শফি হুজুরের সাথে বিস্তর আলোচনা করিয়া হেফাজতী মওলানা রুহি এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইলেন যে- ইসরায়েলে শফি হুজুর নাই বলিয়াই সেখানে নাস্তিক- ইহুদীরা বড় বাড় বাড়িয়াছে। তিনি বিপুল বেগে শফির ঘর হইতে তার আলুথালু শরীর খানা বাহির করিয়া মাদ্রাসার সকল ছাত্রকে একত্র করিয়া একটী বক্তব্য প্রদানের ব্যাবস্থা করিলেন। তিনি বলিলেন- শফি হুজুরের অভাবে ইসরায়েল একটী ইহুদী রাষ্ট্রে পরিনত হইয়াছে। তাই ইসলামের স্বার্থে বাংলাদেশে অবস্থিত ইসরায়েলী দুতাবাস ঘেরাও করিয়া আল্লামা শফিকে সেখানে আমদানী করিয়া নিতে বাধ্য করা জরুরী।
তিনি এক বয়স্ক ছাত্রকে ডাকিয়া বলিলেন- তোমাদের সাথে হাসিমুখে হাত মেলানো সেই শাহবাগী সরকারটিকে ফোন লাগাও। তাহার কাছ হইতে দুতাবাস ঘেরাও এবং সেইখানে ক্যাচাল লাগাইয়া মাটীতে গড়াগড়ি খাইবার কায়দা শিখার তালিম লও। প্রয়োজনে তাহার বিনিময়ে উহাকে একটী গোলাপী রঙের পাঞ্জাবী দেবার ব্যাবস্থা কর।
এমন সময়ে এক কিশোর বয়েসী ছাত্র জিজ্ঞাসা করিয়া বসিল- হুজুর, পাক জমিন, আমাদের দিলকি ধাড়কান পাকিস্তানের দুতাবাসের মত ইসরায়েলী দুতাবাসও কি ঢাকায় অবস্থিত? এই প্রশ্নে রুহি কিঞ্চিৎ বিচলিত হইলেন। এর আগে ঢাকায় যাইয়া টাট্টীখানার অভাবে এবং টিয়ার গ্যাসের প্রাদুর্ভাবে এই কচি ছেলেগুলোর মনের উপর ব্যাপক চাপ পড়িয়াছে। তাহাদের কচি পুটূতে পঞ্চাশোর্ধ ঈমানদন্ডটির চাপ সইতে পারলেও এই চাপ সহ্য করা অতিশয় কঠিন। রুহি সাহেব আলোচনা এইখানে মুলতবী করিয়া পুনরায় আহমদ শফির দ্বারস্থ হইলেন।
তেঁতুলের শরবত পান করিতে করিতে হুজুরের ঘন ঘন বড় পিনাকী পাইবার ব্যামো হইয়াছিল। এই অবস্থায় রুহির এমন অনভিপ্রেত আগমনে তিনি কিছুটা বিরক্ত। তবু বিস্তারিত শুনিয়া তিনি কহিলেন-“ফুয়াদেরকে বুজায়ে বাতাও এইবার ফ্যাশাব ফাইকানা নি সমিস্যা হবে না। আজিমফুরে আমার ফরিচিত একজন আছেন যার নাম আল্লামা গেলমান আলী ইবনে বাতেন ওয়া জিলাপী বেগম আজিমপুরী ঢাকামহানগরী ইটাবাড়ি। তার অধীনে লক্ক লক্ক জ্বীন আছে। তারা ছান্দে ছাইদী হুজুরকে দেখিয়ারে বাতাসে বাসিয়া বাসিয়া মিছিল করিয়াছিল। সেই খবর ফুয়াদের জানাও আর তাঁকে পুন করিয়ারে জিজ্ঞাসা কর যে ইসরায়েলী দুতাবাস ঢাকার খন এলাখায় তা যেন খবর লইয়ারে তোমাকে বাতলায়। আমি একটূ ফিনাকী করতে যাব যে। তুমি এইবার আস।”
আল্লামা গেলমান বলগ দিয়ে ইন্টারনেটে মানচিত্র দেখিয়া কোথাও ইসরায়িলী দুতাবাস খুঁজিয়া না পাইয়া তাহার চেনাজানা সবচে বিজ্ঞ আস্তিক ব্যাক্তি জনাব ফখার শরণাপন্ন হইলেন। ফখা তাহাকে জানাইল- বাকশালী সরকার অত্যন্ত চাতুর্যের যাথে ইসরায়েলের সাথে আঁতাত করিয়া বাংলাদেশের সীমানার বাইরে দক্ষিন তালপট্টী দ্বীপে ইসরায়েলের দুতাবাস স্থাপন করিয়াছে।
তৎক্ষণাৎ এই সুখবর হাটহাজারী মাদ্রাসায় ছড়াইয়া পড়িল যে এইবার আর বেশরিয়তী শহর ঢাকায় যাইতে হবে না। টেকনাফের অদুরে তালপট্টী দ্বীপে যাইতে হইবে যেখানে একটূ কিনারায় গিয়া টাট্টী করিলেই তা টূপ করিয়া সাগরে মিশিয়া যাইবে।
পরদিন সকালে শফি হুজুর ও রুহি সহ আরো কয়জন হোমড়া চোমড়া হেফাজতী নেতা হেলিকপ্টারযোগে এবং বাকী ছাত্ররা পদব্রজে তালপট্টী রওনা হইল। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যেই শফি তার সহবিপ্লবীদের সাথে তালপট্টীতে অবতরন করিলেন। তেঁতুলের শরবতের কল্যানে শফি হুজুর কিয়ৎক্ষন পরেই বড় পিনাকী করিবার ইচ্ছা প্রকাশ করিলেন। রুহি তাহাকে ধৈর্য ধরার পরামর্শ দিয়া চারিদিকে ইসরায়েলী দুতাবাস খুঁজিতে লাগিলেন। কিন্তু বেলা পড়িয়া আসিলেও দূতাবাস খুঁজিয়া পাওয়া গেল না আর ছাত্রদেরও আসিবার কোনও লক্ষণ দেখা যাইতেছিল না।
এদিকে সারাদিন হাটীয়া ক্লান্ত ছাত্ররা কেয়ারির জাহাজে আরোহন করিল। তালপট্টীর উদ্দেশ্যে জাহাজ রওনা করিবার মিনিট খানিকের মধ্যেই তাহাদের মধ্যে গুঞ্জন উঠিল। জাহাজের টাট্টীখানা বড় অদ্ভুত। তাহাতে পা রাখিবার কোনও জায়গা নাই। যা আছে তাও অনেক উচুতে একটি কিম্ভুত আকৃতির বাটির মত একটি বস্তু। কয়েকজন বিজ্ঞ ও জ্যেষ্ঠ ছাত্র অনেক গবেষনা করিয়াও ইহাতে কাজ সমাধা করার কায়দা আবিষ্কার করিতে ব্যার্থ হইল।
ঐদিকে আর সহ্য করিতে না পারিয়া আর দূতাবাস খুঁজিয়া না পাইয়া বড় হুজুরেরা হেলিকপ্টার যোগে হাটোহাজারী ফিরিয়া আসিল। প্রকৃতির বিরুদ্ধে পরাক্রমশালী আহমদ শফি ই সুবিধা করিতে পারিল না আর এই কোমলমতি ছাত্ররা কি করিবে? তাহারা জাহাজের কিনারায় বসিয়া প্রকৃতির আকর্ষণে সাড়া দিতে লাগিল। পালাক্রমে তাহাদের প্রাকৃতিক কর্ম সম্পাদনে সাগরের পরিবেশ সেইদিনের মতিঝিলের শাপলা চত্বর হইয়া উঠিল। এই ভয়াবহ বিপর্যয় সহ্য করিতে না পারিয়া বেচারা তালপট্টি নাক মুখ চাপিয়া সেই যে ডুব দিল, ডুব দিয়াই সে ভারতের সীমানার ভেতরে পালাইয়া গেল। তালপট্টীকে খুঁজিয়া না পাইয়া কোমলমতি ছাত্ররা ভগ্নমনোরথে হাটহাজারী তো ফিরিয়া আসিল, কিন্তু তালপট্টী আর ফিরিয়া আসিল না।
এভাবেই বাকশালী সরকার ইসরায়েলের সহিত আঁতাত করিবার ফলে আমরা আজ একটী আস্ত দূতাবাস সমেত তালপট্টী দ্বীপখানি হারাইলাম।
২৩টি মন্তব্য
ছাইরাছ হেলাল
আমরা মুখফোড়ের নূতন ভার্সন পাচ্ছি বলে মনে হচ্ছে ।
আহারে দূতাবাসের ঠিকানাটি বড়ই প্রয়োজন ছিল , তাও ভাল পাকিস্তানী দূতাবাসের ন্যায় উল্টাইয়া পড়ে নাই ।
আপনি তো দেখছি ভালই লেখেন , এত বড় একটি লেখা টান টান করে রাখা সহজ কাজ নয় ।
এমন কী কোথাও তাল কেটেও যায়নি ।
সাধুবাদ , আপনি লিখতে পারেন,পারবেন ।
সিনথিয়া খোন্দকার
ও বড় কঠিন কাজ ভাই, মুখফোড়ের নতুন ভার্সন আগুন রঙের শিমুল লিখছেন। আমার দ্বারা হবার নয়।
ধন্যবাদ অনুপ্রেরণা দেবার জন্য। -{@
আগুন রঙের শিমুল
এইরকম টানটান স্যাটায়ার লেখা আমার কম্ম না, আমি মুখফোরের অনুকরনের চেষ্টা করছি মাত্র 🙂 কিন্ত তুমি মৌলিক লিখা লিখতেছ, ওয়েলডান
বনলতা সেন
আপনি দেখছি মজার ছলে কঠিন বিষয় যথাযথ ভাবে উপস্থাপন করতে পারন ।
তেঁতুল দেখলে ওদের মনোজিভ দেড় হাত বেরিয়ে পড়ে ।
সিনথিয়া খোন্দকার
যাদের গুরুদের জ্ঞানের আর রুচির বহর এইরকম। তারা আর কেমন হবে? 🙁
জিসান শা ইকরাম
লেখায় আপনার অদ্ভুত দক্ষতা
কম লিখে আমাদের বঞ্চিতই করছেন এতদিন ।
আর বঞ্চিত হতে চাইনা, তীব্র আন্দোলন শুরু করুম নিয়মিত লেখা না দিলে।
দারুন ভাবে উপস্থাপন করলেন মাথা মোটা ছাগলদের কাজকর্মকে।
এরা এসেছিলো দেশের ক্ষমতা গ্রহন করতে
আর জনতাকে রাস্তায় বেড়িয়ে আসার আহবান জানান একজন দেশের নেত্রী।
ভাবতেও অবাক লাগে , এই দেশের জনগনের একট বড় অংশ এদের পিছনে পাগলের মত দৌড়াচ্ছে।
পোষ্টের লেখায় , উপস্থাপনায় , শব্দ চয়ন , ফান – সব কিছু নিয়ে এক নতুন সিনথিয়াকে দেখলাম।
টাট্টি বরিশাইল্যা শব্দ , লেখক কি এদিকে কখনো এসেছিলেন ?
শুভ কামনা ।
সিনথিয়া খোন্দকার
“এরা এসেছিলো দেশের ক্ষমতা গ্রহন করতে
আর জনতাকে রাস্তায় বেড়িয়ে আসার আহবান জানান একজন দেশের নেত্রী।”- আসলেই দুর্ভাগ্যজনক।
ঈদের পর ধুর্বাল আন্দোলন গড়ে তুলুন। আমি আছি আপনাদের সাথে। :p
বরিশাল আসা হয়নি। তবে আমার খুব প্রিয় এক বান্ধবীর কাছে এই শব্দটা শুনেছিলাম। ওর বাড়ি নড়াইল।
অনেক ধন্যবাদ শুভকামনার জন্য।
সীমান্ত উন্মাদ
লিখার এই ধরনটা আমার খুব প্রিয়। এটা রম্য লিখার একটা ধরন। অনেক অনেক ভাললাগা রেখে গেলাম। শুভকামনা নিরন্তর আপনার জন্য।
সিনথিয়া খোন্দকার
অনেক ধন্যবাদ। 🙂
লীলাবতী
বাকশালি সরকার খুবই খ্রাফ । নইলে দুতাবাস আর তালপট্টি হারাইতাম না । আপু অসাধারন লিখেছেন। রেটিং থাকলে ৫ এ ৫ দিতাম।
সিনথিয়া খোন্দকার
বাকশাল হটাও তালপট্টী বাঁচাও ^:^
ব্লগার সজীব
শফি হুজুরের মধ্য প্রাচ্যে পাঠিয়ে দেয়া হোক । তেতুল তত্ত্ব দিয়ে ইনি সব ইসরাইলী নারীদের ঘড়ে পাঠিয়ে দিবেন, আর সব ইহুদীদের মুসলীম বানিয়ে দিবেন ইনশ আল্লহ । অনেক ভালো একটি লেখা পড়লাম আপু।
সিনথিয়া খোন্দকার
একদম ঠিক বলেছেন। ইসরায়েল – ফিলিস্তিন সমস্যার সমাধান একমাত্র শফি হুজুরের দ্বারাই সম্ভব। (y)
আগুন রঙের শিমুল
পঞ্চ তারকা লেখায়। দারুন লিখতেছ … প্লীজ কন্টিনিউ 🙂
সিনথিয়া খোন্দকার
থ্যাংক্স ডিয়ার। 🙂
আদিব আদ্নান
আপনি বেশি করে লিখুন । কী করে লেখেন এমন । এ লেখা পড়লে তেঁতুল খাওয়া ছেড়ে দেবে ।
সিনথিয়া খোন্দকার
শফি বাংলা পড়তে পারেন কিনা আমার যথেষ্ট সন্দেহ আছে। তবে তাঁকে পড়তে দেয়ার বুদ্ধি খারাপ না।
অনেক ধন্যবাদ পড়ার জন্য।
মিথুন
খুব মজা পেলাম আপনার লেখায়। আপনার লেখাগুলো পড়তে হবে দেখছি।
সিনথিয়া খোন্দকার
দ্যাট উইল বি মাই প্লেজার। থ্যাংক্স। 🙂
প্রজন্ম ৭১
হা হা হা হা হা , ভালোই বাশ দিয়েছেন তালপট্টি ওয়ালাদের :D)
সিনথিয়া খোন্দকার
😀
ওয়ালিনা চৌধুরী অভি
স্পিসলেস হয়ে গেলাম আপু। কি মন্তব্য করবো মুঝতে পারছি না। ফান লেখার মাঝে এমন সত্য কথা বলার বিশেষ যোগ্যতা লাগে। আরো লিখুন আপু।
সিনথিয়া খোন্দকার
অনেক ধন্যবাদ উৎসাহ দেয়ার জন্য। ভাল লেখকের উৎসাহ পেলে ভাল লাগে। -{@