রাজকন্যার চিঠির কথা লিখেছিলাম। সেই রাজকন্যা কেমন আছে, তা আজ আমি জানিনা। ফুটফুটে এক রাজকন্যা। ক্লাস ফাইভে পড়া রাজকন্যা। আমার সংস্পর্শে দু একবার আসতেই তার মনে হল , আন্টি পারবে মামনি বাবাকে এক করতে। একটা ছোট শিশু কতটা অসহায় হলে, অন্য একটা মানুষের বুকে অঝোরে কাঁদতে পারে। রাজকন্যার একটাই চাওয়া, মা বাবার সংগে থাকা। আমার কাছে তার আকুতি। এ আমার অপরগতা।

দুপুরে হঠাৎ ছোট রাজকন্যা আমার বাসায়। কেঁদেই যাচ্ছে। ছোট একটা বাচ্চা। এবার সমাপনি দিবে। জীবনের বাস্তবতা বোঝার মতো তার বয়স হয়নি। তবুও বয়স না বাড়লেও অভিজ্ঞতা বেড়েছে অনেক। অবস্থাসম্পন্ন ঘরেরই মেয়ে। মা বাবার জেদের কারনে আজ সে অসহায়। মায়ের সাথে বাবার ডিভোর্সের পরে, মামার বাড়িতেই রাজকন্যার থাকা। মা সারাদিন বুটিকের শোরুমে ব্যাস্ত। এতোটুকু মেয়ে একাই সব করে। মামা মামি এই যুগে আর কতোই বা দেখে !

সমাজে এইসব বাস্তব চিত্রে আমরা কতটুকুই বা করতে পারি। সন্তান আল্লাহর নেয়ামত। সন্তান হারানোর ব্যাথা যে পায় নি, সে আসলে কি বুঝবে!

আমার জীনেতা যখন চলে গেল, আমি তো মরেই বেঁচে আছি। আল্লাহ্ আমাকে আরো দুটো সন্তান দিছে, তবুও জীনেতার জন্য বুকটা তো আমার খালিই পড়ে আছে। কেন মানুষ এতো সুন্দর সন্তান বুকে আগলে রাখে না ? জীবনটা কত সুন্দর। হ্যাঁ, এটা ঠিক মানুষের জীবন একটা নিরবিচ্ছিন্ন সংগ্রাম ক্ষেত্র। আশা, হতাশা, জয়ের সাথে এখানে ব্যতিক্রমহীন পরাজয় ও বিদ্যমান। আশার সাথে জয় আসলে তবে জীবন আমরা পরিপূর্ণ মনে করি। পরাজয় মানে হতাসা, দুঃখ, দুদর্শা, অভাব, হাহাকার।

জীবন একটা বহতা নদী। বরষায় সে পরিপূর্ণ, গ্রীষ্মে তার বুকে চর। ভালমন্দ সব কিছু নিয়ে তা এক প্রবাহমান সময়স্রোতের উপর আপতিত। বহতা জীবনের একটা স্বাভাবিক ছন্দ আছে, নদীর বুকে জোয়ার ভাটার মতো। কখনো নামে কখনো ওঠে, কখনো নিস্তরঙ্গভাবে এগোয়। জীবনেরএই ওঠানামার মধ্যেও মূল সুরটা যেন থেকেই যায়। জীবনে হঠাৎ ঘটে যাওয়া ঘটনাই কেবল তা ভেঙ্গেচুরে খান খান করে দেয়। জীবনের স্বাভাবিকতার ছন্দপতন ঘটে। নতুন সুর ছন্দ খুঁজে না পাওয়া পর্যন্ত নিমিয়ে পড়ে সবকিছু। নতুন খুঁজে পাওয়া সুর ছন্দে তাল লয় না মিললেও জীবনটা মোটামুটি সহনীয় হয়ে ওঠে।

আচ্ছা অধিকাংশ ঘটনাই কি আকস্মিক? না, এই ঘটনার জন্য কোথাও না কোথাও প্রস্তুতি চলে জান্তে অজান্তে।

নিজের তৈরি করা ঘটনা ভাল কিংবা মন্দ হোক, তার ফল ভোগ করতেই হবে। নিজের করা ভুল কখনো সময় ক্ষমা করে না। সংসার জীবনে এক একটা মানুষের চিন্তা ভাবনা একেক রকম। মানুষ মাত্রই আবেগপ্রবন। কারো জীবনে আবেগ এতো বেশি যঘ সে বাস্তবতা মানেই না। ক্ষতি করে ফেলে নিজের ও আশেপাশে মানুষের জীবন। অপরিনত বয়সে আবেগের বসে যে ঘর বাঁধে তা অধিকাংশ সময় ভেঙ্গে যায়। জীবনের বাস্তবতায় পুরুষ যৌবন যেন ফুরাতেই চায় না। নারী, সে অপরিনত বয়সের প্রেমের বন্ধনে যে ঘর, সংসার, সন্তান, সামলাতেই ঢলে পড়ে বয়সের আগেই। এক সময় স্বামির অবহেলায় মানসিক অবসাধগ্রস্থ এক নারী দিশেহারা, ধৈর্য্য হারা, হয় সে পথহারা, সন্তানসহ স্বামী পরিত্যাক্তা। জীবনের চাকা ঘোরাতে মা কর্মব্যাস্ত। সন্তান একা।

কি লিখতে বসেছিলাম, কি লিখেছি, জানিনা। সেই দুই রোজার পর থেকে এই বিষয়টা নিয়ে কেন যেন বেশ অসুস্থ আমি। ছোট ঐ দুটো হাতের জন্য আমি কিছুই করতে পারিনি। কোমল দুটো হাতের স্পর্শ আমাকে কাঁপিয়ে দিয়ে গেছে। হঠাৎ একটু যেন জীনেতার স্পর্শ।

২২৪৫জন ২২৪৪জন

২৪টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ