এক মুঠো ভালোবাসা (৩য়)

ইঞ্জা ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯, রবিবার, ০৭:১২:৫৬অপরাহ্ন গল্প ৩২ মন্তব্য


ছায়া একটু শান্ত হলে অনিক কথা শুরু করলো, কেমন আছো?
ছায়া ফ্যালফ্যাল করে তাকালো অনিকের দিকে।
তুমি আমেরিকায় কখন এসেছো?
গতবছর, ছোট করে এক শব্দে জবাব দিলো।
রওশন কই, ও কি এসেছে?
ছায়ার গাল বেয়ে বাধ ভাঙ্গা জল নামলো, আবার ফ্যালফ্যাল করে তাকালো।
অনিক পাশের টেবিলে রাখা টিস্যুবক্সটা নিয়ে ছায়াকে এগিয়ে দিলে ছায়া টিস্যু নিয়ে চোখ মুখ মুছলো।
অনিক আবার জিজ্ঞেস করলো, কি বললেনা রওশন কই?
ছায়া কিছুক্ষণ চুপ করে থেকে বললো, আপনি কিছুই জানেননা?
কি জানবো, অবাক চোখে তাকালো অনিক।
ও, ও আমাদের বিয়ের ষোল দিন পর রোড এক্সিডেন্ট করে মারা যায়, বলেই হু হু করে কাঁদতে শুরু করলো ছায়া।
অনিক বজ্রাহত হয়ে চেয়ারে এলিয়ে পড়ে, ওর বিশ্বাস হতে চাইনা রওশন নাই, রওশন মারা গেছে, চোখ ভিজে গেলো ওর।
মিনিট পাঁচেক পর ছায়াই প্রশ্ন করলো, আপনি কিভাবে জানলেন?
বড় একটা নিশ্বাস ফেলে অনিক জবাব দিলো, ফেইসবুকে তোমার পোস্ট একজন শেয়ার করেছিলো।
ওহ।
আবার কিছুক্ষণ নীরাবতা, অনিক আবার জিজ্ঞেস করলো, তোমার বাবাকে ভর্তি করেছো?
বাবা, মানে আমার শ্বশুর।
ওহ আচ্ছা, কি সমস্যা উনার?
স্ট্রোক করেছেন, মাথার ধমনিতে ব্লক আছে অপারেশন লাগবে।
দেখতে পারবো উনাকে?
জ্বি আসুন।

রওশনের বাবার নাকে অক্সিজেন, হাতে অনেক গুলো তার লাগানো, স্যালাইন চলছে কিন্তু মৃতপ্রায় অবস্থা।
অনিকের অনেক স্মৃতি রওশন ও তার বাবার সাথে, রওশন খুব অল্প বয়সেই মা হারায়, বাবাই ওর সব কিছু ছিলো, ওরা ঢাকায় থাকতো ভাড়া করা ফ্ল্যাটে, ওখানেই কত রাত কেটেছে রওশনের সাথে, নিজের ঘরে কম রওশনের বাসায় বেশি থাকতো অনিক, রওশনের বাবা অনিককে অনেক স্নেহ করতেন যেন অনিকও উনার ছেলে, কিন্তু ছায়াকে নিয়ে রওশনের সাথে মনোমালিন্য হওয়ার পর অনিক ঐ বাসায় যাওয়া ছেড়ে দেয়, একদিন অনিকের সাথে গুলসান এক নম্বরে দেখা হয়েছিলো, উনি তখন বলেছিলেন উনার মন আর টিকেনা এই শহরে।
অনিক বেরিয়ে এলো আইসিইউ থেকে, পিছন পিছন ছায়াও এলো, দুজনে ওয়েটিং রুমে বসলো।
এমন কেন হলো, নিজে নিজেই স্বগতোক্তি করলো অনিক।
বাবা রওশনকে হারিয়ে পাগল প্রায় হয়ে গিয়েছিলেন, অনেক চিকিৎসার পর সুস্থ হয়ে উঠেন, আমাকে বললেন বাকি পড়াশুনা শুরু করার জন্য, আমি চেয়েছিলাম আবার ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে ভর্তি হওয়ার জন্য কিন্তু বাবা বললেন আমেরিকাতে বাকি পড়াশুনা শেষ করতে, বাবা আপনার উদাহরণ দিলেন বলেই কিছুক্ষণ চুপ করে থাকলো ছায়া।
হুম বুঝতে পেরেছি, এখন সমস্যা কি মানে টাকার সমস্যা আনকেলের ছিলোনা জানতাম।

এক মিনিট আসছি বলেই ছায়া বেরিয়ে গেলো, কিছুক্ষণ পর দুইটা বড় ওয়ান টাইম কফি কাপ নিয়ে ফিরে এলো, একটা অনিককে দিয়ে নিজে একটা নিয়ে বসলো।
অনিক কাপের ঢাকনা সরিয়ে চুমুক দিয়ে বললো, হুম এখন বলো সমস্যা কি?
বাবা আমাকে দেখতে এসেছিলেন, আসার পরপরই উনার স্ট্রোক হওয়াতে আমি দ্রুত এম্বুলেন্স ডাকি, ওরাই এইখানে ভর্তি করে, এখন এরা বলছে দ্রুত অপারেশন করতে হবে কিন্তু আমার কাছে অত টাকা নেই, যা ছিলো তা অলরেডি ডিপোজিট করেছি, বাবার টাকা তো দেশে রয়ে গেছে।
ওহ বুঝতে পেরেছি, কত ডলার দরকার?
এরা বলছে টোটাল প্যাকেজ পঁচিশ হাজার ডলার, চোখ ছলছল করে উঠলো ছায়ার।
অপারেশন করলে আনকেল ঠিক হয়ে যাবে?
ওরা বলছে হাঁ।
তাই, তা কখন অপারেশন করতে চাই ওরা?
যত দ্রুত সম্ভব।
কেউ কি হেল্প করতে চেয়েছে?
নাহ, এখনো কেউ যোগাযোগ করেনি।
বুঝেছি, এইটা আমেরিকা, এইখানে কেউ কারো নয়।
তাহলে বাবাকে কি বাঁচাতেই পারবোনা, চোখে মুখে হতাশার ছাপ ছায়ার।

আচ্ছা আমি আজ উঠছি, তোমার কোন কন্টাক বা ফোন নাম্বার আছে, অনিক জিজ্ঞেস করলো।
জ্বি, 78★★★★★★।
ওকে আসি।
জ্বি।
অনিক হসপিটাল থেকে বেরিয়ে সোজা বাসায় চলে এলো, প্রথমেই ফ্রেস হয়ে নিয়ে বেডে শুলো রেস্ট করার জন্য।
ও হাসপাতাল থেকে বেরুনোর পর থেকে লতিফ আনকেল মানে রওশনের বাবা আর ছায়ার কথা মাথা থেকে সরাতে পারছেনা, ও একটা বিষয় খেয়াল করেছে, ছায়া সেই আগের ছায়া নেই, কেমন যেন রুগ্ন হয়ে গেছে, চেহারার সেই লাবণ্য কোথায় যেন হারিয়ে গেছে।
সেলফোনের স্কাইপের মিউজিকাল রিংটোনের আওয়াজে সম্বিত ফিরে পেলো অনিক, দ্রুত ফোন তুলে স্কাইপের রিসিভ বাটনে ক্লিক করে হ্যালো বললো।
বাবা অনিক কেমন আছিস?
হাঁ বাবা ভালো আছি, তোমরা সবাই ভালো, মা কেমন আছে?
হাঁ আমরা সবাই ভালো আছি।
বাবা তুমি হটাৎ ফোন দিলে, নিশ্চয় কোন দরকারে?
হাঁরে একটু দরকারেই কল দিয়েছি।
বলো বাবা।
বলছিলাম কি তোর তো বয়স হচ্ছে, বিয়েশাদি করা তো উচিত তোর, এইদিকে আমার শরীর ও সবসময় ভালো থাকেনা, মেয়ে একটা পেয়েছি..
বাবা, আমি এখন বিয়ে করতে পারবোনা, জানো তো কতো ব্যস্ত থাকি আমি, ও হাঁ ভালো কথা তুমি তো লতিফ আনকেলকে চেনো, রওশনের বাবা।
হাঁ কেন কি হয়েছে?
উনার স্ট্রোক হয়েছে, আমেরিকাতেই এসেছিলেন।
কি বলিস, লোকটা অনেক ভালোরে।
হাঁ বাবা, আরেকটি কথা তোমরা যানো কি?
কি জানবো?
রওশন নেই।

অনিকের বাবা চুপ করে থেকে বললেন, হুম জানি, ছেলেটার জন্য কষ্ট হয়।
তুমি জানতে কিন্তু আমাকে একবারও জানালেনা, আশ্চর্য!
দেখ অনিক, তুই তখন পিএইচডির জন্য এনরোল করছিলি, কিভাবে তোকে এই শোকের কথা বলি?
থাক বাবা, এখন লতিফ আনকেলের চিকিৎসার জন্য টাকার দরকার, উনার সব টাকা তো দেশে আর উনি কোমাতে আছেন।
কি বলিস, এখন কি হবে, উদ্বিগ্ন হলেন অনিকের বাবা।
সেটাই ভাবছিলাম।
কতো লাগবেরে, এ প্রায় তিরিশ হাজার ডলার।
আমি তোকে কালকেই পাঠাবো, তুই উনার চিকিৎসা করা।
বাবা তোমার পাঠানো লাগবেনা, আমার কাছে আছে।
তাহলে আর বসে আছিস কেন?
বাবা, ইতস্তত করলো অনিক।
অনিক কয়টা বাজে ওখানে?
রাত প্রায় আটটা।
তাহলে তুই ব্যবস্থা করে দ্রুত উনার চিকিৎসা কর।
ওকে বাবা।
আমি রাখছি বলেই অনিকের বাবা লাইন অফ করে দিলেন।

চলবে
ছবিঃ গুগল।

৭৫৯জন ৭৪৫জন
0 Shares

৩২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ