বিথী, আজ তোর কি একটু সময় হবে, কথা ছিল। ক্লাস শেষে বের হতে হতে শফিক কথাগুলো বলে বিথীকে।
– কতক্ষণ?
— এই ধর, ঘন্টা দুয়েক।
– দুই ঘন্টা! এত সময় ধরে কি বলবি, কোন সিনেমার গল্প টল্প নাতো।
— আরে না, সিনেমার গল্প টল্প না, এক জায়গায় একটু তোকে নিয়ে যাবো।
– কোথায়?
— জাহান্নামে নিবো না এটা নিশ্চিত থাক।
– না, আজ এত সময় হাতে নেই, বাসায় একটু জলদি ফিরতে হবে, মা কে সকালে অসুস্থ দেখে এসেছি, বাসায় ফিরতে হবে, কাজ আছে।
— আন্টির আবার কি হয়েছে? একটু উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইলো শফিক।
– তেমন কিছু না, দেখে এসেছি, শরীরে জ্বর ছিল হালকা, পুরানো পায়ের ব্যাথা আরো বেড়েছে।
দুজনে কথা বলতে বলতে মূল গেটের কাছাকাছি চলে এসেছে, শফিক বলল, ঠিক আছে, আজ যেতে হবে না, কাল সময় নিয়ে আসিস, ক্লাস শেষে বের হবো।
বীথি, রিকসা ডাকতে ডাকতে বলল, কোথায় যাবি, কি জন্য যাবি, না বললে আমি যাবো না।
— মার্কেটে যাব, একটি নীল শাড়ি কিনবো। একজনকে উপহার দিবো।
বিথী ততক্ষণে রিকসায় উঠে গেছে, উপহার শব্দটি খুব হালকা শুনতে পেল। কিন্তু এই খুব হালকা শব্দটি বীথিকে বিশাল ভাবনায় ফেলে দিলো।
বীথি ও শফিক খুবই ভাল বন্ধু, ওরা একই সাথে প্রাইমারি, হাইস্কুল, কলেজ শেষ করে এখন একই ভার্সিটিতে ভর্তি হয়েছে।
বিথীকে ঐ হালকা শব্দটি ভাবনায় ফেলার কারন বিথী খেয়াল করেছে ইদানিং সে শফিককে অন্যভাবে মিস করে, বন্ধুত্বের বাহিরে অনেক কল্পনা এখন তার মাথায় বাস করা শুরু করেছে। ইচ্ছে করে শফিকের হাত ধরে হুট খোলা রিকসায় চড়ে শহরের সব অলিগলি ঘুরতে, বৃষ্টিতে ভিজতে। অজানা কোন এক শহরের নিশ্চুপ এক ঘরে একটি প্রদীপ জ্বালিয়ে দুপাশে দুজন মুখোমুখি বসে থাকতে, চারিদিকে থাকবে সুনসান, শুধু ঝি ঝি পোকার আওয়াজ ভাসবে, এক পলকে, এক দৃষ্টিতে শফিককে সে দেখবে অনন্তকাল ধরে।
শফিক রবীন্দ্র সংগীত পছন্দ করে, এই যুগের ছেলে হয়েও শফিকের রবীন্দ্র সংগীত শুনা, তা নিয়ে কথা বলা বীথিকে অবাক করে, একটু আলাদা মনে হয় শফিককে। বীথির এই কল্পনা, চিন্তা সবই গত কয়েক মাস ধরেই চলছে মনের গহীনে।
পরের দিন, দুজনে মার্কেটে থেকে একটি নীল শাড়ি কিনলো, পছন্দ বীথিই করেছে কিন্তু আজ বীথির মন যেন খুবই বিষন্ন মনে হল শফিকের। ওরা প্রায়ই এখানে ওখানে যায়, মার্কেটে যায়, সব সময়ই বীথির মধ্যে হুই হুল্লোড় একটা ভাব থাকে কিন্তু আজ ভিন্ন চিত্র।
— কি রে আন্টির শরীর খুব খারাপ?
– না, জ্বর নেই, পায়ের ব্যাথাও কমে গেছে।
— তাহলে এত মন মরা হয়ে আসিস যে, কথা নেই, নিশ্চুপ। সমস্যা হলে বল।
– না, কিছুই হয় নি।
— চল কোথাও বসি, চা কফি কিছু খাই।
– না, কিছু খাবো না। বাসায় চল কিছু ভাল লাগছে না
শফিক কোন কথা না বাড়িয়ে, সিএজি ডেকে উঠে বসল, দুজনই নিরব, শফিক কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না। বীথির হঠাৎ এমন আচরণে শফিক বেশ চিন্তায় পড়লো।
নিরবতা ভেঙ্গে বীথি বলল, বললি না তো কার জন্য কিনলি?
— শায়মার জন্য, ও খুব করে ধরেছে তাই না করতে পারিনি।
শায়মার নাম শুনেই বীথির চোখে জল বন্যা বয়ে যাওয়ার উপক্রম হল, প্রচন্ড শক্তিশালী এক বৈশাখি ঝড় এসে বীথির কল্পনায় সাজানো, ফুলে ফুলে ভরে উঠা বাগানটি এক নিমিষে অতল সাগরে ডুবিয়ে দিল।
অনেক কষ্টে চোখের জল লুকিয়ে বলল, শায়মাকে নিয়ে আসলে তো পারতি, ওর পছন্দ ও করে নিতো।
— আর বলিস না, ওকে বলেছিলাম। বলে, সময় নেই ওর নাকি আরো অনেক কিছু কিনতে হবে। একটি শাড়ির জন্য এত সময় নাকি বরাদ্ধ করতে পারবে না। সুহানাকে নিয়ে কসমেটিকস কিনতে গেছে। এমনভাবে সব কেনাকাটা করছে মনে হচ্ছে ওর বোনের বিয়ে না ওর বিয়ে।
– বিয়ে? কার বিয়ে?
— তোকে তো বলাই হয়নি, আমার যে খালা গ্রামে থাকে উনার বড় মেয়ের বিয়ে, শহরে কেনাকাটা জন্য এসেছে। শায়মা বায়না ধরেছে ভাইয়া তুমি আমাকে একটি নীল শাড়ি কিনে দিবে। নীল শাড়ীতে নাকি আমার খুব ভাল মানায়। এবার কলেজে ভর্তি হয়েছে।
বীথির মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো, খুবই মিষ্ঠি হাসি। কালো মেঘাছন্ন আকাশে হঠাৎ রোদ ঝলকানি দিলে যেমন হয় তেমনি বিথীর ভিতরে খেলে গেল। নিশ্চুপ থাকা বিথী তাঁর স্বভাবেই ফিরে এলো, কি রে এক কাপ চা পর্যন্ত খাওয়ালি না!
শফিক বীথির এই ইউটার্ন আচরনে থ হয়ে রইল কিছুক্ষণ, তারপর বলল, আচ্ছা কি হয়েছিল বলতো? মাত্র এক ঘন্টায় তোর এই ঝড় রোদ্দুর কাহিনী কি?
– কিছুই না, তারপর কিছুক্ষণ নিশ্চুপ থেকে আবার বলল, তুই আমারও একটি নীল শাড়ি কিনে দিবি? আমাকে বেশ মানাবে দেখিস, পরে তোকে দেখাবো। তুই পুরো পাগল হয়ে যাবি।
আজ বিকালের বীথির আচরণ শফিক কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না, বীথি আর ও খুবই ফ্রী, সবকিছুই দুজন দুজনকে শেয়ার করে কিন্তু এভাবে কোন দিন বীথি কথা বলিনি। শফিক বেশ চিন্তায় পড়ে যায়, নিজেকে নিজেই প্রশ্ন করে বিথী কি ভালবেসে ফেলেছে আমাকে?
১৩টি মন্তব্য
সুপর্ণা ফাল্গুনী
মিষ্টি মান অভিমানের একটি গল্প পড়লাম। দারুন লাগলো। বন্ধুত্ব কখনো কখনো এমন ভালোবাসায় পরিনত হয় । ধন্যবাদ ভাইয়া। ভালো থাকুন সবসময় শুভ কামনা রইলো
শাহিন বিন রফিক
গল্পটি পড়া ও চমৎকার মন্তব্যটির জন্য আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
শুভকামনা রহিল
ভালোবাসা নিরন্তর।
নীরা সাদীয়া
কেমন যেন চেনা গল্প মনে হলো। কারণ আমাদের চারপাশে এমন হাজারও বিথী আছে। কিন্তু শফিকরা কেন যেনো বিথীদেরকে আপন করতে পারে না। দূরে ঠেলে দেয়। বিথীরা তাদের মনের ভাব প্রকাশ করে ফেলার সাথে সাথেই শফিকরা ইউটার্ন নেয়, বিথীদেরকে বড্ড মূল্যহীন ভাবে, অবহেলা করে। অথচ এমন একটা বিথীকে নিয়েই তারা রচনা করতে পারত সুখের স্বর্গ।
শাহিন বিন রফিক
আপনার সুন্দর মন্তব্যটির জন্য আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
শুভকামনা রহিল
ভালবাসা নিরন্তর।
ফয়জুল মহী
ভালো লাগলো । নিখুঁত প্রকাশ।
শাহিন বিন রফিক
আপনার ভাল লেগেছে জেনে অনুপ্রাণিত হলাম।
শুভকামনা রহিল
ভালবাসা নিরন্তর।
এস.জেড বাবু
এক ঘন্টায় তোর এই ঝড় রোদ্দুর
এটা মেয়েদের মানায়-
এরা না জেনে অভিমানে ভাসতে পারে/ ভাসাতে পারে।
যা ছেলেরা অনেকেই হয়ত পারে না।
মিষ্টি গল্প-
ভালো লাগলো বেশ।
শাহিন বিন রফিক
হা হা হা, এটা মেয়েদের মানায়, সহমত, মেয়েরা সত্যি খুব মায়াবতী, নরম মনের হয়, অল্পতে এরা খুশি আবার ঠুনকো কিছুতে বিশাল অভিমান।
আপনার চমৎকার মন্তব্যটির জন্য আমার আন্তরিক ধন্যবাদ।
শুভকামনা
ভালবাসা নিরন্তর।
জিসান শা ইকরাম
সুন্দর গল্প, ভালো লেগেছে খুব।
প্রিয় ব্লগার, একপোষ্টের পরে চব্বিশ ঘন্টা অতিক্রম হলে পরবর্তী পোষ্ট দিন।
সোনেলার সাথে থাকুন।
শুভ কামনা,
শুভ ব্লগিং।
শাহিন বিন রফিক
আন্তরিক ধন্যবাদ, এই বিষয়টি এখন থেকে মাথায় থাকবে।
শুভকামনা,
ভালবাসা নিরন্তর।
জিসান শা ইকরাম
আপনাকেও ধন্যবাদ ভাই।
আপনার পরের পোষ্ট আশাকরি রাত ৮ঃ৫৩ তে প্রকাশ হবে।
হালিম নজরুল
মনের দ্বন্দ্ব, অতপর ইউটার্ন, চমৎকার।
তৌহিদ
মান অভিমানের গল্প ভালো লাগলো ভাই। নিয়মিত লিখবেন আশাকরি।