কল্পনা-৬
মধুচন্দ্রিমা শেষে বানু তার নিজ সংসারে জলিল শেখের ভালোবাসায় বেশ ব্যাস্ত দিন কাটাচ্ছে। শ্বশুড়-শ্বাশুড়ীর যত্নাদি, নিজের বাবা-মায়ের খেয়াল রাখা রহিমের বউয়ের সাথে যোগাযোগ সবই নিয়মিত ধারায় করে যাচ্ছে। বানুর শ্বশুড়-শ্বাশুড়ী তাদের এক মাত্র পুত্রবধুকে পেয়ে মেয়ের জায়গায় স্থান দিয়ে পিতা-কন্যার সম্পর্কটা আরো মজবুত করেছে। কিন্তু, ফারাহ তার শ্বশুড় বাড়িতে এ সম্পর্কটা কোনদিনই অর্জন করতে পারেনি। জলিল শেখ ছোট্ট একটা ফ্ল্যাট বাড়ি ভাড়া করে বানুকে নিয়ে এখন ঢাকাতেই বসবাস করছে। সকাল বেলায় জলিল শেখ অফিসে আসার পর, বানুকে এই হৃদয়হীন ঢাকা শহরে একা একাই সময় কাটাতে হয়। ভয়ও পায় কোথাও যেতে বা পাশের বাড়ির লোকদের সাথে কথা বলতে।
কারন শ্বশুড়-শ্বাশুড়ি বাড়ি থেকে ঢাকায় আসার সময় কানে কানে বলে দিয়েছিলো, ঢাকায় যারা থাকে তারা যন্ত্রচালিত দানব থেকেও ব্যাস্ত ও মায়া-মমতাহীন।
কোন অবস্থাতেই যেন কোন অপরিচিত লোকজনের সাথে সখ্যতা গড়ে না তুলে।
বলা তো যায় না?
সামান্য লোভের জন্য যেন, আমরা আমাদের একমাত্র আদরের আদুরী মেয়েটাকে না হারায়। ঢাকাতে আসার পর থেকেই জলিল শেখ ছাড়া বানু এক কদম বাড়ির বাহিরে যায় না। এমনিতেই গ্রামে বড় হওয়া মেয়ে। তার উপর ঢাকা শহরের চাকিচিক্যতা বানুর কাছে অসহনীয় ও দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম। সবসময় মনে হয় অক্সিজেনের নলটা বানুর নাকে লাগানো রয়েছে। মাঝে মাঝে রাতে জলিলকে বলে আমার কাছে তোমাদের এই স্বর্গ নগরীর ঘর-বাড়ী ফার্মের মুরগীর খাঁচার মত লাগে। তারপরও আমাদের ভবিষ্যত জীবন সুন্দর করে গড়ার জন্য। ভবিষ্যতদের জন্য কষ্ট করতেই হবে। আমাদের সামান্য এই কষ্টে যেন আমাদের সন্তানরা থাকে ”দুধে ভাতে”- অফিস থেকে বাসায় ফেরার পর জলিল শেখের সেলফোনে রহিমের ফোন কল বেজে উঠলো। এ প্রান্ত থেকে হ্যালো বলার সাথে সাথেই অপর প্রান্তে রহিম বলে উঠলো
জলিল, সর্বনাশ হয়েছে..!!
ফারাহ মানে তোমার ভাবী সড়ক দূর্ঘটনায় হাসপাতালে।
বানুকে ফোনটা দাও?
কিছু বুঝার আগেই জলিল বানুকে ফোনটা দিয়ে বললো দাদা কল দিয়েছেন। তোমার সাথে কথা বলবে। বানু রহিমের কাছ থেকে শোনার সাথে সাথে আ ল্লা গো বলে এক চিৎকারে মাটিতে লুটিয়ে পড়লো। ফারাহ’র দুঃসম্পর্কীয় আত্মীয়র সাথে ফাতেমাকে নিয়ে বেড়াতে যাচ্ছিলো কুমিল্লায়। রহিম বারংবার বারন করা সত্বেও ফারাহ মানতে রাজি না। এক কথায় রহিমের ইচ্ছার বিরুদ্ধেই ফারাহ বাড়ি থেকে বের হয়। কাঁচপুর ব্রীজে উঠার আগেই ফারাহদের মাইক্রোবাসটি উল্টে নীচে পড়ে যায়। আল্লাহর রহমতে ফাতেমা বেঁচে যায় কোন রকম আঘাত বা দূর্ঘটনা ছাড়াই। তবে ফাতেমা নিশ্চুপ ও ভীত- সন্ত্রস্ত। দুইজন স্পট ডেথ। ফারাহ’র অবস্থা সংকটাপন্ন। পুলিশের সহায়তায় স্থানীয় লোকজন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসে ফারাহ’দের। হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে ফারাহ। চিকিৎসা চলছে। জলিলও প্রস্তুতি নিচ্ছে বানুকে নিয়ে হাসপাতালে যাবে। আমাকে কল দিয়ে রহিম বললো চাচা আামার সব শেষ হয়ে গেছে। আপনি তাড়াতাড়ি আসেন। আমি শুনে কিছুক্ষন চুপ করে থেকে ভাবলাম
কদ্দুস বয়াতীকে জানাবো কিনা?
ভাবী স্বাভাবিক থাকতে পারবেন কিনা?
পরে আমার বউ বললো আগে তুমি যেয়ে দেখে আসো।
প্রিয় পাঠকগণ,
আমি হাসপাতালে রওনা হচ্ছি।
আপনারা আমাদের বউ’মার জন্য দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন সুস্থ্যতা দান করেন।
আমীন।
(চলবে)
২৬টি মন্তব্য
বন্যা লিপি
শেষে এসে ধাক্কা খেলাম! সবটাই বাস্তব?
ঢাকা শহরে যখন সংসার করতে এসেছিলাম প্রথম! আমারো মনে হতো একলা একা যখন থাকা লাগতো। মনে হতো দরজা জানালা হীন গরাদের পেছনে বন্দী কারাগারে বসবাস আমার। লেখার মুন্সিয়ানা ভালো লেগেছে। শুভ কামনা রেখে গেলাম।
শামীম চৌধুরী
বন্যা আপু,
আমার গল্পটা সম্পূর্ণই কাল্পনিক। কাকতলীয় ভাবে কাহারো জীবনের সাথে মিলে গেলে ক্ষমা প্রার্থী।
নিতাই বাবু
সাথে আছি! বিস্তারিত জানাতে ভুলবেন না কিন্তু! প্রয়োজনে ফোন করবেন প্লিজ!
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ ভাই সাথে থাকার জন্য। অবশ্যই জানাবো। কারন রহিমের এই দুঃসময়ে একমাত্র সোনেলার ভাই বোনেরাই তার শুভাকাংখী ও সহযোদ্ধা।
সঞ্জয় মালাকার
পড়ে ভালো লাগলো ,
সুস্হ্যতা কমনা করি।
শামীম চৌধুরী
জ্বী। আমিও ফারাহ’র সুস্থ্যতা কামনা করি।
মাসুদ চয়ন
ঢাকা শহরের মানুষের মধ্যে মাত্রাতিরিক্ত আত্নকেন্দ্রিক মনোভাব দেখা যায়।মনে হয় আত্না থেকে বহুদূরে বাস করছে পরস্পর। একান্নবর্তী পরিবারের মেলবন্ধনগুলো আর কখনোই সম্ভব হয়ে উঠবেনা।মানুষ ধীরে ধীরে রোবটিক মনোভাবাপন্ন হয়ে যাচ্ছে।প্রিয়জন আর প্রয়োজন যদিও একসূত্রে গাঁথা।তবুও মানুষের মানুষ হওয়ার মতো মনুষ্যত্ব জাগানো উচিৎ। এই শহরের জীবন এমনই।শুরুটা বেশ ভালো-তবে বিবরণ আরও বিস্তৃত দিলে আরও ভালো হতো
শামীম চৌধুরী
ধনযবাদ। আপনার পরামর্শ মাথায় রইল।
ছাইরাছ হেলাল
আমরা আপনার গল্পের সাথেই আছি।
আসলে আপনার সুন্দর উপস্থাপনার জন্য গল্প আর গল্পের মধ্যে নেই,
বাস্তবে এসে গেছে।
অনেক দিন পর এলেন, দেখে ভাল লেগেছে।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ হেলাল ভাই আপনার সুন্দর মন্তব্যের জন্য।
শিরিন হক
একা অচেনা শহর কাটিয়েছি ১০ বছর। সেই ঢাকা যাকে সবাই বলে প্রানের শহর। এখানে ইট পাথারের চাদরে ঢাকা মানুষের মাঝে নিজেকে মানিয়ে নিতে প্রথম একটু সময় লেগেছিল।
আপনার লেখাটা পড়ে মনেপড়ে গেলো সেই সময়।
শেষ টা বিপদ আসলে আসলেই কারো মাথায় কাজ করেনা। তখন অচেনা শহরে ভিতুরাও সাহসি হয়ে ওঠে। একা পথ চলে শিখে যায়।
খুব বাস্তবতা নিয়ে লেখাটা। ধন্যবাদ।
শামীম চৌধুরী
খুবই যান্ত্রিক জীবন ঢাকা। লেখাটা পড়ার জন্য অনেক ধন্যবাদ আপু।
রেহানা বীথি
ঢাকা, যেন দমবন্ধ করা পরিবেশ। জীবন জীবিকার প্রয়োজনে তবুও থাকছে মানুষ।
ভালো লাগলো আপনার লেখা
শামীম চৌধুরী
অন্ক ধন্যবাদ রেহানা আপু।
ইঞ্জা
অনেকদিন পর আপনাকে সুস্থ সবল ভাবে আমাদের মাঝে পেয়ে খুব আনন্দিত হলাম।
বাস্তবিকতার আলোকে লেখাটি বেশ এগুচ্ছে ভাই, লিখে যান পাশে আছি।
শামীম চৌধুরী
আমি জানি আপনি সহ আপনারা সবাই আমার পাশে ছিলেন ও থাকবেন।
আরজু মুক্তা
ইটের পাঁজরে ঘামছি আমি,ঘামছে মানবতা
শামীম চৌধুরী
আজ মানবতা কাশিমপুর কারাগারে বন্দী।
মনির হোসেন মমি
রহিমের দুসময় কেটে যাক তার প্রিয়তমা বেচে যাক এই কামনা।তবে কাচপুর ব্রীজ কিন্তু আমার বাড়ীর পাশে আর গল্পে সে কি একাই গিয়েছিলো নাকি তার সঙ্গে তার ফুটফুটে মেয়েটিও ছিলো।চমৎকার উপস্থাপনা।
শামীম চৌধুরী
ধন্যবাদ মমি ভাই। নাহ রহিমের মেয়ে ফাতেমা সাথে ছিলো। তবে আল্লাহর রহমতে ফাতেমার কিছু হয়নি। তবে সে মানসিকভাবে খুব আঘাতপ্রাপ্ত।
জিসান শা ইকরাম
আপনার উপস্থাপনার গুনে গল্পটি বাস্তব গল্প হয়ে গেছে এটি।
মনে হচ্ছে চরিত্র গুলো, ঘটনা সব পরিচিত।
অনেকদিন অসুস্থতার জন্য আসতে পারেননি সোনেলায়,
আশাকরি পুর্ন সুস্থ্য হয়েছেন।
শুভ কামনা।
শামীম চৌধুরী
আলহামদুলিল্লাহ।
জ্বী জিসান ভাই। আপনাদের সকলের দোয়ায় আমি এখন সুস্থ্য। নিয়মিত সোনেলায় সময় দিতে পারবো বলে আমি আশাবাদী।
জ্বী ভাই সঠিক বলেছেন। প্রতিটি গল্পই বাস্তবের সাথে কোন না কোন সময় মিলে যায়।
শাহরিন
আছি, কিন্তু বেশী দেরি করা চলবে না 🙂
শামীম চৌধুরী
নাহ দেরী করার ইচ্ছে নেই। তবে ট্রাফিক জ্যামে আটকে গেলে আমার আর করার কি থাকে।
সাবিনা ইয়াসমিন
গল্প না বাস্তব বুঝে উঠতে পারিনা। নিমগ্ন হয়ে পড়ে যাচ্ছি। সাধারণ পরিবারেই অসাধারণ গল্পগুলো থাকে, তুলে নিতে হয়। পাঠ করে কেউ শিখে কেউ এড়িয়ে যায়।
চলুক, শুভ কামনা 🌹🌹
শামীম চৌধুরী
সাবিনা আপু আপনার জন্যও রইলো শুভ কামনা।