এলার্মের শব্দেই ঘুম ভাঙ্গলো। তরিঘরি করে রেডি হয়ে বেরিয়ে পরলাম,রাজশাহীর উদ্দেশ্যে। সিট পেতে হবে, এই তাগিদে তারাহুরো করে,গাড়ীতে উঠে বসলাম।
পরের ষ্টানে বাস থামলো। আমি আমার মতোই বসে রইলাম। দ্বিতীয় ষ্টান থেকে গাড়ী ছেড়ে যাওয়ার খানিক পরে।
হ্যালো, ভাইয়া আমার বাবুটাকে একটু কোলে নিয়ে বসবেন? আমি মহিলার মুখের দিকে তাকালাম, কি বলবো বুজতে পারছিলাম না, চুপচাপ বাবুটাকে কোলে নিয়ে বসলাম। শা শা করে গাড়ি চলতে লাগলো, হঠাৎ ব্রেকে তন্দ্রা ভাঙ্গলো, হুমরি খেয়ে পরলো আমার পাশে দাড়িয়ে থাকা মহিলা। নিজেকে গুছিয়ে নিয়ে আবার স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করছে। আমার চোখ পরলো আবার ঐ মহিলার দিকে। কি অসহায়ের মতো দাড়িয়ে আছে! পাশে দাড়িয়ে থাকা ছেলেগুলো ও চাঞ্চ নেওয়ার চেষ্টা করছে। আমার বিবেকের টনক নরলো, আমি ভাবলাম এটা যদি আমার বোন হতো আমি কি পারতাম ওনাকে দাড় করিয়ে রেখে নিজে বসে থাকতে! না পারতাম না। আমি আর বসে থাকতে পারলাম না। আমি প্রথমে বললাম, আপু আপানার বাবুটাকে একটু ধরবেন! ওনি আমার দিকে আরো গভীর মায়ামাখা চোখ তুলে তাকালো,সাথে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস । ওনার ছেলেকে নিয়ে আমি বিরক্ত, এমনটাই ভেবেছেন হয়তো। বাবুটাকে ওনার কাছে দিয়ে আমি উঠে দারালাম, আপু আপনি এখানে বসতে পারেন। না, না আপনিই বসুন, আমার জন্য আপনি কেনো কষ্ট করবেন! কথাটা তার ভেতর থেকে আসেনি নিশ্চই, সেটা আমার বুঝতে বাকি রইলো না। না, ঠিক আছে বসুন।
ফিক ফিক করে হেসে উঠলো পাশের ছিটে থাকা আরেক জন মহিলা। আমি ওনার হাসির কারণ প্রথমে বুঝতে না পারলেও। তখন ঠিকি বুঝতে পারলাম। যখন শুনতে পেলাম, পাশের ছিটে আরেক জন বললো;
এসব ভালোমানষি অনেক দেখেছি! সুন্দরী মেয়ে দেখছে,তাই বসতে দিয়ে ভালোমানুষ সাজতে চাইছে। আমি কি বলবো বুঝতে পারলাম না, বোকার মতই দাড়িয়ে রইলাম।
অনেকক্ষন দাড়িয়ে থাকার পর, দেখলাম ড্রাইভারের পাশে বাসের ইন্জিন কভারে একটু জায়গা ফাঁকা আছে। আমি সেখানে গিয়ে বসলাম। আমার পিছু পিছু, একজন মুরুব্বি ও আসলো । একটু চেপে বসলাম আমি। যাতে মুরুব্বি বসতে পারে।
শা শা করে এগিয়ে যাচ্ছে গাড়ি, গাড়ির গ্লাস খোলা থাকায়, শো শো করে বাতাস আসছে,শরীরটা হাল্কা ঠান্ডা হয়ে আসলো, শরীর থেকে অস্বস্তি বিদায় নিলো। আমি একটু সস্তি নিয়ে বসলাম।
ওয়াক করে শব্দ হলো, চেখ ঘুরিয়ে দেখলাম সামনের ছিটের একজন বমি করে দিয়েছে, তার পাশের ছিটের লোকটা তো হো হো করে উঠলো, তবে তার এমন ব্যাবহারের যথেস্ট লজিক থাকা সত্বেও, তার ভাবা উচিৎ ছিলো বমি করা লোকটার পরিস্থিতি। মানবিকতার দিক থেকে ভাবলে, এমননটাই মনেহয়।
এসব ঘটনা তোয়াক্কা করার সময় নেই, গাড়ী চলছে তার গতিতে। গাড়ীর ইন্জিনের সাউন্ড উপেক্ষা করে একটা বিকট গরগরে শব্দ এসে পৌছালো আমার কানে। আমার বুঝতে বাকি রইলো না, এটা তার নাকডাকার শব্দ,যিনি আমার পিঠে হেলান দিয়ে ঘুমাচ্ছে। বিরক্তিভরা চোখ নিয়ে একবার তাকিয়ে অন্যদিকে চোখ ঘুরাতেই দৃষ্টি আটকে গেলো, দু ছিট পরের এক মুরুব্বির দিকে। ওনি নিজের নাকের ভিতর আঙ্গুল দিয়ে এমনভাবে খুচরাচ্ছে, যেনো সেখানে লুকিয়ে আছে, অনেক দামী কেনো বস্তুু। ওনার পাশের ছিটের ব্যক্তি ওনার দিকে আঙ্গুল ইশারা করে, খানিক ঠোট বাকিয়ে নিজের বিরক্তি প্রকাশ করলো।
ওস্তাদ সিঙ্গেল, ব্রেক হবে ব্রেক, হেলপারের এমন সিগনালে ই ব্রেক কসলো ড্রাইভার। গাড়ি রাজশাহী পুঠিয়া চলে আসলো। এটাই আমার আজকের শেষ গন্তব্য ছিলো।
১১টি মন্তব্য
সাবিনা ইয়াসমিন
পাব্লিক বাসে উঠে মানুষের মানসিকতা সম্পর্কে যতটা জানা / বোঝা যায়, অন্য পরিবহনের ক্ষেত্রে এতটা হয় না। প্রতিটি মানুষের আলাদা আলাদা নজর, তাদের বিবেক / আবেগ হুট করে চলে আসে কয়েক ঘন্টা / মিনিটের মধ্যে।
ভালো লাগলো বাস ভ্রমণের বিভিন্ন অনুভূতি গুলো।
শুভ কামনা দিদার ভাই 🌹🌹
সুপর্ণা ফাল্গুনী
বাস ভ্রমনের তিক্ত অভিজ্ঞতা গুলো যেভাবে বললেন প্রতিনিয়ত লোকাল বাসে এসবই ঘটে। ধন্যবাদ ভাইয়া। শুভ কামনা আপনার জন্য
মোহাম্মদ দিদার
আপনার জন্যও শুভো কামনা
ইসিয়াক
বাস্তব অভিজ্ঞতা ।ভালো লেগেছে।
ভালো থাকুন সবসময়।শুভকামনা।
ফয়জুল মহী
পড়ে মন পুলকিত হলো।
অনন্য অর্ণব
ভাই আপনি এতো ভালো লিখলে সবাই তো আপনার লেখাই পড়বে। তখন আর আমার লেখার কোন মূল্য থাকবে? কে পড়বে আমার লেখা? আমার তো আর চার আনার দাম ও থাকবে না।
হা হা হা 😀 কি ভাবছেন ? এটাই বলতে চেয়েছি ? যা বললাম ? মোটেই না। বলতে চেয়েছি সম্পূর্ণ অন্য কিছু।
দেশ স্বাধীন হয়েছে আটচল্লিশ বছর আগে ১৯৭১ সালে। তখন এদেশের জনসংখ্যা ছিলো এখনকার মোট জনসংখ্যার অর্ধেকের ও কম। অথচ তখন ও এদেশে দুর্যোগ দুর্ভিক্ষ ছিলো। মানুষ না খেয়ে ছিলো। কিন্তু এখন কেউ না খেয়ে থাকতে কি ?
না। এখন কেউ না খেয়ে থাকছে না। কারণ প্ল্যান টা ওভাবেই করা হয়েছে। আমাদেরকে প্রকৃত শিক্ষার আলো থেকে সুপরিকল্পিতভাবে সরিয়ে রাখা হয়েছে। জাতি শিক্ষিত হলে সভ্য হলে লোলুপ নরমাংস লোভী জান্তা শাষকের অবৈধ ক্ষমতা আর চুরি বাটপারি বন্ধ হয়ে যাবে। সেই কারণেই আমরা সংখ্যায় সাত থেকে ষোলতে আসতে সময় লাগেনি। কিন্তু আমাদের পরিপার্শ্বিক হিউম্যান বিয়িং স্কেলটা কচ্ছপের গতিতেই এগিয়েছে। যদি স্বাধীনতার পর পরেই আমরা একজন সৎ দক্ষ আর সুদূরপ্রসারী চেতনার শাষক পেতাম তাহলে আজকে আমাদেরকে আর এমন লোকাল বাসের বিড়ম্বনা পোহাতে হতো না।
সুপায়ন বড়ুয়া
বাস যাত্রার প্রতিদিনকার
চিত্র গুলি কলমে দিল ধরা
তাই তো আমি এক নিমিষে
শেষ করলাম পড়া।
শুভ কামনা।
ছাইরাছ হেলাল
এমন ভাবে আমরা সবাই ভাবতে পারলে সমাজটি অন্যরকম হয়ে যেত।
আরও লিখুন।
কামাল উদ্দিন
আসলে প্রতিটা মুহুর্তেই অনেক ঘটনা ঘটে চলছে, আমরা হয়তো অতোটা খেয়াল করে বিষয়গুলো দেখি না। এমন সমস্যায় ম্মুখীন মহিলাদের শ্রদ্ধা করায় তৃপ্তি আছে, কে কি বলে বা কোন দৃষ্টি কোন থেকে দেখে সেটা কোন ব্যাপার না।
মোহাম্মদ দিদার
একদমি ব্যাপার না।
প্রিয় শুভেকামনা রইলো।
কামাল উদ্দিন
শুভ সকাল