আমি যখন মেইন গেটে কোড নাম্বার চাপি বাইরে যাবো বলে, ঠিক সেই সময় বাইরে থেকে নাম্বার চেপে গেটটি খুলে দেয় প্রতিবেশী মিস্টার লু। আসা যাওয়ার পথে গেট খোলার এমন কাটাকাটি আমাদের মাঝে মাঝেই হয়। আমরা একে ওপরকে ক্রস করে যাবার সময় ইশারায় হাই, হ্যালো, কুশল বিনিময় করি। প্রচণ্ড শীতের সময়টাতে আমি যখন হেভি জ্যাকেট, কান টুপি, বুট জুতা আর হাতমুজা পরে বাইরে যাই, সেই সময় বাড়ির সামনের চওড়া ফুটপাতে মিস্টার লু আর ক’জন সঙ্গী সাথী নিয়ে হালকা পোশাকে ব্যায়াম করায় ব্যস্ত। আমায় দেখলে চেঁচিয়ে বলে, “তোমার ঠাণ্ডা বেশি, শিয়ালের মাংস খেলে ঠাণ্ডা লাগে না। দেখো না আমি কত হালকা পোশাক পরেছি।” আমি ইয়াক্ ইয়াক্ করতে করতে হেঁটে যাই…
লু মধ্যবয়স পেরিয়েছে অনেক আগেই। তবুও চঞ্চল, চটপটে। তাঁর হেঁটে যাওয়া দেখলে দূর হতে যে কারো মনে হবে সে হয়তো ওয়াকম্যানে গান শুনতে শুনতে মিউজিকের তালে তালে ড্যান্স করছে। কিন্তু আদতে তা নয়। স্বভাবসুলভ গুনগুনিয়ে গান গাইতে গাইতে মৃদু হেলে দুলে হাঁটে সে।
সপ্তাহের পাঁচদিন কাজ শেষে চেক নিয়েই বাসে চেপে রওয়ানা দেয় আটলান্টিক সিটি’র উদ্দেশ্যে। দু’দিন ক্যাশিনোতে থাকে, জুয়া খেলে। ক্যাশিনোর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলো বলতে গেলে ফ্রি সার্ভিস দেয়। কখনো হোটেল, মোটেল সুবিধা দেয়। এতে লু’র মত অনেকেই আকৃষ্ট হয়। দু’দিনের সাপ্তাহিক ছুটি শেষে রবিবার রাতেই ফিরে আসে। ঈষৎ নিদ্রালু ফোলা ফোলা চোখের লু’ কে দেখলেই বুঝা যায়, গত দু’দিনের জুয়া’য় সে হেরেছে কি জিতেছে।
আজ দুপুরে ঝুম বৃষ্টির সময়টাতে আমি যখন বিশালাকৃতির ছাতাটি মাথায় চেপে বাইরে যাচ্ছিলাম, দেখি লনের একপাশে ধীর স্থির মিস্টার লু। উচ্ছ্বাসে হেলে দুলে হেঁটে যাওয়া নেই। হৈচৈ নেই। বৃষ্টিতে ভিজে যাচ্ছে, সেদিকে তোয়াক্কা নেই। কাছাকাছি হতেই বলি, চমৎকার বৃষ্টি হচ্ছে। লু ছোট বিষণ্ণ চোখ জোড়া তুলে তাকায়। চায়নিজদের চোখ এতো ছোট “ফুলস্টপ” টাইপের যে, সেগুলো’র ভাষা বুঝা কঠিন। কিন্তু সব সময়ের হাসি-খুশি, উদ্যমী লু’কে ঠিকই বুঝতে পেরেছি আজ। আমি বলি, “লু, মুলত ক্যাশিনো থেকে কেউ-ই জিতে আসে না।” লু আমার কথায় সায় দেয়। বলে, ” ক্যাশিনো ক্যাশিনো করেই নাকি ওর জীবনে কিছু করা হয়নি… এমন ভুল আর করবে না… আর ভুলেও ওপথ মাড়াবে না, ইত্যাদি ইত্যাদি। বেচারা সারা সপ্তাহের মাইনে খুইয়ে এসেছে এবার। জানি, সামনের সপ্তাহে সে আবারো যাবে। নেশা এমন এক জিনিষ যা কাউকে ছেড়ে যেতে চায় না। বরং আরও বেশি করে জেঁকে ধরে।
## পরিশ্রম করে মানুষ যে অর্থ আয় করে, সেটাই তাঁর নিজস্ব। অন্য কোন উপায়ে আয়কৃত অর্থ কখনই তাঁর নিজের নয়। যেভাবে আসে… সেভাবেই ফিরে যায়।
২২টি মন্তব্য
মেহেরী তাজ
আজ আপনার পোষ্টের প্রথম মন্তব্য আমার।
হ্যা আপু নেশা জিনিসটা বড্ড খারাপ এক্কে বারে জোঁকের মত।
রিমি রুম্মান
বাহ্ ! প্রথম কমেন্টকারিণী ! শুভেচ্ছা আপনাকে।
সিকদার
লু দের জন্য দুঃখ হয় । ওরা জেনেশুনেই এই কাজটি করে।
রিমি রুম্মান
নেশা, লোভ এসব মানুষকে ধ্বংস করে। এটি বুঝেও তাঁরা আবারো সেপথে যায়।
জিসান শা ইকরাম
নেশা এক খারাপ জিনিস
জুয়ার নেশা আরো মারাত্মক
বাস্তবতা থেকে উদাহরন দিলেন (y)
জীবনে তিনবার ক্যাশিনোতে গিয়েছি
১/ কানাডার নায়াগ্রা জলপ্রপাতে- জিতেছি ৫৬০ ডলার
৩/ মন্ট্রিল ক্যাশিনোতে – জিতেছি ২১০ ডলার
৪/ মালয়েশিয়ায় – জিতেছি ৮৯০ ডলার ( মালয়েশিয়া যাবার খরচই উঠে গিয়েছিলো)
যখনই মনে হয়েছে আমার আর খেলা উচিৎ না,উঠে এসেছি 🙂
নেশা নয়,জাষ্ট মজা করার জন্য খেলা।
নীলাঞ্জনা নীলা
নানা তোমার সাথে একবার তাহলে তো ক্যাসিনোতে যেতে হয়। এ জীবনে একটা লটারীও পাইনি ;( ;(
রিমি রুম্মান
নানা স্মার্ট আছেন। তাই জিতলে আর খেলেন না। নিয়েই ভোঁ দৌড়। অনেকটা এমন__ পাইসি রে… 😀
রিমি রুম্মান
দেশ থেকে বেড়াতে আসা অতিথিদের নিয়ে যেতে হয় আমাদের। প্রতিবারই একটি নির্দিষ্ট বাজেট খেলি। কখনো জিতি। কখনো হারি। কিন্তু শেষমেশ শুন্য হাতেই ফিরি। এটি কেবলই ফান। নেশা নয়।
স্বপ্ন
হঠাৎ বিনা পরিশ্রমে ধনী হওয়া ভালো না।অর্থ পরিশ্রমের মাধ্যমে উপার্জন করলে বুঝা যায় অর্থের দাম কত।
রিমি রুম্মান
বিনা পরিশ্রমের অর্থ যেভাবে আসে, সেভাবে ফিরে যায়।
নীলাঞ্জনা নীলা
জাপানে একটা আইন আছে, বেতন পাবার সাথে সাথেই সব টাকা স্ত্রীকে দিয়ে দিতে হয়। মাসের ৫ তারিখ এলে কি খুশী হতাম আমরা সবাই। আর আমাদের ম্যানেজার নাকাহাতা সানের হাসি থাকতোই না। কারণ বেতন এলেই রাতে গিয়েই বৌকে দিয়ে দিতে হবে। কারণ হিসেবে জানলাম জাপানী পুরুষেরা ক্যাসিনোতে যায় বেশী।
‘লু’ টাইপ মানুষদের অভাব নেই এ পৃথিবীতে।
পোষ্টের জন্য -{@
রিমি রুম্মান
এই পোস্টটি সোনেলায় না দিলে আপনার মূল্যবান কমেন্টটি দেখার সুযোগ হতো না। জানা হতো না, জাপানের এই আইনটি। ইস্ আমার দেশে যদি এমন আইন থাকতো ! 😀
ব্লগার সজীব
লু এর জন্য সমবেদনা।জুয়ায় আস্থা ছিলনা কোনোদিন।জুয়ায় জিতে কেউ ধনী হয়েছে এমন লোক আমি দেখিনি। জীবন থেকে নেয়া শিক্ষা বড় শিক্ষা।ধন্যবাদ আপু।
রিমি রুম্মান
আমাদের চারিপাশে কত কি-ই না ঘটে। কত ভাবেই না আমাদের শিক্ষা দিয়ে যায়…
লীলাবতী
চলার পথে অনেক কিছু দেখেন আপনি।আমরা সবাই দেখি,কিন্তু তা নিয়ে ভাবিনা।আপনি ভাবেন এবং গুছিয়ে সুন্দর করে বলেন।
রিমি রুম্মান
আমার বলা থেকে কেউ যদি উপকৃত হয়, তবেই না সে বলা সার্থক।
ছাইরাছ হেলাল
পরিশ্রম ই একমাত্র সত্য, তা যে কোন বিষয়ে ই হোক না কেন।
রিমি রুম্মান
এটিই সত্য। তবে এই বিদেশ বিভূঁইয়ে না এলে অনেক কিছুই শেখা হত না হয়তো।
প্রজন্ম ৭১
পরিশ্রম লব্দ অর্থে আনন্দ আছে।
রিমি রুম্মান
আসলেই। সে অর্থ ব্যয় এর মাঝেও আনন্দ। ভাল থাকবেন।
শিশির কনা
নেশা আসলেই সহজে যায় না আপু।মানুষকে শেষ করে দেয়।
রিমি রুম্মান
শেষ না হওয়া অবধি নেশা পিছু ছাড়ে না। তবে মানুষ চাইলেই এর থেকে বেরিয়ে আসতে পারে। প্রয়োজন শুধু সদিচ্ছার।