আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-৩৮)
বড় ভাইয়া তুমি ক্লান্ত যাও ফ্রেশ হয়ে আসো।
-হ্যাঁ যাবো বাবা মারা যাবার পর তুমি সেই যে জাপান গেলে তারপর আজ ৬বছর পর দেশে ফিরলে।
তোমাকে কত বছর পর দেখলাম বলেই চোখ মুছল আরমান।
আরাফের চোখেও পানি সরি ভাইয়া বলেই আরমানের কাঁধে হাত রাখলো। ভাইয়া কি ছেলে মানুষি করছো।
তোমার ছোট ভাইটা অনেক বড় হয়ে গেছে, দেখো চুল দাড়ি পেকে যাচ্ছে তবু তোমরা আমাকে নিয়ে চিন্তা করো হা হা হা হা।
পাগল ছোটরা যতই বড় হোক বড় ভাইয়ের কাছে তুই এখনো সেই ছোট আরাফেই আছিস একটু বড় হইসনি।
রিতা এবার যোগ দিল শোন একটা সুখবর আছে।
আরমান মাথা তুলে রিতার দিকে তাকাল, কি সুখবর.?
আরাফ একে বারে দেশে চলে আসছে আর জাপানে যাবে না।
তুমি সত্যি বলছো।
হ্যাঁ বড় ভাইয়া! ভাবি সব সত্যি বলছে।
বিদেশে তো অনেক বছর থাকলাম এবার দেশেই থাকবো আর জাপান যাব না। জাপানের সব ব্যবসা রিহানকে দিয়ে দিয়েছি শেয়ারে ব্যবসা ছিলো। টাকা হিসাব করা হয়েছে কিছুদিনের মধ্যেই তোমার একাউন্টে টাকা আসবে।
-ওহ! আমি ফোন করে সবটা পরে তোমাকে জানাব।
-কোন সমস্যা নেই।
খুব ভালো সিদ্ধান্ত চার ভাই এখন থেকে একসাথেই ঢাকায় থাকবো হা হা হা হা।
রিতা আরাফ খেয়েছে.?
আমি তো তখন থেকেই খেতে বলছি।
আরাফ বললো ভাইয়া আসুক সবাই একসাথে রাতের খাবার খাব।
বড় ভাইয়া আমি নাস্তা করেছি, ভাবি জোর করছিলো খাইনি, তুমি ফ্রেশ হয়ে আস আমরা সবাই একসাথে খাব।
ওকে তুমি ১০ মিনিট অপেক্ষা করো আমি ফ্রেশ হয়ে আসতেছি বলেই আরমান তার রুমের দিকে চলে গেল।
রিতাও স্বামীর পিচনে চলে গেল, আরাফ রিমোট হাতে টিভি অন করল।
মিতুর কান্না দেখে প্রিয়াও অবাক হলো তবে বুঝতে বাকি রইল না মিতুর এই কান্না আরাফ প্রিয়ার জন্য।
মিতু কাঁদছো কেন বলবে না তো! কিছু হয়নি ভাবি তোমাদের সবাইকে ছেড়ে। এ বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে ভাবতেই কান্না আসছে।
পাগল এটাই তো নিয়ম মেয়েদের বিয়ে হবে, যেমন আমার হয়েছে,আমার মায়ের হয়েছে,শ্বাশুড়ী মায়ের হয়েছে তোমারও হবে।
বিয়ে দিচ্ছি বলে বেচে দিচ্ছি রোহানের কাছে যাবে ওই বাড়িতে নতুন বাবা,মা পাবে তারাই তোমার আসল ঠিকানা।
মিতু কিছুটা শান্ত হলো প্রিয়াও তাকে বুঝাল, বিয়ের পরও তুই এ বাড়িতে আসবি।
যখন মন চায় আসবে, আমি রোহানকে বলে দিব এবার মিতুর মুখে হাসি ফুটল।
তাহলে এবার সবাই খেতে চল তোমার ভাইয়া, বাবা, মা সবাই তোমাদের জন্য খারাপ টেবিলে অপেক্ষা করছে।
মিতু যাও হাত মুখ ধুয়ে খাবার খেতে আস, প্রিয়া!
জ্বী ভাবি তুমিও আস।
আচ্ছা ভাবি আপনি যান, আমি মিতুকে নিয়ে আসবো।
আর হ্যাঁ দেরি করো না..
এখনি টেবিলে খাবার দিতাছি বলেই ভাবি চলে গেল।
আরাফ নিউজ দেখছিলো হঠাৎ একটা খবরে চোখ আটকে গেল “প্রেমে প্রত্যাখান হওয়ায় ছেলাটা সুইসাইড করেছে” আরাফ মনে মনে হাসল হয়রে নারী তুমি কি না পার।
একজন পুরুষের জীবনে সফলতা,ব্যর্থতা,মৃত্যু সবকিছুই নারীকে ঘিরে প্রিয়া তোমার ভালোবাসা না পেয়েও আমি আজো বেঁচে আছি।
মৃত্যু জীবনের সমাধান নয় কারন আমার যাকে ভালো লাগে, তার অন্য কাউকে ভালো লাগাটাই স্বাভাবিক ব্যাপার তাই সবটা মেনে নিতে শিখতে হয়।
প্রিয়ার জন্য মরতে চাইনি আমি আমার মতো ভালোবাসবো সারাজীবন বুকের একটু জায়গায় প্রিয়াকে রেখে দিব। যেখানে আর কাউকে কোনদিন জায়গা দিব না।
আরাফ চ্যানেল ঘুরিয়ে একটা নাটকে ফিরলে সেখানেও ব্যর্থ প্রেমের কাহীনি। আরাফের মনটা বিষাদময় হয়ে গেল।
আচ্ছা আমার চেয়েও কারো বেশিও কারো কষ্ট আছে ভেবে মনটা শান্তনা দিল কত বছর চলে গেছে প্রিয়াকে ভাবতে ভাবতে।
তুমি তো কিছুই নিচ্ছো না, জিসানের মা! বলো।
প্রিয়ার প্লেটে বড় মাছের মাথাটা দেও। মিরা তো বলবে ভাইজান ভাবি আমার মেয়েটা খেয়াল রাখে নাই বলেই হাসলেন শেখর সাহেব।
আরে নাহ্ মামা, আমার যতটুকু প্রয়োজন নিচ্ছি তো জোর করে দিলে শুধু শুধু খাবারটা নষ্ট হবে বলেই থামল প্রিয়া।
আমি কি খাচ্ছি সেটা নিয়ে কারো মাথা ব্যথা নেই বলেই মুসকি হাসল মিতু।
পাগলি মেয়ে বলেই হাসল শেখর সাহেব, প্রিয়া বড় মাছের মাথাটা দেই তোমার মামা চাইছে তুমি বড় মাছের মাথাটা নাও!
মামী দাও তাহলে মামার কথাটা রাখতে হবে বলেই প্রিয়া খাবারের প্লেটটা মামীর দিকে বাড়িয়ে দিল।
মা আমার খাবার শেষ জেমি রুমে একা আছে আমি যাচ্ছি আপনারা খাবার শেষ করুন।
আমি পরে এসে সব পরিষ্কার করবো কথা শেষ করার আগেই প্রিয়া বললবো ভাবি আপনি আমার ভাতিজিকে দেখুন।
আমি খাবারের সব পরিষ্কার করে রাখবো, না মা তুমি করবে কেন সমস্যা নেই আমি করতে পারবো।
বউমা তুমি যাও জিসানের খাবারটা আমি তোমাদের রুমে পাঠিয়ে দিব।
ওকে মা বলেই মিতুর ভাবি তার রুমে চলে গেল…
জীবন নাটকের চেয়ে নাটকীয় আরাফ নাটক দেখতে আর আনন্দ পাচ্ছিল না।
নাটক তো জীবন থেকেই নেওয়া মানুষের জীবনে এত অভাব, পাওয়া,না পাওয়া,ব্যর্থতা এসব নিয়েই জীবন তাই স্থান পাই লেখকের কলমের ছোঁয়ায় নাটক,সিনেমা হয়।
ছোট চাচ্চু খাবার টেবিলে আস আব্বু তোমাকে ডাকছে বলে রন্টি এসে পিচনে দাঁড়াল।
ওকে তুমি যাও আমি আসছি বলেই আরাফ টিভির রিমোট হাতে নিয়ে টিভিটা বন্ধ করে দিল।মোবাইলটা হাতে নিয়ে পিচনে ফিরলো রন্টি এখনো দাঁড়িয়ে আছে চল রন্টি।
আরাফ সেই বিকাল থেকে আরমানের বাসার প্রায় সবগুলো রুম চেনা হয়ে গেছে কোথায় কি আছে সেটা চোখ বন্ধ করেই বলে দিতে পারবে।
দুটো রুম পার হয়েই ড্রাইনিং রুম আরমান, রিতা, রনি সবাই খাবার সামনে রেখে আরাফের জন্য অপেক্ষা করছে।
ছোট বসো বলেই আরমান পাশের চেয়ারটা দেখিয়ে দিল।
আরাফ বসার আগে ভালো করে টেবিলটা দেখে নিল, আরে ভাবি এসব কি!
টেবিলে এত খাবার কে খাবে?
কেন! তোমরা দু-ভাই খাবে বলেই রিতা মুসকি হাসল।
না ভাবি আমি রাতে খাবার কম খাই স্বাস্থ্যটা একটু কমাতে চাই চলাফেরায় বিরাট সমস্যা হয়ে যাচ্ছে।
ছোট তোমার ভাবি রান্না করেছে আজ একটু বেশি খেলে সমস্যা হবে না বলেই আরমান হা হা হা হা করে হেসে দিল।
রনি বাবা,মা,চাচ্চুর খুনসুটি দেখে হাসতে লাগলো, পাশের চেয়ারে রন্টি বসলো।
আরাফ চেয়ে দেখল টেবিলে বেশ কয়েক পদের খাবার তরকারী বলতে মুরগির মাংস, গরুর মাংস, পোলাও,বড় মাছ ভাজি, ছোট মাছের ভুনা,ডাল,সাদা ভাত।
আরো অনেক রকমের মিষ্টি জাতীয় খাবার।
ভাবি তুমি এত রান্না কখন করলে! খাবার দেখে তো আমার পেট ভরে গেছে বলেই হা হা হা করে হাসল আরাফ।
রিতা খুশি হয়ে বললো এত বছরবাইরে ছিলে পছন্দের খাবারের তালিকা জানি না। তাই আমার পছন্দ মতো রান্না করলাম এখন তোমার পছন্দ মতো খেয়ে নাও সমস্যা নেই।
আরাফ আবেগে আপ্লুত হয়ে গেল, ভাবি তুমি আমাদের মায়ের মতো ছোটবেলা ঠিক এভাবেই আমার প্রিয় খাবার গুলো রান্না করে খেতে দিতে।
আজো ভুল নাই তুমি যা রান্না করছো সব এখনো আমার পছন্দের খাবার। আরমানের চোখে পানি,রিতা কিছুই বলতে পারছিলো না,এস.সি.সি পরেই বিয়ে করে এবাড়িতে আসি।
তারপর তোমাদের ভাইয়ের মতো দেখেছি,তোমাদের পছন্দ মতো রান্না করতাম, তোমাদের হাসি আনন্দ গুলো ভাগ করে নিতাম।
তোমরা বাইরে গেলেও তোমাদের প্রতি আমাদের ভালোবাসা কমে নাই, দূরত্বে সেই ভালোবাসা বেশি আরো বেড়েছে।
বুঝতে পারছি ভাবি!
আরমান প্রসঙ্গ ঘুরাল এবার খাওয়া শুরু করো বলেই নিজের প্লেটটা হাতে নিল।
সবাই প্লেট নাও আমি খাবার শুরু করলাম বলেই আরাফ প্লেট রেডি করলো।
রিতা প্রথমে আরাফের প্লেটে পোলাও দিল…
…..চলবে।
২০টি মন্তব্য
ইঞ্জা
আপু হাজিরা দিয়ে গেলাম, একটু একটু করে পড়ে আসছি, বড় গল্প বলেই একটু সময় নিয়ে পড়ছি।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইজান।
কৃতজ্ঞতা জানাই সময় করে আমার লেখাটা পড়ার জন্য।
জ্বী ভাইজান সবটা উপন্যাস পড়া শেষ হলে কষ্ট করে মতামত জানিয়ে একটা ইনবক্স করবেন খুশি হব।
মতামত পেয়ে অনেক ভালো লাগছে ভাইজান, বাকি পর্ব গুলো পড়ার অনুরোধ রইল।
ভালো থাকবেন।
ইঞ্জা
আপু ইনবক্সে কেন, যা বলার ব্লগেই বলবো, শুধু বলে রাখি গল্পের ধার বেশ আছে। 😊
সুরাইয়া নার্গিস
ভাইজান ব্লগে তো অবশ্যই মতামত দিবেন সেটা নয় গল্পটা নিয়ে আমার একটা চিন্তা আছে।
তাই সবটা পড়া শেষে একটা মতামত ইনবক্স করবেন সব মিলিয়ে কেমন হলো।
তারপর আমার সিদ্ধান্তটা নিতে সহজ হবে..
ধন্যবাদ ভাইজান
সুপর্ণা ফাল্গুনী
আরমান বসার আগে ভালো করে টেবিলটা দেখে নিল, আরে ভাবি এসব কি! এখানে মনে হয় আরমানের জায়গায় আরাফ হবে? ভালো হচ্ছে। সাথেই আছি
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইজান।
ঠিক করে নিয়েছি, মতামত পেয়ে অনেক ভালো লাগছে দিদি।
কৃতজ্ঞতা রইল দিদি ভাই ভালো থাকবেন, বাকি পর্ব গুলো পড়ার অনুরোধ রইল।
ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা রইল।
নিতাই বাবু
এমনই হোক একজন পুরুষের মনোভাব!
আমি তোমার জন্য এসেছি (পর্ব-৩৮) পড়ে ভালো লেগেছে, দিদি। আশা করি গল্পের শেষ পর্বটাও চমৎকারভাবে ফুটিয়ে রাখবেন।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় দাদা।
কৃতজ্ঞতা রইল সুন্দর মতামতের জন্য দাদা, ব্যস্ততার পরও আমার লেখা পড়েন এটা আমাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করে।
দোয়া করবেন দাদা,শেষ পর্যন্ত যেন গল্পের ভালোলাগাটা রেখে যেতে পারি।
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল দাদা।
ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা রইল।
ফয়জুল মহী
চমৎকার লেখা । মনোমুদ্ধকর ।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
এত ব্যস্ততার পরও আমার লেখা পড়েন এটা আমাকে সব সময় অনুপ্রাণিত করে।
গল্পের শুরু থেকে এই পর্যন্ত মোটামুটি সব গুলো পর্ব পড়ে মতামত দিয়েছেন দেখে খুব ভালো লাগলো। দোয়া করবেন শেষ পর্যন্ত যেন গল্পের ভালোলাগাটা রেখে যেতে পারি।
ভালো থাকবেন।
শুভ কামনা রইল।
মোহাম্মদ মনজুরুল আলম চৌধুরী
সুন্দর লেখা।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
খুব ভালো লাগছে আপনাদের মতো গুণীজন আমার লেখাটা পড়েন।
উৎসাহ্ মূলক মন্তব্য আরো ভালো কিছু লেখার অনুপ্রেরনা যোগায়।
সব সময় পাশে থাকার অনুরোধ রইল,
পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন ভাইজান।
তৌহিদ
আরাফ দেশে আসায় প্রিয়ার সাথে প্রেমকথা এবার জমবে ভাল মনে হচ্ছে। ভাইয়ের জন্য মন খারাপ হবারই কথা ভাই বোন সবারই।
চলুক গল্প। ভালো থাকুন আপু।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
আরাফ প্রিয়ার হয়ত আবার দেখা হবে মনে হচ্ছে, প্রেমটা জমবে কিনা বলতে পারছি না।
সুন্দর মতামতে উৎসাহ্ পেলাম, পরের পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন।
মাহবুবুল আলম
আগের পর্বগুলো পড়া হয়নি।
এ পর্বটি ভাল লেগেছ।
শুভেচ্ছা জানবেন!
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
সময় সুযোগ পেলে আগের পর্বরগুলো পড়ে নিবেন আশা করি ভালো লাগবে।
আপনার সুন্দর মতামতে অনপ্রেরনা পেলাম, আগামী পর্ব পড়ার আমন্ত্রন রইল।
ভালো থাকবেন।
হালিম নজরুল
আরাফ দেশে ফিরেছে, বেশ হচ্ছে।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ ভাইয়া।
সুন্দর মতামতে আপ্লুত হলাম, কৃতজ্ঞতা রইল।
ভালো থাকুন,
শুভ কামনা রইল।
জিসান শা ইকরাম
একটু আশার আলো দেখলাম।
আরাফ জাপান থেকে একেবারে চলে এসেছে। আর প্রিয়ার জন্য ভালোবাসা এখনো মজুদ আছে।
দেখা যাক পরের পর্বে কি অপেক্ষা করছে।
সুরাইয়া নার্গিস
ধন্যবাদ শ্রদ্ধেয় ভাইজান।
আরাফ দেশে আসছে, প্রিয়াও এখন ঢাকা থাকা দুজনের দেখা হতেই পারে।
দেখা যাক পরের পর্বে গল্পের মোড় কোনদিকে যায়।
ভালো থাকুন,
শুভ কামনা রইল।