
বই রিভিউ
বই- উইপোকাদের বসতবাড়ি
লেখক – রোকসানা খন্দকার
প্রকাশক – আব্দুল্লাহ আল তানিম
প্রকাশনায় – ইচ্ছে স্বপ্ন প্রকাশনী
সময় কাল- অমর একুশে বইমেলা ২০২২
আমাদের সময়ে স্কুল লাইফে প্রচুর বই পড়তাম। বর্তমান ডিজিটাল যুগে বই পড়ার পাঠকের সংখ্যা কমে গেছে। এখনকার ছেলেমেয়েরা পাঠ্য বই পড়তে চায় না। শর্টকাটে ভালো রেজাল্টের পথ খুঁজে। পাঠক্রমের বাহিরে যাওয়ার সময় কোথায়। তাহলে না পড়া বইগুলোর কী হাল হবে। নিশ্চয়ই সেখানে উইপোকার বসত গড়ে উঠবে। উঠুক না ক্ষতি কী। বইয়ের মধ্যে কারো বসতি খুঁজে পাওয়া যাবে। সে দিক থেকে চিন্তা করলে লেখকের উইপোকাদের বসতবাড়ি নামটি শ্রুতিমধুর ও মানানসই। আমরা না হয় এবার উইপোকা হলাম। উইপোকাদের বসতবাড়িতে উইপোকাদের জন্য লেখক ২৫টি ছোট গল্পের সমাহার ঘটিয়েছেন।
লেখককের প্রতিটি গল্প হৃদয় ছুঁয়ে যাওয়া সমাজের বাস্তব চিত্র। “পৌষ তেষ্টা” গল্পে পার্মানেন্ট কাজের মেয়েটা হাত পুড়িয়ে ও স্বামীর মনের কাছে যেতে পারে না। অথচ স্বামীর ভালোবাসা পাওয়ার জন্য সে পিপাসিত। এ যেন শ্বাশত বাংলার পুরুষশাসিত সমাজের চোখ-রাঙানির দৃশ্য। পোড়া হাতে মলম লাগিয়ে একসময় ক্ষত শুকিয়ে যায়। মনের দহন নেভানো যায় না। স্বামীর অবহেলা অবজ্ঞা সইতে না পেরে এক সময় সংসার ত্যাগ করতে বাধ্য হয়।
নবনীর নীলাকাশ। আত্মসম্মান বোধসম্পন্ন শিক্ষিতা নবনী। সমাজের আট দশ জন রমনীর মতো, রমনীয় গুনে নিজের ইচ্ছার সমাধি দিতে পারেনি। মায়ের কথায় চাকরি না ছেড়ে নিজের ইচ্ছার প্রাধান্য দিয়েছে। নবনী এক চিলতে আকাশ দেখতে চেয়েছে। জানালায় মোটা পর্দা দিয়ে নবনীর আকাশ দেখা বন্ধ করা যায়নি। সমাজের সকল কুলুষতা পিছনে ফেলে এগিয়ে যায় নিজের আত্মসম্মান ধরে রাখার জন্য।
জীবন চলার পথে কখন কি ভালো লেগে যায় তা বলা যায় না। ভালোলাগার তো আর বলে কয়ে আসে না। কল্পনায় দেখা মানুষের সাথে অসময়ে দেখা হলে, তাকে হয়তো আপন করে কাছে পাওয়া যায় না। ক্ষণিক হলেও তার রেশ হৃদয় কুঠুরিতে গেঁথে থাকে। তেমনি একটি গল্প আরো কিছুক্ষণ নাহি রহিতে।
রক্তের সম্পর্ক ছাড়া মানুষের আত্মার সম্পর্ক সৃষ্টি হয়। লীলাবতী তেমনি একটি ভালোবাসার গল্প। লীলাবতী কে খুব ভালোবাসে। লীলাবতীর মা পছন্দ করেন না। লীলাবতীর মা লীলাবতী কে নিয়ে চলে যান অনেক দূরে। কুড়িয়ে পাওয়া কন্যা সন্তানকে লীলাবতী নামেই বড় করে তোলেন। তবু সেই লীলাবতীকে ভালোবাসার আকাঙ্ক্ষা থেকেই যায়।
প্রেম প্রেম খেলায় মত্ত পুরুষ মানুষ গুলো মেয়েদের নিয়ে খেলতে ভালবাসে। আর সে যদি হয় ডিভোর্সি তাহলে কথা ই নাই। নীরব আততায়ী গল্পে তেমনি একটি চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।
শাহরীন ভালোবাসার মানুষটিকে কাছে পায়নি। তাতে কি হয়েছে। তার ছবি নিয়ে জীবন সংসার। এভাবে কাটিয়ে দেয় সারা জীবন। অনেক বছর পর মানুষ টির সাথে দেখা হয়। আপন করে ধরে রাখা যায় না। এভাবে এগিয়ে গেছে গল্প পোট্রেট প্রেম।
লেখকের প্রতি টি গল্পের ভাষা সহজ সরল। এবং গল্প গুলো আমাদের সমাজের প্রেক্ষাপটে নির্মিত। লেখকের নারী চরিত্র শুধু সাহসী বললে ভুল হবে। খুব আত্ম সম্মান বোধ সম্পন্ন। কোন অন্যায় কে মেনে নিতে তারা বাধ্য নয়। এক্ষেত্রে কেউ লেখককে নারী বাদী বলতে পারেন। একজন ভালো সঙ্গী পাওয়ার জন্য বয়স কোনো বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। বিধবা সুস্মিতা মধ্যবয়সে সমাজের চোখ রাঙানি উপেক্ষা করে , নিজের চেয়ে কম বয়সী শাকের কে আপন করে নেয়।
পরিশেষে লেখকের প্রতি রইলো অশেষ শুভাশিস ও শুভ কামনা। সামনের দিনগুলোতে উইপোকাদের বসতবাড়িতে আরো মজবুত হয়ে গড়ে উঠুক।
১৩টি মন্তব্য
খাদিজাতুল কুবরা
আপু খুব সুন্দর রিভিউ লিখেছেন। একেবারে লেখককে আয়নার মত দেখিয়েছেন। আসলে ওর গল্পগুলো হাস্যরসের মধ্য দিয়ে গভীর বোধে নাড়া দেয়। আমার ও লেখার ইচ্ছে আছে।
গল্পগুলো গল্প হলেও চারপাশে ছড়িয়ে থাকা সত্যি।
হালিমা আক্তার
চেষ্টা করেছি। কতোটুকু পেরেছি জানিনা। আরেকটু সময় নিয়ে করলে ভালো হতো। চমৎকার মন্তব্যের জন্য অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো।
বোরহানুল ইসলাম লিটন
বইটি পাঠক নন্দিত হোক এমনই কামনা রেখে গেলাম।
আন্তরিক শুভেচ্ছা ও শুভ কামনা জানবেন সতত।
হালিমা আক্তার
পাঠক পড়লেই পাঠক নন্দিত হবে। আশা করি পড়বেন। শুভ কামনা রইলো।
ফয়জুল মহী
আপনাকে ধন্যবাদ সুন্দর রিভিউ লিখায়। বইয়ের সফলতা কামনা করি এবং পড়ার ইচ্ছাও রাখছি
হালিমা আক্তার
অসংখ্য ধন্যবাদ ও শুভকামনা রইলো। শুভ রাত্রি।
মোঃ মজিবর রহমান
সুন্দর একটি বই রিভিউএর উপস্থাপনা। বই পড়ায় সবাই জাগ্রত হোক, বই পড়াতে সবাই আগ্রহ হোক। শুভকামনা রইল।
হালিমা আক্তার
অশেষ ধন্যবাদ ও শুভকামনা অবিরাম।
রোকসানা খন্দকার রুকু
এজন্য সবাই আমার সাথে রাগ করে।বকা খেতে খেতে জীবন পার। সারপ্রাইজিং টাইমগুলোতে কোথায় যেন থাকি! সেজন্য সরি অনেক অনেক সরি।
আর ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করতে চাই না। তবে বলবো আপনি সত্যিই অনেক বড় মনের মানুষ। তাইতো আশা ছাড়াই সবকিছু করে ফেলেন।
অনেক অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা সাথে ভালোবাসা নেবেন হালিমা আপা।❤️❤️❤️❤️
হালিমা আক্তার
সরি বলার কিছুই নেই আপা। আন্তরিক ধন্যবাদ ও অনেক অনেক ভালোবাসা রইলো। শুভ রাত্রি।
নার্গিস রশিদ
বই টি আমার পড়া হয়নি। কি ভাবে বইটি পেতে পারি তাই ভাবছি। দূর থেকে কি ভাবে বইটি পাবো । বিষয় বস্তু দেখে পড়তে ইচ্ছা করছে। সাহসী লেখা দিয়ে সমাজ এবং মানুষের চিন্তাধারা পরিবর্তন করার জন্য তিনি যে উদ্যোগ নিয়েছেন তা অবশ্যই ধন্যবাদ পাওয়ার উপযোগী।
হালিমা আক্তার
অনেক অনেক ধন্যবাদ জানাই। বইটি আসলেই চমৎকার। আপনি রোকসানা খন্দকার আপার সাথে যোগাযোগ করতে পারেন। আপার দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। শুভ কামনা রইলো।
রোকসানা খন্দকার রুকু
ম্যাম ইনবক্সে আসবেন প্লিজ!!