধ ফেরাতে না পেরে বড় মানুষরা কত দুঃখের ঘটনা যে রেখে যান!
যাই হোক, আমাদের জাতীয় উৎসবে, দুঃখে, ক্ষোভে, আনন্দে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান নানাসময় মত প্রকাশ করেছেন। বিশেষ দিনে, বিশেষ সংখ্যায় পত্রিকায় তার লেখা পেতাম। প্রথম আলোতে ‘আমার অভিধান’ নিয়মিত পড়েছি। কাজেও দিয়েছে। সবমিলিয়ে এই শুন্যস্থান মিস করব। আর তার গুণমুগ্ধরা তো চারপাশেই আছেন। হয়তো তাদের মাধ্যমে অধ্যাপক আনিসুজ্জামান আমাদের কাছে ফিরে আসবেন। নিশ্চয়ই কোথাও না কোথাও অধ্যাপক আনিসুজ্জামান প্রাসঙ্গিক থাকার মত কাজ রেখে গেছেন। ৮৪ বছরের জীবন তো আর অত ছোট নয়!
পুনশ্চ : ছবিটি নিয়াজ আহমেদ তুলির আঁকা।
৭টি মন্তব্য
সুপায়ন বড়ুয়া
“নানা কারণে তাকে আমার ইন্টারেস্টিং লাগে। এক, ভারত সরকার তাকে তৃতীয় সর্বোচ্চ বেসামরিক সম্মাননা পদ্মভূষণ দিয়েছে। দুই, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে অসম্ভব সম্মান করতেন। হাঁটার জন্য প্রধানমন্ত্রী শিক্ষককে লাল গালিচা ছেড়ে দিয়েছেন—এমন ঘটনাও ঘটেছে। আর তিন নম্বর কারণ হল, তিনি প্রচুর বইয়ের ভূমিকা লিখেছেন। “
মানুষ বেঁচে থাকেন তাঁর কর্মের গুনে।
জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান তেমন একজন ব্যক্তিত্ত
যাকে আমরা হারালাম এই করোনা কালে।
তাঁর প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা।
ভাল লাগলো। শুভ কামনা।
সুপর্ণা ফাল্গুনী
ওনার ব্যক্তিত্ব টাই আমাকে খুব বেশী টানে। আপনাকে অসংখ্য ধন্যবাদ তাকে নিয়ে লেখার জন্য। ওনার প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা রইল। আপনি ও ভালো থাকবেন সুস্থ থাকবেন
কামাল উদ্দিন
প্রথম আলোতে ওনার লেখা নিয়মিত পড়তাম আমি
তৌহিদ
আমার প্রিয় একজন ব্যক্তিত্ব ছিলেন তিনি। তিনি বেঁচে থাকবেন নিজের কর্মগুনে। আমাদের জন্য অনুকরণীয় এবং প্রেরণাদায়ক একজন মানুষ আনিসুজ্জামান স্যার।
তাঁকে নিয়ে লিখেছেন দেখে ভালো লাগলো। শুভকামনা সবসময়।
ফয়জুল মহী
লেখা অপরিসীম ভালো লাগলো।
আতা স্বপন
আনিসুজ্জামান এর মত আরো অনেক প্রিয় ব্যক্তিত্ব আজ আমাদের মাঝে নেই। আপনার লেখার মাধ্যমে অন্যদের নিয়েও লেখার আগ্রহ সৃষ্টি হবে। ধন্যবাদ।
আরজু মুক্তা
আমার মেয়ে বন্ধুসভার সদস্য। সেই সুত্র ধরে তাঁর একটা বক্তব্য শুনেছিলাম। অমায়িক ভদ্র ছিলেন।