রওশনের বাবাকে আইসিইউতে দিয়ে অনিক বেড়িয়ে এলো ছায়াকে নিয়ে, গাড়ীতে উঠেই জিজ্ঞেস করলো, কোথায় যেতে হবে?
ক্যানমোরে, ছায়া জবাবে বললো।
অনিক গাড়ী ড্রাইভ করে এগুলো সাইড রোড ধরে, ডানে চেক করে ইন্ডিকেটর অন করে হাইওয়েতে উঠে স্পীড বাড়ালো।
অনিক আবার জিজ্ঞেস করলো, ক্যানমোরের কোন রোডে থাকো?
এইটত স্ট্রিট, সিক্সত লেইন।
অনিক অবাক হয়ে বললো, কি বলো?
কেন কোন অসুবিধা?
না না কিসের অসুবিধা, তা কতদিন ধরে আছো ওখানে?
তা প্রায় দুই মাস।
আগে কোথায় ছিলে?
ব্যাটারি পার্কের পাশেই ছিলাম।
ওহ তাই বলি আমার এলাকায় এলে আর আমিই জানিনা, অনিক হেসে দিয়ে বললো।
মানে, ছায়া অবাক হলো।
আমি থার্ড লেইনে থাকি।
ওহ তাই?
হুম।
তা তোমার বাড়ীর লোকদের সাথে যোগাযোগ আছে?
নাহ, বাবা ছাড়া আমার কেই নেই।
কেন তোমার ভাই দুইটা কই?
আপনার মনে আছে?
হুম।
রওশন চলে যাবার পর দেখাও করতে আসেনি তারা, বাবা ইন্তেকাল করার পর ওরা বাবার সব সম্পত্তি থেকে আমাকে সরিয়ে সব নিয়ে নেয়।
আশ্চর্য!
অনিক ক্যানমোরে রোডে উঠে রাইট টার্ন নিয়ে এগুলো সিক্সত স্ট্রিটের দিকে, সেইখানে পোঁছেই জিজ্ঞেস করলো, বাসা কোনটা?
আরেকটু সামনে।
অনিক ধীরে গাড়ী চালাতে লাগলো।
ঐ যে, ওটাতেই নামবো।
অনিক গাড়ী দ্বার করে দরজা খুলে নামলো, ছায়াও নেমে দাঁড়ালো।
আমি এইখানে পেয়িং গেস্ট হিসাবে থাকি।
তাই।
হুম।
আপনাকে ধন্যবাদ।
ধন্যবাদের কিছুই নেই, আমি আসি আজ।
ওকে বাই, ছায়া হাত নাড়ালো।
অনিক গাড়ীতে উঠে টান দিলো সামনের রোড ধরে, ছায়া কিছুক্ষণ অনিকের গমন পথে তাকিয়ে থেকে বাসার উদ্দেশ্যে এগুলো।
বাসার দরজায় কলিংবেল চাপ দিয়ে অপেক্ষা করতে লাগলো, একটু পরেই বাড়ীর নিগ্রো মহিলা দরজা খুলেই চিৎকার করে ইংরেজিতে বললো, তুমি এতোদিন পরে কি জন্য আসছো?
মানে, ছায়া অবাক হলো?
তুমি গতমাসের ভাড়া বাকি রেখেছো, আমি তোমাকে রাখবোনা, তুমি আমার টাকা দিয়ে বেরোও, আমি অন্যজনকে ঘর দিয়ে দিয়েছি।
এখন ছায়া একটু গলা চড়ালো, তুমি দেখেছো আমার বাবাকে আমি হসপিটালে নিয়ে গিয়েছিলাম, উনার অবস্থা সিরিয়াস, তোমার টাকা আমি দিয়ে দিচ্ছি কিন্তু এতো রাতে তুমি আমাকে বের করতে পারোনা।
নিগ্রো মহিলা আরেক ডিগ্রি গরম, তুমি আমাকে শেখাতে এসোনা, আমি জানি আমি কি পারি, তুমি আমার পেমেন্ট করে তোমার লাগেজ নিয়ে যাও, আমি বেইসমেন্টে ফেলে রেখেছি।
ছায়া নিজেকে অসহায় বোধ করলো।
অনিক ছায়াকে ড্রপ করে এগুলো সামনের দিকে, হটাৎ মনে পড়লো বাসায় মাছ, মাংস কিছুই নেই, মনে মনে বললো সামনের সুপারশপ থেকে নিয়ে নেবো।
সুপারশপের সামনে এসে পার্কিংয়ে গাড়ী রেখে ট্রলি নিয়ে এগুলো এন্ট্রান্সের দিকে।
ভিতরে প্রবেশ করে এগুলো গ্রোসারি সেকশনে, প্রথমে নিলো মাছ আর মাংস, মুরগী, এরপরে মসলা, ডাল যা লাগে তাই নিলো, এরপর এগুলো ফ্রুট সেকশনে, সেখান থেকে পিচ, আপেল, মুসাম্বি সহ বিভিন্ন ফল কিনলো, সাথে আইস্ক্রিম, রেডওয়াইন, ড্রাই জিন, বদকা নিয়ে বিল পে করে বেরিয়ে এলো।
সব কিছু পিছনের সিট রেখে গাড়ী স্টার্ট করে আবার ফিরে চললো ফিরতি পথে।
ও প্রায় এইখান থেকেই দরকারী সব কিনে, প্রায় হেঁটেই আসে বন্ধের দিনে।
ছায়ার বাসা দেখা যাচ্ছে দূর থেকে, অনিক অবাক হলো ছায়াকে কয়েকটা লাগেজ, ট্রাভেল ব্যাগ সহ রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে, অনিক দ্রুত ছায়ার পাশে এসে গাড়ী দাঁড় করিয়ে গাড়ী থেকে নেমে এলো।
ছায়ার চোখে পানি দেখে জিজ্ঞেস করলো, কি হয়েছে, তুমি কই যাও?
আমাকে ঘরের মালিক বের করে দিয়েছে এক সপ্তাহ আসিনি বলে, বলেই ফুঁফিয়ে কাঁদতে লাগলো ছায়া।
মানে কি, এ কেমন কথা, তুমি পুলিশে খবর দাওনি?
না দিয়ে লাভ হবেনা, বড়ই ঝামেলাবাজ মহিলা।
তাহলে এখন কই যাবে?
জানিনা।
অনিক হাত ঘড়ি দেখলো এক নজর এরপর বললো, আচ্ছা তুমি গাড়ীতে উঠো আমি লাগেজ গুলো তুলে নিচ্ছি, বলেই অনিক নিজের হাতের রিমোর্ট কন্ট্রোলে চাপ দিয়ে পিছনের ডালা খুলে ছায়ার লাগেজ গুলো তুলতে শুরু করলো।
অনিক, আপনাকে আর কষ্ট দিতে চাচ্ছিনা।
হাঁ হাঁ বুঝেছি, আগে উঠো।
অনিকের বিল্ডিংয়ের সামনে এসে অনিক গেইটের পাশে রাখা কার্ড চেক মেসিনে ওর ফ্ল্যাট কার্ড দিতেই গেইট খুলে গেল, কার্ডটা ফেরত নিয়ে ভিতরে গাড়ী বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ালো।
তুমি নামো, আমি লাগেজ গুলো নামিয়ে নিচ্ছি।
ছায়া গাড়ী থেকে নেমে দাঁড়ালে অনিক পিছনের ডালা থেকে ছায়ার লাগেজ গুলো নামিয়ে মেইন ডোরের সামনে রেখে পিছনের সিট থেকে গ্রোসারি আইটেম গুলো নামিয়ে রেখে গাড়ী পার্কিংয়ে রেখে আসলো।
এরপর ছায়াকে নিয়ে উপরে উঠে এলো নিজ ফ্ল্যাটে।
তুমি বসো আমি বাকি জিনিসপত্র নিয়ে আসছি, বলেই অনিক বেড়িয়ে গেলো লিফটের উদ্দেশ্যে।
ছায়া ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো অনিকের বাসা, ব্যাচেলর হিসাবে অনিক বেশ গোছালো, সব কিছুই ঘুচিয়ে রেখেছে।
ইতিমধ্যে অনিক সব কিছু নিয়ে উপরে উঠে এলো, অনিককে দেখে ছায়া ইতস্তত করে বললো, আমি আপনাকে বিপদে ফেলে দিয়েছি।
অসুবিধা নেই, আগে আনকেল সুস্থ হয়ে উঠুক এরপর দেখা যাবে বলেই অনিক সব কিছু ঘুচিয়ে রেখে ছায়াকে বললো, আসো তোমাকে রুম দেখিয়ে দিই।
ছায়ার লাগেজ গুলো উঠিয়ে নিয়ে অনিক একটা রুমে এসে সব রাখলো, এই রুমটাতে একবার আব্বা আম্মা এসে থেকেছিলেন, অবশ্য আমি প্রায় সব সময় পরিস্কার রাখি, বাথরুমে সব দেওয়া আছে তুমি ফ্রেস হয়ে নাও, আর হাঁ কি খাবে বলো?
আপনি যা খাওয়াবেন তাই খাবো।
ওকে তুমি ফ্রেস হতে নাও, আমি যাচ্ছি।
চলবে….
ছবিঃ গুগল।
৩১টি মন্তব্য
মোঃ মজিবর রহমান
ভাই প্রথমেই বলি এত সুন্দর একটি লেখায় ভাংগা ছবি দিলেন কেন???
পরের পর্বের …………।।[ছবি মুছে ফেলা হয়েছে]
ইঞ্জা
ভাই, গল্পের প্রয়োজনে যখন একটা ছবি দিই, সেই ছবির অন্তর্নিহিত অর্থও থাকে, যেমন ছায়াকে চিন্তা করুন, প্রথম থেকেই তো পড়ছেন, ওর জীবনটাই যে ভেঙ্গে গেছে অনেক গুলো টুকরোই।
মোঃ মজিবর রহমান
হ্যাঁ তা তো পড়ছি কিন্তু কোথায় যায় বলুন্তো।
ইঞ্জা
কোথায় যাবেন, সাথেই থাকুন ভাই। 😆
মনির হোসেন মমি
ঘটনা জমছে না কেন[ছবি মুছে ফেলা হয়েছে] এই কিল ঘুসিটুসি একটু আরেকটু।চলুক ভাল লাগছে।[ছবি মুছে ফেলা হয়েছে]
ইঞ্জা
ভাই, বড় গল্পের শুরুতেই যদি জমতে শুরু করে তাহলে তো আর গল্প হবেনা, এখনো যা চলছে তা মাত্র সূচ, বুঝতে পেরেছেন?
মাহমুদ আল মেহেদী
দারুন উপভোগ করছি গল্পটা। চলুক।
ইঞ্জা
আপ্লুত হলাম ভাই, ধন্যবাদ। 😍
মুক্তা মৃণালিনী
দারুন চমৎকার।লেখকের অনুভূতিকে অনুভব করছি …..
ইঞ্জা
ধন্যবাদ প্রিয় আপু, আপ্লুত করলেন।
নীরা সাদীয়া
গল্পটা শুরু থেকেই আমার খুব ভালো লাগছিলো। কিন্তু মাঝে কটা পর্ব মিস করে গেছি।
ইঞ্জা
আপু, আমার টাইমলাইনে পাবেন। 😆
ছাইরাছ হেলাল
বুঝলাম, বমাল তুলে এনেছেন।
চলুক।
ইঞ্জা
😂 জ্বি ভাইজান, উপায়ই ছিলোনা। 😜
রিমি রুম্মান
পরের পর্বের জন্যে আকর্ষনটুকু রেখে দিলেন ! সুন্দরভাবে এগিয়েছে লেখাটি।
ইঞ্জা
খুব খুশি হলাম আপু, এমন মন্তব্য পেলে লিখতেও ভালো লাগে। 😆
তৌহিদ
এতদিন পরে পরে লেখা দেন কেন দাদা? অপেক্ষায় থাকতে ভালো লাগেনা।
এই গল্পটি আমার দারুন লাগছে কিন্তু।
আর হ্যা এই যে দুজনে এক বাসায় আসলো, এর পর কিছু হয়েছিল কি??😜😜
পরের পর্বের অপেক্ষায়।
ইঞ্জা
ভাই আপনিও তো লেখেন, বলুন তো একটি গল্প লিখতে কতটুকু সময় লাগে, হুম নিশ্চয় বুঝতে পারছেন এখন কেন দেরি হয় লেখা পোস্ট করতে।
ওরা বাসায় ফিরে আসার পর কি আর হবে, খেয়ে দেয়ে ঘুম দেবে। 😜
তৌহিদ
😜😜😜
ঘুম ছাড়া আর কিছু নাই? একটু টিভিও দেখবে না??
সাবিনা ইয়াসমিন
এবার একটু বেশি দেরি করলেন ভাইজান। ছায়াকে অনিকের ছায়ায় রেখে দিয়ে ভালোই করেছেন, নয়তো অনিকের ছায়াকে খুঁজে আনতে সময় লাগতো। আগামী পর্বে দুঃখ দুঃখ ভাব মনে হয় একটু কম থাকবে।
পরের পর্বের জন্য অপেক্ষা রাখলাম। শুভকামনা ভাইজান, ভালো থাকবেন 🌹🌹
ইঞ্জা
কে কার ছায়া এতো তাড়াতাড়ি বুঝলেই তো গল্প শেষ হয়ে যাবে আপু, দেখি আগামীতে কি হয়। 😆
শুন্য শুন্যালয়
অনিকের বাড়ি নেবেন বলে এইভাবে অন্যায্যভাবে রাত্রিবেলা বের করে দিলেন ছায়াকে?
তা ভালোই হয়েছে। শপিং টপিং তো করাই আছে, এবার চুলায় চিকেন বিরিয়ানিটা তুলে দিন।
আমি আসতেছি।
ইঞ্জা
😀😃😄
এইভাবে দোষারোপ আমাকে না করে নিগ্রো মহিলাটির বিচার করুন, কেমন এই অনাচার রাত-বিরেতে এইভাবে কাউরে কেউ বের করে দেয়, ভাগ্যিস আমাদের নায়ক রে রে রে করে এসে পড়েছিলো, ব্যাস বগল দাবা করে নিয়ে গেল নিজ ঘরে, কিন্তুক বিরিয়ানি ক্যাডায় ফাঁকাবেক আফা? 😵
ব্লগার সজীব
আগের সব পর্বই পড়েছি। সুন্দর ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে গল্প। পরের পর্বের অপেক্ষায় থাকলাম।
ইঞ্জা
পরের পর্ব দেওয়া হয়েছে ভাই
রেজওয়ান
অসাধারণ❤কথা বাড়াবো না পরের পর্বে যাচ্ছি😇
ইঞ্জা
পড়তে থাকো ভাই, সাথেই আছি।
কামাল উদ্দিন
এতো দেখছি সাপে বর হয়ে গেলো ছায়ার জন্য। তবে আমার মনে শংকা হচ্ছে আপনার এতোগুলো পর্বে নিশ্চয়ই ওদেরকে আপনি অনেক ঝামেলায় ফেলেছেন। ঠিক আছে আমি চলে আসছি সব দেখতে।
ইঞ্জা
পড়ুন ভাই, গল্পে গল্পে সময় কাটুক আপনার। 😍
কামাল উদ্দিন
চেষ্টা করছি পড়তে, আসলে আমি হলাম আলসে মানুষ
ইঞ্জা
ধীরে আগান ভাই।