ছায়া একটু শান্ত হলে অনিক কথা শুরু করলো, কেমন আছো?
ছায়া ফ্যালফ্যাল করে তাকালো অনিকের দিকে।
তুমি আমেরিকায় কখন এসেছো?
গতবছর, ছোট করে এক শব্দে জবাব দিলো।
রওশন কই, ও কি এসেছে?
ছায়ার গাল বেয়ে বাধ ভাঙ্গা জল নামলো, আবার ফ্যালফ্যাল করে তাকালো।
অনিক পাশের টেবিলে রাখা টিস্যুবক্সটা নিয়ে ছায়াকে এগিয়ে দিলে ছায়া টিস্যু নিয়ে চোখ মুখ মুছলো।
অনিক আবার জিজ্ঞেস করলো, কি বললেনা রওশন কই?
ছায়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, আপনি কিছুই জানেননা?
কি জানবো, অবাক চোখে তাকালো অনিক।
ও, ও আমাদের বিয়ের ষোল দিন পর রোড এক্সিডেন্ট করে মারা যায়, বলেই হু হু করে কাঁদতে শুরু করলো ছায়া।
অনিক বজ্রাহত হয়ে চেয়ারে এলিয়ে পড়ে, ওর বিশ্বাস হতে চাইনা রওশন নাই, রওশন মারা গেছে, চোখ ভিজে গেলো ওর।
মিনিট পাঁচেক পর ছায়াই প্রশ্ন করলো, আপনি কিভাবে জানলেন?
বড় একটা নিশ্বাস ফেলে অনিক জবাব দিলো, ফেইসবুকে তোমার পোস্ট একজন শেয়ার করেছিলো।
ওহ।
আবার কিছুক্ষণ নীরাবতা, অনিক আবার জিজ্ঞেস করলো, তোমার বাবাকে ভর্তি করেছো?
বাবা, মানে আমার শ্বশুর।
ওহ আচ্ছা, কি সমস্যা উনার?
স্ট্রোক করেছেন, মাথার ধমনিতে ব্লক আছে অপারেশন লাগবে।
দেখতে পারবো উনাকে?
জ্বি আসুন।
রওশনের বাবার নাকে অক্সিজেন, হাতে অনেক গুলো তার লাগানো, স্যালাইন চলছে কিন্তু মৃতপ্রায় অবস্থা।
অনিকের অনেক স্মৃতি রওশন ও তার বাবার সাথে, রওশন খুব অল্প বয়সেই মা হারায়, বাবাই ওর সব কিছু ছিলো, ওরা ঢাকায় থাকতো ভাড়া করা ফ্ল্যাটে, ওখানেই কত রাত কেটেছে রওশনের সাথে, নিজের ঘরে কম রওশনের বাসায় বেশি থাকতো অনিক, রওশনের বাবা অনিককে অনেক স্নেহ করতেন যেন অনিকও উনার ছেলে, কিন্তু ছায়াকে নিয়ে রওশনের সাথে মনোমালিন্য হওয়ার পর অনিক ঐ বাসায় যাওয়া ছেড়ে দেয়, একদিন অনিকের সাথে গুলসান এক নম্বরে দেখা হয়েছিলো, উনি তখন বলেছিলেন উনার মন আর টিকেনা এই শহরে।
অনিক বেরিয়ে এলো আইসিইউ থেকে, পিছন পিছন ছায়াও এলো, দুজনে ওয়েটিং রুমে বসলো।
এমন কেন হলো, নিজে নিজেই স্বগতোক্তি করলো অনিক।
বাবা রওশনকে হারিয়ে পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিলেন, অনেক চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠেন, আমাকে বললেন বাকি পড়াশুনা শুরু করার জন্য, আমি চেয়েছিলাম আবার ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য কিন্তু বাবা বললেন আমেরিকাতে বাকি পড়াশুনা শেষ করতে, বাবা আপনার উদাহরণ দিলেন বলেই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো ছায়া।
হুম বুঝতে পেরেছি, এখন সমস্যা কি মানে টাকার সমস্যা আনকেলের ছিলোনা জানতাম।
এক মিনিট আসছি বলেই ছায়া বেরিয়ে গেলো, কিছুক্ষণ পর দুইটা বড় ওয়ান টাইম কফি কাপ নিয়ে ফিরে এলো, একটা অনিককে দিয়ে নিজে একটা নিয়ে বসলো।
অনিক কাপের ঢাকনা সরিয়ে চুমুক দিয়ে বললো, হুম এখন বলো সমস্যা কি?
বাবা আমাকে দেখতে এসেছিলেন, আসার পরপরই উনার স্ট্রোক হওয়াতে আমি দ্রুত এম্বুলেন্স ডাকি, ওরাই এইখানে ভর্তি করে, এখন এরা বলছে দ্রুত অপারেশন করতে হবে কিন্তু আমার কাছে অত টাকা নেই, যা ছিলো তা অলরেডি ডিপোজিট করেছি, বাবার টাকা তো দেশে রয়ে গেছে।
ওহ বুঝতে পেরেছি, কত ডলার দরকার?
এরা বলছে টোটাল প্যাকেজ পঁচিশ হাজার ডলার, চোখ ছলছল করে উঠলো ছায়ার।
অপারেশন করলে আনকেল ঠিক হয়ে যাবে?
ওরা বলছে হাঁ।
তাই, তা কখন অপারেশন করতে চাই ওরা?
যত দ্রুত সম্ভব।
কেউ কি হেল্প করতে চেয়েছে?
নাহ, এখনো কেউ যোগাযোগ করেনি।
বুঝেছি, এইটা আমেরিকা, এইখানে কেউ কারো নয়।
তাহলে বাবাকে কি বাঁচাতেই পারবোনা, চোখে মুখে হতাশার ছাপ ছায়ার।
আচ্ছা আমি আজ উঠছি, তোমার কোন কন্টাক বা ফোন নাম্বার আছে, অনিক জিজ্ঞেস করলো।
জ্বি, 78★★★★★★।
ওকে আসি।
জ্বি।
অনিক হসপিটাল থেকে বেরিয়ে সোজা বাসায় চলে এলো, প্রথমেই ফ্রেস হয়ে নিয়ে বেডে শুলো রেস্ট করার জন্য।
ও হাসপাতাল থেকে বেরুনোর পর থেকে লতিফ আনকেল মানে রওশনের বাবা আর ছায়ার কথা মাথা থেকে সরাতে পারছেনা, ও একটা বিষয় খেয়াল করেছে, ছায়া সেই আগের ছায়া নেই, কেমন যেন রুগ্ন হয়ে গেছে, চেহারার সেই লাবণ্য কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
সেলফোনের স্কাইপের মিউজিকাল রিংটোনের আওয়াজে সম্বিত ফিরে পেলো অনিক, দ্রুত ফোন তুলে স্কাইপের রিসিভ বাটনে ক্লিক করে হ্যালো বললো।
বাবা অনিক কেমন আছিস?
হাঁ বাবা ভালো আছি, তোমরা সবাই ভালো, মা কেমন আছে?
হাঁ আমরা সবাই ভালো আছি।
বাবা তুমি হটাৎ ফোন দিলে, নিশ্চয় কোন দরকারে?
হাঁরে একটু দরকারেই কল দিয়েছি।
বলো বাবা।
বলছিলাম কি তোর তো বয়স হচ্ছে, বিয়েশাদি করা তো উচিত তোর, এইদিকে আমার শরীর ও সবসময় ভালো থাকেনা, মেয়ে একটা পেয়েছি..
বাবা, আমি এখন বিয়ে করতে পারবোনা, জানো তো কতো ব্যস্ত থাকি আমি, ও হাঁ ভালো কথা তুমি তো লতিফ আনকেলকে চেনো, রওশনের বাবা।
হাঁ কেন কি হয়েছে?
উনার স্ট্রোক হয়েছে, আমেরিকাতেই এসেছিলেন।
কি বলিস, লোকটা অনেক ভালোরে।
হাঁ বাবা, আরেকটি কথা তোমরা যানো কি?
কি জানবো?
রওশন নেই।
অনিকের বাবা চুপ করে থেকে বললেন, হুম জানি, ছেলেটার জন্য কষ্ট হয়।
তুমি জানতে কিন্তু আমাকে একবারও জানালেনা, আশ্চর্য!
দেখ অনিক, তুই তখন পিএইচডির জন্য এনরোল করছিলি, কিভাবে তোকে এই শোকের কথা বলি?
থাক বাবা, এখন লতিফ আনকেলের চিকিৎসার জন্য টাকার দরকার, উনার সব টাকা তো দেশে আর উনি কোমাতে আছেন।
কি বলিস, এখন কি হবে, উদ্বিগ্ন হলেন অনিকের বাবা।
সেটাই ভাবছিলাম।
কতো লাগবেরে, এ প্রায় তিরিশ হাজার ডলার।
আমি তোকে কালকেই পাঠাবো, তুই উনার চিকিৎসা করা।
বাবা তোমার পাঠানো লাগবেনা, আমার কাছে আছে।
তাহলে আর বসে আছিস কেন?
বাবা, ইতস্তত করলো অনিক।
অনিক কয়টা বাজে ওখানে?
রাত প্রায় আটটা।
তাহলে তুই ব্যবস্থা করে দ্রুত উনার চিকিৎসা কর।
ওকে বাবা।
আমি রাখছি বলেই অনিকের বাবা লাইন অফ করে দিলেন।
চলবে
ছবিঃ গুগল।
৩২টি মন্তব্য
তৌহিদ
অনিকের বাবা, আসলেই মহৎপ্রাণ মানুষ। ছায়ার জন্য শুভ কামনা রইলো।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাই সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
জিসান শা ইকরাম
মানুষ মানুষের জন্য।
যাক ছায়ার বাবা রহস্য উদঘাটন হলো,
গল্পের এটি তৃতীয় পর্ব না?
পরের পর্বের অপেক্ষায়……..
ইঞ্জা
ধন্যবাদ ভাইজান ভুল করে পর্বটি লেখা হয়নি, সম্পাদন করে দিলাম।
নিতাই বাবু
অনেকদিন পর আপনার লেখা পড়ে ভালো লাগলো দাদা। আসলে সময়ের অভাবে আপনার অনেক লেখা মিস করে ফেলেছি। তবে এখন থেকে সোনেলায় নিয়মিত থাকবো বলে আশা করি।
ইঞ্জা
খুব খুশি হলাম দাদা, আপনি নিয়মিত হলে সোনেলা পরিবার খুশি হবে।
সাবিনা ইয়াসমিন
রওশনের মৃত্যু অনাকাঙ্ক্ষিত ছিলো আমার কাছে। একটি রহস্যের জোট খুলে গেলো তাহলে। গল্পের মোড় এবার ভিন্ন দিকে যাবে বলে মনে হচ্ছে।
পরের পর্বের অপেক্ষা করছি ভাইজান, একটু তাড়াতাড়ি লিখবেন।
ভালো থাকুন, শুভকামনা।
ইঞ্জা
আপু, জীবনটা বড়ই কঠিন, রওশনের মৃত্যুটিও তেমনি একটি, হয়ত অনাকাঙ্ক্ষিত কিন্তু গল্পের জন্য গুরুত্বব।
আপু আপনি তো জানেন, এমন লেখা লিখতে হলে প্রচুর সময়ের প্রয়োজ, আমিও ব্যস্ত থাকি, এসবের মাঝে থেকে গল্প লিখছি আপনাদের উৎসাহের কারণে, পাশে থেকে অনুপ্রাণিত করবেন এই অনুরোধ রইলো ভাইয়ের।
মোঃ মজিবর রহমান
আপনার এই লেখাটা আগের লেখার থেকে জমাট মনে হচ্ছে। তবে আরো জটিল চাই। দ্রত লেখা চাই।
ইঞ্জা
ভাই গল্প হবে জীবনের জন্য বা জীবনই গল্প হয় যা কখনো জঠিল হয় বা কখনো সরল, শুধু বলবো গল্প মাত্র প্রথম ধাপে, একে এগুতে দিন, দেখবেন হয়ত জঠিলতায় ভরপুর হয়ে যাচ্ছে, ধন্যবাদ।
মোঃ মজিবর রহমান
অপেক্ষায় থাকলাম।
ইঞ্জা
শুভেচ্ছা
বন্যা লিপি
অপেক্ষায় আছি কিন্তু!! যদিও প্রথম পর্ব পড়া হয়নি। লোকসান খুব বেশি হয়নি বলে মনে হচ্ছে। বেশি অপেক্ষায় রাখবেননা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ আপু, প্রথম পর্ব আমার ব্লগ চেক করলেই পাবেন, এছাড়া গল্প পড়ার ইচ্ছে থাকলে ব্লগেই পাবেন আমার লেখা “ভালোবাসি তোমায়”, ” নদী”, কিন্তু বলে রাখি লেখা গুলো খুবই ব্লগপ্রিয় হলেও আমার প্রথম দিককার গল্প, ফলশ্রুতিতে কোন এডিটিং হয়নি।
ধন্যবাদ আবা।
সাবিনা ইয়াসমিন
ইঞ্জা ভাইজান , কোথায় আপনি ? কমেন্টের উত্তরও কি পরের পর্বে দিবেন ?
ইঞ্জা
সরি আপু, শারীরিকভাবে অসুস্থ ছিলাম বলে আজ কমেন্ট দিলাম।
সাবিনা ইয়াসমিন
আহারে, সরি আপনাকে অসুস্থ অবস্থায় টেনে আনলাম। আবার ডাকলেও এভাবেই আসবেন কিন্তু 😁
ইঞ্জা
আপু, আপনারা এইভাবে বললে না এসে পারি। 😁
ছাইরাছ হেলাল
তৃতীয় পর্বে ছায়া ও অনিককে জুড়ে দিয়ে প্যাঁচ লাগিয়ে দিন!!
ইঞ্জা
এইটাই ছিলো ৩য় পর্ব, প্যাচানোর সময় আরো সময় লাগবে ভাইজান, মাত্র তো গল্প শুরু হচ্ছে। 😆
ছাইরাছ হেলাল
ভুল হয়ে গেছে, চতুর্থ পর্বের অপেক্ষা,
সে যাই হোক, হুট করে শেষ করা যাবে না।
ইঞ্জা
চেষ্টা করবো ভাই।
মাহমুদ আল মেহেদী
শুভ কামনা যেমন গল্পটার জন্য তেমনই ছায়ার জন্য সাথে লেখকের জন্য তো আবশ্যই শুভকামনা।
ইঞ্জা
ধন্যবাদ অফুরান ভাই
শুন্য শুন্যালয়
নতুন পর্বটিতে আগের পর্বের লিঙ্ক দিয়ে দিলে ভালো হয়না ভাইয়া? আমার মতো বুড়োর জন্য শুরু থেকে পড়তে সুবিধা হতো। হুট করে এটা পড়ে কিছুই বুঝতেছিনা, কি হচ্ছে। 🙁
ইঞ্জা
সরি আপু, দেখি আগামীবার থেকে লিংক দেওয়ার চেষ্টা করবো, পাশে থেকে অনুপ্রাণিত করবেন প্লিজ।
রেজওয়ান
খুব কম মানুষই সাহায্য করে ইদানিং😭অনিকের বাবা অনেক ভাল মানুষ😇
ইঞ্জা
খুব সত্য বলেছো রেজওয়ান, আমার কথা হলো তোমার থাকলে তুমি কেন মানুষের জন্য করবেনা, এমনি একজন অনিকের বাবা।
ধন্যবাদ
কামাল উদ্দিন
মনে হচ্ছে পুরোনো প্রেম আবারও জোড়া লাগতে পারে। কিজানি, যাই হোক সামনে এগিয়ে গিয়ে দেখি।
ইঞ্জা
জোড়া লাগবে কিনা পরের পর্ব গুলো আপনাকে জানাবে নিশ্চয়, গল্প পড়ছেন দেখে খুব আনন্দিত হলাম ভাই, ধন্যবাদ।
কামাল উদ্দিন
শুভেচ্ছা
ইঞ্জা
💖