আম্মা , ও আম্মা! দেইখ্যা যান। বাদলেরে কে জানি উপরে টাইন্যা নিয়ে যাচ্ছে!!
সবাই তখন ভাত ঘুম দিচ্ছিলাম ! এমন চিৎকারে শুনে, মা বলছে,”পা ধরে থাক!আমরা আসছি!”
এসে দেখি ,সত্যিই তো বাদল বিছানা থেকে একটু উপরে উঠে আছে,আর নুরি পা ধরে আছে। মা বলছে,জ্বীন/পরি মনে হয়।আম্মা দৌড়ে ওযু করে কোরআন শরীফ নিয়ে জ্বীন সূরা পড়া আরম্ভ করলেন।কিছুক্ষণের মধ্যেই বাদলের দেহটা ধপাস করে নীচে পরে গেলো।আর ও অজ্ঞান হয়ে গেলো!
আম্মা চিল্লাচ্ছে, তোদের আব্বারে ফোন কর্ ।কবিরাজ নিয়ে আসুক।
আব্বা চলে এলেন ! কবিরাজ সাথে তুলারাশির জাতক।তুলারাশি ছাড়া নাকি পরি নামানো যায় না! কবিরাজ বাদলের মুখে কি সব পড়ে ফুঁ দিলেন।ও জেগে উঠলো।এরপর তাকে মাটিতে বসায়,ওর চারিদিকে দাগ দেয়া হলো।
কবিরাজ বলে চলেছেন,আল্লাহর কসম,তুমি যদি তোমার ভালো চাও,তাহলে ভর কর।তুলারাশি কাঁপা শুরু করলো।আমরা ভয়ে এককোণে দাঁড়ালাম! কাঁপাকাঁপির মধ্যেই পরি নামলো।
এসে খটখটে গলায় বললো,কেনো ডেকেছেন?আমার তাড়া আছে!যা বলার তাড়াতাড়ি বলেন!
কবিরাজ বলে,তোমার তাড়া আছে?তাহলে এই মাসুম ছেলেটাকে যণ্ত্রণা করতে এসেছিলে কেনো?
পরি বলে,ওকে আমার পছন্দ! বিয়ে করতে চাই!
ইতিমধ্যে বাড়ি ভর্তি লোক জমা হয়ে দেখতেছিলো!সবাই হেসে উঠলো!
কবিরাজ বলে,তুমি তো পরীর দেশে থাকো।একে বিয়ে করে কি করবে?
কেনো? আমাদের দেশে নিয়ে যাবো!
সাবাশ ,কবিরাজ বলে।ভালোই প্রেম! দাঁড়াও দেখাচ্ছি। কাকে জানি,ছোট বোতল একটু পানিসহ আনতে বললেন!
উনি বোতলটা তুলারাশির জিহবার নীচে দিয়ে,ইল্লাল্লাহ্ বললেন।
আর পরি চিল্লাচ্ছে।না, যাবো না!আমাকে বন্দি করিয়েন না! আমি আমার রাজ্যে চলে যাবো।
কবিরাজ বলে,তোমাদের ছলচাতুরি জানা শেষ! তোমরা তোমাদের দেশে ভালো কাজ করোনা বলে,তোমাদের রাজা হাঁটু পর্যন্ত কেটে ছেড়ে দিয়েছে।
পরি তাও চিল্লাচ্ছে।না, বন্দি করিয়েন না!
এবার কবিরাজ তিনবার ইল্লাল্লাহ্ বলে ,ওকে বোতলে ঢুকালেন। আর বললেন,এখানে কেউ কন্যারাশি আছে? শুধু তারা একে দেখতে পারবে!
আব্বা বলেন,আমার বড় মেয়ে কন্যারাশি!
আমি তো ভয়ে অস্থির।আব্বা এসব কি বলে!সবাই আমার নাম ধরে ডাকছে।আসো আসো! দেখোতো কেমন দেখতে? আব্বার হাত ধরে,ভীরু পায়ে এগিয়ে এসে দেখি, কালো স্কার্ট পরা এক মেয়ে।মিটমিট করে তাকিয়ে হাসছে!
কবিরাজ আমায় বলে,মা, পা দেখতে পাচ্ছো?
আমি বলি না !!
উনি বলে দেখছেন! ওদের রাজ্যে ও ভালো কাজ করেনি!তাই পা কেটে রাজা ছেড়ে দিয়েছেন ।
যাই হোক ,পরে বোতলটাকে সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে রাখা হলো!
কবিরাজ বললো,যতদিন দুনিয়া ধ্বংস হবেনা,ও এভাবেই বন্দি থাকবে!!
সবাই যে যার কাজে গেলো। বাদল ও মুক্তি পেলো পরির কাছ থেকে।
কিন্তু এরপর থেকে আমি একলা ঘুমাতে পারিনা! মাকেও ভয় লাগে !
আব্বার পাশে গিয়ে ঘুমাতাম! রাতের শান্তির ঘুম হারাম করলো ঐ পরি! একা বের হতে পারিনা শান্ত দুপুরবেলা ও! !
২৫টি মন্তব্য
নীরা সাদীয়া
সত্যিই এমনটা ঘটতে পারে?
বেশ অবাক লাগলো, আবার মজাও পেলাম।
অতি প্রাকৃত গল্পের মজাই আলাদা।
আরজু মুক্তা
ভালো লাগলো।আমাদের জীবনের ঘটনাগুলোই গল্প!
শামীম চৌধুরী
আগে মানুষ কতই না বোকা ছিলো। বিজ্ঞান সম্মত কোন মাধ্যম না থাকার দরুন গ্রাম্য কিছু অশিক্ষিত লোকজন অল্প কিছু ধর্মের উপর শিক্ষা গ্রহন করেই ঝাঁর-ফুঁক করে মানুষের সাথে প্রতারিত করতো। কোন মানুষকে কোনদিন জ্বীনে আসর করে না। যদি তাই করতো তবে কোন মানুষই নিশ্চিন্তে এই পৃথিবীতে বসবাস করতে পারতো না। কারন জ্বীন হলো অদৃশ্য ও আগুনের তৈরী। যাহা আমাদের পবিত্র কোরআনের সুরা জ্বীনের বেশ কয়েকটি নআয়াতে উল্লেখ আছে। আর ইনসান হচ্ছে মাটির তৈরী। দুই প্রজাতিই আল্লাহর সৃষ্টি সৃষ্টি করেছেন। কিন্তু মানুষকে সৃষ্টি সেরা জীব হিসেবে সৃষ্টি করেছেন। জ্বীনদের গতি মানব থেকে দ্রুততম। তারপরও মানুষের সামনে জ্বীন নাকাল অবস্থায় থাকে। জ্বীনদেরও রাজ্য আছে। রাজা বাদশাহ রানীও্ আছে। তাদের মধ্যে ভালো যেমন আছে তেমন খারাপও আছে। তারা মানুষের রূপ ধারন করতে পারে কিন্তু মানুষ কোন রূপ বদলাতে পারে না। আর সেটাই আল্লাহর বিধান। আজ থেকে ৫০ বছর আগে মানুষ খুব সহজ সরল ছিলো বিশেষ করে গ্রামের মানুষ জন। তাদেরকে ধোঁকা দিয়ে সেই সমস্ত অর্থলোভীরা টাকা পয়সার পাহাড় গড়তো। তেমনটি ছিলো সাপের বিষ নামানো ওযা। কড়ি চালান দিয়ে সাপকে এনে বিষ নামানো। এমন অনেক কিছু। বিজ্ঞান সম্মত বা চিকিৎসা বিজ্ঞানে যার কোন প্রামানিক দলিল নেই। আর খেয়াল করলে দেখবেন সব জ্বীন ধরতো মেয়েদেরকে। কোন পুরুষকে কোন জীন বা পেত্নি ধরছে বলে কি কেউ কোনদিন শুনেছেন? এসব এসেছে আরব্য উপন্যাস ও হিন্দু সন্যাসীদের কাম জাদু বিদ্যা থেকে। কেন জ্বীনে ধরতো মেয়েদের সেটাকে চিকিৎসা বিজ্ঞান কি বলে সেটা না হয় সুযোগ পেলে আরেকদিন বলবো।
তবে এক কথায় সাদিয়া আপুর লেখাটা চমৎকার হয়েছে। পাঠক শুরু থেকে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়বে ও ভীত সন্ত্রস্ত থাকবে।
শুভ কামনা রইলো আপু।
আরজু মুক্তা
আমি সাদিয়া না আরজু মুক্তা!
আপনার মন্তব্য পড়ে ভালো লাগলো!
শামীম চৌধুরী
দুঃখিত মুক্তা আপু। ভুলে সাদিয়া লিখে ফেলেছি।
এই কান মলছি আর ভুল হবে না বোনের নাম।
আরজু মুক্তা
বোন যখন ডাকছেন!কি আর করা।
স্বপ্নবিহীন মামুন
—গল্পটা ভাল লাগছে।
আরজু মুক্তা
শুকরিয়া জনাব।
রিতু জাহান
পরীর গল্প আমার জীবনে একটা আছে।
তবে আমি ভয় পাই না অবশ্য। আমার আবার অনেক সাহস।
পরীরা চিকন গলায় কথা বলে। আমি শুনেছি দেখেছিও পরী নামানো। অন্ধকার থাকে তখন ঘর একটু।
ছাইরাছ হেলাল
পরী আপনাকে দিয়ে কী করবে!!
ভুত হলে না হয় বুঝতাম।
আরজু মুক্তা
এখানে,কিছুটা গালগল্প কে গল্প হিসেবে সাজানো হয়েছে।
ছাইরাছ হেলাল
গাল-গল্প হিশেবে চালু আছে আমাদের সমাজে,
ঠিক এমনটি-ই।
আরজু মুক্তা
হুম! গল্পের সত্যতা আনতে পা কেটে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে,এমন বলা হয়েছে।ধন্যবাদ
জিসান শা ইকরাম
একটি সময় ছিল যখন এসব বিশ্বাস করা হতো, আর এভাবে পরী মুক্ত করা হতো।
ভালো কাজ করেনি বিধায় পা কেটে ফেলা- ভালই বিচার, আমাদের সমাজে এমন বিচার হলে মন্দ হতো না।
আরজু মুক্তা
হাতের বদলে হাত,পায়ের বদলে পা! মন্দ নয়!এখন প্রচলিত আছে কবিরাজ আর তুকতাক!
মনির হোসেন মমি
রূপ কথার গল্প।বেশ সুন্দর উপাস্থাপনা।
আরজু মুক্তা
রূপকথা শুনতেই ভালো লাগে।ধন্যবাদ আপু
লীলাবতী
এটি কি সত্যি আপু? আমার তো ভয় লাগছে।
আরজু মুক্তা
সত্যি ঘটনাটাকে একটু রং দিয়ে গল্প লিখা হয়েছে।আমি আছিনা!ভয় কি?
আবু খায়ের আনিছ
বহুত চেষ্টা করেও ভূত-প্রেত দেখার সৌভাগ্য হল না, লেখিকার কপাল তাহলে ভালো বলা যায়।
আরজু মুক্তা
সৌভাগ্যবতী!!!হুম দেখেছি।একদম!যা সুন্দর!
আবু খায়ের আনিছ
এত সুন্দর!
দেখা হলে ভালো হত, ফ্রেমে বাধিয়ে রাখতাম। মিস করলাম। 😁😁😁
রাফি আরাফাত
এটা কি সত্যি?
আরজু মুক্তা
কিছুটা,বাকিটা গল্পের খাতিরে! ভয় পেলেন???
রাফি আরাফাত
ভয় পাইছি, তবে বলবো না আমি যে ভয় পাইছি,কারন কি জানেন? কারন আমার প্রিয় রং কালো, কিন্তু সেটা আপনাকে বলা যাবে না।।হিহিহি।