ছেলেটা গেলো বছর বিয়ে করেছে, অবশ্যই প্রেম করে। এবার এই দম্পতির প্রথম ঈদ। উথাল-পাথাল ভালোবাসা থাকা সত্বেও কিছু ব্যাক্তিগত কারনে এখন পর্যন্ত বউকে নিজের কাছে নিয়ে রাখতে পারেনি। বউ তার বাবার বাসায় থাকে। ট্রাজেডি ঈদে এবার সে একদম একা বাসায়। ছেলেটা ভাবে কি করবে সে ? একদিকে প্রিয়তমা বধু অন্যদিকে মা। অনেক ভেবে সে একটা উপায় বের করলো। এবার ঈদে লম্বা ছুটি পেয়েছে সে, সেটাকে সুষম বন্টনের সিদ্ধান্ত নিলো সে। ঈদের আগেই মায়ের সাথে দেখা করবে আর পুরো ঈদের সময়টা কাটাবে তার বউয়ের সাথে। বাড়ির পথে রওনা দেয় ছেলেটি, বাস চলছে ছেলেটির মন উতলা হয়ে উঠছে।
কল দিলো বউকে… কি করো?
বউঃ“ আমাকে ফোন দিছ কেন? তুমি তো আমার কাছে আসবা না। যাও তোমার বাবার বাড়ি। আমি কে হই তোমার? আমার কোনও দরকার নাই। আমি তো দেখতে সুন্দর না স্লিম না। যাও তোমার মায়ের কাছে গিয়ে ঘুমাও আর ফিডার খাও। আমি তোমাকে চিনি না।“ এক দমে বলে ফেললো মেয়েটি।
ছেলেটিঃ “বাবু আমি আসছি তো মাত্র দু দিন পর অযথাই মন খারাপ করছ।“
বউঃ ‘তুই আসবিনা বলে দিলাম ভাগ, তুই ফোন রাখ’ বলে নিজেই ফোন কেটে দিল।
ছেলেটি আবার ফোন দিল অপাশ থেকে কোনও উত্তর নাই। ৫৬ বার ফোন দেয়ার পর মেয়েটি ফোন ধরল, “তোর জন্য মাংস রান্না করেছি ইলিশ মাছ রান্না করেছি সব একলা খাবো না? একলা খাবো না? এক্ষুনি সব ফেলে দেব। ফোন রাখো আমি ফেলে দিতে গেলাম। বাই। কোন দরকার নাই কথা বলার দুই দিন পর কথা হবে” খট করে ফোন কেটে দিলো মেয়েটি।
সফর অনেক লম্বা প্রায় ১২/১৩ ঘণ্টা…. মাত্র চোখ জুড়িয়ে আসছে। মাথা সিটের উপর এলিয়ে ঘুমোচ্ছে ছেলেটি। হঠাৎ কন্টাক্টারের হাকে ঘুম ভাঙল তার ‘খাবার বিরতি ৩০ মিনিট’। ছেলেটি জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখলো কোথায় আছি। মজার ব্যাপার হলো বাস খাবার বিরতির জন্য থেমেছে একেবারে তার শশুরবাড়ির কাছে। রাত তখন প্রায় ১টা, বউটাও মন খারাপ করে আছে।হঠাৎ বেজে উঠে মুঠোফোন।
বউঃ হ্যালো
বরঃ ওই তাড়াতাড়ি বারান্দায় আসো
বউঃ মানে?
বরঃ আরে জলদি জলদি
বউঃ আসতেছি
নীচে নায়ক দাঁড়িয়ে বউ তার ৪তলার উপরে।
বরঃ তাড়াতাড়ি চাবি ফেলো সময় নাই ।
বউ বিস্ময়ের ঘোর নিয়েই চাবি দিলো। বর তার ১০০মিটার রেস দিয়ে উপরে উঠে এসেই জড়িয়ে ধরলো তাকে। আহ কি প্রেম কি প্রেম। বউ অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করে, “কাহিনী কি?” ছেলেটি বলে বাসায় যাচ্ছি ঠিকই, কিন্তু আমার মন পড়ে আছে তোমার কাছে। তোমাকে একনজর দেখার জন্য দৌঁড়ায় আসছি বউ । ভালো থেকো আমি ২দিন পরেই তোমার কাছে চলে আসবো। তুমি মন খারাপ করো না। যেমন ঝড়ো গতিতে এলো, তেমন ঝড়ো গতিতেই চলে গেল ছেলেটি। মেয়েটা তখনও বারান্দার গ্রীল ধরে দাঁড়িয়ে। ছেলেটি দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে একসময় অন্ধকার রাস্তায় মিলিয়ে গেল। মেয়েটি কিছুক্ষন শূন্য রাস্তার দিকে তাকিয়ে চোখ মুছে ঘরে এলো।
৩৩টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি(মা মাটি দেশ)
প্রায় ভাল ছলেদের এমন ঝামেলয় পড়তে হয়।ত্রিকোন আকারে ঝামেলা বউ মা এবং নিজে।গর্ভধারীনি মায়ের কথা না রাখা পাপ আবার বাবার সব বন্ধন ছেড়ে যে মেয়েটি তার ঘরে বউ সেজে এলো তার মন রক্ষা না করলে নিজের অন্তর জ্বলে সমাজের টনক নড়ে।কোন দিকে যাবে ছেলেটি? -{@
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
এটি একটি রোমান্টিক গল্প 🙂
পুষ্পবতী
সত্যিই এমন অবস্তায় ছেলেটি কি করবে।
গল্পে ছেলেটি যেমনটা করেছে তা ঠিক আছে আমার মনে হয়।
ভালো লেগেছে -{@
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
তাই বুঝি ? ধন্যবাদ ।
বনলতা সেন
বেশ নাটকীয় ভাবে দেখা করিয়ে দিলেন । এ ছবকেও নাটক আছে দেখছি ।
আমাদের এ টানাপোড়ন নিয়েই বেঁচে থাকতে হয় ।
পোড়া গন্ধ পেলে কি নাকের দোষ ?
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
কথা দিয়েছিলাম ঈদের পরে রোমান্টিক গল্প দেবো। দিয়ে দিলাম 🙂 বাস্তবের সাথে এর মিল নাও থাকতে পারে আবার থাকতেও পারে :p ছবক বাদে জীবন চলেনা বনলতা সেন ।
স্বপ্ন নীলা
ওরে বাবা !! আমি প্রথম পড়ায় বুঝতে পারি নাই,,, আবারও পড়তে হয়েছে,,,কি নাটকীয়তা —- দারুনসসসসসসস !!!!!
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
হুম, রোমান্টিক গল্প এমনই হয় আপু 🙂
জিসান শা ইকরাম
ছেলের মাকেই এটি বুঝতে হবে, তিনিও একদিন বউ ছিলেন।
তাঁর যেমন একটি সংসার হয়েছে, ছেলের বৌয়ের ও তেমনি একটি সংসার বানিয়ে দেয়ার দায়িত্ব তাঁর।
ছেলের বাবার যেমন একটি সংসার আছে, ছেলেরও তেমনি একটি সংসার থাকবে।
অবশ্য বৌ শাশুড়ির এই টানা পোড়ন নিয়েই আমার এই সংসার।
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
আপনার মত সবাই যদি একটু ভাবতো আব্বা 🙁
আদিব আদ্নান
আপনি যা গল্পে বললেন এর কাছাকাছি সত্য ঘটনা আমার জানা আছে ।
আপনি ভালই লেখেন ।
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
এটিও একশত ভাগ সত্যি হলে হতেও পারে 🙂
স্বপ্ন
যেনো এক স্বপ্নের কথা জানালেন। গল্পটি ভালো লাগলো।
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
স্বপ্ন নাম আপনার স্বপ্ন স্বপ্নই তো মনে হবে। মনে করুন একটি রঙ্গিন স্বপ্ন এই গল্পটি ।
জসীম উদ্দীন মুহম্মদ
সাবলীল ভাষায় অসাধারন কমেডি আমাকে মুগ্ধ করেছে —– । -{@ (y)
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
কমেডি পেলেন কোথায় ভাইয়া ? ^:^ আপনার মন্তব্যে টাসকি খেয়ে গেলাম। না পড়েই মন্তব্য করেছেন, তাইনা ভাইয়া ?
মিথুন
হাজার হাজার কস্ট মুছে দেবার জন্যে এমন একটি মূহুর্তই যথেষ্ট তাইনা আপু? সংসারের জটিলতায় ও জড়িয়ে থাকুক গল্পের নায়ক নায়িকা। এমন একটি রাত গুনে গুনে বেড়ে যাক অনেকগুন। শুভ কামনা -{@
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
হ্যা যথেষ্ট 🙂 তবে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে যেতে হয় ।
শুন্য শুন্যালয়
গল্পের নায়িকার জন্যই কস্ট পেলাম বেশি।
একটিমাত্র রাত ভুলিয়ে দিল কতো কস্ট।
গল্পটি পড়ে উদাস হয়ে গেলাম। হ্যাঁ আপু কথা রেখেছে তার। যতোটা রোমান্টিক ভেবেছিলাম তার চেয়ে বেশি হয়েছে। হিরো অনেক রোমান্টিক 🙂
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
আমিও তো উদাস হয়ে ছিলাম ভোর পর্যন্ত 🙂 কি হলো ? নাকি স্বপ্ন দেখলাম, কেমন একটা সময় থমকে যাবার অনুভুতির মাঝে ছিলাম।
আগুন রঙের শিমুল
আহা প্রেম 🙂
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
:p 🙂
ব্লগার সজীব
বড়ই রোমান্টিক -{@ (y)
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
বড়ই রোমান্টিক 🙂
অলিভার
মাঝে মাঝে মানুষ দো’টানায় পড়ে যায়। কিন্তু ভালবাসা সেই টানে পড়লে বড় বিপাকে পড়তে হয়। তবুও ভালো কিছু সুযোগ কারো কারো বেলায় আসে।
গল্প নিঃসন্দেহে চমৎকার হয়েছে (y) (y)
শুভ কামনা থাকলো 🙂
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
এটি গল্প নয় ভাইয়া 🙂
পাগলা ঘন্টা
এক কোথায় ফাটাফাটি জমে ক্ষীর
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
তাই নাকি ?
নীরা সাদীয়া
এরকম একটু আধটু মিষ্টি ঝগড়াঝাঁটি না থাকলে সংসার হয়ত জমে না। সুন্দর গল্প লিখেছেন।
নীরা সাদীয়া
ও, একই শিরোনামে আমারও একটি গল্প অাছে এবং তা রূপান্তরে ছাপা হয়েছে।
সঞ্জয় কুমার
অনেক দিনের বিরহ খরার পর হঠাৎ যেন মেঘ বিহীন এক পশলা বৃষ্টি ।
তবে বৃষ্টিতে শরীর ভিজেছে মনটা বোধহয় পুরোপুরি ভেজেনি ।
সুন্দর রোমান্টিক গল্প
সৈয়দ আলী উল আমিন
্ভাল লেখা। রোম্যান্টিক গল্প। সংসারের মধ্যে ঝগড়া হবেই কিন্তু সন্তানকে বুঝতে হবে সেও একদিন সন্তানের জন্ম দেবে।
মোঃ মজিবর রহমান
এটাই বুঝি জীবন! যাক একঝলকে দেখার ভাগ্য জুটল। আবার মিলিয়ে গেলো।