কল্পনা-৮
রহিম হাসপাতাল থেকে ফারাহকে বাসায় নিয়ে এসেছে। সবাই এখন রহিমের বাসায় ফারাহ’কে ঘিরে। বানু ও রাহিমের মা’কে ফারাহ নিজ উদ্দোগে তার বাসায় নিয়ে আসে। কদ্দুস বয়াতীর কথা স্মরন হওয়ায় রহিমের মা অরাজি ছিলো ছেলের বাসায় যেতে। কিন্তু ফারাহ’র অনুরোধ,আকুতি-মিনতি ও শ্রদ্ধাভরা ভালোবাসায় মলিন হয়ে রহিমের বাসায় আসতে বাধ্য হলো বানু ও তার মা’। জলিল শেখ ফাতেমাকে নিয়ে চলে যায় রাহিমের বাসায়।
দাদা আমাকে কল দিয়ে বিস্তারিত সব শুনে বললেন-
”জর্জ মিয়া তুই একটু খেয়াল রাখিস তোর ভাবীর।
আর বউ’মারে কইস হে যেন হের মায়ের বাড়ির কাওরে আইন্না রাহে।
আমার শরীরডাও ভালা না। বানুও আইবার চাইতাসে বাড়িতে জামাই বাবা’জীরে লইয়া। যত তাড়াতাড়ি পারোস তোর ভাবীরে বাড়িত পাঠাইয়া দে”।
ফারাহ’র মা-বোনেরাও দেখতে এসেছে। ফারাহ মায়ের বাড়ির লোকদের খুব একটা সময় না দিয়ে সার্বক্ষনিক শ্বাশুড়িকে নিয়েই ব্যাস্ত ছিলো। এ ফাঁকে বানু সবার জন্য দুপুরের খাবারের আয়োজনটাও নিজ দায়িত্বে করে নিলো। বানু সবাইকে একসাথে খাবারের জন্য ডাকছে। মেয়ের বাসায় বানু’র কর্তৃত্ব ও ফারাহ’র শ্বাশুড়িপ্রীতি খুব একটা ভালো চোখে দেখছেন না ফারাহ’র মা’।
রাহিমের মা’ নিজ থেকেই আগ বাড়িয়ে হাত ধরে বললেন আহেন বিয়াইন দুপুরে খাইবেন। কোন উত্তর না দিয়ে সোজা চলে গেলেন সারাহ’কে সাথে নিয়ে নিজ বাসায়। রহিম শুধু বায়েস্কোপের পর্দায় সব দেখছে। মা’র এমন আচরনে কোন আক্ষেপ বা ভ্রক্ষেপ নেই ফারাহ’র। ভাবীকে দেখলাম নিজ হাতে ফারাহকে মুখে তুলে খাইয়ে দিচ্ছেন। বানু তার আদুরী ফাতুকে খাওয়াচ্ছে। রহিম ও জলিল শেখ পাশাপাশি বসে খাচ্ছে। আমাকে দেখে সবাই বলে উঠলো জর্জ চাচা জলদি ওয়াশ রুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসেন। আমারও পেটে ক্ষুদা ছিলো। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ওদের সাথে ভাত,আলুভর্তা, ডিম ভাজি ও ডাল দিয়ে পেট পুরে খেয়ে তৃপ্তির ঢেঁকুর দিয়ে বললাম ”আলহামদুলিল্লাহ” ।
ফারাহ’র চোখে-মুখে ফুঁটে উঠেছে কেমন যেন একটা অপরাধী অপরাধীর ছাঁপ। ফারাহ অসহায়ের মত শ্বাশুড়ির মুখের দিকে তাকিয়ে থাকে। কিছু বলে না। মাঝে মাঝে শুধু বলে উঠে মাগো, আামকে আপনি ক্ষমা করে দিন। আমাকে আপনার বানুর স্থানে জায়গা দিন।
ভাবীর সোজা সাপ্টা একটাই উত্তর তুইতো আমার বড় মাইয়া’ই।
পাগলী কুনখানকার। অহন একটু ঘুমা।
ভাবীকে বললাম দাদা তোমাকে বাড়ি যেতে বলেছেন।
কবে যাচ্ছো বাড়িতে?
বানু নাকি জামাই বাবা’জীকে নিয়ে বাড়িতে যাবে?
দাদার শরীরও তেমন ভালো যাচ্ছে না। তুমি দাদার সাথে কথা বলে নিও। আমার কথা শুনে ফারাহ চোখ খুলে উঠে বসলো। বললো চাচা, মা’ আর কোনদিন বাড়িতে যাবেন না। এখানে আমার সাথেই থাকবেন। বাবাকে আমি নিজে যেয়ে নিয়ে আসবো। ফাতেমার বাবাকে বলবো বড় একটা ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে বা পাশাপাশি দুটি ফ্ল্যাট ভাড়া করতে। আমরা সবাই বানু সহ এক সাথে থাকবো। চাচা আমার শ্বশুড়-শ্বাশুড়ির শেষ সময়টুকু যেন আরাম-আয়াসে কাটাতে পারেন সেই দোয়াটাই করবেন।
ফারাহ’র কথাগুলি শুনে ভাবীর চোখ দিয়ে নিজের অজান্তেই পানি গড়িয়ে পড়ছে। বউমা’কে দেখলাম ওড়না দিয়ে এক হাতে সেই চোখের পানি মুছে দিচ্ছে।
ভাবী একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ছেড়ে বললেন-
“হে আল্লাহ তুমি মহান”।
(চলবে)
২৭টি মন্তব্য
মনির হোসেন মমি
শেষ পর্যন্ত অনুশোচনায় বরফ গলল পরিবাবে।চমৎকার উপাস্থাপনা।
শামীম চৌধুরী
মমি ভাই, কারো ভিতরে অনুশোচনা জাগ্রত হলে সে সঠিক মানুষে রূপান্তরিত হয়। আর তার পাশের মানুষ জনও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারে।
শাহরিন
খুশী খুশী লাগছে সবার মিল হচ্ছে পড়ে ।
শামীম চৌধুরী
পরিবারের বন্ধনই হচ্ছে মিলন। এই বন্ধনে যে পরিবার আঁকড়ে থাকে সেই পরিবার সবচেয়ে সুখী।
শাহরিন
সঠিক সর্বকালে সবার জন্য পরিবারের সুখ পকৃত সুখ।
মোঃ মজিবর রহমান
শেষের সমাপ্তি বউমার উপলদ্ধ্বিতে ঘরে শান্তি বিরাজ করছে। দারুন। শামীম ভাই।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ ভাই। দোয়া করবেন যেন ফারাহ সবাইকে আগলে রেখে তার আগামীদিনগুলো সুখের করতে পারে।
মোঃ মজিবর রহমান
ইনশল্লাহ। ভাল থাকুক।
নিতাই বাবু
আগের পর্বগুলো পড়া হয়নি আমার। শুধুই আফসোস। তবে সময় করে পড়ে নেওয়ার আশা আছে। এই পর্বটি অনেক ভালো গেলেছে বলে, আগের পর্বগুলো পড়ার ইচ্ছে জাগছে। অনেক ভালো লাগলো দাদা।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ দাদা। সময় করে আগের পর্বগুলো পড়ে নিলে পুরো গল্পটা বুঝা সহজ হবে স
ছাইরাছ হেলাল
মিলনাত্মক পরিণতিতে স্বস্তি ফিরে এলো,
এমন সৌহার্দ আমরা সবাই কামনায় রাখি কিন্তু……………
চলুক,
শামীম চৌধুরী
হেলাল ভাই, কিন্তু’র শূন্যস্থানটা পূরন না করে দিলে বুঝবো কিভাবে কথায় ফাঁক রইলো।
সঞ্জয় মালাকার
এমন সৌহার্দ আমরা কামনাক করি।
পড়ে খুব ভালো লাগলো দাদা,আগামীর অপেক্ষায় রইলাম।
ধন্যবাদ দাদা।
শামীম চৌধুরী
আপনাকে ধন্যবাদ দাদা
আরজু মুক্তা
মিলন হলো তাহলে।।নেক্সট প্লিজ
শামীম চৌধুরী
জ্বী আপু। প্রতিটি মানুষ তার কৃতকর্ম থেকে যদি অনুশোচনা নেয় এবং এই অনুশোচনা থেকে শিক্ষা নিতে পারে তবে সে নিজেও সুখে থাকে ও পাশের সবাইকে সুখে রাখতে পারে।
সাবিনা ইয়াসমিন
সুন্দর একটা পর্ব পড়লাম। পরিবারের ভুল বোঝাবুঝি গুলো সময়ের সাথে শেষ হয়ে যাচ্ছে দেখে ভালো লাগলো। অনুশোচনায় দগ্ধ মন থেকে যা কিছু করা হয়, সৃষ্টিকর্তা তাতে খুশি হোন।
পরের পর্ব শিগ্রিই দিয়ে দিন। শুভ কামনা 🌹🌹
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ আপু।
জিসান শা ইকরাম
মিলে মিশে সবাই একসাথে থাকার আনন্দই আলাদা৷
আমরা সবাই আসলে এমন পরিবারই চাই৷ যদিও সব পরিবারে এমন হয়ে ওঠেনা৷
পরিবার সুখে থাক৷
ভালো লিখছেন, যেন আমাদের চেনা কোনো পরিবার৷
শুভ কামনা৷
শামীম চৌধুরী
একান্নবর্তী পরিবার সবচেয়ে সুখী হয়। কারন সবার প্রতি সবার আন্তরিকতা থাকে।
মাছুম হাবিবী
ওয়াও চলবে মানে পুরো দৌঁড়ছে দাদা। এক সাথে থাকা মজটাই আলাদা
শামীম চৌধুরী
জ্বী ভাই ল
মাসুদ চয়ন
মিলনেই নিগুঢ় প্রশান্তি।মিলেমিশে বেয়ে চলুক জীবন পটভূমি
শামীম চৌধুরী
চলুক জীবন শান্তিময় সুখময়।
ইঞ্জা
অনুশোচনাটাই বড়, মন ছোঁয়া লেখা।
শামীম চৌধুরী
জ্বী ভাইজান। অনুশোচনা থেকেই মনু্ষ্যত্বের জন্ম নেয়।
ইঞ্জা
লেখাটি বেশ ভালো ভাই