পাঁচ- অহমের প্রতি

তোকে বলবোই না । এটা কেমন চিঠি হলো ? মাঝে-মধ্যে কি একটু সুন্দর করে লেখা যায়না ? প্রেম পত্র তো আর চাইনি যে অনেক কষ্ট করে ভেবে-চিন্তে এবং ইনিয়ে-বানিয়ে লিখতে হবে । তুই আর মানুষ হলি না । এজন্যই উপমা তোকে বিয়ে করেনি । এখন বেশ আছে ওর সংসার নিয়ে । দেখা হয়েছিলো বইমেলায় । আমাকে দেখে তোর কথা জানতে চাইবার চেষ্টা করলো । জানে তো , তুই ছাগলের সাথে আমার এখনও যোগাযোগ আছে । কিন্তু ওর বরও যে ছিলো সাথে । তাই কোনোভাবে বরকে নিয়ে চলে গেলো । বুঝলি রে ছাগল দারুণ খবরটা পেতে হলে সুন্দর একটা চিঠি চাই-ই চাই ।

তোর তিরি

 

ছয়- তিরির প্রতি

আজ তোর চিঠি পেলাম । প্রবাসী জীবনে মেইলবক্স থাকে বটে , কিন্তু বিল ছাড়া আর কোনো কিছু জমা হয়না । তা নইলে থাকে বিজ্ঞাপনের কিছু কাগজ । ভাগ্য ভালো আমার , তুই আছিস বলেই মেইল বক্সটা এখনও যান্ত্রিক হয়ে যায়নি ।

আজ অনেক রাতে বাসায় ফিরলাম । রান্না ছিলোনা , খাবারও কিনে আনিনি । ভুলে গিয়েছিলাম । রাগ করিস না । জল আর বিস্কুট খেয়ে তোর চিঠিটা খুললাম । তোকে লিখতে গিয়ে বুঝলাম প্রেমের চিঠি অনেক সহজ লেখা । তবে তোর সাথে প্রেম , এটা আমি কল্পনাও করিনা । আমি জানিনা তোর বর কেমন করে তোকে সহ্য করে !

উপমার কথা বলে অনেক কিছু মনে করিয়ে দিলি ।  আসলে ভালোবাসাটা তো এক পক্ষের ছিলো । ওর তো কোনো দোষ ছিলোনা । আমাকে যদি ও ভালোবাসতে না পারে , আমি কেন বাসবো না ? ভালোবাসলেই যে ভালোবাসা দিতে হবে এমন তো কোনোও কথা নেই , তুই-ই তো বলতি ।

যাক যে কথা বলছিলাম উপমাকে লিখতে এতোটা ভাবতে হয়নি । তোর মনকে নাড়া দেবে এমন চিঠি লিখতে গেলে আরেকটা জন্ম নিতে হবে । কিন্তু আমি তো এই জন্মেই আছি , এরপর হয়ে যাবো হাওয়া । দয়া করে তখন আমার পিছু নিসনা । তাই এবারকার মতো শেষ করি । অনেক তেল দিয়েছি , আর সম্ভব না । তোর সাথে ছাগল ছাড়া কে আর সম্পর্ক রাখে বল ? এখন যদি খবরটা না দিস তাহলে মন খারাপটা আস্ত আমাকে গিলে খাবে , যদি তাই চাস জানাস না ।

তোর অহম

 

সাত- অহমের প্রতি

এটা ঠিক না । এভাবে তোকে লিখতে বলেছি ? কেন এতো এলোমেলো তুই ? ছুটির দিন অনেক বেশী করে রান্না করে রাখিস কয়েকটা পদ । আর বাসায় প্যাকেট খাবার রাখিস রে ।  কতো করে বলেছি বিয়ে করে ফেল , তা না এভাবেই জীবন কাটাবে । তোকে যতোটুকু বুঝি তুই উপমার জন্যে বিয়ে করছিস না , এটা মনে হয়না । আবার কখনো কখনো মনে হয় তুই আটকে গেছিস । আচ্ছা বলবি কেন এভাবে জীবন কাটাচ্ছিস ? খুব কান্না পাচ্ছে আমার । জানিস আমি কাঁদিনা , আর তুই আমায় ভেতরে ভেতরে কাঁদাস ।

না রে আমি আর মা হবোনা । দারুণ খবরটা হচ্ছে আমি একটা চাকরী পেয়েছি । নিজের পায়ের নীচের মাটিটাকে আজ বড়ো আপন লাগছে । কি স্বপ্ন ছিলো ! তোকে কি বলবো নতূন করে ? তবে শোন আমাকে এভাবে কষ্ট দিসনা । তোর কাছে একটা জিনিস চাইবো , দিবি ? না করিস না ।

তোর তিরি

 

আট- তিরির প্রতি

এই পাগলী উফ খুশীতে আমি কি যে করি । ইচ্ছে করছে প্যারাস্যুটে করে তোকে নিয়ে ঘুরে আসি । নাহ ওটায় আবার বিপদের সম্ভাবনা । কখন মেরে দিস আর আমি এই অবিবাহিত জীবনটা নিয়ে অক্কা পাবো , তা হয়না । বল কি চাস তুই ? আমার পছন্দ তো তোর অপছন্দ । শুধু জানিয়ে দিস কি চাস তুই ।

মন খারাপ হয়ে গেলো আমার খবর শুনে ? সব মিথ্যে লিখেছি । আমি কখনো না খেয়ে ঘুমিয়েছি জীবনে ? সব ছেড়ে দিতে পারবো , না খেয়ে পারবোনা । এ কথাটা ভুলে গেলি ! হাহাহাহা । কেমন লাগলো শুনে ? আর বিয়ে কাকে করবো ? মেয়ে আছে তোর কাছে ? চাকরী কিসের ঘটকালি ডট কম-এ নাকি ? তাহলে শোন মেয়ে দেখিস যাতে চোখে কম দেখে । আর কানে কম শোনে । আমি কিন্তু মোটেও দুষ্টুমী করে লিখছি না । খুব সিরিয়াস ।

আর তুই কি চাইবি সেটা আমি জানি , তবু শুনতে চাই । সেটা তোকে চিঠি পাবার সাথে সাথে ফোন দিয়ে জানিয়ে দেবো । তবুও লিখছি যা তুই চাইবি সেটা তুই পাবি । নিশ্চিন্ত থাক ।

তোর অহম

 

হ্যামিল্টন , কানাডা

২৯ জুলাই , ২০১৩ ইং ।

ক্রমশ প্রকাশ্য

 

উত্তর এবং প্রত্যুত্তর : তিরি এবং অহম…( প্রথম ভাগ )

৫৮২জন ৫৮২জন
0 Shares

২০টি মন্তব্য

মন্তব্য করুন

লেখকের সর্বশেষ মন্তব্য

ফেইসবুকে সোনেলা ব্লগ