প্রিয়
সুলেখা, আমায় নিয়ে তোর ধারণাটা কি পাল্টেছে?নাকি আটপৌরে বুরির মতো সেকেলে তুচ্ছ কথাটিকে মনে গেথে চুরান্ত অপরাধীর আসনে বসিয়ে তোর মায়াবী চোখের চাহনিতে হিংস্রতা মিশিয়ে নাক শিটকে
ঘৃণার সাগরে ভাসিয়ে দিচ্ছিস!
প্রিয়, ওগো কেমন আছো তুমি?
চিঠির প্রারম্ভেই জানতে চাওয়াটা নমনীয়তা।
এ নির্ঘাত মহা অপরাধ আমার, আমি তা জানতে চাইনি।এখন নিশ্চই তোর মনে আমায় নিয়ে জমানো অন্ধকার কুঞ্জবনে আচমকাই জোনাকীর মতো জলে উঠেছে একটি প্রশ্ন ‘কেনো জানতে চাইলাম না!”
বলছি তাহলে,তবে তার আগে দু’লাইন ছন্দ শুনাই।
গাছ বাচে আলো হাওয়ায়, মাছ বাচে জলে
প্রানের মানুস রইলে দূরে,সুখ থাকেনা মনে।
আমি জানি তুই ভালো নেই, ভালো থাকতে পারস না! কারণ তোর ভালোথাকার একমাত্র উপাত্ত তোরি দেওয়া হেলার সাগরে ভেসে ভেসে সাগরে মিশে জাচ্ছে। চাইলেও আর তাকে ফেরাতে পারবিনা, একান্ত নিজের করে পাওয়া ও প্রায় দূর্লভ। এমন শুনিশ্চিত অমঙ্গল নিজ ভ্রমে সংগঠিত করে কেউই পারেনা ভালো থাকতে সুখে থাকতে। তাইতো “কেমন আছো ” জানতে চেয়ে কাটা গায়ে লবন ছিটা দিতে আমার মনে বাধলো।
আমি বেশ আছি জানিস!কনকনে শীতের সকালে গরম চায়ের কাপে প্রথম চুমুকেই জেনো তোর উষ্ণতা পাই।
ক্লান্ত পথের শেষে একফালি মেঘের ছায়ায় তোর প্রশাম্তি মেশানো চাহুনিতে হারাই।
গোধুলীর ক্ষনে ফিরফিরে হওয়া যোনো তোর ছোয়া শিহরিত হয় মনে।
নিসঙ্গ ক্ষনে ভাবলে তোর কথা, বিষন্ন মন হয় চঞ্চল। এত এত সুমিষ্ট অনুভূতি নিয়ে ভালো না থেকে পারাযায় বল!!
লেখু,তোর কি মনে আছে আমাদের প্রথম ক্লাসের কথা??স্যার আমাকে শাস্তি দিয়েছিলো বলে, সে জখন বসতে যাবে পা দিয়ে টুল টা সরিয়ে দিলাম, আমনি সে পরে গেলো?ক্লাসের সবাই হোহো করে হেসে উঠলো, তুই কিন্তু হাসলিনা বরং আমায় চোখ রাঙ্গিয়ে শাসিয়ে দিলি!
আর ঐ কথাটা তুই ভূললেও আমি পারবোনা, কোন কথাটা জানিস? ঐ যে নগর বাড়ির পোলা টিটু আমায় বোলা বলে ডাকলো অমনি আড়াল থেকে ডিল মেরে ব্যটার চান্দি ফাটিয়ে দিলাম! ওরা জখন চারদিকে খুজছিলো তুই তখন মুচকি হেসে ওদের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলি। তোর এ অমূল্য হাসিটা ভূলিকি করে বল!
লেখু, আমার জীবনের প্রথম এবং শেষ উপহার টা কি জানিস? তোর দেওয়া সেই জোড়া বাবুইয়ের খেলনা। পায়ের কাছে থাকা বাটন চাপলে দুলাইন গান বাজতো, সে আর বাজেনা যদিও তবুও খুব যত্নেই রেখেছি।
তোর দেওয়া ঐ জোড়া বাবুই নিয়ে কতো গল্প মনে পরে?? আমাদের বাসা পাল্টানের সময় ভুলকরে রেখে চলে গিয়েছিলাম। তারপর আমি স্কুলে যাওয়ার নাম করে পুরাতন বাসায় চলে গেলাম, বাসায় ফিরতে লেট হওয়ায় সবাই ভাবলো আমি হারিয়ে গেছি, মাইকে হারানোর সংবাদ দেওয়া হলো। পারা জুড়ে হট্টগোল পরে গেলো। অনেকে বললো ছেলেটা চঞ্চল খুব, এ নিয়ে অভিযোগ তোরো কম নয়।
আর নাগর দেলা দেখলে কেমন করিস বলতো।আমার জমানো টাকায় নাগর দেলায় উঠার কতো শখ ছিলো তোর। তখন মনটা খানিক খারাপ হতো বটে! এখন শুধু ভাবি, ভুল করে যদি কোনো দিন তুই এসে বলতি,ভোলা চল নাগর দোলায় উঠি।
যানি সেটা কখোনো হবে না তবুও..
এখন নাগর দোলায় উঠিস কার টাকায়?
নাকি উঠিসই না আমি নেই বলে?
হয়তো ভুলেই গেছিস সেসব পুরোনা দিনের কথা,সেকেলে খেলার কথা, খেলনার কথা,আর পুরোনো সব মানুষের কথা।
লজ্জায় আমার মাথা হেট হয়ে গিয়েছিলো,শুধুই কি লজ্জা! কষ্টও পেয়েছি যতটা কষ্টে হৃদয় কাঁদে, সেদিন ক্লাসের সকলের সামনে তুই বলে দিলি! তুই আর কথা বলবিনা আমার সাথে, তুই বাঝে, বখাটে একটা! জানিস লেখু, এতে আমার কষ্ট হয়নি খুব। কারন আমিতো চাইতাম তোর শাষন মনে প্রাণে, তাইতো তোর সামনে তোকে দেখিয়ে তোকে তেলেবেগুনে জালিয়ে দিতেই কতো রকম ইতরামি করতাম।তভুও কষ্ট কেনো পেলাম জানিস?? তোর কথা শুনে সেদিন নগর বাড়ির পোলা টিটু তার সব দল বল নিয়ে কতো ক্ষেপিয়েছে আমাকে। আমি ওদের কতো করে বোঝাতে চেয়েছি, লেখু আমায় ঘৃণা করেনা, আমার সাথে কথা ও বলবে, লেখু আমায় বাঝেও ভাবেনা।যেগুলো বলেছে রাগিয়ে দিয়েছি তাই বলছে।
দেখবি কালই ক্লাসে এসে লেখু প্রথমে খুজবে আমায়, আমি লুকিয়ে থাকলে কেদেও ফেলবে।
অথচ, পরের দিন যেটা হলো তা আজো আমার অবিশ্বাস্য! ওদের কথাই সত্যি হলো!আমি কতোক্ষন লুকিয়ে রইলাম, না তুই আমায় খুজলি, না আমার নামটা ও মুখে নিলি।নিজ থেকে এসে জখন তোর রাগ ভাঙ্গাতে পেছন থেকে চোখ বন্দ করলাম,তুই কিভাবে পারলি লেখু আমায় এতটা অপমান করতে?কেনই বা করলি, কি এমন হয়ে ছিলো সেদিন। জানার সময় সুযোগটুকুও দিলিনা! আজো অজানাই রইলো কথাটা।হয়তো এজনমে আর জানাই হবেনা।
তোর দেওয়া কলম টা আজো আছে,সেদিন খুব মনে পরছিলো তোকে, ভাবলাম তোর দেওয়া কলমটা দিয়েই লিখি দুলাইন। সে আর হলোনারে.. এত বছরে কি কলমের কালি থাকে বল।
লেখু, আমাকে তোর মনে পরে?নাকি কলমের কালির মতোই শেষ, আমাকে নিয়ে তোর সকল ভাবনা,অনুভিতি! কোনো বিকেল বিষন্ন হয় তোর আমার অভাবে? কেনো গোধূলির বেলায় বুকের ভেতরে হাহাকার করে উঠে?কখোনো গভীর রাতে ঘুম ভাঙ্গে আমার সপ্নে? হিম শীতের সকালে কেউ তোরঘুম ভাঙ্গায় খুটে আনা বড়ই দিতে? শীতের সকালটা কেমন কাটে তোর?বিষন্ন খুব নাকি সুখ সুখ ব্যাস্ততায়।তোর মায়াভরা চোখে অগ্নি শিখা মিশিয়ে শাশিয়ে দিস কাকে?বাসায় বকে দিলে সে জালটা মিটাস কার উপর? কার সাথে কাটে তোর সুখের সময় বা তিব্র বিষন্নক্ষন? কার সাথে দিস আড়ি? খুব বেশী রাগ হলে কে ভাঙ্গায় তোর রাগ। আচ্ছা কেউ তোকে রাগায় আমায় মতো, পরে হাসাতে ব্যাস্ত হয় কেউ?হাটে কেউ তোর আঙ্গুল ধরে নদীর পারে? লুকিয়ে কে দেখে তোর মায়ামাখা মুখখানি?
পেয়েছিস কি তুচ্ছ, তাচ্ছিল্য, অবহেলা করার মানুষ, নাকি নিজেকেই হেলায় ভাসিয়ে পুরোনোকে ভাবিস! যেভাবেই হোক ভাবিস একটুও আমাকে? নাকি আমার ভাবনা ভুল।
লেখু, সত্যি বলছি আমি আজো সেই চঞ্চল ছেলেটেই আছি, মনে প্রণে ঘৃণা করতে যেনো তোর সুবিধে হয়।যেনো তোর সুন্দর জীবনে আমার ছায়া না আসে। জানিস! বুকের ভেতরটা তখন মুচরে উঠে যখন শুনি তুই ভালো নেই, ভালো নেই শুধু এই চঞ্চল,বেপরোয়া, মানুষটার জন্য।
লেখু, ঘৃণাই করবি যদি তবে আর মায়ায় পরে আছিস কেনো, কেনো মনে করে কাদিস, কেন নতুন বন্দুদের সাথে মিশতে পারিস না, কেনো নিসঙ্গ আছিস?কেনো জীবন থেকে সব হাসি আনন্দ উড়িয়ে দিলি।
লেখু, তুই বরাবরই বুদ্ধিমতি ছিলি আছিস।নিজেকে পুড়িয়ে তুই অঙ্গার করিস আমায়!
আচ্ছা লেখু, যদি মনেই রাখবি আমায় তবে তখন কেনো অকারণ অভিযোগ তুলে ঘৃণা অবহেলা তাচ্ছিল্য করে তাড়িয়ে দিলি?
আসলে তুই হয়তো ভাবতিস তোর সব অবহেলা কে উপেক্ষা করে তোর কাছেই পরে রইবো। আমিও তাই চাইতাম যদিও তভুও ঝিরিঝিরি ঝর্ণার জল ও সাগরে মিশে তা তো মিথ্যে হওয়ার নয়!
খুব খুব বেশি অভিযোগ করবো তোর নামে এমন ভাবনাই ছিলো লিখতে বসার শুরুতে। অথচ দ্যাখ, তোকে নিয়ে অভিযোগ করার একটি কথাও পেলাম না! উপরন্তু নিজের সব
বদমাসি প্রকাশ করে দিলাম! তোকে মিনিট পাচেক সময় দিলেতো ডজন খানেক অভিযোগ দার করাতি।
লেখু, আজ কি পারবি অত অভিযোগ করতে? জানিস খুব খুব ইচ্ছে হয়, প্রথম ক্লাসের দিন, স্যারকে ফেলে দেওয়ায় তুই যে চোখ রাঙ্গিয়ে ছিলি, কেউ সেভাবে চোখ রাঙ্গিয়ে দিক। কেউ বললাম বলে আবার রাগ করিস না রে। অল্পতে রাগ করার অভ্যেস তোর আছে সে জানি,আসলে কেউ বলতে তোকেই…
লেখু, আমায় নিয়ে তোর মনে যে অভিযোগ গুলো আছে, সে গুলোকে মনে করে মনে মনে ঘৃণা করার চেষ্টা করবি। তাতে যদি আমায় সঠিক ঘৃণা করতে পারিস , আর ঘৃণার ছলেও আমায় নাম টা মুখে নিবিনা, তুই বলতি না, আমার নাম নিতেই তোর কাছে চলে যাই!
লেখু,ইচ্ছে হলেও তোকে লিখতে বসিনা কারণ কি জানিস!! তোকে লিখতে বসলে কেনো জানি লেখা শেষই হতে চায় না। মনে হয় এখোনো কতো কথা পরে রইলো, কতো কথা না বলা রইলো। এমন কেনো হয় বলতে পারিস?এসব নিরর্থক প্রশ্নের জবাব দিতে আসবিনা জদিও , তবুও জানার খুব ইচ্ছে, শুধু তোর মুখথেকে শুনতে।
আজ আর লিখবোনা, পরের চিঠিতে নিশ্চই তোর রঙ্গিলা অভিযোগের হাড়ি খুলে দেবো। এই উড়োচিঠি যদি তোর কাছে পৌছে জবাব হিসেবে তোর হাতে লিখা একটি শব্দও আমার এই বিষন্ন সময়ে সর্গ সুখ এনেদিবে।যদিও এ আমার নির্ঘাত বোকামী ভাবনা।তবুও বলি তোর হাতে লেখা জবাবের অপক্ষায় রইলাম।
পরিশেষে,
লেখু তুচ্ছ মানুষটাকে মন থেকে তুচ্ছ করতে শিখ,এটাই তোর জন্য শুভো। তোর ভবিষ্যৎ অনেক সুন্দর হোক সেই কামনায়। ভালো থাকিস।
ইতি
তোর অবোহেলার মানুষ
১৪টি মন্তব্য
ফয়জুল মহী
চমৎকার সৃষ্টি
সুপর্ণা ফাল্গুনী
এত্ত বড় চিঠি! কত কত স্মৃতি, আবেগ, অভিযোগ, অনুনয়। তুচ্ছ ভাবতে পারলেই কি শুভ হয়, ভালো থাকা যায়? ধন্যবাদ ভাইয়া। বানানগুলো একটু খেয়াল রাখবেন। শুভ কামনা রইলো
মোহাম্মদ দিদার
নিশ্চয়ই দেখবো, কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন করছি।
মনির হোসেন মমি
লেখু, ঘৃণাই করবি যদি তবে আর মায়ায় পরে আছিস কেনো, কেনো মনে করে কাদিস, কেন নতুন বন্দুদের সাথে মিশতে পারিস না, কেনো নিসঙ্গ আছিস?কেনো জীবন থেকে সব হাসি আনন্দ উড়িয়ে দিলি।
লেখু, তুই বরাবরই বুদ্ধিমতি ছিলি আছিস।নিজেকে পুড়িয়ে তুই অঙ্গার করিস আমায়!
চমৎকার অভিমানী চিঠি। খুব ভাল হয়েছে।
অন্বেষা চৌধুরী
এমন শুনিশ্চিত অমঙ্গল নিজ ভ্রমে সংগঠিত করে কেউই পারেনা ভালো থাকতে সুখে থাকতে।
একদম তাই। সত্যিই এত
ভাবে কেউ ভালো থাকতে পারে না।
চমৎকার লিখেছেন চিঠি
অন্বেষা চৌধুরী
এমন শুনিশ্চিত অমঙ্গল নিজ ভ্রমে সংগঠিত করে কেউই পারেনা ভালো থাকতে সুখে থাকতে।
সত্যিই তাই।
যে ভ্রমে অমঙ্গল সংগঠন করে রাখে
সে কখনোই ভালো থাকে না।
চমৎকার আর বিশাল চিঠি
নৃ মাসুদ রানা
চিঠি পড়তে বেশ ভালোই লাগে আমার। বারবার পড়তে ইচ্ছে করে।
সুরাইয়া পারভীন
বাপরে বাপ!
এতো বড় চিঠি।
এ যেন রেল লাইনের মতো চলছে তো চলছেই।
যা হোক চমৎকার লিখেছেন
মোহাম্মদ দিদার
আন্তরিক অভিনন্দন জানবেন
সঞ্জয় মালাকার
চিঠি পড়তে বেশ ভালোই লাগে আমার দাদা।
এস.জেড বাবু
ভিষন ভালো লাগছিলো পড়তে পড়তে।
এখন নাগর দোলায় উঠিস কার টাকায়?
নাকি উঠিসই না আমি নেই বলে?
এই জবাব আসবে বলে মনে হয় না।
চমৎকার চিঠি ভাইজান।
মোহাম্মদ দিদার
মন্তব্যে আপ্লুত হলাম সুপ্রিয়, ভালো থাকুন নিরন্তর।
দালান জাহান
ভালো লাগলো পড়ে। সুন্দর স্মৃতির চিঠি
মোহাম্মদ দিদার
ভুলে যাওয়ার মতো নয় কিচু স্মৃতি