উপলব্ধি

রিমি রুম্মান ৩০ অক্টোবর ২০১৫, শুক্রবার, ১১:৫৬:৫৫পূর্বাহ্ন একান্ত অনুভূতি ২৩ মন্তব্য
নতুন মানুষ, নতুন সংসার, নতুন দেশ__ সবমিলে অথৈ সাগরে হাবুডুবু খাওয়া অসহায় একটা সময় তখন। রান্না জানিনা। স্বামী রান্না করেন, কাপড় কেচে দেন, বাড়িঘর পরিস্কার করেন। আবার আমি যখন জবে যাই, আমার টিফিন রেডি করে ব্যাগে ভরে দেন। কাজের জায়গায় সহকর্মী’রা কেউ কেউ জিজ্ঞেস করেন, আজ কি লাঞ্চ এনেছি। আমি বলি, বলতে পারবো না। ওরা হাসে। ঠাট্টা, তামাশা করে। অনেকটা ভার্সিটি পড়ুয়া ছেলেমেয়েকে বাবা-মা প্রতিদিন ভার্সিটিতে নামিয়ে দিয়ে আসলে অন্য সহপাঠীরা যেমন হাসি তামাশা করে তাঁকে নিয়ে__ ঠিক তেমন।  🙂  
 
 
যত্ন-আত্তি আর ভালোবাসায় মাখামাখি সময়গুলো বেশ উপভোগ্য ছিল। দিনগুলোর স্থায়িত্ব ছিল দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর। ভাবি__ এতো ভালোবাসা কই রাখি !  😀 
 
 
সেই সময় টিভি চ্যানেলে প্রায় প্রতি সপ্তাহেই টাইটানিক মুভিটি দেখাতো। প্রতিবারই শেষ দৃশ্যে এসে মন ভারী হয়ে আসে। বিশেষ করে নায়িকা যখন বলে, “জ্যাক, কাম ব্যাক… কাম ব্যাক… কাম ব্যাক…।” কিন্তু জ্যাক ফিরে না। হাত ছেড়ে দেবার পর মৃত্যুর হিম শীতলতায় গভীর সমুদ্রে তলিয়ে যায় জ্যাকের নিথর নিষ্প্রাণ দেহখানা। কি নিদারুন হৃদয়বিদারক বিচ্ছেদ !  🙁 
 
 
মনে হতে থাকে, সম্ভবত আমি যখন মারা যাবো, শেষ সময়টায় আমি আমার স্বামী কথা ভাববো। এবং তাঁর জন্যে সবচাইতে বেশি কষ্ট অনুভব করবো।
 
জীবনের ভালোবাসাময় মধুরতম সেই সময়টাতে একদিন আমরা আকাশযানে চেপে বসি দেশের উদ্দেশ্যে। পাঁচ বছর বাদে দেশে যাচ্ছি। আমরা আমাদের বাবা-মা’দের দেখবো ! বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাস ভেতরে। দীর্ঘ ভ্রমনে তাঁর কাঁধে মাথা রেখে পরম নিশ্চিন্তে, নির্ভরতায় ঘুমিয়ে থাকি। হঠাৎ খারাপ আবহাওয়ার কবলে আমাদের প্লেন। এয়ার গ্যাপ এর কারনে প্লেনটি ধুপ্‌ করে অনেকখানি নিচে পড়ে যাচ্ছিলো। দুলছিলো। আবার ঠিক হচ্ছিলো। এনাউন্স করা হচ্ছিলো বিরামহীন। সবাইকে সিটবেল্ট বেঁধে শান্ত থাকতে বলা হচ্ছিলো। শিশুরা চিৎকার করছিলো। বৃদ্ধ যাত্রীরা জোরে জোরে বিপদ থেকে উদ্ধারের দোয়া, মৃত্যুর সময়কার দোয়া পড়ছিলো। অন্য সকল যাত্রীর মতন আমিও ধরেই নিয়েছি আমরা নিশ্চিত মারা যাচ্ছি। নিজেদের মৃত্যু পূর্ববর্তী হঠাৎ বেড়ে যাওয়া হৃদস্পন্দন নিজেরাই শুনতে পাচ্ছি যেন ! চোখ বুজে রইলাম। একে অপরের হাত শক্ত করে চেপে ধরে রাখলাম। সম্ভাব্য মৃত্যুকালীন সেই সময়টাতে বাবা-মা’য়ের বিষণ্ণ মুখ ভেসে উঠলো চোখের সামনে। দু’চোখ বেয়ে জল গড়িয়ে পড়ছিলো। মনে হচ্ছিলো__ আহা! আমার বাবা-মা আমার পথচেয়ে আছে, শেষ দেখাটাও বুঝি আর হল না ! বাবা-মা’য়ের জন্যে কষ্টে শরীর হিম হয়ে এলো।
 
 
মৃত্যুর খুব কাছাকাছি দাঁড়িয়ে শেষ নিঃশ্বাসের অপেক্ষায় যখন…
 
অতঃপর এনাউন্স শুনতে পেলাম আমরা প্রতিকুল আবহাওয়া কাটিয়ে বিপদসীমার বাইরে এসেছি।মারা যেতে যেতে বেঁচে যাওয়া আমি সেদিন উপলব্ধি করলাম___ 
 
শেষ সময়টায় আমরা আসলে সৃষ্টিকর্তার পরেই বাবা-মা’কে স্মরণ করবো। 
বাবা-মা’র আদর ভালোবাসার বিকল্প কেউ হতে পারে না। কেউ না…
৪৫৬জন ৪৫৬জন

২৩টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ