সাধারণ ইনভাইটেশন পাবার পরেও প্রিয় বন্ধুর চোখের অপারেশনের কারণে সে যেতে পারবে না, একারণে সিদ্ধান্তই নিয়ে ফেলেছিলাম আমিও যাবো না দক্ষিন কোরিয়া। এরপর এপ্রিল মাসে একটি আলাদা মেইল পেলাম রোটারী ইন্টারন্যাশনাল এর প্রেসিডেন্ট এর কাছ থেকে। আমাকে ২৮ মে তারিখে বিশ্বের আরো ১১০ জনের সাথে সম্বর্ধনা দেয়া হবে, আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছে আমি উপস্থিত থাকতে পারবো কিনা, আমি ইচ্ছে করলে একজন গেস্ট নিয়ে যেতে পারবো। চব্বিশ ঘন্টার মধ্যেই জানাতে হবে। বিশ্বের সবচেয়ে বড় বেসরকারী সাহায্য সংস্থা রোটারী ইন্টারন্যাশনালের (যার সদস্য সংখ্যা সমগ্র বিশ্বে পনের লক্ষাধিক) সাথে জড়িয়ে আছি সেই ২০০৩ সন থেকে। ২০১৫-২০১৬ সনে আমাদের ক্লাব প্রেসিডেন্টও আমি। যারা রোটা্রির সাথে জড়িত নন, তাদের কাছে এই সম্মান তেমন কিছু নয়। তবে আমার কাছে অবশ্যই অতি গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশ থেকে আমি আর একজন সম্বর্ধিত হবো। হয়ত আমার রোটারির জীবনে আমি আর এমন সম্মান পাবো না, তাই সিদ্ধান্ত পালটে দক্ষিন কোরিয়া যাবার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম। নতুন মেম্বার স্পনসর করার সর্বোচ্চ গোল্ড লেভেল এ পৌঁছানোতে এই সম্বর্ধনা।

মনে পরে গেল গত বছরের ডিসেম্বরের কথা। নতুন মেম্বার স্পনসরশিপের কারণে রোটারী ইন্টারন্যাশনাল থেকে একটি গোল্ড প্লাটেড কোন পিন সহ রোটারীর প্রধান কার্যালয় আমেরিকা থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এসব পাই আমি। তখনই মেইলের মাধ্যমে আমাকে রোটারী প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিলেন যে ২০১৬ এর রোটারী ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশনে আমার নাম ডিসপ্লে করা হবে এবং রোটারী ওয়েবসাইটে আমার নাম প্রকাশিত হবে।
মনে পরে গেল গত বছরের ডিসেম্বরের কথা। নতুন মেম্বার স্পনসরশিপের কারণে রোটারী ইন্টারন্যাশনাল থেকে একটি গোল্ড প্লেটেড কোণ পিন সহ রোটারির প্রধান কার্যালয় আমেরিকা থেকে কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে এসব পাই আমি। তখনই মেইলের মাধ্যমে আমাকে রোটারী প্রেসিডেন্ট জানিয়েছিলেন যে ২০১৬ এর রোটারী ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশনে আমার নাম ডিসপ্লে করা হবে এবং রোটারী ওয়েবসাইটে আমার নাম প্রকাশিত হবে।

যে আমন্ত্রণপত্র পেয়েছি তাতে সাথে করে যে কোন ব্যক্তিকে নিয়ে যাওয়া যেত দক্ষিন কোরিয়ায়। সিউলে যাবার পরে বাঙ্গালী মহলে জানলাম যে আমি ৮ – ১০ লাখ টাকা লস করলাম। যে কোন ব্যক্তি দশ লাখ টাকা দিতে রাজী হত তাকে যদি সিউলে নিয়ে যেতাম, তবে সে থেকো যেত সিউলে। শুনে হেসেছি আমি। যাই হোক, সম্বর্ধনায় সম্মেলনে যাওয়া একজন রোটারিয়ানের নামই দিয়ে দিলাম আয়োজকদের।

পোষ্টটি অনেক আগেই দেয়ার ইচ্ছে ছিল, সিউলে থাকাবস্থায় ব্লগার আনিছ কে জানিয়েছিলাম এই ঘটনা। আনিছ তখনই পোষ্ট দিতে বলেছিল। কিন্তু নিজের ঢোল নিজে পেটানোর একটু সংকোচ কাজ করছিল। নিজের বেশ কিছু ফটো দিতে হয় ব্লগে, যা ব্লগের পোষ্টের জন্য বেমানান। নিজের ছবি দিয়ে পোষ্ট ফেইসবুকের জন্য মানানসই। ইদানিং ফেইসবুকিং টা খুব বোরিং লাগছে, এক নাগারে ৫-৭ দিনেও অনুপস্থিত থাকি মাঝে মাঝে ফেইসবুকে। সোনেলা আমার অত্যন্ত আবেগপূর্ণ একটি স্থান। ইন্টারনেটে যতক্ষন বিচরন করি, সোনেলায় বসে থাকি। নতুন পোষ্টের সাথে অনেকের পুরাতন পোষ্ট পড়ি। কত যে স্মৃতি এই সোনেলাকে নিয়ে। এখানকার ব্লগাররা কখন আত্মার আত্মীয় হয়ে গিয়েছেন বুঝতে পারিনা। আজ একটি বিশেষ দিন, এই দিনে লজ্জাকে কিছুটা দূরে ঠেলে দিয়ে দিয়েই দিলাম এই পোষ্ট।

 

IMG_20160528_134146
রোটারী ইন্টারন্যাশনাল এর পক্ষ থেকে রোটারী ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ‘রে ক্লিনস্মিথ’ সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে সবাইকে অভ্যর্থনা জানালেন, একটু কি বেশি সময় দিয়েছিলেন উনি আমাকে, কে জানে? সম্পুর্ন অনুষ্ঠানের ভিডিও থাকলে হয়ত বুঝা যেত। প্রায় পাঁচ মিনিট রে ক্লিনস্মিথ এবং ওনার স্ত্রীর সাথে কথা বলেছি রোটারী নিয়ে আমার ক্লাবের পরিকল্পনার বিষয়ে। কথার শেষ পর্যায়ে আনুষ্ঠানিক ফটো সেশনও হল, প্রায় একই ধরনের ফটো হওয়ায় দুটো ফটো দিলাম।
IMG_20160528_134152

একটি পর্যায়ে মঞ্চে আমার নাম আসলো, নিয়মানুযায়ী মঞ্চে নাম ডিসপ্লে হলে যার নাম তাকে যেতে হবে ডিসপ্লের পাশেই, গেলাম আমিও। লজ্জা এবং আবেগ নিয়ে কখন যে হাত উপরে উঠে গেল বুঝতে পারিনি।
IMG_9642
এরপর যখন এই অবস্থায় আমার অনুভূতি কেমন, কি ভাবছি এই সম্মান পেয়ে, তখন আমাদের মুন্নি সাহার কথা মনে পরে গেল। মুন্নি সাহার বিখ্যাত ”আপনার অনুভূতি কি?” মনে পরে যাওয়ায় হাসতে হাসতেই বক্তৃতা মঞ্চে গিয়ে গলগলিয়ে কিছু বলে গেলাম। সবাইকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলতে ভুললাম না যে আমি একজন গর্বিত রোটারিয়ান এবং একজন ব্লগারও 🙂 হালকা হাততালির শব্দ ফটোতে ধারণ করা গেল না বলে দুঃখিত।
IMG_20160528_134012

একই সাথে চলছিল খাবার পর্ব। আমার সাথে সঙ্গী যাকে এখানে আনার জন্য নাম দিয়েছিলাম, তিনি গুনে বলেছেন সর্বমোট ১৬৮ টি খাবারের আইটেম ছিল, পানীয় বাদেই। পানীয় বলতে পানীয়ই, বিয়ার, হুইস্কি, ওয়াইন এই সব আরকি। আমার সঙ্গীর খাবার আসক্তি যে কত বিশাল তা ঐদিন দেখলাম। একজন ছোট খাট মানুষ কিভাবে এত পরিমান খেতে পারে, তা না দেখলে আমার ধারনা হত না। সিউলে থেকেই তার খাবার খাওয়া দেখে আমি অবাক হয়েছিলাম। এই পেটুক সঙ্গীর কথা না হয় আর একদিন বলা যাবে 🙂
আপাতত খাবারের কিছু ছবি দেখি…………
IMG_20160528_142053
IMG_20160528_142020
IMG_20160528_142106 [320x200]
IMG_20160528_142036

খাবার দাবারের একপর্যায়ে টেবিলের সামনে এসে এক সুন্দরী রোটারিয়ান যিনিও আমার মত সম্বর্ধিত হয়েছেন, আমাদের টেবিলের সামনে এসে থমকে দাড়ালেন। আমার দিকে তাকিয়েই বললেন ‘ হাই হ্যালো রোটারিয়ান , তোমাকে কোথায় দেখেছি বলতো?” আমি মনে মনে কিছুটা ভ্যাবাচেকা খেলেও নির্লিপ্ত গলায় জবাব দিলাম, না এমন হয়নি কখনো, দেখা হয়নি তোমার সাথে। অন্য কারো চেহারার সাথে আমার চেহারার মিল খুঁজে পেয়েছ হয়ত। ” আরে না তোমাকে আমি দেখেছি আগে, আমার তো মনে হচ্ছে তোমাকে আমি আমার ভিজিটিং কার্ডও দিয়েছি, আমি মারিসা ডেলমার 🙂 মনে পড়েছে এবার? ”- এই বলে তিনি হাত বাড়িয়ে হ্যান্ডশেক করলেন। চেয়ার টেনে নিজেই বসলেন আমাদের টেবিলে। মেমোরি কার্ডে সার্চ চলছে ফুল স্পীডে, কোন মারিসা ডেলমার? কেন মনে পড়ছে না? উফ মাথা টাকাইয়া ভেঙ্গে ফেলতে ইচ্ছে করছে। তার আচরনে স্পষ্ট যে তার সাথে আমার আগে পরিচয় হয়েছিল। মুখে হাসি এনে কথা বলছি আজকে খাবার নিয়ে, অনুষ্ঠান নিয়ে। কিন্তু মারিসা ঠিকই বুঝতে পেরেছিল যে আমার মনে পরছে না।
” শোনো ফিলিপাইনে আমার অসতর্কতায় অনুষ্ঠানের পরে একদিন হোটেলের বিচে তোমার হাতের ড্রিংক্স এর গ্লাস পরে গিয়েছিল। আমি স্যরি বলে দৌড়ে আবার নিয়ে এলাম তোমার জন্য, গ্লাস তোমার হাতে দেয়ার সময় আবার দুর্ঘটনা, কিভাবে যেন কিছুটা ড্রিংক্স তোমার ব্লেজারে পরে গেলো ” 🙂
= হা হা হা হা , এইবার মনে মনে পরেছে মারিসা। কিছুক্ষন আমরা গল্পও করেছি, হেঁটে হেঁটে আরো ড্রিংক্স নিয়েছি, গোস্তের স্টিক নেয়ার সময় আমি যে স্টিক নিলাম, তা দেখে বলেছিলে আমি পর্ক খাই কিনা 🙂 এরপর তুমিই এনে দিলে বিফ এর স্টিক 🙂
” হুম, পরদিন হোটেলের লবিতে তোমার কয়েকটি ফটোও তুলে দিয়েছিলাম।” বললেন মারিসা

টেবিলে কালো ব্লেজার গায়ে মারিসা ডেলমার
টেবিলে কালো ব্লেজার গায়ে মারিসা ডেলমার

যাক সব কিছু মনে পরে গিয়েছে। খেতে খেতে কথা বলছিলাম। এবার তার নিজের পেশাগত পরিচয় দিলেন মারিসা। ফিলিপাইন ন্যাশনাল রিয়েল এস্টেট এসোসিয়েশনের প্রেসিডেন্ট তিনি। একজন টিভি উপস্থাপক, নিজের নামেই একটি শো করেন, টিভিতে। কয়েকশত এপিসোড হয়েছে। তার কাজের জন্য তিনি বিভিন্ন সময়ে পুরস্কৃত হয়েছেন। Buhay OFW Tv নামে এই ওয়েবসাইটে তার এপিসোড গুলো দেখতে পাওয়া যাবে। ” অনেক আগে সিনেমাতেও হিরোইন হিসেবে অভিনয় করেছি, এখন আর অভিনয় করিনা। তোমাদের দেশে হয়ত ঐ ধরনের মুভি দেখো না তোমরা, তাই আমার মুভি না খোঁজাই ভাল।” বললেন তিনি হেসে হেসে। রোটারি অন্ত প্রাণ মারিসার। প্রচুর খরচ করেন দুস্থ্যদের জন্য, অসহায়দের জন্য। একজন ভাল মানুষের সাথে পরিচয় হয়ে আমার খুবই ভাল লাগছিল। অনুষ্ঠান শেষে বিদায় নিলাম একে অপরের কাছ থেকে। হয়ত কোনোদিন দেখা হবে তার সাথে, হয়ত না, তবে অনেকদিন মনে থাকবে এমন আলাপি একজন মানুষের কথা। হোটেলে ফিরে আমি মারিসার মুভির ক্লিপ খুঁজে দেখেছি, কারন সে নিষেধ করেনি, এবং খুঁজে দেখা খারাপ এটি বলে নি 🙂

**************************************************************************************************************
কিছু কথাঃ
সোনেলা আমার অত্যন্ত আবেগের একটি স্থান। যারা এখানের পুরাতন ব্লগার বা ব্লগ জগতের খোঁজ খবর রাখেন, তারা জানেন কেন এবং কিভাবে এই সোনেলার সৃষ্টি হয়েছিল। যখন ব্লগ জীবন শুরু করি তেমন পরিচিত ছিলাম না, ধীরে ধীরে একটা বিশাল জগৎ সৃষ্টি হয়ে যায়। তেমন লেখক আমি নই, একাধিকবার আমি নিজেই তা বলেছি, অকপটে স্বীকার করি এই সত্যি। একজন লেখক না হয়েও জনপ্রিয়! স্বাভাবিক ভাবেই ধীরে ধীরে কিছু শত্রু সৃষ্টি হতে লাগলো। রাজাকার, জামাত, শিবির সম্পর্কে অনমনীয় মনোভাবের কারণে তারা বিভিন্ন ভাবে হয়রানি, কুৎসা রটনায় নিয়োজিত হল। আর ব্লগ মালিকের রাজাকার প্রিয়তার কারণে তার সাথেই টক্কর লেগে গেল। সরাসরি বললামও তাকে সে কথা। ব্লগ মালিকের সাথে টক্কর দিয়ে কেউ টিকতে পারবে না এটি জানা কথা। যেহেতু লেখক হিসেবে পরিচিতি হবার সামান্য তম ইচ্ছেও আমার ছিলনা এবং নেই, তাই তার সাথে আপোষ আমি করিনি। অনেক ব্লগার আস্থা রেখেছেন আমার উপর, এখনো রাখছেন। যারা আমার কারণে একটি ব্লগে অপমানিত হয়েছেন, আমার অপমানকে তারা নিজেদের অপমান হিসেবে নিয়ে ঐ ব্লগ ছেড়েই দিয়েছেন, ২০১২ এর পরে একটি দিনের জন্যও আর ঐ ব্লগের কোন পোষ্ট দেখেননি, তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞতার শেষ নেই আমার। সেই সমস্ত ব্লগারদের অধিকাংশই এখন সোনেলায় লেখেন। আমি অকৃতজ্ঞ নই, আমার মনের আস্থা ধরে রাখতে তারা প্রতিনিয়ত সাহস যুগিয়েছেন। মানুষের প্রতি আস্থা আমার চলে গিয়েছিল, তাঁদের জন্যই আমি আমার আমিকে ফিরে পেয়েছি।

সোনেলায় এটি আমার দ্বিশততম পোষ্ট, কখন হয়ে গেল এতগুলো পোষ্ট! আমার অখাদ্য অলেখা গুলো প্রতিনিয়ত গিলতে বাধ্য করিয়েছি সবাইকে।
আমার এই পোষ্ট উৎসর্গ করছি সোনেলার সমস্ত ব্লগার, পাঠক, শুভাকাঙ্ক্ষী, মডারেটর, ডেভলপার এবং পরিচালনা পরিষদ কে।


আগত দিনগুলো সবার শুভ হোক -{@
সবার জন্য আন্তরিক ভালবাসা (3

৭৪৪জন ৭৪৪জন

৬২টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ