প্রায় ৫০০০ বৎসর পুর্বে দ্বাপর যুগে
হস্তিনাপুর রাজ্য নিয়ে নিয়ে এবং অধর্মের বিনাশ ও ধর্ম প্রতিষ্টার লক্ষে কৌরব ও পান্ডব পক্ষের মধ্যে ধর্মক্ষেত্র কুরুক্ষেত্রে এক মহাযুদ্ধ হয়=এই যুদ্ধে কৌরব পক্ষের প্রধান সেনাপতি ছিলেন ব্রহ্মচারী চিরকুমার মহাবীর পিতামহ ভীষ্মদেব=পান্ডব পক্ষে প্রধান সেনাপতি ছিলেন মহাবীর অর্জুন=দশম দিনের যুদ্ধে পিতামহ ভীষ্মদেব মহাবীর অর্জুনের শরাঘাতে শরশয্যায় পতিত হন=পিতামহ ভীষ্মদেব ইচ্ছামৃত্যুর বর প্রাপ্ত ছিলেন=তিনি জ্ঞাত ছিলেন মৃত্যুর পর দেবলোকে গমন করবেন
যেহেতু মাঘ মাস হইতে আষাঢ় মাস পর্যন্ত ছয় মাস উত্তরায়ণ ‘অর্থাৎ ‘দেবলোকে দিন এবং শ্রাবণ মাস হইতে পৌষ মাস পর্যন্ত ছয় মাস দক্ষিনায়ণ অর্থাৎ দেবলোকে রাত্রি=দক্ষিনায়ণে দেবলোকের দ্বার বন্ধ থাকার কারণে প্রবেশ করা যায় না=তাই পিতামহ ভীষ্মদেব ভাবলেন এই মুহুর্থে দেহত্যাগ করলে দেবলোকে প্রবেশ করা যাবে না=অন্ধকারে দেবলোকের দ্বারপ্রান্তে একাকি বসে থাকতে হবে=পক্ষান্তরে ইহলোকে অবস্থান করলে অনেক আত্মীয় স্বজন বন্ধু-বান্ধবের সাথে দেখা সাক্ষাৎ হবে=ধর্ম নিয়ে আলাপ আলোচনা করা যাবে=ভাগ্যক্রমে হয়তো বা ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন পাওয়া যাইতে পারে=তাই পিতামহ ভীষ্মদেব দেহত্যাগের উদ্দ্যেশে শুভ উত্তরায়ণ সংক্রান্তির অপেক্ষা করিতে থাকেন
পিতামহ ভীষ্মদেব শরশয্যায় থেকে ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দর্শন পান=অনেক আত্মীয় স্বজন ও বন্ধুবান্ধবের সহিত ধর্ম নিয়ে আলাপ আলোচনা করেন=আর্য সম্প্রদায়ের উদ্দ্যেশে বলে যান তিনি নিঃসন্তান=তাই আর্য-সম্প্রদায় তাঁহার অন্তেষ্ট্রিক্রিয়া সহ অন্যান্য পরলৌকিক ক্রিয়াকর্ম পালন করতে=তিনি আর্শীবাদ করে যান এতে জগৎবাসী ও পিতৃপুরুষগনের কল্যান হবে
দীর্ঘ ৫৬ দিন শরশয্যায় অবস্তানের পর=অবশেষে উত্তরায়ণ বা পৌষ সংক্রান্তির নিশান্তে পিতামহ ভীষ্মদেব যোগবলে দেহত্যাগ করে দেবলোকে গমন করেন=প্রায় ৫০০০ বৎসর পুর্ব হইতে আমরা প্রতিবৎসর উত্তরায়ণ বা পৌষ সংক্রান্তিতে প্রাতকালে খড়-কুটা জড়ো করে পিতামহ ভীষ্মদেবের প্রতীকি শবদাহ করে থাকি=অনেকে এই শবদাহকে মেড়ামেড়ির ঘর বা ভেড়াভেড়ির ঘর জ্বালানো বলে থাকেন এবং এই দিন মাছ মাংশ আহার করে থাকেন=যাহা সম্পুর্ণ অনুচিত=কারণ উত্তরায়ণ বা পৌষ সংক্রান্তি অন্তেষ্টিক্রিয়া ও শ্রাদ্ধ সংক্রান্ত অনুষ্টান
অন্যদিকে এই দিবসটি এতই গুরুত্বপূর্ণ যে=এই দিন প্রাতকালে দেবলোকের সকল দেবতাগন ও স্বর্গবাসী পিতৃপুরুষগন নিদ্রা থেকে জাগ্রত হন=এই জন্য সনাতন ধর্মাবলম্বীগন=ব্রাহ্ম মুহুর্থে স্নান, শঙ্খধ্বনি, উলুধ্বনি, গ্রামে, নগরে সংকীর্ত্তন, গীতাপাঠ, অন্নদান, বস্ত্রদান বা আর্থিক অনুদান দেওয়া সহ মঙ্গলজনক কাজ করে থাকেন=প্রতি বৎসর আমরা শাস্ত্রসমত ভাবে ভাবগাম্ভীর্যের সহিত এই অনুষ্টান পালন করি।
.
ছবি : গুগল থেকে নেওয়া।
১৬টি মন্তব্য
তৌহিদ
বাহ! ভালো লিখেছেন দাদা। অনেক তথ্য জানলাম।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ধন্যবাদ ও শুভকামনা দাদা।
শুভ পৌষসংক্রান্তির রসালো মিষ্টি শুভেচ্ছা রইলো।
মনির হোসেন মমি
পৌষ সংক্রান্ত্রিক ঐতিহাসিক পট তথ্যবহুল ভাবে জানানোয় ধন্যবাদ।এ সব অজানা ছিলো আমার।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ধন্যবাদ ও শুভকামনা দাদা।
শুভ পৌষসংক্রান্তির রসালো মিষ্টি শুভেচ্ছা রইলো।
নিতাই বাবু
সংক্রান্তি শব্দটি বিশ্লেষণ করলেও একই অর্থ পাওয়া যায়; সং+ক্রান্তি, সং অর্থ সঙ সাজা এবং ক্রান্তি অর্থ সংক্রমণ। অর্থাৎ ভিন্ন রূপে সেজে অন্যত্র সংক্রমিত হওয়া বা নুতন সাজে, নুতন রূপে অন্যত্র সঞ্চার হওয়া বা গমন করাকে বুঝায়। বাস্তবেও তা-ই দেখা যায়। মেষ, বৃষ, মিথুন, কর্কট, সিংহ, কন্যা, তুলা, বৃশ্চিক, ধনু, মকর, কুম্ভ এবং মীন এই বারটি একটির পর আরেকটি চক্রাকারে অবর্তিত হতে থাকে। রাশিচক্রস্থ দৃশ্যমান গমন পথ যাকে ইংরেজীতে ঊপষরঢ়ঃরপ বা ক্লান্তিবৃত্ত বলে; সেপথে সূর্য গমনের ফলে (জ্যোতিষতত্ত্বমতে) পৃথিবীর পরিমণ্ডলে ভিন্ন ভিন্ন সময়ে ভিন্ন ভিন্ন রূপ ধারণ করে। এভাবে পৃথিবী নানারূপে সঞ্চারের কারণে প্রাকৃতিক দৃশ্যপট প্রতিমাসে পরিবর্তিত হতে থাকে। পৃথিবীর পরিমণ্ডলে এধরনের পরিবর্তনের মধ্যে সনাতন ধর্মের অনুসারীগণের মধ্যে চারটি দিন উল্লেখযোগ্য। তন্মমধ্যে দুই অয়ন এবং দুই বিষুব দিন। দুই অয়ন হল উত্তরায়ন ও দক্ষিণায়ন এবং বিষুব হল মহাবিষুব ও জলবিষুব। চৈত্র সংক্রান্তিতে মহাবিষুব ও আশ্বিন সংক্রান্তিতে জলবিষুব আরম্ভ হয়। উল্লেখ্য বছরে যে দুইদিন দিবা ও রাত্রি সমান হয় তাকে বিষুব দিন বলা হয়। বসন্তকালে যে বিষুব হয়, তাকে মহাবিষুব আর শরৎকালে যে বিষুব হয় তাকে জলবিষুব বলা হয়। মৎস্যপুরাণেও তাই বলা হয়েছে-
“মৃগকর্কটসংক্রান্তিঃ দ্বে তূদগ্দক্ষিণায়নে।
বিষুবতী তুলামেষে গোলমধ্যে তথাপরাঃ ॥”
অর্থাৎ সুর্য ধনুরাশি ত্যাগ করে মকর রাশিতে সঞ্চার হওয়াকে উত্তরায়ণসংক্রান্তি, মিথুনরাশি হতে কর্কটরাশিতে সঞ্চার হওয়াকে দক্ষিণায়ন সংক্রান্তি, কন্যারাশি হতে তুলারাশিতে সঞ্চার হওয়াকে জলবিষুবসংক্রান্তি আর মীনরাশি হতে মেষরাশিতে সঞ্চার হওয়াকে মহাবিষুব সংক্রান্তি বলা হয়ে থাকে। তবে বারোমেসের বারোটা সংক্রান্তির মধ্যে পৌষ সংক্রান্তি হলো তাৎপর্যপূর্ণ ও সনাতন ধর্মাবলম্বীদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ সংক্রান্তি।
আপনার লেখার মাঝেও সংক্রান্তি বিষয়ে খুবই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি দাদা। আসন্ন পৌষ সংক্রান্তির শুভলক্ষণের আপনার পোস্টও প্রশংসার দাবি রাখে। আপনাকে পৌষ সংক্রান্তির শুভেচ্ছা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ধন্যবাদ ও শুভকামনা দাদা যথার্থ মতামত তুলে ধরার জন্য।
শুভ পৌষসংক্রান্তির রসালো মিষ্টি শুভেচ্ছা রইলো।
রেহানা বীথি
সুন্দর তথ্যসমৃদ্ধ লেখা। জানা হল অনেককিছু।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ধন্যবাদ ও শুভকামনা দিদি ।
শুভ পৌষসংক্রান্তির রসালো মিষ্টি শুভেচ্ছা রইলো।
দেবজ্যোতি কাজল
কারু সর্বনাশ
কারু পৌষমাস
প্রদীপ চক্রবর্তী
ধন্যবাদ ও শুভকামনা দাদা।
শুভ পৌষসংক্রান্তির রসালো মিষ্টি শুভেচ্ছা রইলো।
ফয়জুল মহী
প্রকৃত সৃজনী লেখা।
প্রদীপ চক্রবর্তী
ধন্যবাদ ও শুভকামনা দাদা।
শুভ পৌষসংক্রান্তির রসালো মিষ্টি শুভেচ্ছা রইলো।
সুরাইয়া পারভীন
বাহ্ দারুণ উপস্থাপন। অনেক অজানা তথ্য জানা হয়ে গেলো আপনার পোস্টের মাধ্যমে
প্রদীপ চক্রবর্তী
ধন্যবাদ ও শুভকামনা দিদি,
শুভ পৌষসংক্রান্তির রসালো মিষ্টি শুভেচ্ছা রইলো।
নুরহোসেন
ধন্যবাদ অজানা তথ্য জানানোর জন্য।
সঞ্জয় মালাকার
চমৎকার উপস্থাপন দাদা ভালো লাগলো অজানা তথ্য জেনে।
পৌষ সংক্রান্তির প্রীতিও শুভেচ্ছা রইলো।