এক দুপুরে (ম্যাগাজিন)

আরজু মুক্তা ৮ মে ২০১৯, বুধবার, ১০:১৪:৫৬অপরাহ্ন গল্প ২৫ মন্তব্য

আম্মা , ও আম্মা! দেইখ্যা যান। বাদলেরে কে জানি উপরে টাইন্যা নিয়ে যাচ্ছে!!

সবাই তখন ভাত ঘুম দিচ্ছিলাম ! এমন চিৎকারে শুনে, মা বলছে,”পা ধরে থাক!আমরা আসছি!”

এসে দেখি ,সত্যিই তো বাদল বিছানা থেকে একটু উপরে উঠে আছে,আর নুরি পা ধরে আছে। মা বলছে,জ্বীন/পরি মনে হয়।আম্মা দৌড়ে ওযু করে কোরআন শরীফ নিয়ে জ্বীন সূরা পড়া আরম্ভ করলেন।কিছুক্ষণের মধ্যেই বাদলের দেহটা ধপাস করে নীচে পরে গেলো।আর ও অজ্ঞান হয়ে গেলো!

আম্মা চিল্লাচ্ছে, তোদের আব্বারে ফোন কর্ ।কবিরাজ নিয়ে আসুক।

আব্বা চলে এলেন ! কবিরাজ সাথে তুলারাশির জাতক।তুলারাশি ছাড়া নাকি পরি নামানো যায় না! কবিরাজ বাদলের মুখে কি সব পড়ে ফুঁ দিলেন।ও জেগে উঠলো।এরপর তাকে মাটিতে বসায়,ওর চারিদিকে দাগ দেয়া হলো।

কবিরাজ বলে চলেছেন,আল্লাহর কসম,তুমি যদি তোমার ভালো চাও,তাহলে ভর কর।তুলারাশি কাঁপা শুরু করলো।আমরা ভয়ে এককোণে দাঁড়ালাম! কাঁপাকাঁপির মধ্যেই পরি নামলো।

এসে খটখটে গলায় বললো,কেনো ডেকেছেন?আমার তাড়া আছে!যা বলার তাড়াতাড়ি বলেন!

কবিরাজ বলে,তোমার তাড়া আছে?তাহলে এই মাসুম ছেলেটাকে যণ্ত্রণা করতে এসেছিলে কেনো?

পরি বলে,ওকে আমার পছন্দ! বিয়ে করতে চাই!

ইতিমধ্যে বাড়ি ভর্তি লোক জমা হয়ে দেখতেছিলো!সবাই হেসে উঠলো!

কবিরাজ বলে,তুমি তো পরীর দেশে থাকো।একে বিয়ে করে কি করবে?

কেনো? আমাদের দেশে নিয়ে যাবো!

সাবাশ ,কবিরাজ বলে।ভালোই প্রেম! দাঁড়াও দেখাচ্ছি। কাকে জানি,ছোট বোতল একটু পানিসহ আনতে বললেন!

উনি বোতলটা তুলারাশির জিহবার নীচে দিয়ে,ইল্লাল্লাহ্ বললেন।

আর পরি চিল্লাচ্ছে।না, যাবো না!আমাকে বন্দি করিয়েন না! আমি আমার রাজ্যে চলে যাবো।

কবিরাজ বলে,তোমাদের ছলচাতুরি জানা শেষ! তোমরা তোমাদের দেশে ভালো কাজ করোনা বলে,তোমাদের রাজা হাঁটু পর্যন্ত কেটে ছেড়ে দিয়েছে।

পরি তাও চিল্লাচ্ছে।না, বন্দি করিয়েন না!

এবার কবিরাজ তিনবার ইল্লাল্লাহ্ বলে ,ওকে বোতলে ঢুকালেন। আর বললেন,এখানে কেউ কন্যারাশি আছে? শুধু তারা একে দেখতে পারবে!

আব্বা বলেন,আমার বড় মেয়ে কন্যারাশি!

আমি তো ভয়ে অস্থির।আব্বা এসব কি বলে!সবাই আমার নাম ধরে ডাকছে।আসো আসো! দেখোতো কেমন দেখতে? আব্বার হাত ধরে,ভীরু পায়ে এগিয়ে এসে দেখি, কালো স্কার্ট পরা এক মেয়ে।মিটমিট করে তাকিয়ে হাসছে!

কবিরাজ আমায় বলে,মা, পা দেখতে পাচ্ছো?

আমি বলি না !!

উনি বলে দেখছেন! ওদের রাজ্যে ও ভালো কাজ করেনি!তাই পা কেটে রাজা ছেড়ে দিয়েছেন ।

যাই হোক ,পরে বোতলটাকে সাড়ে তিন হাত মাটির নিচে রাখা হলো!

কবিরাজ বললো,যতদিন দুনিয়া ধ্বংস হবেনা,ও এভাবেই বন্দি থাকবে!!

সবাই যে যার কাজে গেলো। বাদল ও মুক্তি পেলো পরির কাছ থেকে।

কিন্তু এরপর থেকে আমি একলা ঘুমাতে পারিনা! মাকেও ভয় লাগে !

আব্বার পাশে গিয়ে ঘুমাতাম! রাতের শান্তির ঘুম হারাম করলো ঐ পরি! একা বের হতে পারিনা শান্ত দুপুরবেলা ও! !

 

১০১২জন ৭৮৪জন
0 Shares

২৫টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ