আমাদের শহরের সবচেয়ে বড় মসজিদটার কাছেই আমাদের বাসা । মসজিদের পাশেই এস,এম,মডেল স্কুল । আর এই স্কুলেই কাটিয়েছি জীবনের সেরা ১০ টা বছর । বন্ধুদের ভিতর ১ জন ছাড়া সবাই মুসলিম । তাই আমি অমুসলিম ও নিধর্মি হলেও রোজা বা ইদ আমার জীবনেও প্রভাব ফেলে । আমাদের ছোটবেলায় রোজা হত শিত কালে । তখন আমাদের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হয়ে যেত । সবাই দল বেধে স্কুল মাঠে খেলতে জেতাম। আমাদের ব্যাচের কেউ রোজা রাখত না , কিন্তু সবারই ছিল ইফতারির উপর ভীষণ লোভ । তাই যেভাবেই হোক ইফতারির আগে বাসায় পৌছাতে হবে । আমাদের খেলাও সেই হিসাব মত শেষ হত । এক এক দিন আমার এক এক বন্ধুর বাসায় ইফতারির দাওয়াত থাকত । এবং পুরা নিয়ম কানুন মেনে আমি ইফতারি করতাম । সবচেয়ে বেশি বার ইফতারি করেছি নিয়াজ,শুভ ও সোহাগদের বাসায় । তবে সবচেয়ে বেশি মজা হত নিয়াজদের বাসায় ইফতারি করার সময় । যেহেতু নিয়াজ রোজা রাখে না তাই তার জন্য ইফতারি নিসিদ্ধ ছিল । শুধুমাত্র ইফতারি খওয়ার লোভে সে আমাকে বাসায় নিয়ে যেত এবং আন্টি কে বলত শুভ্র আইছে ওরে ইফতারি দেও । আন্টি বাধ্য হয়ে আমাকে ইফতারি দিত আর সেখান থেকে নিয়াজ ভাগ বসাত ।
যেহেতু পরীক্ষা শেষ সেহেতু বাসায় কোন চাপ নেই । তাই আমার মুসলিম বন্ধুদের সাথে আমিও তারাবির সময় বাসা থেকে বের হতাম । তারাবি পড়ার নাম দিয়ে কত রকমের শয়তানি যে আমরা করেছি তার কোন হিসাব নেই। এলাকার এমন কোন বাসা নেই যে বাসা তারাবির সময় আমাদের অত্যাচারের স্বীকার হয়নি।আমাদের সবচেয়ে পছন্দের শয়তানি ছিল সাইনবোর্ড ভাঙা ও ডিসের তার কেটে দেয়া। আমাদের পাড়ায় কোন সাইনবোর্ড টিকত না শুধু আমাদের কারণে । এমনকি আমাদের যে বন্ধুটি সত্যিই তারাবি পড়ার জন্য ঘর থেকে বের হত তারও তারাবি পড়া হত না আমাদের কারণে । এখন বুঝি এগুলো অপরাধ , কিন্তু তখন আমরা যথেষ্ট মজা পেতাম । এই সময় আমাদের আরেকটি শয়তানি ছিল ফাকা রাস্তা কাউকে পেলে তাকে দেখেই ধর ধর বলে দৌড় দেয়া । এই ঘটনায় কেউ ভয়ে দৌড়ে পালাত, কেউ পাথরের মত দাড়িয়ে থাকত । আর আমরা হাসতে হাসতে রাস্তায় গড়িয়ে পড়তাম । কেউ যদি ধরে ফেলত ব্যাপারটা তাহলে আমরা একে অপরকে দিখিয়ে বলতাম যে ওকে ধর ধর বলেছি । তো একদিন এরকম করার সময় আমাদের সবচেয়ে ভয়ংকর স্যার “শিবেন বাবুর” হাতে ধরা খেয়ে গেলাম । ফলাফল আমাদের ৮ জনকেই ভরা রাস্তায় ২০ বার কান ধরিয়ে ওঠ বস করালেন । মজার ব্যাপার হচ্ছে আমারা তাতে একটুও লজ্জা পেলাম না। উল্টা স্যারের কাছে থেকে ছাড়া পাওয়ার পর আমরা এই নিয়ে মেতে উঠলাম যে স্যার ২০ বার বললেও এক প্রিন্স ছাড়া কেউ আর কেউ ২০ বার ওঠ বস করেনি এবং স্যারও ধরতে পারে নি । প্রিন্স একটু সরল প্রকিতির ছিল । কিন্তু তার এই কবিরা গুনাহার জন্য আমরা আবার তাকে ২০ বার কানে ধরে ওঠ বস করালাম । কিন্তু প্রিন্স এখন আর সরল নেই , সে এখন জেলা ছাত্রলীগে সিনিওর সহ-সভাপতি । তবে আমাদের কাছে আগের মতই আছে ।
এখনও আমরা প্রতিদিন ইফতারি করি । এখনও আমার বন্ধুরা তারাবির নাম দিয়ে বাইরে ঘুরে বেরায় । কেউ কেউ বাসায় রোজা রাখার কথা বলে হোটেলে খওয়ার জন্য টাকা ধার নেয় । কিন্তু আগের সেই মজা এখন আর পাই না। কে যেন কানের কাছে সব সময় বলে “বড় হয়ে গেছ” । সেই হাই স্কুল জীবনের কথা গুলো এখন খুব বেশি মনে পড়ে ।
১৪টি মন্তব্য
এই মেঘ এই রোদ্দুর
ভাল লাগল দুষ্টামি ভরা লেখাগুলো
"বাইরনিক শুভ্র"
ধন্যবাদ । 🙂
প্রজন্ম ৭১
কত মজা করেছি ছোট বেলায় । আর আসবেনা সে সব দিন ।
"বাইরনিক শুভ্র"
আসলেই আর ফিরে আসবেনা । 🙁
যাযাবর
হা হা হা হা হা , এরকম আমরাও করেছি । মনে পরে গেল সব কিছু । এসব কিছু ফাও প্যাচাল নয় 🙂
"বাইরনিক শুভ্র"
ছোটবেলার কথা আসলেই আনন্দদায়ক । 🙂
জিসান শা ইকরাম
ফাও প্যাচাল ভালো লেগেছে খুব ।
কিছুটা হাসির হলেও এমন উন্মাদনা আমরাও করেছি – ধর্মীয় বিভেদ ভুলে।
আন্তরিক লেখা (y)
"বাইরনিক শুভ্র"
বন্ধুদের ভিতর এখনও ধর্মীয় বিভেদ সৃষ্টি হয় নি । হিন্দুরা যেমন ঈদে মজা করে তেমন মুসলিমরাও পুজায় এসে নেচে যায় ।
ব্লগার সজীব
মজা পেলাম খুব \|/ (y)
"বাইরনিক শুভ্র"
😀 😀 😀 😀 🙂 🙂 🙂 🙂
ছাইরাছ হেলাল
সময় ফিরে আসে না ,
আমরাই ফিরে ফিরে তাকাই ।
"বাইরনিক শুভ্র"
এছাড়া তো উপায়ও নেই ।
আদিব আদ্নান
বড় হয়ে যাওয়া আনন্দের আবার বেদনার ।
"বাইরনিক শুভ্র"
শুধু বেদনার । কোন আনন্দ নাই । 🙁